অণুগল্প:: প্র-বাদ - মধুমিতা রায়


প্র-বাদ
মধুমিতা রায়
 
মুখ গোমড়া করে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরল টিপু।
আজ আবার অঘটন। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার বিপদে পড়তে হল তাকে।
কিছুদিন আগেই টিপুর মা আর বাবা একই জিনিস দুটো আলাদা দোকান থেকে কিনেছিল আর বুড়িপিসি দেখে বলেছিল, “কোয়ালিটি উনিশ আর বিশ
টিপু ওর দাদার কাছে জানতে চাওয়ায় সে বলেছিল, “দুটো একই বোঝাতে ওরকম বলে, যেমন - যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন
সেই দুটোই আজ খাতায় লিখে কী হল! কেটে শূন্য বসিয়ে দিয়েছে।
ব্যাজার মুখেই ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে টিপু দেখল ওর মা এক হাতে দুধের গ্লাস আর অন্য হাতে ওষুধ নিয়ে আসছে।
“খেয়ে নাও,” বলে টিপুর বাঁ হাতটা টেনে নিতেই “আঃ!” করে একটা শব্দ বেরিয়ে এল টিপুর মুখ থেকে, ব্যথাটা এখনও আছে।
“যেমন কর্ম তেমন ফল
বুড়িপিসির গলা, কখন ঘরে ঢুকেছিল খেয়াল করেনি টিপু, শুনল ওর মা হাতে ওষুধ মাখিয়ে দিতে দিতে বলছে, “প্রবাদ না প্রহসন!”
নাহ্, টিপু আর এসবের মানে বুঝতে যাবে নানিজের হাতের দিকে একবার তাকাল সে এখনও ফুলে আছে, তবে ঘা-টা শুকিয়ে গেছে। এটাও ঐ প্রবাদের প্রভাবেই হয়েছে, বুড়িপিসি সেদিন কী কারণে যেন বলেছিলেন, “তিল থেকে তাল”, আর তাতেই টিপুর ধারণা হয়েছিল তার হাতের ঐ কালো তিলটা থেকে আস্ত একটা তাল বেরোবে। ও দাদার কাঁটাকম্পাসটা নিয়ে খোঁচাতেই ঘা হয়ে গেছে।
দুধ খেয়ে, কার্টুন দেখে পড়ার টেবিলে এসে বসল টিপু। আর তখনই চারিধার অন্ধকার হয়ে গেল।
“লোডশেডিং
“ঠিক ঠিক ঠিক” - কোথায় যেন একটা টিকটিকি ডেকে উঠল।
একটা মোমদানির উপর জ্বলন্ত মোমবাতি বসিয়ে ঘরে রাখতে এসে বুড়িপিসি বলে গেল, “দেখো, পড়ে যায় না যেন, তোমরা অপকর্ম করবে আর দোষ হবে আমার, যত দোষ নন্দ ঘোষ
টিপু অমনি টিপ্পনি কাটল, “পিসি, নন্দ ঘোষ কে?
“জানি না বাপু, আর জানলেও তোমাকে বলব না তুমি তো আবার উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাবে!” পিসি চলে গেল।
টিপু টেনে নিল আঁকার খাতাটা, দুটো ছবিই অসমাপ্ত।
ওর দাদাও পাশে বসেই পড়ছিল। ‘জিন’, ‘পরিবেশ’ শব্দগুলো কানে আসছিল টিপুর।
আচ্ছা জিনেরা তো বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে, তাই না?
ভাবতে না ভাবতেই টিকটিকিটা থপ করে পড়ল খাতার ওপর।
ঠিক্ ঠিক্ ঠিক্
তিনবার বলে চোখ তুলে তাকাল টিপুর দিকে।
প্রথমটা ভয়ে আঁতকে উঠলেও পলকে নিজেকে সামলে নিল টিপু
এটা কি জিন?
“তুমি যা ভাবছ তাই
“ওমা! বলে কী! সত্যিই তুমি জিন?
“বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর - শোননি?
“তুমিও প্রবাদ বলো?
“বলিই তো, নাও এখন হুকুম করো কী করতে হবে
বেশ মজা লাগল টিপুর, কী করতে বলা যায়...
“আচ্ছা, আমার এই ছবি দুটো এঁকে রং করে দাও
“বেশ” - বলে টিকটিকিটা ল্যাজ দিয়ে পেনসিলটা পেঁচিয়ে নিমেষে সম্পূর্ণ করে ফেলল ছবি দুটো।
“টিপু-উ...”
এই রে! দাদা দেখছে নাকি! ডাকল কে?
টিকটিকি এখন রং করছে, মন দিয়ে রং-এর শেড দিচ্ছে।
“এই টিপু, হঠাৎ পিঠে একটা ধাক্কা খেতেই আলোয় চোখটা ধাঁধিয়ে গেল টিপুর।
“আরে, কারেন্ট চলে এসেছে?
“হ্যাঁ, তাই তো ডাকছি, বসে বসেই ঘুমোচ্ছিস?
মোমবাতিটা খানিক দপ দপ করেই নিভে গেল টিপুর খেয়াল হল টিকটিকিটা নেই তো, এদিকে ওদিকে চোখ বোলাতেই টিপু লক্ষ করল, একটা সরু কালো কেঁচো দরজার পাশের ছোট্ট গর্তটায় ঢুকে গেল
আরে! জিন কি আবার রূপ বদলাল?
টিপু একটা কাঁটা নিয়ে গর্তটার পাশে বসে সবে খোঁচাতে যাবে, শুনতে পেল ঘর থেকে দাদা বলছে, “টিপু, এই অন্ধকারে বসে দারুণ ছবি এঁকেছিস তো, রং-এর শেডটাও হয়েছে জব্বর
ছবি! নাহ্, সে তো আঁকেনি, ওটা তো...
“এই যে বাছা
বুড়িপিসির গলা পেয়ে টিপুর ভাবনায় ছেদ পড়ল, সে শুনতে পেল বুড়িপিসি বলছে, “বেশি খোঁচাখুঁচি কোরো না বাপু, শেষে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়বে
----------
ছবি - আন্তর্জাল

No comments:

Post a Comment