গল্পের ম্যাজিক:: টাইম ট্রাভেল - সহেলী চট্টোপাধ্যায়


টাইম ট্রাভেল
সহেলী চট্টোপাধ্যায়

আমি কি সবসময় ভূতই দেখতে পাই? মাঝে মাঝে দু-চারটে ভূতের গল্প লিখি বলে রোজ রোজ যে ভূত দেখতে পাই, তা কিন্তু নয়। খুব কম দেখা যায় তেনাদের। ভূতের সাথে সাথে ভবিষ্যৎ দেখার অভিজ্ঞতাও আছে। আমাকে একবার সুদূর ভবিষ্যতে আসতে হয়েছিল। আজ থেকে একশো বছর পরের পৃথিবীতে। ও, একশো বছর না। একটু ভুল বললাম। আরেকটু পরে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
প্রথম থেকে বলি, শোন আমার বন্ধু দিশা একজন বৈজ্ঞানিক। আমার মাথাটা গোবরপোরা হলেও বৈজ্ঞানিক বান্ধবী আমাকে দারুণ ভালোবাসে। নিজের পরিকল্পনার কথা, আবিষ্কারের কথা আমাকে বিস্তারিত বলতে ভালোবাসে। বেশিরভাগ সময় আমি কিছুই বুঝি না। বিনা প্রতিবাদে শুনে যাই। শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন চ্যাট-বক্সে মেসেজ দেখি। আমার রিপ্লাই না দেখতে পেলে ও আবার আমাকে ফোন করবে। নিজের গবেষণার কথা বলবে। আমি ফোনটা একবার এ-হাত থেকে ও-হাত করি। তারপর বলি, খুব ভালো ভেবেছ! (আর কী বলব, ঠিক বুঝতে পারি না)
একদিন সকালে দিশার ফোন পেলাম।
তুমি কি এখন ব্যস্ত আছ?
না না। তুমি বল
একটা দারুণ ব্যাপার আবিষ্কার করে ফেলেছি। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এস
এমন কী জিনি আবিষ্কার করেছে ও, যার জন্য আমাকে যেতে হবে! কথাটা ওকে জিজ্ঞাসা করতেই বলল, তুমি না লে কিছুই বলব না। আমার ঠিকানা মেসেজ করে দিচ্ছি। তুমি সব জান, কিন্তু আবার হারিয়ে ফেলেছ, সেটা বুঝতে পারছি। এইবার যা বানিয়েছি না, দেখলে তুমি আর কথাই বলতে পারবে না
যে জিনিস দেখে মানুষের কথাই বন্ধ হয়ে যায় সেটা দেখে আর কী লাভ হবে! সারাজীবন আমাকে মূক ও বধির হয়ে থাকতে হবে
সেই বরং ভালো হবে। আমি কথা বলব আর তুমি শুনে যাবে। এমনিতেই তুমি বড্ড বেশি কথা বলো
আর তোমার কথা শুনে শুনে আমার মাথার মধ্যে ভূমিকম্প হয়। কান-মাথা ভোঁ ভোঁ করে
বেশি ঝগড়া করো না। আসলে তোমার লাভ বৈ লোকসান হবে না। তাড়াতাড়ি করবে। লাঞ্চ এক সাথে করব। এখন আমি রাখছি বলেই লাইন কেটে দেয়।
আমাকে এখন ওর বাড়ি যেতে হবে। দিশার বাড়ি কোথায় সেটা বললেই তো তোমরা সবাই ভিড় করে চলে আসবে, তাই আসল জায়গাটা আমি আর বললাম না। বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক কিনা! জায়গাটা শহর থেকে একটু দূরে। আগে একবার এসেছিলাম। ও বলেছিল, এইরকম একটা শান্ত জায়গায় কাজ করতে ভালো লাগে। কথাটা একদম ঠিক। যেসব বাড়িতে সারাক্ষণ টিভি চলে সেখানে কোনও গঠনমূলক কাজ করতে অসুবিধা হয়। যেসব বাড়ির কর্তা-গিন্নিরা সারাক্ষণ চিৎকার করে ঝগড়া করে, বাচ্চাকাচ্চারা সবসময় চিল-চিৎকার করে কাঁদছে সে বাড়িতে বসেও কোনও সৃষ্টিশীল কাজ হয় না। যারা এর মধ্যেও করতে পারে, তাদের অনেক প্রতিভা। তবে অন্যের কথা আমি আর কী বলি! এই লিখতে বসেছি, মা রেডিওটা খুলে দিয়েছে তারস্বরে। একটু কমিয়ে দিয়ে আসি।

দিশার বাড়িতে বেশ কিছুদিন খুব ভালো ছিলাম। ও তো টিভি, রেডিও কিছুই রাখেনি বাড়িতে, তাই শান্তিই শান্তি চারদিকে। বেশিরভাগ সময় নিজের গবেষণাগারে থাকে। তবে রান্নাটা নিজে করতে ভালোবাসে। একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা আমাকে দরজা খুলে দিল। একে আগেরবারও দেখেছি। বলল, খুকি তো সকাল থেকেই ওই ঘুপচি ঘরে ঢুকে বসে আছে। তুমি এসেছ, খবর দিচ্ছি
এত বড়ো বৈজ্ঞানিককে কেউ খুকি ডাকতে পারে ভেবে হেসে ফেললাম। দিশাকে খবর দিতে হল না। নিজেই চলে এল। আমার হাত ধরে বলল, এসে গেছ তুমি? অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম। ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। তুমি এখন কিছুদিন থাকবে তো? অনেক কথা আছে তোমার সাথে
আমি আজকেই বিকেলে ফিরে যাব
বেশ বেশ, তুমি তাহলে থাকছ। আমি জানতাম, তুমি আর আপত্তি করবে না। আমার পাশের ঘরে থাকবে
এই হল দিশা। ক্যালকুলাসের বোন যেন!
তুমি কান থেকে হেডফোন খুলে কথা বল। সব উল্টোপাল্টা শুনছ
দিশা নিজের কানে হাত দিয়ে বলল, উঁহু! এটা হেডফোন নয়। খুব দরকারি একটা চিপএটা দিয়ে... কী আশ্চর্য, তুমি এখনও হেডফোন আর চিপের মধ্যে কী পার্থক্য, তাই বুঝলে না! না থাক, আগে স্নান সেরে খাওয়াদাওয়া সেরে নাও। তারপর কথা বলছি
সত্যি তো! জিনিসটা হেডফোন নয়। ভারি অদ্ভুতরকমের দেখতে। প্রথমে নজর পড়েনি। আমার আজ আর বাড়ি ফেরা হবে না। মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম। আমাকে একটা দারুণ সুন্দর ঘরে থাকতে দিয়েছে দিশাএতরকমের পাখি ডাকছে যে মনে হচ্ছে কোনও ফরেস্ট-বাংলোয় আছি। কানের কাছে এত ভালো গান হলে টিভি, রেডিও কিছুই শোনার দরকার পড়ে না। জানালাগুলোয় নেট লাগানো। এত সবুজ আমি আগে কখনও দেখিনি। দুপুরে আমি লেখার খাতা নিয়ে বসলাম। সঙ্গে করে কিছু বইপত্র নিয়ে এসেছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। বিকেল থেকে সন্ধে। মাসি চা দিয়ে গেল তিনকাপ। বললাম, তিনকাপ চা কেন!
খুকি বলল, তিনকাপ চা দিতে
মাসি খুব কম কথা বলে। প্রয়োজনের বেশি একটা কথাও খরচ করে না। খুকি এসে গেল সঙ্গে সঙ্গেই। খুকি একা নয়, তার সাথে খোকাও আছে। তন্ময়। দিশার ভাই। আমাদের বছর পাঁচেকের ছোটো, সবে ফার্স্ট ইয়ার। দিশাকে অনেক সাহায্য করে। তিনজনের তিনকাপ চা। এক প্লেট বিস্কুট। বললাম, মাসি চা খেল না? দুপুরে তো ভাতও খেতে দেখিনি
দিশা আর তন্ময় দুজনেই হেসে ফেলল।
ওমা! কী এমন হাসির কথা বলেছি যে তোমরা হাসছ!
তন্ময় বলল, মাসি কিছুই খায় না। শুধু চার্জ দিতে হয় মাঝে মাঝে। কারণ, মাসি রোবট। আমাদের মতো মানুষ নয়। বাপি বানিয়েছে
অমন জলজ্যান্ত মানুষটা রোবট শুনে আমি তো হাঁ! দিশা বলল, মুখ বন্ধ কর
দিশা আর তন্ময়ের বাপি আর মা এখন বিদেশে আছেন। মাঝে মাঝেই ওনাদের বিদেশ যেতে হয়। দুজনেই নানারকম গবেষণায় ব্যস্ত থাকেন। দিশা আবার বলল, হ্যাঁ, ছোটোবেলায় আমরা যে মাসির কাছে মানুষ হয়েছি, অনেকটা তার মতোই চেহারাটা রেখেছিলেন বাপি। মাসি আমাদের বডিগার্ডে কাজও করে। একাই দশজনকে ঘায়েল করতে পারবে। বাপি-মা মাঝে মাঝেই বাইরে থাকেন, রোবট-মাসিই আমাদের দেখভাল করে
তন্ময় বলল, সবচেয়ে বড়ো কথা, মৃত্যু হবে না কোনওদিন
দিশা বলল, মেশিনের কি মৃত্যু হয়! তবে মাঝে মাঝে কলকবজা বিগড়ে গেলে আমি সারিয়ে নিই। খবরদা, মাসিকে রেগে গিয়ে কিছু বোলো না যেন। ইলেকট্রিক শক দিয়ে দেবে। অনেক চেষ্টা করেও এই সমস্যাটা ঠিক করতে পারিনি। আমি আর ভাই কতবার যে শক খেয়েছি! তবে ভালো আমাদের খুবই বাসে। মানুষ যেমন মাঝে মাঝে যন্ত্র হয়ে ওঠে ঠিক তেমনই যন্ত্রও কখনও কখনও মানুষ হয়ে যায়। আরে, তুমি তো বিষম খেয়ে গেলে! কেউ নাম করছে নিশ্চয়
দিশা আমার পিঠে চাপড় মারে। এইরকম চাপড় খেলে যে কোনও মানুষেরই পিঠে ব্যথা হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি ঠিক আছি। তন্ময় কি কলেজে গেছিল? এতক্ষণ তো দেখিনি
তন্ময় বলল, নাহ, আজ তো ছুটি ছিল। আমি দিদিকে হেল্প করছিলাম
দিশা নিজেও সারাক্ষণ পড়াশোনার মধ্যে থাকে। নামী একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট করছে। খুব শিগগিরই বাইরে পড়তে যাবে। তন্ময়কে কিছু একটা ইশারা করল ওআমার মাথাটা গরম হয়ে গেল।
অ্যাই, তোমরা কিছু গোপন করছ বলে মনে হচ্ছে!” না বলে থাকতে পারলাম না।
করছিই তো। রাত্তিরে বলব। এখন একটু গল্প করি না!
এখনই বল। রাত্তিরে ঘুমাবো, না তোমাদের সাথে বকবক করব!
সারাদুপুর তুমি ঘুমালে, কিন্তু আমরা কাজ করেছি। তাই এখন একটু রেস্ট নেবতারপর রাত্তিরে তোমাকে ল্যাবে নিয়ে যাবআমার আবিষ্কার সম্পর্কে তোমার একটা ধারণা হওয়া দরকার। আমি যেটা বানিয়েছি সেটা এখনও পর্যন্ত কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। আমি টাইম-মেশিন আবিষ্কার করে ফেলেছি। তোমাকে ডেকেছি সেইজন্যই
সে কী! এও কি সম্ভব? টা-ই-ম- মে-শি-ন! থেমে থেমে উচ্চারণ করি আমি।
হ্যাঁ, আমি নিজেও একবার ব্যবহার করেছি। তন্ময়ও করেছে। আমরা সম্রাট অশোকের সময়ে চলে গেছিলাম। আমি হরপ্পা আর মহেঞ্জোদারো থেকে ঘুরে এসেছি। তাজমহল তৈরি হতেও দেখে এসেছি
তা আমি কী করব? তোমার জন্য ভালো একটা ডাক্তার খুঁজব?
তুমি ভাবছ, আমি মজা করছি! আজ রাত্তিরেই তুমি বুঝতে পারবে
তন্ময় বলল, দিদির সাথে আমিও অনেকবার টাইম-ট্রাভেল করেছি
আমাকে কোথায় পাঠাবে?
তোমাকে আমরা ভবিষ্যতে পাঠাব। ওদিকটায় এখনও যাওয়া হয়নি। চল, এবার উঠি। তুমিও একটু ঘুমিয়ে নাওদিশা বলল।
ওরা উঠে পড়ল।

টাইম-মেশিনের অনেক গল্প পড়েছি। দিশা কীরকম টাইম-মেশিন বানিয়েছে কে জানে! আদৌ বানিয়েছে কি না সেটাই বা কে জানে! মাসি নাকি রোবট! উফ, কেউ বিশ্বাস করবে? সবাই ভাববে একগাদা মিথ্যে বলছে বা বানিয়ে বলছে। তবে আমি ওকে যতদূর চিনি তাতে জানি ও বানিয়ে কিছু বলছে না। একটু খ্যাপা হলেও খুবই ভালো মানুষ। স্কুলে আমাকে খুব ভালোবাসত, যদিও ও ফার্স্ট হত আর আমি লাস্ট!
রাত্তিরে ওরা আমাকে ওর ল্যাবে নিয়ে গেল। বাড়ির বেসমেন্টে ওর ল্যাব। এসি চলছে ফুল স্পিডে। ভেতরে নানারকম যন্ত্রপাতি। মনে হচ্ছে হীরক রাজার দেশে ছবির সেই যন্তর মন্তরে ঢুকে পড়েছি। যেখানে মগজ ধোলাই হত। তন্ময় বলল, দিদি, যখন গল্পটা লিখবে এতসব কিছুর বর্ণনা দিতে হবে না। তোমার বর্ণনা শুনে পাঠক কিছুই বুঝবে না। আমি ভালো করে ছবি এঁকে দেব এই যন্ত্রটার। এমনিতেই আমার অলঙ্করণের গুণেই তোমার গল্পের খামতিগুলো সব ঢাকা পড়ে যায়
তা বটে তন্ময় মাঝে মাঝে আমার গল্পের অলঙ্করণ করে দেয়। আমি ওর দিকে কড়া নজরে তাকালাম শুধু। কিছু বললাম না। উফ! আর কি ফিরে আসতে পারব?
একখানা হেলিকপ্টারের মতো গোল কাচের ছোট্ট ঘর। ভেতরে নানারকম সুইচ। টুনি বালবের মতো আলো জ্বলছে। পিঁ পিঁ করে কেমন একটা শব্দ হচ্ছে। দিশা আমাকে ভেতরে বসিয়ে দিল। বলল, তোমার সামনে নানারকম সুইচ দেখছ তো, ঘাবড়ি না তোমার এসবে কোনও কাজ নেই। আর এই নবটা খেয়াল কর। ডানদিকে ঘোরালে অতীতে আর বাঁদিকে ঘোরালে ভবিষ্যতে যেতে পারবেনবটা ঘোরাতে পারবে নিশ্চয়? একসময় আমরা টিভির চ্যানেল চেঞ্জ করতাম এরকম নব দিয়ে। ডেট আর টাইম ফিক্স করে দিচ্ছি। আজ থেকে একশো বছর পর তোমার নিজের শহর
কিন্তু ভাই, ফিরে আসব কী করে! যদি এমন হয় আর ফিরতেই পারলাম না? সারাজীবন আটকে রইলাম সময়ের জাঁতাকলে। কোনও এক অজানা দুনিয়ায়। যেখানে কেউ আমাকে ভালোবাসে না। চেনেও না
হ্যাঁ, সে সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কলকবজাগুলো মাঝে মাঝে বিগড়ে যায়। এখনও ভালো করে জিনিসটা তৈরি হয়নিঅতীতে গেলে তবুও ফিরে আসা যায়, কিন্তু ভবিষ্যতটা কোনও গ্যারান্টি দিতে পারছি না
ভয়ে আমার জলতেষ্টা পেয়ে গেল। অতি কষ্টে বললাম, একটু জল খাব
এই বৈজ্ঞানিকের কথা শুনে চলতে গিয়ে কী বিপদেই পড়লাম! এজন্যই ও নিজে ভবিষ্যতে না গিয়ে আমাকে পাঠাচ্ছে।  জীবনে হয়তো আর কার সাথেই দেখা হবে না। অশ্বত্থামার মতো আমাকে ঘুরতে হবে। মৃত্যুও হবে না!
আরে এত ভেঙে পড়ছ কেন? বিজ্ঞানের জন্য এটুকু আত্মত্যাগ করতে পারবে না? নাহ, তোমার সাথে আজকাল আর মজা করা যাবে না দেখছি। তুমি ভীষণ সিরিয়াস হয়ে পড়েছ কথা বলতে বলতে দিশা আমার কানে একটা কিছু গুঁজে দিল। বলল, এটা কান থেকে খুলবে না। আমি আর তুমি এটার সাহায্যে যোগাযোগ রাখব। আমরা কথা বলতে পারবতুমি যা যা দেখবে আমাকে জানাবে
আর আমি ফিরব কীভাবে?
তোমার ফেরার কি খুব দরকার?
তুমি আমার সঙ্গে গেলে ভালো হত। একা একা ওখানে থেকে কী করব?
ফিরে আসাও খুব সোজা। একঘণ্টার জন্য টাইম-ট্রাভেল করছ। সময় হয়ে গেলেই ফিরে আসবে
আচ্ছা, তাহলে তো আর চিন্তা কিছু নেই। তা এই হেলিকপ্টার কি আমাকে নিয়ে উড়বে?
এতদিন যা যা গল্প পড়েছ, সব ভুলে যাও। ভবিষ্যতের মানুষ তোমায় দেখতে পাবে না। তারিখ আর সময় ঠিক করে বসে পড়লেই হবে। তুমি এখানে বসে পড়, আর সময় নষ্ট কোরো না

ছোট্ট গোলমতো একটা কাচের ঘর। হেলিকপ্টারের মতো দেখতে হলেও হেলিকপ্টার ঠিক নয়কিছু একটা হাল্কা ধাতু দিয়ে জিনিসটা বানিয়েছে। ধাতুটার নাম জিজ্ঞাসা করব যদি ফিরে আসি আবার। আর কিছুই চিন্তা করতে পারছি না। মাথা আর কোনও কাজ করছে না। ঝিমুনি ধরেছে কেমন একটা। পিঁ পিঁ শব্দটা হয়েই চলেছে। ভেতরের আলো জ্বলছে, নিভছে ঘুমিয়েই পড়ি তাহলে। খুব শীতও করছে

আরে, কোথায় এলাম! সুইজারল্যান্ড নাকি! হ্যাঁ, তাই তো দেখছি। সুইজারল্যান্ড না হয়ে যায় না। দিশা বলল, আমাকে আমার নিজের শহরে পাঠাবে। একশো বছর পরের কাঞ্চনপুরেতাহলে কি ও কিছু ভুল করল? বরফ পড়ছে তুলোর মতো, মিহি বরফ। বরফের গোলা বানিয়ে ছেলেমেয়েরা খেলছে। এর ওর গায়ে ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। বরফ দিয়ে কী সুন্দর একটা পেঙ্গুইন বানিয়েছে। আমিও একটা বানাববরফ নিয়ে বসে গেলাম। কিন্তু কাজটা বেশ শক্ত দেখছি। আমার কিন্তু বেশি ঠাণ্ডা লাগছে না। বেশ আরামদায়ক লাগছে।
আমার মাথার ভেতর থেকে দিশার গলা ভেসে এল। আমাকে শুনতে পাচ্ছ?
হ্যাঁ, পাচ্ছি। বল
কী দেখছ এখন?
তুমি ভুল করে আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছ। এখানে বরফ পড়ছে। আমি বরফের গোলা বানিয়েছি
তুমি যেটা বিদেশ ভাবছ, ওটাই তোমার নিজের শহর। ভুলে যেও না তুমি এখন ভবিষ্যতে। ভালো করে দেখতে থাক আর আমাকে জানাবে সব
দিশা চুপ করে যায়। আমি বলতে শুরু করেছি, এটা আমার নিজের শহর! কিন্তু এটা কোন জায়গা? একটা লেকের ওপর বরফ জমেছে। কিছু ছেলেমেয়ে স্কেটিং করছে। খুব চেনা মনে হচ্ছে জায়গাটা। নিশ্চয়ই সিনেমায় দেখেছি। কত ছবির শুটিংই তো বিদেশে হয়
আরে বাবা, না! এটা বিদেশ নয়, তোমারই শহর
আমি বলে যাচ্ছি, তুমি শুনতে থাকো, কথার মাঝে বাগড়া দিও না। হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম, মন্দিরের আরতির শব্দ পাচ্ছি। ওই তো একটা মন্দিরের চুড়ো দেখা যাচ্ছেকেদারনাথ নাকি! জয় কেদারের জয়!
তোমাকে পাঠানোই আমার ভুল হয়েছে
সরি সরি। বলছি, না গো, কেদারনাথ নয়। এ তো আমাদের বন্ধু মনীষাদের বাড়ির সামনের সেই বিখ্যাত রামমন্দির। ওর বাড়ির সামনে একটা বড়ো পুকুর ছিল সেটাই এখন লেক হয়ে গেছে বরফ পড়েছে আর তাতে সবাই স্কি করছে। কত গাছ হয়েছে পাইন, ফার, ওক। গাছের ওপর বরফ পড়েছে। মনীষাদের বাড়িটা এখন ক্যাফে হয়েছে। ছবি তুলব কটা?
লাভ নেই, কিছুই আসবে না
এসে থেকে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখছি, মাথার ওপর দিয়ে কীসব উড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রথমে ভেবেছিলাম বিরাট কোনও পাখি হবে তারপর নিজের ভুল বুঝতে পারলাম। এগুলো পাখি নয়। একরকমের আকাশযান। এখন আর কেউ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে না। শূন্যমার্গে চলাচল করে, মানে আকাশপথে। সব গাড়িগুলোরই দুটো করে ডানা গজিয়েছে। পক্ষীরাজের মতো উড়ে বেড়াচ্ছে। আচ্ছা, এখন কি কেউ পক্ষীরাজের কথা কল্পনা করে? এসব বোকাদের কল্পনা। মাথার ওপর দিয়ে একটা ট্রেন চলে গেল। বলা ভালো, উড়ে গেল। আমি মাথায় হাত চেপে বসে পড়লাম। তবে একটা জিনিস দেখলাম গাড়িগুলোর কোনও শব্দ নেই। শব্দ আছে ঝিরিঝিরি বরফ পড়ার শব্দ। পাতার শব্দ।
হ্যালো। শুনতে পাচ্ছ? কথার উত্তর দাও না কেন? দিশার কণ্ঠস্বর মাথার মধ্যে গুগু করে উঠল।
ওহ! মাথার ওপর দিয়ে মনোরেল চলে গেল। আমার খুব ভয় করছিল
চড়ে নাও একবার মনোরেল। এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না
আমার টিকিট কাটার পয়সা নেই। ট্রেন থেকে নামিয়ে দেবে। অত উঁচু থেকে পড়লে আমি কি আর থাকব?
তোমাকে কেউ দেখতে পাবে না। চড়ে নাও
আমি মনোরেল ধরার জন্য স্টেশনে এলাম। একটাও লোক নেই। একদম ফাঁকা ঝকঝকে স্টেশন। টিকিট ঘরে একটা মেশিনের সামনে কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। ওটা হল টিকিট কাটার মেশিন। একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। আমি উঠে পড়লাম। জানালার ধারে বসলাম। এই স্টেশনে কিছুই বিক্রি হয় না। হকাররাও নেই। কিছু লোক উঠল ট্রেনে। ট্রেন দুলে উঠল। প্রচণ্ড স্পিডে ছুটতে শুরু করল। গতিই জীবন। তাই বলে এত! মাথা ঘুরছে। আমাকে নামিয়ে দাও! হে ভগবান, এই ট্রেন কখন থামবে? আশেপাশের লোক কেউ কার সাথে কথা বলছে না। কেমন একটা গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। সবার মাথা ন্যাড়া কেন বুঝলাম না। ছেলে হোক বা মেয়ে, সবাই ন্যাড়া। মুখগুলো দেখে মনে হচ্ছে যেন মুখোশ পরেছে। কেমন যেন সাদা আর ফ্যাকাশে মতন। পরের স্টেশনে ট্রেন থামতেই আমি নেমে পড়লাম। মনোরেল চড়ার সাধ মিটে গেছে এবার আমি ফিরবএটা কোন জায়গা বুঝতে পারছি না।
নন্দিনী, আমাকে শুনতে পাচ্ছ?
দিশা, আমি কোথায় আছি বুঝতে পারছি না। আমার শহরে যেতে চাই। তোমার মনোরেলে আর চড়ব না
মন দিয়ে ভাবতে থাক, কোথায় যেতে চাও। তোমার শহরের কোনও একটা জায়গার কথা ভাবতে থাক
চোখ বুজে নিজের স্কুলের কথা ভাবতে শুরু করলাম। আমার স্কুল আমার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর ছিল। এত গাছগাছালিতে ঘেরা ছিল যে কখনও মন খারাপ হত না।
চোখ খুলেই দেখি একটা পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে আছিসবুজে সবুজ হয়ে আছে। প্রচুর রঙবেরঙের ফুল হয়ে আছে। মৌমাছি আর ভ্রমর গুনগুন করছে। আম গাছে বোল এসেছে। এখানে শীতের কামড় নেই। এখানে বসন্ত। ভেতরে ছোটো ছোটো কটেজ। আমি ভেতরে ঢুকে পড়লাম। জলাশয়ে রাজহাঁস খেলছে। অনেক পদ্মফুল হয়েছে। স্বর্গ বলে যদি সত্যিই কিছু থাকে তবে তা এখানেইকটেজগুলো আসলে হস্টেল। পরির মতো ছোটো ছোটো বাচ্চারা লাল-নীল রঙের জামা পরে ছোটাছুটি করছে। গাছের তলায় ক্লাস চলছে। বাচ্চারা মন দিয়ে পড়া শুনছে। প্রচুর প্রজাপতি উড়ছে। দিদিমণিদের মুখ গম্ভীর নয়, বরং বেশ উজ্বল। এরা বোধহয় রোবট। মানুষ হলে এত হাসিখুশি হতে পারত না। এটাই আমার স্কুল। আজ থেকে একশো বছর পর আমার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার স্কুল দেখছি। বাচ্চাদের দেখছি। হ্যাঁ, এটা আমার নিজেরই স্কুল যেখানে এতদিন কাটিয়েছি। ওই তো সাইনবোর্ডে দেখছি আমার স্কুলের নাম। দিদিমণিরা কী পড়াচ্ছে? একটু শুনি তো! অস্কার ওয়াইল্ড-এর হিংসুটে দৈত্যর গল্প শোনাচ্ছে। আমিও গল্পটা শুনব। দিদিমণির পেছনে একটা সিনেমার পর্দার মতো জিনিস। তাতে একটা বদমাইশ দৈত্যকে দেখা যাচ্ছে। গল্প শেষ হবার পর বাচ্চারা হাততালি দিয়ে উঠল। আমিও হাততালি দিলাম। বাচ্চারা পরের ক্লাসের জন্য অন্য জায়গায় চলে গেল। পুরো জায়গাটা ফাঁকা এখন। সামনে একটা দীঘিতে জল টলটল করছে। দীঘিকে ঘিরে পাহারা দিচ্ছে শিরিষ, দেবদারু, পলাশ, অমলতাস, ছাতিম আরও অনেক গাছ যাদের নাম জানি না। দীঘিটা যেন ওদের ছোটোভাই বা বোন। দীঘির জলে আমার ছায়া পড়েনি। আমি যেন একটা ভূত! হ্যাঁ, এখানে তো আমি ভূত। এখানে বসন্ত কেন? এই প্রশ্নটাই মাথায় ঘুরছিল। হতে পারে এখানে ছোটো ছোটো বাচ্চারা আছে যারা কাচের মতো স্বচ্ছ, তাই এখানে চিরবসন্তআমার পেছনে দুটো বড়ো বড়ো প্রজাপতি উড়ছে। জলে ওদের ছায়া পড়েছে। পেছনে তাকিয়ে দেখি, ওরা প্রজাপতি নয়, ছোট্ট দুটো পরিকী আশ্চর্য! পরি কোথা থেকে এল?
আমরা অন্য গ্রহ থেকে এসেছি। পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের বরাবরই যোগাযোগ ছিল মাঝে মাঝে আসতাম এখানে। এখন পাকাপাকিভাবে এখানেই থাকি বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করি, গল্প করি, ওদের ওপর নজর রাখি, দেখভাল করি একটা পরি আমাকে বলল।
আমি বললাম, তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ?
হ্যাঁ। তুমি তো অতীতের মানুষ। আমাদের দেখার ক্ষমতা অনেক বেশি
সত্যিকারের পরি আছে জানতে পেরে আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল। অনেকগুলো পরি এসে আমাকে ঘিরে ধরে হাত ধরাধরি করে নাচতে শুরু করে দিল। বড়ো বড়ো চোখ করে আমায় দেখছিল।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে ঠাণ্ডা নেই কেন? সব জায়গায় দেখলাম বরফ পড়েছে, কিন্তু এখানে দেখছি বসন্ত
আমরা নিজেদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ করে রেখেছি। এখানের বাচ্চারাও খুব ভালো মনের, তাই আমাদের চেষ্টা সফল হয়েছে একটা ছোট্ট পরি আমাকে বুঝিয়ে বলল।
আমি হাতের তালুতে বসিয়ে ওকে আদর করলাম-ই সব থেকে ছোটো পরিদের মধ্যে।
এখানের মানুষরা সব ন্যাড়া কেন? আর মুখগুলো কেমন বর্ণহীন!
নিজেদের চুলের যত্ন করতে গিয়ে এতরকম এক্সপেরিমেন্ট করেছে যে সবাই ন্যাড়া হয়ে গেছে। মাথায় অনেকেই নকল চুল লাগিয়ে রেখেছে। মুখেরও এক অবস্থা পুঁচকে পরিগুলো কথা বলতে বলতে হেসে গড়িয়ে পড়ল। ওদের কারোর চুল গোলাপি, কারোর লাল, কারোর সোনালি, কারোর কালো।
কলকাতার নাম তোমরা শুনেছ?
হ্যাঁআআআ! সেই শহর এখন মরুভুমি। অনেক উট আছে ওখানে
তাই নাকি! আর জয়সলমীর?
ওখানে ঘন জঙ্গল। রেন ফরেস্ট হয়ে গেছে
আচ্ছা, এখানে দিদিমণিরা কি রোবট?
হ্যাঁ, রোবটও আছে, আর কিছু অন্য গ্রহের মানুষও আছে। কিন্তু আর আমরা গল্প করতে পারব না, অতীতের মানুষ। আমাদের অনেক কাজ আছে। তুমি আমাদের সঙ্গে থাকতে পারছুটির পর অনেক গল্প করব
তোমাদের ছোট্ট ঘরে আমি কেমন করে ঢুকব?
গাছের মাথায় ছোট্ট ছোট্ট পুতুলের বাড়ির মতো ঘরবাড়ি আগেই দেখেছি তখন ভেবেছিলাম পাখিদের ঘর
আমরা ম্যাজিক করে তোমাকে ছোট্ট একটা পরি করে দেব। ঐ দ্যাখো, দীঘির জলের মাঝখানে বড়ো পাথরটার ওপর বসে আছে সাতজন মারমেড
ওমা! কী সুন্দর দেখতে লাগছে। সাতজন মারমেড আমাকে দেখে হাত নাড়ল। ওদের শরীরের নিচের অংশ মাছের মতোআমি বললাম, তোমরা এখানে কী করছ?
আমরা বাচ্চাদের সাঁতার শেখাই, গল্প করি। জলের নিচে আমাদের প্রাসাদ আছে তুমি যাবে আমাদের সাথে? আমরাও অন্য গ্রহ থেকে এসেছি। এক সময় পৃথিবীর সমুদ্রে থাকতাম। মানুষদের থেকে দূরে সরে থাকতাম কিন্তু মাঝে মাঝে নাবিকদের চোখে ধরা পড়ে যেতাম
ইস! একদিন তোমাদের কত খুঁজেছি! তোমাদের সঙ্গে থেকে যেতে খুব ইচ্ছা করছে, কিন্তু ফিরে আমাকে যেতেই হবে মা নইলে খুব কাঁদবে
তুমি কি ভেবেছিলে সব গালগল্প? আমরা সবাই সত্যি সত্যি আছি। তুমি আমাদের সঙ্গে থাকলে খুব মজা হত সব পরিগুলো এক সাথে বলে উঠল।
মাকে কাঁদানোটা মোটেই ভালো নয়। তোমার ফিরে যাওয়াই শ্রেয় ভারী গলায় কথাটা শুনে চমকে উঠলাম।
সান্টাদাদু এসে গেছেন। হাতে অনেক গিফটের বাক্স। পরিরা সবাই মিলে সান্টাদাদুকে ছেঁকে ধরল। আমার জন্য কী এনেছ দাদু? সবার মুখেই একই প্রশ্ন।
আমি আস্তে আস্তে ফিরে চললাম। সান্টাদাদু আমাকে একটা লাল রঙের চিনার পাতা উপহার দিলেন। বললেন, তোমার লেখার খাতায় লাগাবে
মাথার মধ্যে দপ দপ করছে। দিশা ডাকছে।
কী গো, তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে? ফিরবে না?
আমার আর ফিরতে একটুও ইচ্ছে করছে না। সান্টার হরিণ ঘুরে ঘুরে ঘাস খাচ্ছে। দুটো পাখি হরিণটার সাথে খুব গল্প করছে। ওরা ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী
ওখানে গিয়েও অনেক বন্ধু করে ফেলেছ দেখছি!
হ্যাঁ, ফিরে এসে বলছি। আমি একবার আমার বাড়ি যেতে চাই। তারপর ফিরব
আমি একটা ভুল করে ফেলেছি। একশো বছরের বদলে তোমাকে পাঁচশো বছর পরের তোমার জায়গায় পাঠিয়ে ফেলেছি। আমার টাইম-মেশিনের এখনও অনেক গলদ আছে

এবার আমার বাড়ি যেতে হবে। দেখতে হবে বাড়িটা এখন কী অবস্থায়। মনে মনে চিন্তা করলাম, বাড়ি যাব, আমার বাড়ি। চোখ বন্ধ করলাম। চোখ খুলে যে জায়গাটা দেখলাম সেটা আমার বাড়ি নয়। একটা সি বিচ। এই সমুদ্র নাকি কৃত্রিমভাবে বানানো হয়েছে। প্রচুর লোক এখানে। এত ভিড় আর ভালো লাগছে না। অনেকে স্কুবা করছে, বোট চালাচ্ছে। এখানেও খুব ঠাণ্ডা।
কী করছ? দিশার কণ্ঠ আবার সক্রিয় হয়।
এইবার ফিরব

তারপর কী হল ঠিক মনে নেই। দেখলাম, আমি বসে আছি দিশার ল্যাবে সেই কাচঘেরা যন্ত্রটার মধ্যে। বললাম, তোমার যন্ত্র একদম সফল
কিন্তু মনে হচ্ছে না যে এখানে না ফিরলেই ভালো হত?
হ্যাঁ, খুব মনখারাপ লাগছে, আর ফিরতে ইচ্ছে করছিল না
আমাদেরও মনখারাপ লাগত টাইম-ট্রাভেল করার পর। তাই আমরা আর এতে চড় না ঠিক করেছি। সব বন্ধ করে রেখে দেব। কেউ কোনদিন কিছু জানবে না। যাই বল, বর্তমানই সবচেয়ে ভালোতোমার হাতে ওটা কী?
আমার হাতে সান্টাদাদুর দেওয়া সেই চিনার পাতা। আমার গল্পের খাতায় এটা লাগাব।
দিশা সব শুনে বলল, কিন্তু তুমি তো আর খাতা বা ডায়েরিতে লেখ না
তন্ময় আমার হাত থেকে পাতাটা নিয়ে দেখে আবার ফিরিয়ে দিল। গম্ভীর মুখ করে বলল, পাতাটা নকল। কৃত্রিম
দিশা আমার হাত থেকে পাতাটা কেড়ে নিল। পরীক্ষা করল তারপর বলল, পাঁচশো বছর পর হয়তো সত্যিকারের পাতা থাকবে না, সব নকল। তুমি যা দেখেছিলে সবই হয়তো সাজানো। কৃত্রিমভাবে বাচ্চাদের জন্য ওইরকম একটা স্কুল বানানো হয়েছে
যেই স্কুলে বাচ্চাদের স্বপ্ন দেখতে, কল্পনা করতে শেখানো হয়। কারণ, ওরা যে সবই ভুলে গেছে। তাই লেখক, শিল্পী আর তৈরি হয় না তন্ময় বলল।
সেটা বোঝার জন্য আমাদের আরেকবার পাঁচশো বছর পরের পৃথিবীতে যেতে হবে। তবে ক্ষতি কী? যে স্কুলে বাচ্চাদের এত যত্ন করে পড়ানো হয়, কড়া শাসন নেই, স্কুল থেকে ফিরে কোচিংয়ে ছুটতে যাওয়া নেই, মনের শান্তি আছে, রূপকথার জগত আছে, সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে শেখায় না এখানে। এই বোধহয় ভালো
মনে মনে ভেবে রেখেছি, যখন আমার প্রথম বই বেরোবে পাতাটা বইয়ের প্রথম পাতায় আটকে দেব
_____
অলঙ্করণঃ ঋতম মুখার্জী

10 comments:

  1. ritam er olonkoron khub sundor !

    ReplyDelete
  2. ভালো চেষ্টা

    ReplyDelete
  3. এই গল্পটি বাচ্চা থেকে আমার মত বুড়ো সবারই ভালো লাগবে । অতি সুন্দর বর্ণনা। কাহিনির সুরুতেই রোবট নিয়ে একটা ধারনা আর পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সব বয়েসের পাঠক/ পাঠিকা কিন্তু শেষ অবধি পড়বে । বেশি কচকচি নেই কিন্তু কাজের কাজ করে দিয়েছে । যে বাচ্চাদের গল্পটা বলছিলাম তারা এবার কিন্তু সবাই গুগল করছে টাইম মেসিন আর রোবট নিয়ে। একটা কথা কিন্তু মনে আসছে । আজ থেকে এক দেড়শ বছর পরে বেশ কিছু জায়গা জলে দুবে যাবে কারন মানুএর তৈরি পরিবেস দূষণ । এইটা যদি গল্পে দিতেন তবে আরো একটা কাজ হত । বাচ্চাদের কাছে আমরা যারা পরিবেশ কে বিষাক্ত করেই চলেছি তারা কিন্তু ওদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারতাম না।

    ReplyDelete
  4. Plz sobgulo combinate kore pdf din

    ReplyDelete
  5. বিজ্ঞান কম, রূপকথা বেশী।

    ReplyDelete