মহাকাশে ভয়ংকর আবর্জনা
বিশ্বজিৎ হালদার
যে মানুষ একসময় আগুন জ্বালতে পারত না, সেই মানুষ দীর্ঘ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়ে মহাকাশে জ্বালাচ্ছে আগুন!
মানুষের এই সভ্য হওয়ার মূলে তার অদম্য কৌতূহলই ছিল দায়ী।
আজও সেই কৌতূহল, অজানাকে জানবার ইচ্ছা মানুষকে অস্থির করে রেখেছে।
চাঁদ, সূর্য কী? এই প্রশ্ন করতে করতে
পৃথিবী এবং অনন্ত আকাশে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের রহস্য জানতে জানতে মানুষ পৌঁছে গেছে সুদূর
মহাকাশে। মহাবিশ্বে খুঁজে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর
মতো গ্রহের ঠিকানা। খুঁজছে নিজেদের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব। এই
কৌতূহলের তাড়নায় খোঁজার মাঝে থাকতে গিয়ে নিজেদের বাসস্থান পৃথিবীকে যেমন সে ভরিয়ে তুলেছে
নানান দূষণ এবং আবর্জনায় তেমনি মহাকাশেও জড়ো করছে আবর্জনা, ছড়াচ্ছে দূষণ।
মানুষ যেখানে আবর্জনাও সেখানে। যেন
একে অপরের চিরকালের সাথী!
প্রায় ৬০ বছর ধরে মানুষ মহাকাশে যাতায়াত করছে।
১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত ধরে প্রথম মহাকাশ অভিযানের শুরু।
১৯৫০-এর দশকে যা কল্পনাও করা
যেত না গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানের জাদুতে মানুষ সেই সকল অসাধ্য সাধনে এগিয়ে যেতে থাকে।
আবিষ্কার হয় বিজ্ঞানের অজানা বহু তথ্য। পৃথিবীর এক প্রান্তের সাথে
আরেক প্রান্তের সংযোগ স্থাপন হয় স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মহিমায়।
মহাকাশে রাশিয়ার স্পুটনিক-১ যাওয়ার পর একের পর এক
দেশ এই গবেষণায় এগিয়ে আসে। যান পাঠানো নিয়ে রীতিমতো দেশগুলির মধ্যে
প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। মহাকাশে মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে, আর ততই জমতে থাকে আবর্জনার স্তূপ। যা
বিজ্ঞানীমহলে পরিচিত ‘স্পেস জাঙ্ক’
নামে।
স্পুটনিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রথম এধরনের স্পেস জাঙ্কের সৃষ্টি।
তারপর থেকে পরিত্যক্ত উপগ্রহ, বিভিন্ন রকেটের নানা অংশ এবং অন্যান্য আবর্জনা যা অসংখ্য মহাকাশ অভিযানের
ফলে সৃষ্টি হয়েছে দিনের পর দিন মহাকাশে জমা হওয়া, পৃথিবীর চারপাশে
কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান এইসব আবর্জনা বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তার কারণ
হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পৃথিবীর আবর্জনা নিয়েই
মানুষের নাজেহাল অবস্থা। তার সাথে এবার যুক্ত হয়েছে
মাথার ওপর আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশের আবর্জনা!
আমরা পৃথিবীর আবর্জনা এবং দূষণের ব্যাপারে প্রথমদিকে গুরুত্ব দিইনি।
তবে দেরিতে হলেও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি।
চেষ্টা করছি পৃথিবীকে জঞ্জালমুক্ত, দূষণমুক্ত করার। যদিও এখনও তার কূলকিনারা খুঁজে পাইনি।
তা নিয়ে আমাদের প্রায় দিকভ্রান্ত অবস্থা। এখন
প্রশ্ন হচ্ছে, এই মহাকাশ আবর্জনা মানুষের
কাছে সেইধরনের দুশ্চিন্তার কারণ কি না? মহাকাশ আবর্জনার পরিমাণ
এবং আগামীদিনে এগুলি কী ধরনের বিপদ নিয়ে আসতে পারে, সে বিষয়ে
দৃষ্টিপাত করলে বুঝতে পারব এগুলো পৃথিবী এবং মানবসভ্যতার জন্য কতটা ভয়ংকর।
ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা অনুসারে
তিনটি অরবিট বা কক্ষপথে স্যাটেলাইট বসানো হয়। প্রত্যেকটি কক্ষপথের ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা হচ্ছে, নিম্ন কক্ষপথ ১২৪০ মাইল বা ২০০০ কিমি, মধ্য কক্ষপথ ২০০০ কিমি থেকে ৩৫,৭৮৬ কিমি পর্যন্ত।
উচ্চ কক্ষপথ ৩৫,৭৮৬ কিমি থেকে অসীম। এই
তিন কক্ষপথে যে আবর্জনার স্তূপ জমা হয়েছে সেখানে রয়েছে স্যাটেলাইটের অচল যন্ত্রপাতি, মার্বেল আকারের লেন্স কভার, স্ক্রু, বোল্টু, রকেটের বুস্টার থেকে শুরু করে রকেট বা স্যাটেলাইটের
ছুটে যাওয়া ক্ষুদ্র অংশ, এমনকি মানুষের ব্যবহৃত জিনিস এবং মলমূত্রের
মতো বর্জ্য পদার্থও। মানুষের তৈরি এইসব বস্তুর বেশীরভাগই
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর চারপাশে ঘন্টায় প্রায় ২৮,০০০ কিমি ভয়ংকর উচ্চগতিতে ছুটে
চলেছে।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার অনুমান অনুযায়ী এই মুহূর্তে মহাকাশে
৫ লক্ষেরও বেশি জঞ্জালের টুকরো ভেসে বেড়াচ্ছে। এছাড়া
কয়েক লাখ আবর্জনা আছে যা খুবই ছোটো হওয়ায় রাডারের মাধ্যমে ট্র্যাক করা যাচ্ছে না।
নাসার বিজ্ঞানী নিকোলাস জনসনের মতে মহাকাশ অভিযানে সবচেয়ে বড়ো
ঝুঁকির কারণ এইসব রাডারের আওতায় না আসা জাঙ্কগুলি। ১৯৯৩ সালে ভূ-পৃষ্ঠের রাডার দিয়ে চালানো নজরদারিতে দেখা গেছে, আকারে
১০ সেন্টিমিটারের চেয়ে বড়ো (৪ ইঞ্চির বেশি) ২২ হাজার বস্তু কক্ষপথে ঘুরপাক খাচ্ছে, যার ওজন প্রায় ৮,০০০ টন।
ESA (Economics & Statistics
Administration)-এর মহাকাশ আবর্জনা দপ্তরের তথ্যানুযায়ী এই আকারের আবর্জনার
সঙ্গে ধাক্কা লাগলে আকাশযান বা কৃত্রিম উপগ্রহের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
এই দপ্তরেরই অফিসার ইনচার্জ হোলগার ক্র্যাগ জানিয়েছেন,
১ মিটারের চেয়ে বড়ো (৩.২৫ ফুট) এমন ৫,০০০ বস্তু এবং ‘উড়ন্ত বুলেট’ নামে পরিচিত ১ সেন্টিমিটার (হাফ ইঞ্চি) আকারের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ আবর্জনা কক্ষপথের চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে।
এই আবর্জনার পরিমাণ আরও বাড়িয়েছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা।
২০০৭ সালে চিন একটি অ্যান্টি স্যাটেলাইট অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়।
এতে একটি আবহাওয়া স্যাটেলাইট বিধ্বস্ত হয়ে তা অন্তত দেড় লাখ খণ্ডে
ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি খণ্ডের আকার ১ সেমি বা
তার কাছাকাছি। এর দু’বছর পর মহাকাশে একটি সচল এবং একটি অচল স্যাটেলাইট বিধ্বস্ত হয়।
এতে আবর্জনার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এই
গবেষণার প্রধান ডোনাল্ড কেসলার বলেন, “এ দুটি ঘটনায় কক্ষপথে গত ২৫ বছরে যা আবর্জনা
জমেছিল, তার থেকে দ্বিগুণ হয়েছে।”
তিনি এও বলেন, “পরিস্থিতি খুবই সঙ্কটজনক। কারণ,
সংঘর্ষের ফলে আবর্জনার পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। এতে
আমরা সেখানকার পরিবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি।”
পৃথিবীর চারপাশ থেকে এইসব ঘুরন্ত আবর্জনা না সরালে যে ক্ষতির বা
বিপদের সম্ভাবনা আছে তার কয়েকটি হলঃ
ধরো, তুমি টেলিভিশনে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনাময় লাইভ ক্রিকেট ম্যাচ
দেখছ। এমন সময় অ্যাঁ ওঁ আঁ আঁ করতে করতে কাঁপতে কাঁপতে হঠাৎই টিভিটা
বন্ধ হয়ে গেল। তুমি ভাবলে কেবল লাইনে গোলযোগ।
তড়িঘড়ি কেবল অপারেটরকে ফোন করতে গিয়ে দেখলে তোমার স্মার্টফোনটাও
কাজ করছে না। কোনও টাওয়ারই নেই!
পাশের ঘরে তোমার বাবা যে নেটে কাজ করছিলেন তিনিও বিরক্ত মুখে বেরিয়ে
কী যেন বিড়বিড় করতে লাগলেন। হ্যাঁ, হঠাৎ এমনভাবেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আসলে
এইসব ঘটনার কারণ হতে পারে মহাকাশের আবর্জনা। কক্ষপথে
থাকা স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংঘর্ষের মাধ্যমে পৃথিবীর টেলি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত
হতে পারে। এই ভাবনা থেকেই মহাকাশকে আবর্জনামুক্ত
করতে পরীক্ষামূলকভাবে উদ্যোগ নিয়েছে জাপান।
নোবো ওকাডা এইসব জাঙ্ক থেকে মুক্তি দিতে চান।
কারণ, তাঁর আশঙ্কা এরপর আর স্যাটেলাইট সঙ্কেত পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছবে
না। ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাবে
না। জিপিএস ন্যাভিগেশন ঠিকমতো না
চলায় গাড়ি ভুল রাস্তায় চলে যাবে। এই
সমস্যার সমাধান করতে ওকাডা সিঙ্গাপুরে ‘অ্যাষ্ট্রক্সেল’ নামের একটি কোম্পানি খুলেছেন।
তিনি একা নন, মহাকাশে বেসরকারি
উদ্যোগের জোয়ার এসেছে। যাকে
বলা হচ্ছে ‘নিউস্পেস ইন্ডাস্ট্রি’।
মহাকাশ গবেষণায় যুক্ত দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক কুপ্রভাব পড়তে পারে। ধরা
যাক, কোনও দেশ ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৬,৪৫৬,২৫০,০০০ টাকা খরচ করে একটা স্যাটেলাইট
পাঠাল। সেটি সামান্য বর্জ্যের ধাক্কায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেল। তখন
মনে হতে পারে, এসব আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য আমরা
আগে থেকেই কাজ শুরু করতে পারতাম!
পৃথিবীর আকাশ সীমানা ছাড়িয়ে মহাকাশে মানুষের যে যাতায়াত তা পুরোপুরি
বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কেননা, এমন একদিন আসবে যখন
এই আবর্জনার ফলে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে বস্তুর ঘনত্ব অনেক বেড়ে যাবে।
যাতে অনেক সংঘর্ষ ঘটবে এবং প্রতিটি সংঘর্ষের ফলে আরও বিপুল পরিমাণ
আবর্জনার সৃষ্টি হবে। যার ফলস্বরূপ একসময় প্রকৃতপক্ষে
মহাকাশযান পাঠানোই অসম্ভব হয়ে যাবে।
আবর্জনাগুলো আকারের থেকেও বেশি ভয়ংকর সেগুলোর গতির জন্য। একটা
এক সেন্টিমিটারের চেয়েও ছোটো বস্তু ঘন্টায় ২৮,০০০ কিলোমিটার বেগে কোনও কৃত্রিম উপগ্রহ
বা মানুষবাহী নভোযানের সাথে গুঁতো লাগালে তার পরিণতি হবে ধ্বংসাত্মক।
সম্প্রতি এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে,
রাশিয়ার Briz-m স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে।
এই যান আকাশে ওড়ার কিছু সময়ের মধ্যে পৃথিবীর আকাশ সীমানা অতিক্রম
করতেই কক্ষপথে অবস্থান নেওয়ার সময় মহাজাগতিক বস্তুর সাথে ভয়ংকর এক ধাক্কায় অষ্ট্রেলিয়ার
বুকে আছড়ে পড়ে। তবে সেবার কোনও প্রাণহানি হয়নি।
বর্তমানে দিন দিন যেভাবে মহাকাশে যান পাঠানো এবং তার সাথে মহাজাগতিক
আবর্জনা বেড়েই চলেছে, সে হিসেবে বিপদ যে কোনও সময় ঘটতে পারে। এখনই
সাবধান না হলে পৃথিবীর বুকে নেমে আসতে পারে চরম বিপর্যয়!
বড়ো উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, মহাকাশে পৃথিবীর কক্ষপথের চারপাশে মানুষসৃষ্ট আবর্জনা ছাড়াও ছোটোবড়ো নানান
আকারের অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণুপুঞ্জও ভেসে বেড়াচ্ছে। যেগুলোর
বেশিরভাগই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এসে ছাই হয়ে যায়।
অনেকসময় বড়ো অ্যাস্টেরয়েড বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবীর বুকে আছড়ে
পড়ে, যাকে আমরা উল্কাপাত বলি।
এইধরনের গ্রহাণুপুঞ্জের সাথে আবর্জনার ধাক্কায় আরও হাজার হাজার
বস্তু তৈরী করতে পারে এবং ঐ হাজার হাজার বস্তু লক্ষ লক্ষ আরও বস্তুর সাথে ধাক্কা লাগিয়ে
আবর্জনার পরিমাণ বাড়াতে পারে। তবে
জঞ্জালগুলো অনন্তকাল ধরে ভেসে বেড়ায় না। কোনও
না কোনও সময় বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়।
টুকরোগুলোর গতি কমতে কমতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কাছাকাছি চলে আসতে
থাকে। এদের কক্ষপথের দূরত্ব অনন্তকাল
এক থাকে না। কমতে কমতে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের
টানে ভূ-পৃষ্ঠের দিকে ছুটে আসতে থাকে।
এই প্রক্রিয়াকেই আরও তাড়াতাড়ি করতে এখনও পর্যন্ত অনেক প্রস্তাব
শোনা গেছে। যেমন বিদ্যুৎ তরঙ্গের মাধ্যমে
মহাকাশ জঞ্জালের গতি কমিয়ে সেগুলিকে দ্রুত বায়ুমণ্ডলের ওপর ফেলে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়ার
পরিকল্পনা।
দেরিতে হলেও মহাকাশ আবর্জনা পরিষ্কার করতে বেসরকারী নানা উদ্যোগ
এবং পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পেন্টাগনের ডারপা (ডিফেন্স অ্যাডভ্যান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সির) আবর্জনা
সরিয়ে আনার জন্য হারপুন, জাল ও ছাতা আকৃতির কিছু প্রযুক্তির সাহায্যে
‘ক্যাচার্স মিট’ নামের একটি যন্ত্রের কথা বলেন।
এই যন্ত্রের সাহায্যে আবর্জনাগুলো টেনে নিরাপদ দূরত্বে একটি কক্ষপথে
ছেড়ে দিয়ে আসার কথা বলা হয়, অথবা পৃথিবীর আরও কাছাকাছি নিয়ে আসার কথা বলা হয়,
যাতে বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
জার্মান বিজ্ঞানীরা মহাকাশের ময়লা সরাতে লেজার রশ্মিকে কাজে লাগানোর
চেষ্টা করছেন। একই বিষয়ে গবেষণা করছেন অষ্ট্রেলিয়ার
একদল বিজ্ঞানীও। অষ্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির
‘রিসার্চ স্কুল অফ অ্যাস্ট্রোনমি অ্যাণ্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর পরিচালক ম্যাথিউ কোলেস মনে করছেন, আগামী দশ বছরের
মধ্যে লেজার রশ্মি দিয়ে মহাকাশের আবর্জনা পরিষ্কার সম্ভব হতে পারে।
ইতিমধ্যে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সঙ্গে চুক্তি করেছে অষ্ট্রেলিয়া।
এর আওতায় ‘মাউন্ট স্ট্রমলো
অবজারভেটরি’-তে ইনফ্রারেড লেজার সম্বলিত টেলিস্কোপ দিয়ে আবর্জনার
অবস্থান নির্ধারণের কাজ চলছে। যাতে
লেজার দিয়ে আবর্জনা শনাক্ত করে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা যায়।
কোনোতোরি |
সম্প্রতি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর মহাকাশের আবর্জনা সরাতে জাপান
একটি স্বয়ংক্রিয় মহাকাশযান পাঠিয়েছে। যার
জাপানি নাম ‘কোনোতোরি’। বাংলা
ভাষায় ‘সারসপাখি’। অ্যালুমিনিয়াম
এবং স্টিলের তার দিয়ে তৈরি প্রায় ৭০০ মিটার লম্বা একটি শিকলের সাহায্যে মহাকাশে থাকা
আবর্জনার গতি স্তিমিত করে সেটিকে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
মনে করা হচ্ছে সব মিলিয়ে ১০ কোটিরও বেশী নানান ধরনের আবর্জনা রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, পিচ্ছিল এবং ইলেকট্রো ডায়ানামিক শিকলটি কোনও বস্তুকে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার
মতো শক্তি উৎপাদন করবে। আবর্জনা
বস্তুকে সেটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে ঠেলে দেবে। যার
ফলে বস্তুটি সম্পূর্ণ পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিজ্ঞানী, গবেষক ও বিভিন্ন
উদ্যোগকারীদের চিন্তা-ভাবনা, পরিকল্পনা এবং আপ্রাণ চেষ্টা মহাকাশের
আবর্জনা সরাতে কতটা কার্যকরী এবং সফল হয় সেটাই দেখার।
তবে পারতে আমাদের হবেই। কেননা, আমাদের
জীবন এখন স্যাটেলাইট নির্ভর। মহাকাশে যাতায়াত বন্ধ করে দিলে পৃথিবীতেও
অনেক কিছু থেমে যাবে। ফিরে যেতে হবে পুরনো দিনে।
তাই মানুষ মহাকাশে যাবেই, সামনে যতই বাধা থাক। আবর্জনা সাফ করে মানুষ চলার পথ ঠিক তৈরি
করে নেবে। মানুষের কৌতূহল তো থেমে থাকবার
নয়। সেও তো ঐ মহাকাশের মতো অনন্ত!
আর আবর্জনা? সেও কি অনন্ত?
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment