গ্যাঁড়ার কাণ্ড
প্রকল্প ভট্টাচার্য
এক
গ্যাঁড়া ছিল একটা পাকা চোর। তার আসল নাম সবাই ভুলেই গেছে। ছোটোবেলা থেকেই সে এত এত জিনিস গেঁড়িয়েছে, যে ওই গ্যাঁড়া নামটাই চালু রয়ে গেছে।
তো গ্যাঁড়া একবার মোক্ষম কেসে ধরা পড়ল। উকিলকে বলল, “দেখুন দাদা, এ-যাত্রা বাঁচিয়ে দিন, আপনাকে ডবল টাকা দেব।”
সব শুনেটুনে আদালতে উকিল বলল, “ধর্মাবতার, এই গ্যাঁড়া এক
ভয়ংকর চোর। একে আপনি দশ বছরের কারাদণ্ড দিন, সেটাও পৃথিবীর
বাইরে, বুধগ্রহে, যাতে ওর ভালোমতো শিক্ষা হয়! জীবনে আর চুরি করবার কথা না ভাবে!”
জাজসাহেব সেই রায়ই দিলেন। গ্যাঁড়া
তো রেগে আগুন!
“ঈশ! উকিল হয়েছে! বললাম বাঁচিয়ে দিতে, তো সে পাঠিয়ে দিল জেলখানায়, তাও
পৃথিবীর বাইরে!”
উকিল বললেন, “আরে চুপ চুপ! ইচ্ছে করেই এমন সাজা চেয়েছি তো! বুধগ্রহে গরমটা
একটু বেশি বটে, কিন্তু মাত্র ৮৮ দিনে একবছর
হয়। তার মানে কোনওমতে আড়াই বছর কাটালেই দশ বছরের সাজা শেষ!”
দুই
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গ্যাঁড়া ভাবল সত্যিই চুরিচামারি ছেড়ে দেবে। চাকরি তো
ওকে কেউ দেবে না, তাই ঠিক করল ব্যাবসা
করবে। কী ব্যাবসা? না, গাড়ি সারাইয়ের। ওর এক মাসতুতো ভাই ঢ্যাঁড়া এই ব্যাবসা করেই তো এত বড়োলোক হয়েছে! ব্যস, যেমন
ভাবা তেমন কাজ। খুলে ফেলল ‘মহাবিদ্যা
বাইক রিপেয়ারিং অ্যান্ড স্পেয়ার পার্টস’। নিচে ক্যাচলাইন ‘উই স্পেয়ার নাথিং’।
কিন্তু খুললেই তো হল না, খদ্দের চাই যে! কেউই আসতে চায় না গ্যাঁড়ার দোকানে।
একদিন হঠাৎ দু’জন নীল রঙের জীব, যাদের মাথাগুলো বড়ো আর তার থেকে দুটো করে অ্যান্টেনা বেরিয়ে
আছে, একটা অদ্ভুত দেখতে গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে এসে হাজির হল
ওর দোকানে। একটু চিং-মিং
করবার পর পরিষ্কার বাংলাতে বলল, “দাদা, আমাদের
স্পেস-বাইকটা একটু সারিয়ে দেবেন? একটু
তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয়।”
গ্যাঁড়া উঠল, গাড়িটা এদিক থেকে দেখল, ওদিক
থেকে দেখল, কিছুই বুঝল না। তবু গম্ভীর স্বরে বলল, “কী প্রবলেম হয়েছে?”
“স্টার্টই হচ্ছে না! সবরকম চেষ্টা করেছি, তবুও...”
“হুম!” গ্যাঁড়া ভাবল, স্পেস-বাইক
নিশ্চয়ই রেস-বাইকের ভাইই হবে। কপাল ঠুকে সে
গাড়িটাকে বাঁদিকে হেলিয়ে প্রায় মাটিতে শুইয়ে দিল, আবার দাঁড় করিয়ে দিল। ব্যস, এবার
বোতাম টিপতেই ফটফটিয়ে চালু হয়ে গেল গাড়ি! নীল জীবগুলো তো আনন্দে আটখানা! গ্যাঁড়াকে
টাকা তো দিলই, পারলে মাথায় তুলে নাচে! গ্যাঁড়া তখন বলল, “আপনারা মনে হচ্ছে এলিয়েন?
এই গ্রহে নতুন?”
“ঠিক ধরেছেন দাদা! কী করে বুঝলেন? আমাদের চেহারা দেখে?”
“নাহ্, এই গ্রহেও আজকাল কতরকম
সাজাগোজার ফ্যাশন বেরিয়েছে তো।”
“তাহলে নিশ্চয়ই এই স্পেস-বাইকটা
দেখে?”
“তাও নয়। গাড়িরও রকমারি মডেল বেরিয়েছে আজকাল।”
“তাহলে? তাহলে?” এলিয়েনদুটোর কৌতূহল বেড়েই চলেছে।
“দু’চাকার গাড়ি স্টার্ট করবার যে কায়দাটা এখানকার বাচ্চারাও জানে, সেটা
আপনারা জানেন না দেখেই বুঝলাম আর কী!”
তিন
গ্যাঁড়াকে এলিয়েনদুটোর এতই ভালো লেগে গেল, তারা বলল, “চলুন দাদা আমাদের
গ্রহে, থাকবেন আরামে।”
গ্যাঁড়া বলল, “সে তো ভালো কথা।
ভিনগ্রহে কয়েকবছর থাকবার অভিজ্ঞতাও আমার আছে। কিন্তু কাজকর্ম কী করব সেখানে?”
শুনে এলিয়েনদুটো একটু চিন্তায় পড়ে গেল। সত্যি তো, ওদের গ্রহে কোনও গাড়িই তো খারাপ হয় না। তাহলে গ্যাঁড়া সারাবেটা কী!
গ্যাঁড়াই বুদ্ধি দিল, “আরে,
আপনাদের রাস্তাঘাট আছে তো? সেগুলো বানাবার লোক আছে তো?”
“হ্যাঁ, তা আছে। কিন্তু তারা তো খুব যত্ন করে রাস্তা বানায়!”
“যারা গাড়ি বানায় তারা?”
“তারাও তো নিঁখুত গাড়ি বানায়!”
“যারা তেল ভরে? ভেজাল-টেজাল...”
“প্রশ্নই ওঠে না!”
“বুঝেছি। ঠিক আছে, চলুন। আমি
গিয়ে ব্যবস্থা করে নিচ্ছি।”
তারপর গ্যাঁড়া এলিয়েন দু’জনের
সঙ্গে ভিনগ্রহে চলে এল। এসেই তিনদিন তিনটে মিটিং ডাকল রাস্তা বানাই, গাড়ি বানাই আর তেল ভরাইদের সঙ্গে। তাদের বোঝাল, ভেজাল মেশালে
তাদের ব্যাবসার কত তাড়াতাড়ি উন্নতি হতে
পারে। ব্যস, আর কী চাই! ভিনগ্রহেও রাস্তা খারাপ হতে
থাকল, গাড়ি খারাপ হতে থাকল আর তেলে ভেজাল
বেরোতে থাকল।
এদিকে গ্রহের একমাত্র গাড়ি সারাইয়ের দোকান হল গ্যাঁড়ার ‘মহাবিদ্যা বাইক রিপেয়ারিং অ্যান্ড স্পেয়ার
পার্টস’। নিচে ক্যাচ লাইন ‘উই
স্পেয়ার নাথিং’। তার নিচে আবার
লেখা ‘উই হ্যাভ নো ব্রাঞ্চেস’!
ভিনগ্রহে রমরমিয়ে চলতে লাগল গ্যাঁড়ার দোকান।
------
ছবিঃ আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment