গল্পের ম্যাজিক:: রাজামশাইয়ের পোর্ট্রেট - অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়


রাজামশাইয়ের পোর্ট্রেট
অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

কেউ জানে না যে ছবিটাকে আমি দেখতে পাই। একমাত্র আমিই দেখতে পাই। বিশাল অন্ধকার ঝুপসি ঘরটার মধ্যে উত্তরদিকের ফাঁকা দেয়ালটার উপরে ওই একখানাই মাত্র ছবি টিকে আছে। আগে নিশ্চয়ই আরও ছবি ছিল, অজস্র, অগুন্তি। চারপাশের দেয়ালগুলোতেও নিশ্চয়ই শোভা পেত সে সব। এখন সেই রাজাও নেই, রাজত্বও নেইকেবল এই ভাঙাচোরা মঞ্জিল আর দেয়াল ভর্তি মাকড়সার জাল, বাগানময় জঙ্গল, আগাছা, পোকামাকড়, হাঁ করে থাকা কড়িবরগার কাঠ – সব মিলিয়ে একটা গা ছমছমে পরিবেশ। কেবল ওই ছবিটাই যে কেমন করে এত কিছুর মধ্যেও টিকে গেল, বুঝে উঠতে পারি না। এও বুঝি না যে আর কেউ, কেন, কখনও ছবিটাকে দেখতে পায় না। আমাদের ক্লাসের বুধোকে এনে দেখিয়েছি, শাম্বকে এনে দেখিয়েছি, এমনকি খুব সাহস করে বড়ো ক্লাসের সোহমদাকেও একদিন এনে দেখিয়েছিলাম। সবাই কেমন হ্যা হ্যা করে হেসে বলে গেল, “তুই নিশ্চয়ই দিনে দিনেও স্বপ্ন দেখিস রে পিন্টু!” আমার ভারী রাগ হয়েছিল তখন ছবিটার উপর। একমাত্র সোহমদা আমার পিঠে হাত দিয়ে বলেছিল, “তোর নিশ্চয়ই কোনো একটা সুপারপাওয়ার আছে, আর নয়তো ছবির ওই লোকটা নিশ্চয়ই তোকে কিছু বলতে চায়। তাই সে একমাত্র তোর চোখেই ধরা দিচ্ছে।” এই সব শুনে আমার বুকের ভেতরটাও কেমন যেন ঢিপঢিপ করে উঠেছিল। লোকটার আমায় কীই বা বলার থাকতে পারে!
এমনভাবে ‘লোকটা, লোকটা’ করেও বলা উচিত নয়। আমি জানি ওঁর নাম দিগিন্দ্রনারায়ণ। আমাদের এই হাঁসখালি অঞ্চলের একসময়কার রাজা ছিলেন উনি। কেবল কি হাঁসখালি! ভাগীরথী নদীর ওপারে ওই চরমুকুন্দপুর, এদিকে শীতলপুর, ছোটসাহেবগঞ্জ, পশ্চিমে নবগ্রাম অবধি নাকি তাঁর রাজত্ব ছিল। ঘোড়াশালে ঘোড়া আর হাতিশালে হাতি ছিল কিনা জানি না, তবে শুনেছি লেঠেল ছিল প্রচুর। ছবির মতো সুন্দর এক রানিমা ছিলেন, কিন্তু রাজামশাইয়ের কোনো ছেলেপুলে ছিল না। অনেক কষ্টে যদি বা এক ছেলে হয়েও ছিল, সেই ছেলের জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই রানিমা মারা গেলেন। রাজাও আর বেশিদিন বাঁচলেন না। তারপর সেই ছেলের যে কী হল, কারা যে সব বারো ভূতে এই সম্পত্তি লুটেপুটে খেল – সে সব গল্প আমার বাবা-কাকাদের কাছে এক-আধবার শুনেওছি বোধহয়। কিন্তু সে সবে আমার কোনো উৎসাহ ছিল না। কেবল পুকুরপাড়ে বসে বসে ভাবতাম ওই রাজপুত্তুরের শেষ অবধি কী হয়েছিল। সে কি অনেক দূরে কোথাও পালিয়ে গিয়েছিল? সে কি এখনও বেঁচে আছে? সে কি সত্যিই একদিন এই হাঁসখালিতে ফিরে আসবে? এলে কি তবে সেও আমার মতো ছবিটাকে দেখতে পাবে? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে আমি যেন কোথায়, কোন সুদূরের দেশে, মনে মনে হারিয়ে যেতাম। সব কিছু স্বপ্নের মতো মনে হতভরদুপুরে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে এই জঙ্গলের ভিতরে, পোড়ো বাড়িটার ভিতরে বসে থাকতাম। ছবির রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণও তখন সেই ছবির ভিতর থেকেই কটমটে চোখে আমার দিকে চেয়ে থাকতেন। আমি কান পেতে শুনতাম বাগানের বড়ো বড়ো গাছগুলোর ভিতর দিয়ে সরসর করে হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। উপরে কড়িবরগার কাঠগুলোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতাম একদিন ঠিক, সেই হারিয়ে যাওয়া রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণের একমাত্র সন্তান, রাজপুত্র সোমেন্দ্রনারায়ণ আবার এই হাঁসখালিতে তাদের রাজত্বে ফিরে আসবে। আমরা আবার রূপকথার মতোই এই রাজবাড়িটাকে সেজে উঠতে দেখব

এমনই একদিন দুপুরে আমি সেই পোড়োবাড়িটার ভিতরে বসে বসে দিগিন্দ্রনারায়ণের ছবিটাকে দেখছিলাম। হলঘরের সেই বিশাল বড়ো বড়ো জানলাগুলোর মধ্যে একটার কার্নিশের কিছু অংশকে আমি ধুলোবালি ঝেড়ে বেশ সাফসুতরো করে রেখেছি। সেইখানটাতে বসেই দিব্যি ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকা যায়, আবার বাইরের বাগানটার দিকেও নজর রাখা যায়। আগে এই বাড়ির চারপাশে বোধহয় দিগিন্দ্রনারায়ণের আমলে আমবাগান-টামবাগান জাতীয় কিছু একটা ছিল। তাই এই চত্বরে আমগাছ আছে প্রচুর। সেই গাছগুলোকে আবার বাজারের ওদিককার কেউ কেউ শুনেছি সস্তাতে লিজ নিয়েও রেখেছে। কিন্তু এখনও আমের সময় হয়নি। তাই আম পাড়তেও কেউ চলে আসার ভয় নেই। এ জায়গাটায় আমার একা একা থাকতেই ভালো লাগে। একটু বিকেল হলেই, আমি আবার তখন ওপাশের বড়ো মাঠটাতে বুধো-শাম্বদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে চলে যাই। সেদিনও এরকম বসে আছি। অ্যানুয়াল পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেছে বলে বাড়িতেও আর কেউ পড়তে বসতে বলছে না এমনি সময় হঠাৎ সেই ছবিটা যেন কথা বলে উঠল! স্পষ্ট, ভরাট একটা গলার আওয়াজ শুনলাম ওই দেয়ালটার দিক থেকেই। কেউ যেন বলে উঠল, “বিপদ, ভীষণ বিপদ আসছে!” বলেই এক্কেবারে চুপ। আমি চমকে জানালার কার্নিশটা থেকে তড়াক করে নেমে দাঁড়িয়েই এদিক-ওদিক তাকালাম। কই! কেউ কোত্থাও তো নেই। আমি মাথা নেড়ে আবার কার্নিশটাতে চড়ে বসতে যাব, স্পষ্ট উচ্চারণে আবার শুনলাম, “বিপদ! ভীষণ বিপদ আসছে!”
“কীসের বিপদ!” আমার মাথার ভিতরে চিন্তাটা আসতেই যেন ছবির দিগিন্দ্রনারায়ণ আমার প্রশ্নটা বুঝে ফেলে, সেই গমগমে গলাতেই আবারও জবাব দিলেন, “ও তুমি বুঝবে না। কিন্তু ভীষণ বিপদ আসছে।”
“বুঝবই না যদি, তবে আর আমাকে বলা কেন?” আমি ঘাড় গোঁজ করে ছবিটার দিকে তাকালাম। রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণের দৃষ্টিটা কেমন যেন একটু নরম হয়েছে বলে মনে হল।
“সময় হলেই সব জানতে পারবে, এখন বাড়ি যাও তো দেখি। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।” রাজার পুরুষ্টু গোঁফ দু’খানি যেন কেমনটা দুঃখী-দুঃখী হয়ে দু’পাশে ঝুলে পড়েছে বলে মনে হল। চোখেমুখে একটা চিন্তার ছাপ। আমি আর কথা না বাড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।

সব শুনে-টুনে সোহমদা বলল, “দেখেছিস! আমি ঠিক জানতাম যে এরকমই কিছু একটা ঘটতে চলেছে।” আমি বললাম, “কিন্তু ওই জঙ্গলের মধ্যে পুরোনো রাজার ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটারই বা কী এমন বিপদ আসতে পারে যে ভরদুপুরে সে ওভাবে আমার সঙ্গে কথা বলে উঠবে?” সোহমদা বলল, “সেটাই তো আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে রে পিন্টু, নয়তো বলা যায় না - এই হাঁসখালিতেও হয়তো কোনো একদিন, কোনো একটা বড়ো বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। ওই ছবিটার মধ্যে নিশ্চয়ই কোনোরকমের একটা ভয়ানক গুপ্তশক্তি আছে। তাই সে এভাবে নিজের বা আমাদের বিপদের আশঙ্কাগুলোকে আগে থেকে টের পেয়ে যাচ্ছে।” আমি আমাদের অনেক পুরোনো ইস্কুলবাড়ির, বড়ো প্রাচীন জানালাগুলোর ভিতর দিয়ে বাইরের আকাশটার দিকে তাকালাম। রোদ ঝলমল করছে, সাদা সাদা ছেঁড়া ছেঁড়া একেকটা মেঘ হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে চলেছে। বাইরের বড়ো মাঠটাতে ছেলেরা ফুটবল খেলছে। দূরের নতুন হাইওয়েটার উপর দিয়ে একেকটা গাড়ি হুশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। পুকুরধারের চায়ের দোকানে শিবতোষজ্যাঠা আর সুবিমলকাকুরা সবাই গোল হয়ে জটলা করছে। শান্ত এই হাঁসখালির বুকে সত্যিই কি তাহলে কোনো বড়ো বিপদ ঘনিয়ে আসতে চলেছে? আমার গা-টা আবার কেমন জানি ছমছম করে উঠল
খবরটা পেতে দেরি হল না। বিকেলে মাঠে খেলতে গিয়ে, শাম্ব আর বুধোই প্রথম খবরটা দিল আমায়। “শুনেছিস, রাজবাড়ি নাকি ভেঙে ফেলা হবে,” শাম্ব হাঁফাতে হাঁফাতে বলল। বাজারে সে নাকি কার মুখ থেকে সব শুনেছে, আর শুনেই ছুটতে ছুটতে মাঠে এসে হাজির। বুধোও নাকি ওর সঙ্গেই ছিল তখনদু’জনের কথা শুনে যা বুঝলাম, বাজারের বিশাল স্টেশনারি দোকানটার মালিক, যে কিনা কখনও আমাদের একটা পেন্সিলও কোনোদিন ধারে দেয়নি, মিষ্টি করে হেসে কোনোদিন একটা কথাও বলেনি, সেই হাজরাকাকু নাকি রাজবাড়ির পুরো জমিটাকেই কিনে নিয়েছে। হাজরাকাকুর পুরো নাম মলয়চরণ হাজরা, কিন্তু মুখে মুখে ওই হাজরাকাকু নামটাই চলে এসেছে। “হাজরাকাকু নাকি প্রোমোটিং করবে ওখানে, কলকাতা শহরের মতো পাঁচতলা কাচের বাড়ি করবে রাজবাড়িটাকে ভেঙে ফেলে। শপিং মল না কি যেন বলে ওগুলোকে!” বুধো চোখ গোল গোল করে বলতে থাকে। আমার মনের ভেতরটা কেমন জানি গরমকালের দুপুরে, মজা পুকুরের ভাঙা ঘাটটার মতোই ফাঁকা হয়ে আসতে শুরু করে। টি-ট্টিঃ করে ডেকে একটা পাখি উড়ে গেল কোথাও। এই বিপদের কথাই তাহলে দিগিন্দ্রনারায়ণ বলছিলেন।

“আমার জমি, আমার রাজবাড়ি, আমি কখনও যে জমিকে বিক্রি করিনি - সেই জমিই কিনা কিনে নিয়েছে বলছ!” গমগমে গলায় জিজ্ঞেস করেন দিগিন্দ্রনারায়ণ।
“সেইরকমই তো বলছে সবাই,” আমি অল্প মুখ কাঁচুমাচু করে জবাব দিই, “বলছে, এখনকার নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চাশ না একশো বছরের বেশি সময় ধরে কোনো জমি খালি পড়ে থাকলে নাকি সেই জমিতে আর বংশের কোনো অধিকার থাকে না। এই জমি এখন সরকারের।”
“হুঃ,” নাক দিয়ে একটা আওয়াজ করেন রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণ, “পঞ্চাশ বছর! কত’শো বছর ধরে আমার পূর্বপুরুষেরা এই হাঁসখালিতে রাজত্ব করেছেন জানা আছে ওদের!”
“কই, আমাদের ইতিহাস বইতে তো তোমাদের বিষয়ে কিছু লেখেনি,” আমি তেরচা চোখে তাকাই।
“তা লিখবে কেন! তা আর লিখবে কেন!” দিগিন্দ্রনারায়ণ গজগজ করেন। আমি বেশ বুঝতে পারি তাঁর মনটা ভয়ানক খারাপ হয়ে গেছে। তিনি আপন মনে ছবির ফ্রেম ঘেঁষে বাইরের জানালাটার দিকে তাকিয়ে আছেন। এমন সময়,
“ও কী! ওই দু’জন অর্বাচীন কারা? এই সময়ে জঙ্গলের ভিতরে এসেছে!” রাজামশাইয়ের গমগমে গলাটা শুনেই আমি বাইরের দিকে তাকালাম। ঠিক তাই, দুটো লোক হাতে নানারকম মাপবার ফিতে আর দড়িদড়া, একটা বোধহয় শাবলজাতীয় কিছু নিয়ে, এই বাড়িটার দিকেই এগিয়ে আসছে। আরও খানিকটা কাছে আসতেই বুঝলাম, ওদের মধ্যে একজন হচ্ছে আমাদের সবার চেনা গুপেদা – হাজরাকাকুর প্রায় ডান হাত বলা চলেঅন্য লোকটাকে আমি কোনোদিন দেখিনি এখানে। কী বুদ্ধি করে যে আজ এখানে আসার সময় পকেটে করে গতবছরের গাজনের মেলা থেকে কেনা সেই জিনিসটাকে চুপি চুপি নিয়ে এসেছিলাম জানি না। সেটা যে এখন এভাবে কাজে লেগে যাবে ভাবতে পারিনি। দিগিন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে চোখে চোখে আমার কথা হয়ে গেল
প্রথমে গুপেদাকেই টিপ করেছিলাম, গুলিটা ঠাঁই করে তার রগের পাশটাতে গিয়ে লাগতেই সে “বাপরে!” বলে মাটিতে বসে পড়লপাশের লোকটা এদিক ওদিকে তাকিয়ে কিছু বুঝে ওঠবার আগেই আমার গুলতির দ্বিতীয় গুলিটা সটান গিয়ে লাগল তার দুই ভুরুর মধ্যিখানে। ঠিক সেই সময়েই জঙ্গল কাঁপিয়ে গমগমে গলায় রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণ হুঙ্কার ছাড়লেন, “কে রে পাষণ্ড! কার এত বড়ো সাহস যে আমার বাগানে ঢুকে আমারই বাড়িতে মাপজোক করতে চায়!” তারপরেই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে একটা রক্ত-জল-করা অট্টহাস্যে তিনি চারদিক প্রায় কাঁপিয়ে তুললেন বলা যেতে পারে। লোক দুটো পড়ি কি মরি করে কোনোমতে উঠেই দৌড় লাগালআমি খানিক পরে দিগিন্দ্রনারায়ণের দিকে চেয়ে বললাম, “খুব হয়েছে, এবারে তুমি থামতে পারো!” রাজামশাই ফিক করে হেসে আমার দিকে চোখ টিপে দিয়ে আবার শান্ত হয়ে ছবির ফ্রেমে ঝুলে রইলেন। আমিও মনে মনে হাসতে হাসতে বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম। কিন্তু মনে মনে আমি ভাবছিলাম যে, এভাবে গুলতি ছুঁড়েই বা আর কত দিন হাজরাকাকুর দলবলকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে?

সেদিন ইস্কুল থেকে ফেরবার সময় হঠাৎ গুপেদা বড়ো রাস্তার উপরে আমাকে দাঁড় করাল “রোজ রোজ তুই ওই জঙ্গলটার ভিতরে কোথায় যাস বল দেখি?” আমি বললাম, “কই না তো, মাঝে মাঝে ওই রাজবাড়ির বাগানের দিকটাতে যাই বটে, কিন্তু রোজ রোজ তো মোটেও যাই না।” গুপেদা গম্ভীর গলায় বলল, “আমাদের কাছে খবর আছে, তুই রোজ ওদিকপানে যাস আজকাল। জায়গাটা ভালো নয়।” আমি বললাম, “তুমি কী করে জানলে?” গুপেদা আরও ফ্যাসফ্যাসে গম্ভীর গলায় বলল, “অত খবরে তোর দরকার কী শুনি! ওদিকটায় একদম যাবি না এখন। ফের যদি কোনোদিন জঙ্গলে যেতে দেখেছি আমি কিন্তু গিয়ে মেসোমশাইকে বলে আসব” আমি বেশ বুঝলাম যে মেসোমশাই বলতে আমার বাবার কথা বলা হচ্ছে আমি একটুও ভয় না পেয়ে বললাম, “আমি যে মাঝেমধ্যে রাজবাড়ির আমবাগানে বেড়াতে যাই, বাবা সেটা জানেন। কিন্তু তিনি তো কই আমাকে কোনোদিন বারণ করেননি।” গুপেদা রক্ত-জল-করা দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বলল, “খুব মুখে মুখে কথা বলতে শিখেছিস দেখছি। যা বলছি তাই শোন। নইলে ফল ভালো হবে না।” হন হন করে গুপেদা চলে গেল। আমার মনে যে একটু একটু ভয় করছিল না তা নয়, কিন্তু রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণের জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। চারপাশটা একবার ভালো করে দেখে নিয়ে আমি আবার রাজবাড়ির জঙ্গলের দিকেই পা বাড়ালাম।
আজ দিগিন্দ্রনারায়ণ বেশ মেজাজে রয়েছেন বলে মনে হল। আমি যেতেই একগাল হেসে বললেন, “আমার আজ খুব কুল খেতে ইচ্ছে করছে” আমি বললাম, “বা রে! রাজামশাইরা আবার কুল খায় নাকি!” দিগিন্দ্রনারায়ণ চোখ পাকিয়ে বললেন, “খাবে না কেন? রাজা বলে কি তারা মানুষ নয় নাকি!” আমি মাথা নেড়ে বললাম, “আচ্ছা বেশ, সে কুল না হয় আমি এনে দেব ’খন তোমায়। অবশ্য সে কুল তুমি খাবে কী করে সে তুমিই বলবে। কিন্তু এদিকে যে হাজরাকাকুর অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাকে রাস্তার উপরে ধরে হুমকি দিয়েছে সে খবর রাখো?” আমাকে অবাক করে দিয়ে ছবি বলে উঠল, “রাখি বৈকি! ও নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না। উপায় বেরিয়েছে।” আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কী উপায় বেরিয়েছে?” রাজা বললেন, “আগামী রবিবারে এই বাড়ি ভাঙা শুরু হবে। সকাল দশটার সময়। পারলে তখন টুক করে একবার চলে এসো তো দেখি। দেখবে এখনও রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণের ক্ষমতা কতখানি” এই না বলে ছবির রাজামশাই আবার কেমন যেন উদাস হয়ে আকাশের দিকে চেয়ে রইলেন। আমি চলে আসব আসব ভাবছি, এমন সময় নরম গলায় দিগিন্দ্রনারায়ণ আবার কথা বলে উঠলেন, “আমার বড়ো ইচ্ছে ছিল জানো তো - সোমশ্রীর নামে এই বাড়িটাতে একটা ইস্কুল খোলার।” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “সোমশ্রী কে আবার?” “আঃ, তোমরা দেখছি এতটুকুও ইতিহাসের খবর রাখো না। তোমাদের রানিমার নাম ছিল গো সোমশ্রী। সেই থেকেই তো ছেলের নাম রেখেছিলাম সোমেন ওরফে সোমেন্দ্রনারায়ণ,” রাজামশাই যেন এক পশলা হেসে ফেলেন, “সোমশ্রী এত তাড়াতাড়ি চলে গেল, ওর নামে ইস্কুলটাও তৈরি করব এই ভাবতে ভাবতেই আমারও...” দিগিন্দ্রনারায়ণ অস্ফুটে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। ভাবছিলাম ছবিটার উপরে একটু হাত বুলিয়ে দেব কিনা। রাজার ফেলা একেকটা দীর্ঘনিঃশ্বাসের হাওয়ার দমকাগুলোকেও, আমি যেন তখন আমার শরীরের উপর দিয়ে বয়ে যেতে টের পাচ্ছিলাম আমার ভারী মনখারাপ করছিল। “এখন বাড়ি যাও প্রণবেশ,” দিগিন্দ্রনারায়ণ আবার সেই গমগমে গলায় বলে ওঠেন, “আসছে রবিবারে সক্কাল সক্কাল চলে এসো এই বাড়িতে। দিগিন্দ্রনারায়ণের জোর এখনও ফুরোয়নি, তোমাকে আর মিছে চিন্তা করতে হবে না” “আমার ভারী বয়েই গেছে চিন্তা করতে তোমার জন্য, আমাকে আর কিচ্ছুটি বলতে হবে না,” আমি রাগ করে উত্তর দিলাম। আমার চোখেও বোধহয় তখন টলটলে দু’ফোঁটা জল এসে পড়েছিলকোথা থেকে যেন আবার এক ঝলক দমকা বাতাস এসে ছুঁয়ে গেল আমায়, জলের ফোঁটা দুটোও টুপুস করে ঝরে পড়ল। রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণ সেই ছবির ভিতর থেকেই, সেই মিটিমিটি হাসিভরা দুটো চোখ নিয়ে আমার দিকে চেয়ে রইলেন।

যতক্ষণে আমি, সোহমদা, বুধো আর শাম্ব এই চারজনে মিলে রবিবার সকালে রাজবাড়ির জঙ্গলে গিয়ে পৌঁছলাম ততক্ষণে সেখানে রীতিমতো হইচই পরে গেছে। হাজরাকাকু, গুপেদা আর ওঁদের সঙ্গে আরও তিন-চারজন মুশকো মতো লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। এছাড়াও শিবতোষজ্যাঠা আর সুবিমলকাকুরাও রয়েছেন। জঙ্গলের মধ্যে আবার দেখলাম দুটো বড়ো বড়ো গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। একজন উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসারের মতো দেখতে ভদ্রলোক, ধবধবে ফরসা জামাকাপড় পরা (সোহমদা আমার কানে কানে বলে দিল, যে উনি নাকি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট), সঙ্গে আরও দু-চারজন পুলিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হাজরাকাকুই গজগজ করতে করতে বলে যাচ্ছিল, “আশ্চর্য খেয়াল মশাই আপনাদের, বিএলআরও অফিস থেকে যাবতীয় সমস্ত কাগজপত্রকে আগে থেকেই তৈরি করে এনেছি, আমাদের সঙ্গেই আছে সে সব। তারপরেও আপনারা এখন হঠাৎ করে এসে বলছেন যে বাড়ি ভাঙা যাবে না?” আমার বুকের ভিতরটায় কে যেন হাজার প্রজাপতির একটা ঝাঁক ছেড়ে দিল হঠাৎ, বাড়ি ভাঙা যাবে না! দিগিন্দ্রনারায়ণ কি সত্যিই তাহলে তাঁর ম্যাজিক দেখাচ্ছেন! হাজরাকাকুর প্রশ্নের জবাবে ম্যাজিস্ট্রেট ভদ্রলোক খুব ধীরস্থিরভাবে উত্তর দিলেন, “দেখুন এটা তো আর আমার অর্ডার অনুযায়ী হয়নি। এএসআই বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তরফ থেকে নির্দেশ এসেছে যে এই বাড়ির বিশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। কাজেই এএসআই এই বাড়িটাকে অধিগ্রহণ করবে। আমি কেবল তাঁদেরই হুকুম নিয়ে এসেছি।” হাজরাকাকু আরও কিছুক্ষণ গজগজ করে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, তখন তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ভদ্রলোক বললেন, “দেখুন এএসআইয়ের কলকাতার অফিসারেরাও ওই গাড়িতে রয়েছেন, তাঁরাই আপনাকে যা বোঝাবার বুঝিয়ে দেবেন। আপাতত আপনি বাড়ি ভাঙার জন্য যাদেরকে নিয়ে এসেছেন তাদেরকে ছুটি দিয়ে দিতে পারেন।” হাজরাকাকু আরও রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবার আগেই, এবারে ওই বড়ো বড়ো গাড়ি দুটোর একটা থেকে আরও একজন ভদ্রলোক নেমে এলেন। এনাকে দেখে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও সসম্ভ্রমে সরে দাঁড়ালেন।
“দেখুন মিস্টার হাজরা,” এবারে নতুন ভদ্রলোকটি হাজরাকাকুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আমার নাম বিমলেন্দু চক্রবর্তী। আমি কলকাতা এএসআইয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর পদে আছি। সম্প্রতি আমরা এই বাড়িটার বিষয়ে বেশ কিছু নতুন তথ্য জানতে পেরেছি, আর সেই কারণেই আমরা এই বাড়িটাকে আপাতত ভাঙতে দিতে পারি না। এই বাড়িটার বিষয়ে আমাদের কিছু তদন্তের প্রয়োজন আছে
“কীসের তদন্ত মশাই? কী এমন গুপ্তধন আছে এ বাড়িতে যে আপনারা কলকাতা থেকে এই হাঁসখালিতে ছুটে এসেছেন, এই বাড়িটার জন্য?” হাজরাকাকু আবারও বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“এই বাড়ির যে মূল দরবারকক্ষ বা হলঘর, তার উত্তরদিকের দেয়ালে এখানকার একসময়ের রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণের কোনো লাইফ সাইজ পোর্ট্রেট আছে কি?” ভদ্রলোক আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “আমরা মূলত সেই পোর্ট্রেটটার বিষয়েই বিশেষ করে জানতে এসেছি।” সোহমদা, বুধো, শাম্ব – সবাই তখন চোখ গোল গোল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শিবতোষজ্যাঠা বা সুবিমলকাকুরা কিছু বলবার আগেই সোহমদা মুখ ফসকে বলে ওঠে, “এই যে স্যার, পিন্টু জানে ওই ছবিটার ব্যাপারে!” সব ক’টা জোড়া জোড়া চোখ তখন আমার উপরে এসে পড়ল। আমি খুব আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যাব, সেই এএসআইয়ের ভদ্রলোক খুব মিষ্টি স্বরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমার নাম পিন্টু? তুমি জানো ওই ছবিটার ব্যাপারে?” আমি কিছু না বলে, কেবল ঘাড় কাত করলাম। ভদ্রলোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি আমাদের ওই ছবিটার কাছে নিয়ে যাবে?” আমি আবারও ঘাড় নেড়ে শুকনো গলায় বললাম, “হ্যাঁ, কেন নিয়ে যাব না? আসুন।”

ছবিটাকে আমরা কোথাও দেখতে পেলুম না। কেবল দেখলাম সেই দেয়ালের উপরে মস্ত একটা চৌকোনা দাগ হয়ে রয়েছে, কেউ যেন এইমাত্র ছবিটাকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। বিমলেন্দুবাবু খুব মন দিয়ে দেয়ালটাকে দেখছিলেন। “তুমি ঠিক বলছ পিন্টু? এখানেই ছিল তো ছবিটা?” তিনি জিজ্ঞেস করেন। “আর কেউ সেটাকে দেখতে পেত না,” হাজরাকাকু খুব বিচ্ছিরিভাবে বলে ওঠে। বিমলেন্দুবাবু এবারে কড়া চোখে তার দিকে তাকান, “দেখুন মিস্টার হাজরা, অনেকক্ষণ আপনার অভব্যতা সহ্য করেছি। এবারে প্লিজ আমাদেরকে একটু কাজ করতে দিন।”
বিমলেন্দুবাবু দেয়ালটার গায়ে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে কিছু একটা পরীক্ষা করছিলেন। মাঝে মাঝে মোবাইল থেকে কিছু একটা যেন দেখছিলেন। পুরোনো ইটগুলোর উপরে সত্যিই যেন একটা নকশামতন কাটা ছিল। নকশা মিলিয়ে মিলিয়ে বিশেষ একটা জায়গাতে বিমলেন্দুবাবু চাপ দিতেই, ম্যাজিকের মতো দেয়ালটা দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়ে একটা চোরাকুঠুরি বেরিয়ে পড়লআমরা সভয়ে একটা আওয়াজ করে উঠলাম। ধুলোর ব্যাপারটা একটু সাফ হতে কুঠুরির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বিমলেন্দুবাবু একটা ছোটো কাঠের বাক্সকে বের করে আনলেন। অস্ফুটে প্রথমে তিনি কী বললেন সঠিক করে বোঝা গেল না। আমরা আবার কিছু জিজ্ঞেস করবার আগেই, উনি গলাটা ঝেড়ে নিয়ে বললেন, “যাক, এতদিনে তাহলে ঠাকুরমার ইচ্ছেপূরণ করা যাবে!” আমাদের কারোর মুখে আর কথাটি নেই তখন!

হ্যাঁ, বিমলেন্দুবাবুই সেই রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণের বংশধর, হারিয়ে যাওয়া যুবরাজ সোমেন্দ্রনারায়ণের একমাত্র সন্তান। কিছু মাস আগে সোমেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর পর তাঁর জিনিসপত্র ঘাঁটতে গিয়ে বিমলেন্দুবাবু বাবার একটি ডায়রি আবিষ্কার করেন। সেই ডায়রিতেই এই চোরাকুঠুরি আর তার মধ্যে কাঠের বাক্সে থাকা রানিমার শেষ ইচ্ছের এই দলিলটার বিষয়ে লেখা ছিল সন্তানহীনতায় ভুগতে ভুগতে রানি সোমশ্রীই চেয়েছিলেন এই রাজবাড়িতে একটা ইস্কুল তৈরি করতে। তারপর সোমেন্দ্রনারায়ণের জন্ম হল। অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন সোমশ্রীদেবী। তাঁর ইচ্ছেপূরণের আগেই প্রয়াত হলেন রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণ। কেবল সেই ইচ্ছাপত্র রয়ে গেল দরবারঘরের চোরকুঠুরিতে, রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণের ছবির আড়ালে। আজ এতদিন পর, সেই ইচ্ছাপত্র আবার আমাদের সকলের সামনে আনা হল। বিমলেন্দুবাবু যে মাঝে মাঝেই সবার আড়ালে গিয়ে এক-দু’বার করে চোখ মুছছিলেন, আমি সেটাও দেখেছি। রাজবাড়িটাকে যে আর হাজরাকাকুর মতো লোকেরা আর কিচ্ছুটি করতে পারবে না এটা জেনেই আমার ভারী আনন্দ হচ্ছিল।

ছবিটাকে আমিও আর কোনোদিন দেখতে পাইনি। সোমেন্দ্রনারায়ণও যে কেন বেঁচে থাকতে একবারও হাঁসখালিতে ফিরে এলেন না সেটা ভাবতেও আমার অবাক লেগেছিল। শুনেছিলাম যে উনি নাকি জীবনের প্রায় অনেকগুলো বছরই দূর বিদেশে কাটিয়েছিলেন। পরে রাজপরিবারের এক বিশ্বস্ত ভৃত্যের মুখ থেকেই নাকি উনি এই চোরাকুঠুরির বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু কোনোদিনও তিনি আর হাঁসখালিতে ফেরার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি। এখন রাজবাড়ির চারপাশের জঙ্গল অনেকটাই সাফসুতরো হয়ে এসেছে। যেহেতু বিমলেন্দুবাবুও কর্মসূত্রে এএসআইয়ের মতো একটা জায়গাতে কর্মরত ছিলেন, সে জন্যই তিনি তাঁর বাবার ডায়রিটাকে নিয়ে অতখানি উঠে পড়ে লেগেছিলেন। আমার ভাবতে ভারী আশ্চর্য লাগে যে কেমন করে ছবির দিগিন্দ্রনারায়ণও অতদূর থেকে সে কথা জেনে ফেলেছিলেন, আর সেজন্যই অমন নিশ্চিন্ত হয়ে বলেছিলেন যে কোনোভাবেই তাঁর রাজবাড়ির একটা ইটও কেউ খসাতে পারবে না।
রাজবাড়িতে এখন মিউজিয়াম হবে। সেখানে হাঁসখালির ইতিহাসকে তুলে ধরা হবে। এছাড়াও একতলার একটা বড়ো অংশে হবে প্রাইমারি ইস্কুল, রানি সোমশ্রীদেবীর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী। জোরকদমে এখন রাজবাড়ি সারানোর কাজও শুরু হয়ে গেছে। দুপুরের দিকেও আজকাল আর ওই চত্বরটাকে ফাঁকা পাওয়া যায় না। সব সময় ঘষঘষ, ঠকঠক শব্দ। আমি কেবল আপনমনে জঙ্গলের দিকটাতে ঘুরে ঘুরে বেড়াই। আমি ঠিক জানি আবারও কোনো একদিন রাজা দিগিন্দ্রনারায়ণ চুপি চুপি আমার ঘাড়ের কাছটাতে এসে গমগমে গলায় বলে উঠবেন, “আজ যে আমার বড়ো কুল খেতে ইচ্ছে হচ্ছে পিন্টু!”
...আমার মনটা আবার কেমন জানি উদাস হয়ে আসে। দিগিন্দ্রনারায়ণের হাঁসখালিতে আমি বড়ো একলা হয়ে ঘুরে বেড়াই। আমি জানি যে, আর কেউ সেই ছবিটাকে, কোনোদিন দেখতে পাবে নাএকমাত্র আমিই সেই ছবিটাকে দেখেছিলাম।
----------
ছবি - সুমিত রায়

No comments:

Post a Comment