প্রবন্ধ:: সত্যি ও কল্পনায় মেশা মণি-মুক্তা - সুমনা সাহা


সত্যি ও কল্পনায় মেশা মণি-মুক্তা
সুমনা সাহা

আমাদের এই গ্রহের নাম পৃথিবী। কত নগর, প্রান্তর, দেশ-দেশান্তর, নদীনালা-সাগর, মরু-বন নিয়ে এই গ্রহ ঘুরে চলেছে বনবন করে। বিজ্ঞান বলছে, সূর্যের চারদিকে এমনই বনবন করে ঘুরে চলা মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে পৃথিবী এমন এক জায়গা, যেখানে প্রাণ আছে। এসব আমরা জানি। কিন্তু যখন পাহাড়ে কিংবা সমুদ্রে বা জঙ্গলে বেড়াতে যাই, মনের আনন্দে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে ছুটোছুটি করি, অঙ্ক না পারলে মাস্টারমশাইয়ের বকুনি শুনি, বৃষ্টিতে ভিজলে মা রাগ করেন, প্রিয় পিৎজার প্লেট হাতে কার্টুন শো দেখতে দেখতে হো হো করে হেসে উঠি আমাদের মনেই থাকে না যে আমরা কিন্তু এই সব শুদ্ধু মহাশূন্যে বনবন করে ঘুরে চলেছি। কিন্তু এটাই সত্যি। কত রহস্য, কত কল্পনা, কত আবিষ্কার, কত মারামারি এর উপর চলেছে। পৃথিবীর বুকে এমন আশ্চর্য সব জিনিস আছে, যে সমস্ত নিয়ে মানুষ নানারকম কল্পনা করে, সে সব নিয়ে কত গল্প লেখা হয়, গান তৈরি হয়, কিন্তু বাস্তবে হয়তো তাদের কোনো অস্তিত্বই নেই কিংবা থাকলেও সত্যিটা নিতান্তই কাঠখোট্টা। এরকম কয়েকটা আশ্চর্য বস্তুর কথা বলব যা নিয়ে যুগে যুগে হাজারো গল্প তৈরি হয়েছে। সত্যি আর জল্পনাকল্পনার আলোআঁধারিতে সে সব নিয়ে মানুষের মনে আরও রহস্য জট পাকিয়েছে। যেমন - পরশপাথর। বহু যুগ ধরে মানুষ বিশ্বাস করে এসেছে, একরকম পাথর আছে, যার ছোঁয়ায় যে কোনো জিনিস সোনার হয়ে যায়। সোনার দাম যে অনেক! তাই এমন বিশ্বাস মানুষের মনে লোভ জাগায়। আর তাই লোকে খোঁজে সে পাথর, যদি দৈবাৎ পেয়ে যায়, তাহলে তো সংসারে তার আর কোনো অভাব থাকবে না! সেই কবিতা আছে না, ‘খ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশ-পাথর’?

নাগমণি
রূপকথার গল্পের মতো আরেক বস্তু ‘নাগমণি’কত কাহিনিতে, সিনেমায়ও দেখেছি, বিশেষ কোনো সাপের প্রজাতির ইচ্ছেধারী নাগের মাথায় থাকে বহুমূল্য মণি, সেই মণি মানুষের সকল অভীষ্ট পূর্ণ করে। কামনা-বাসনায় জর্জরিত, নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত মানুষের এমন কথা শুনলে লোভ তো হবেই! তাই মণির লোভে একসময় কত যে সাপ মারা পড়েছে, তার ঠিকানা নেই। বিজ্ঞান বলছে, আদৌ এমন কোনো মণির অস্তিত্ব নেই। তাহলে যুগ যুগ ধরে এই মণি নিয়ে এত গল্পকথা সৃষ্টি হল কীভাবে? প্রাচীন ভারতের কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী বরাহমিহির রচিত ‘বৃহৎসংহিতা’ গ্রন্থে উল্লেখ পাই, পৃথিবীতে মণিধারী সাপ আছে। শোনা যায়, তিনি গুপ্ত রাজা বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন সভার অন্যতম রত্ন ছিলেন। তাঁর মতে, যে রাজার দখলে থাকবে নাগমণি, তিনি শত্রুজয়ী হবেন, তাঁর রাজ্যের প্রজারা সুখেশান্তিতে বসবাস করবেন। প্রাচীনকালের অনেক বিশ্বাস বিজ্ঞানের যুগে আমরা হেসে উড়িয়ে দিলেও পরে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষায় সে সমস্ত তথ্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। মঙ্গল গ্রহে জলের অস্তিত্ব সম্বন্ধে দেড়-হাজার বছর আগে বরাহমিহির যে দাবি করেছিলেন, সম্প্রতি নাসা-র বিজ্ঞানীরা সে কথা মেনে নিয়েছেন। তাই মানুষ নাগমণির বিষয়টির সত্যতা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করতে পারে না। রূপকথার গল্প তৈরি হয় দেশে দেশে আর লোকমুখে তা ছড়িয়ে পড়ে দূরদূরান্তে, গল্পে যোগ হয় ডালপালা। বীর রাজপুত্র কিংবা গরিব কাঠুরিয়া বনে গিয়ে সেইসব মণি উদ্ধার করে আনে। নাগমণির অলৌকিক ক্ষমতায় সুস্থ হয়ে ওঠে দুরারোগ্য ব্যাধি আক্রান্ত রানি বা অন্ধ রাজকন্যা ফিরে পায় দৃষ্টিশক্তি। অলৌকিক ক্ষমতা করতলগত করার লোভে অসাধু তান্ত্রিক সাপ ধরার বিদ্যে জানা পাকা সাপুড়ে নিযুক্ত করে, তখন সেই ইচ্ছেধারী নাগিনী সুন্দরী কন্যা হয়ে বিয়ে করে কোনো পরিবারের বউ সেজে লুকিয়ে থাকে... এমনি কত সব কাহিনিশ্রীদেবী অভিনীত হিন্দী ছবি ‘নাগিন’ দুটি পর্বে এমনই মণিধারী নাগের গল্প, যে ইচ্ছেমতো রূপ ধরতে পারে। লোকের মুখে মুখে মণি নিয়ে ফেরে অনেক কথা। কেউ বলে, সেই মণি অসম্ভব উজ্জ্বল। জঙ্গলের মধ্যে যেখানে মণিধারী নাগ থাকে, মণির ঠিকরে পড়া দ্যুতিতে তার চারপাশ অমাবস্যার রাত্রেও আলোকিত হয়ে থাকে। বিশ্বাসীরা আরও বলে যে, কম করে ১০০ বছর বয়স না হলে সাপের মাথায় মণি হয় না। মণি তৈরি আরম্ভ হলে তা সম্পূর্ণ হতে আরও অনেকদিন লাগে। ততদিনে সাপের মৃত্যু হতে পারে, বা কোনো সাপ-ধরার শিকার হয়ে যেতে পারে সে। আর সেই সাপটি অবশ্যই তীব্র বিষধর হবে। যার এক ছোবলেই মৃত্যু নিশ্চিত। মণির অলৌকিক ক্ষমতার সঙ্গে তাকে হাসিল করার এতগুলো বাধা যুক্ত হয়ে আকর্ষণ আরও বাড়ে।
অনেকে আবার বলে, মণিটি সাপের মাথায় থাকে না। সাপ সেটা মুখে পুরে রাখে, সময়ে সময়ে বের করে। রাত্রে মণির আলোয় আকৃষ্ট হয়ে জঙ্গলের পোকামাকড় ছুটে আসে, সাপ তখন সেই পোকাগুলো খায়। অর্থাৎ শিকার ধরার কাজে সাপ তার নিজের মণি ব্যবহার করে।
কেউ বলে মণিটি প্রথমে একটা মুসুর ডালের দানার মতো ছোট্ট থাকে, ক্রমে বড়ো হয়ে একটা পায়রার ডিমের মতো আকারের হয়। এর রঙ আগুনের মতো উজ্জ্বল, চোখ ধাঁধানো। অন্য বহু মূল্যবান রত্নের চেয়ে এই মণি অনেক বেশি ক্ষমতাশালী যার কাছে এই মণি থাকে, তার উপর সাপের বিষের বা বিষাক্ত কোনো কিছুর প্রভাব পড়বে না। এই সবের সত্যতা যাচাই করার জন্য হালে বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরিতে নানা প্রজাতির সাপের উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। দেখা গেছে, বিষধর সাপের ক্ষেত্রে, যখন সাপের বয়স হয়ে যায়, এর বিষ শুকিয়ে আসতে আরম্ভ করে। পরে সেই বিষের থলি একটি শক্ত পাথরের মতো হয়ে দাঁতের গোড়ায় উপরের দিকে (মাথার পেছনের অংশে) থেকে যায়। অনেকসময় সাপুড়েরা ঐ শুকিয়ে যাওয়া বিষথলি সংগ্রহ করে রাখে, জড়িবুটি তৈরির কাজে লাগানোর জন্য। সাপের বিষ থেকে বাতের ও আরও নানা রোগের ওষুধ তৈরি হয়, শুকিয়ে গেলেও কোনো রাসায়ণিক দ্রবণ বা গাছগাছড়ার রসে ভিজিয়ে তা থেকে নিশ্চয় ওষুধ তৈরি করা যেতে পারে। কিন্তু সাপুড়েরা অনেকসময় ওটিকে দুর্মূল্য মণি বলে দাবি করে লোভ দেখিয়ে লোককে বোকা বানিয়ে পয়সা রোজগার করার চেষ্টা করে। এরা ধূর্ত ও অসৎ। যারা ঐ শুকনো পাথরের মতো বিষথলি নিয়ে পরীক্ষা করেছেন, তারা দেখেছেন, আলো ঠিকরে বের হওয়া দূরের কথা, এর কোনো ঔজ্জ্বল্যই নেই। পাশ্চাত্যের একজন বিজ্ঞানী, প্রফেসর এনসর সাপের মণি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তিনি দেখেছেন, সাপের বিষে ক্লোরোফেন নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা গরম করলে একটি আলোর আভা ছড়ায়। একবার নাকি পারিবারিক একটি নাগমণির অধিকার নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া-মারামারি হয়, শেষ পর্যন্ত মণি হাসিল করবার জন্য এক ভাই অপর ভাইকে খুন করে। পরে ঐ মণি জহুরির কাছে বিক্রি করতে গেলে পরীক্ষা করে তিনি দেখেন, সেটা সস্তা দামের এক মামুলি পাথর!
যারা নাগমণির অস্তিত্বে বিশ্বাসী, তাঁদের মতে, ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত বাসুকী নাগের বংশধরদের মাথায়ই গোল নীলবর্ণের মণি জন্মায় আর পাপীরা এই মণি দেখতে পায় না, এমনকি মণির দিকে তাকালেও এর জ্যোতিতে তারা অন্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞান-অনুরাগী মন বলে, নাগমণি বলে কিচ্ছু নেই, কিন্তু কল্পনায় বিশ্বাস করতে ভালো লাগে, আহা সত্যি যদি এমন মণি থাকত, যা দিয়ে দুরারোগ্য ব্যাধি ভালো করা যেত আর জব্দ হত দুষ্টু লোক!

গজমুক্তা
‘গজমোতি’ বা ‘গজমুক্তা’ এরকম আরেকটি জিনিস। প্রাচীন কাল থেকে লোকে বিশ্বাস করত, হাতির মাথায় একেবারে ব্রহ্মতালুর মধ্যিখানে থাকে একখানি মুক্তো, আর সেই মুক্তোই সমস্ত কিছু পাইয়ে দেওয়ার চাবিকাঠি, যার ঘরে ঐ মুক্তাটি থাকবে, তার আর কোনো ভাবনা নেই। বাজারে হাতির দাঁতের অত্যধিক চাহিদার জন্য, প্রচুর পুরুষ হাতি চোরা শিকারিদের হাতে প্রাণ দিয়েছে। কারণ হাতির বাইরের দাঁত, অর্থাৎ যাকে গজদন্ত বলা হয়, সেটি পুরুষ হাতির শরীরেই থাকে। ফলে সারা বিশ্বে মানুষের লোভের খেসারত দিতে হয়েছে বেচারা হাতিদের, পুরুষ হাতি হত্যা হয়েছে অবাধে। মেরে ফেলা হাতির মাথার তালু ফাটিয়ে মানুষ খোঁজ করেছে দুর্মূল্য গজমোতি। সত্যি কি পেয়েছে কেউ সেই মুক্তো? নাকি সবটাই কাল্পনিক?
প্রাচীন রত্নতত্ত্ববিদগণ আট প্রকার মুক্তার কথা বলেছেন - ১) গজমুক্তা ২) নাগমুক্তা (এটাই নাগমণি, যার কথা আগে বললাম) ৩) বরাহ মুক্তা ৪) মীন মুক্তা ৫) বেণুজ মুক্তা ৬) শঙ্খজ মুক্তা ৭) জীমূত মুক্তা ৮) শুক্তি মুক্তা
অতিকায় ঐরাবত হাতির মাথার দুটি কুঁজের মতো উঁচু জায়গার মাঝখানে মুক্তা জন্মায়। হাতির গজদন্তের গোড়ায়ও জন্মায় পীতবর্ণের মুক্তা। বড়ো আকারের গজমোতি পবিত্র ও দুর্লভ বলে মানা হয়। রূপকথার গল্পে রাজা যখন দেশভ্রমণে যান, রানিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার জন্য কী আনব?’ রানি বলেন, ‘গজমোতির মালা!’ সওদাগর যখন বাণিজ্য করতে সপ্তডিঙা সাজিয়ে বের হন, সওদাগরের বউ আবদার করে বলে, ‘আমার জন্য গজমোতির হার নিয়ে এসো’ রূপকথার গল্পে এভাবেই শৈশবে গজমুক্তার নাম শুনেছি। প্রাচীন গ্রন্থে মুক্তার উল্লেখের ছড়াছড়ি। মুক্তা সৌন্দর্যবর্ধক, ঐশ্বর্যের প্রতীক, প্রেম, গৌরব, বংশমর্যাদা প্রকাশে সুপ্রাচীন কাল থেকেই মুক্তার ব্যবহার। সেই জন্যই বোধহয় মুক্তাকে ‘রত্নের রানি’ বলা হয়। খ্রিস্টের জন্মের সাড়ে তিন হাজার বছর আগেও মুক্তার ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাচীন মিশরে বড়ো মুক্তা দিয়ে ঘর সাজানো হত। ইতিহাস বিখ্যাত রানি ক্লিওপেট্রার ছিল মুক্তোর গয়নার প্রতি বিশেষ প্রীতি। চীন দেশের সম্রাটরা তাঁদের মুকুটে সর্বদা মুক্তা পরতেন সম্মানের প্রতীক রূপে। গ্রিসে বিয়ে ও প্রেমের উপহারে মুক্তা দেওয়া নিয়ম। ভারতে একসময় প্রচুর মুক্তা পাওয়া যেত। রাজারা খুশি হলেই নিজের গলার মুক্তার মালা খুলে সভাকবিদের কণ্ঠে পরিয়ে দিয়ে পুরস্কৃত করতেন। আরব দেশের একটি কবর থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বছরের পুরোনো একটি মুক্তা পাওয়া গেছে। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম মুক্তা বলে মনে করছেন রত্ন গবেষকরা। মুক্তা এমন একটি রত্ন, যা নিয়ে যুগ যুগ ধরে রয়েছে নানা কাহিনি ও কল্পনা। মুক্তা-ভস্ম দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন ঔষধ এবং প্রসাধনী। এছাড়াও লোকের বিশ্বাস, বিশেষ ধরনের মুক্তা গুঁড়ো করে বাঘের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অনন্ত যৌবন পাওয়া যায়। বলা হয় স্বাতী নক্ষত্রে বৃষ্টি হলে এবং ঐ বৃষ্টির জল ঝিনুকের মধ্যে পড়লে ঝিনুকের গর্ভে মুক্তার জন্ম হয়। সেভাবেই ঐ জল হাতির মাথায় পড়লে গজমুক্তা, বরাহ বা শূকরের মাথায় পড়লে বরাহ মুক্তা, তিমি মাছের মুখে পড়লে মীন মুক্তা, বাঁশের খোলে পড়লে বেণুজ মুক্তা, সমুদ্রজাত শঙ্খের ভিতরে পড়লে শঙ্খজ মুক্তার (কঞ্চ পার্ল) জন্ম হয়। এই মুক্তা পায়রার ডিমের মতো, এতে কোনো ঔজ্জ্বল্য নেই। বরাহ মুক্তাও নীলচে রঙের ও খসখসে হয়ে থাকে। বাঁশের গায়ে যে চোখের মতো গাঁটের দাগ থাকে, যাকে ‘বংশলোচন’ বলা হয়, অনেকে তাকেই বেণুজ মুক্তা বলেন। আবার পুরাণের গল্পে আছে আকাশ থেকে মুক্তা বৃষ্টির কথা, একে জীমূত মুক্তা বা মেঘ মুক্তা বলে - ঠিক যেমন গুপি গাইন বাঘা বাইন সিনেমায় গুপি আর বাঘা ভূতের রাজার বরে ‘মণ্ডা মিঠাই হাঁড়ি হাঁড়ি’ বৃষ্টি করিয়েছিল না খেতে পাওয়া গরিব মানুষের জন্য এসব গল্পও অনেকটা সেরকম বলেই মনে হয়। মানুষ যা পায় না, অথচ পেতে ইচ্ছে করে, তাকেই কল্পনায় অবাস্তব কিছুর মাধ্যমে সত্যি রূপ দেয় আর কিছু নির্বোধ ও লোভী মানুষ সে সমস্ত হাসিল করবার জন্য নিরীহ প্রাণিদের হত্যা করতে আরম্ভ করে। কিছুদিন আগে খবরে এসেছিল এক জ্যোতিষীকে গ্রেফতার করে তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় দশটি গজমুক্তা। হাতির শরীরে তৈরি হওয়া এই পাথরের মূল উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বনেট যা মানুষের পিত্তথলি বা কিডনিতে জন্মানো পাথরের মতোই। অনেকের অন্ধ বিশ্বাস, ঐ পাথরে সন্তুষ্ট হবেন মহালক্ষ্মী এবং ঘরে ঐ পাথর রেখে পুজো করলে ধনসম্পদে পূর্ণ করে দেবেন দেবী। এই অন্ধবিশ্বাসকে ভাঙিয়েই অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লোটে। একমাত্র শুক্তি মুক্তা (অয়েস্টার পার্ল) ছাড়া অন্য কোনো মুক্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, অন্তত এখন। এখন কৃত্রিমভাবে চাষ করে প্রচুর পরিমাণে শুক্তি মুক্তা উৎপাদন করা হয়। সত্যিটা হল, হাতির দাঁতের গোড়ায় এক ধরনের ব্যাকটিরিয়া ইনফেকশনের ফলে ক্যানসার জাতীয় কোষ বৃদ্ধি হতে থাকে আর সেটাই ক্রমে গোলাকার ডিম্বাকার মুক্তার মতো আকার ধারণ করে চোরা শিকারীরা গজদন্তের লোভে হাতি শিকার করার পর মৃত হাতির শরীর থেকে দাঁত উপড়ে ফেলার সময় কখনও-সখনও ঐ পাথর পায়, লোকে ভাবে বুঝি দুর্লভ একটি মুক্তা।
এরকম আরও কত কী আছে! সে সব গল্প আরেক দিন বলব।
----------
ছবি - আন্তর্জাল

No comments:

Post a Comment