খেলার নাম সার্কাস, ঠেলার নাম হাতি
অর্ণব ভট্টাচার্য্য
তখন ক্লাস টু-থ্রি
হবে।
আমাদের
স্কুল
থেকে
বাড়ি
ফেরার
পথে
একটা
বেশ
বড়োসড়ো
মাঠ
পড়ত।
সেখানে
সকালে
বিকেলে
বিভিন্ন
বয়সের
ছেলেমেয়েরা
ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন
ইত্যাদি
খেলত, এখনও
খেলে।
সেখানেই
সেদিন
ফেরার
পথে
একটা
কাণ্ড
হল।
হঠাৎ
একটা
অদ্ভুত
আওয়াজ
শুনে
তাকিয়ে
দেখি
হাতি।
খেলনা
নয়,
আসল
হাতি।
সে
কী
তার
চেহারা,
আর
আরও
আকৃষ্ট
করে
তার
শুঁড়।
কিন্তু
এখানে
হাতি? স্কুলে
পড়েছিলাম
তারা
গাছের
জঙ্গলে
থাকে, হঠাৎ
চারদিকে
ফ্ল্যাটের
জঙ্গল
দিয়ে
ঘেরা
মাঠে, গজরাজের
আগমন
খুব
অদ্ভুত
ঠেকল।
মা
নিজেও
খুব
অবাক
হয়েছিল।
তাই
গুটি গুটি
পায়ে
আমরা
ঢুকলাম
মাঠের
ভেতর।
সেখানে
তখন
হাতিটির
পায়ে
লোহার
শিকল
দিয়ে
একটা
খুঁটির
সঙ্গে
বাঁধা।
পরবর্তীকালে
জেনেছিলাম
হাতির
শক্তির
কাছে
আসলে
ওই
শিকল
কিস্যু
না।
হাতির
বুদ্ধি
কম
বলে, সে
ভাবে
যে
ওই
শিকল
সে
ভাঙতে
পারবে
না।
ফলে
নিজেই
বন্দি
থাকে।
যাই হোক
তখন
আমি
অত
কথা
জানতাম
না, বোধহয়
হাতিটাও
জানত
না।
তাই
ওভাবে
বাঁধা
পড়েছিল
আর
তার
সামনে
একটা
লোক
বসে
তাকে
খাওয়াচ্ছিল।
কী
খাওয়াচ্ছিল
ঠিক
মনে
নেই, কলা
বা
মুড়ি
হবে।
যাই হোক,
আমরা
জিজ্ঞেস
করতেই
দাঁত
বের
করে
বলল, “সার্কাস
হবে
সার্কাস।
ওই
যে
দেখুন।” সত্যিই
দেখা
গেল
মাঠে
কয়েকটা
লোক
কাপড়ের
তাঁবু
বাঁধছে।
আমি
খুব
অবাক
গলায়
জিজ্ঞেস
করলাম, “তাতে
এই
হাতিটা
থাকবে?”
লোকটা আবার দাঁত বার করে বলল, “হ্যাঁ
খোকা,
থাকবে।
এ
খুব
ভালো
হাতি।
খুব
বন্ধু।
এই
দেখো
শুঁড়ে
কেমন
হাত
বোলাচ্ছি।” সত্যি
সত্যিই
লোকটা
তার
শুঁড়ে
হাত
বোলাতে
লাগল।
আমাকেও
সে
বলল
হাতিটার
শুঁড়ে
হাত
বোলাতে।
কিন্তু
আমি
সে
রিস্ক
নিইনি।
কী
জানি
বাবা, হাতিটা
ওই
লোকটার
বন্ধু
হতে
পারে, কিন্তু
আমাকে
যে
শুঁড়ে
পাকিয়ে
উঠিয়ে
নেবে না
তার
গ্যারান্টি
কোথায়? লোকটা
আমার
দিকে
তাকিয়ে
থেকে
খানিকক্ষণ
পরে
বলল, “হে
হে,
খোকা ভয় পেয়েছে।” শুনে
ভীষণ
রাগ
হলেও
কিছু
বললাম
না।
যদিও
আমার
তখন
মগজে
অন্য
চিন্তা
চলছিল, আমি
কোনো
বইতে
পড়েছিলাম
সার্কাসে
বাঘ-সিংহের
খেলা
থাকে।
আর
যখন
এখানে
হাতি
আছে
তখন
বাঘ
থাকতে
বাধা
কোথায়? ফলে
মায়ের
বারণ
না
শুনে
একছুটে
পুরো
মাঠটা
ঘুরে
এসে
ভারী
হতাশ
হলাম।
সেখানে
কয়েকটা
কুকুর
আর
একটা
ছাগল
থাকলেও
কোনো
বাঘ
সিংহ
নেই।
পরে
শুনেছিলাম
সার্কাসে
তাদের
খেলা
দেখানো
বহুদিন
আগেই
নিষিদ্ধ
হয়ে
গেছে।
যাই হোক,
মাঠ
থেকে
বেরোনোর
সময়
লোকটা
আমাকে
বলল, “এরপর
যখন
আসবে
ওর
জন্য
কোনো
খাবার
নিয়ে
এসে
নিজের
হাতে
খাইয়ো।
দেখো
বন্ধুত্ব
হয়ে
যাবে।”
এরপরেও কয়েকদিন ওখানে
গেছিলাম,
কিন্তু
নিজের
হাতে
হাতিকে
খাওয়ানোর
সাহস
হয়নি।
এর মধ্যে
অবশ্য
রিকশায়
করে
প্রচার
শুরু
হয়ে
গেছে।
সার্কাস
কোম্পানির
নাম
মনে
নেই।
খুব
ছোটো
দল
ছিল,
কিন্তু
আমার
তাতেই
খুব
উৎসাহ।
ইতিমধ্যে
বাড়িতে
সবাইকে
খুঁচিয়ে
সার্কাসে
কী
কী
খেলা
থাকে
জেনে
নিয়েছি - ট্রাপিজ, গ্লোবের
ভেতর
বাইক
রেস
ইত্যাদি।
দেখতে দেখতে এসে গেল খেলার
দিন।
মাঠে
একেবারে
হই হই
ব্যাপার।
সার্কাস
উপলক্ষে
ছোটোখাটো
মেলাও
বসেছে।
সার্কাসের
তাঁবুর
গায়ে
জোকার, ট্রাপিজ, হাতির
রঙবেরঙের
ছবি।
তাঁবুও
রঙ-বেরঙের।
বাইরে
টিকিট
বিক্রি
হচ্ছে।
টিকিট
কাটা
হল।
ভেতরে
বেঞ্চ
দিয়ে
তৈরি
হয়েছে
গ্যালারি।
তাতে
সবাই
বসে
পড়লাম।
কিছুক্ষণ
পর
খেলা
শুরু
হল।
প্রথমে
একটা
অল্পবয়সি
ছেলে, মাটির
থেকে
বেশ
কিছুটা
উপরে
একটা
সরু
দড়ির
উপর
দিয়ে
এ
প্রান্ত
থেকে
অন্য
প্রান্তে
হেঁটে
গেল।
তারপর
সেই
বড়োসড়ো
ছাগলটা
একইভাবে
দড়ির
উপর
হেঁটে
গেল,
আর
তুমুল
হাততালি।
এরপরের
খেলায়
একটি
মেয়ে
একটি
বড়ো
কাঠের
তক্তায়
হেলান
দিয়ে
দাঁড়িয়ে
পড়ল,
আর
একটি
মানুষ
তাতে
একের
পর
এক
চাকু
ছুড়তে
লাগল - অনেকটা
জয়
বাবা
ফেলুনাথের
জটায়ুর
সঙ্গে
যেরকম
ঘটেছিল
মগনলালের
ডেরায় - সেরকম।
এখানে
তফাত
শুধু
এই - যে চাকু
ছুড়ছিল, তার
চোখ
ছিল
বাঁধা।
প্রতিটি
চাকু
ছোড়ার
সময়
সকলেরই
ভয়
করছিল, কিন্তু
কোনো
আশ্চর্য
দক্ষতায়
একটি
চাকুও
মেয়েটির
গায়ে
লাগল
না,
সব
ক’টা
বোর্ডে
গিয়ে
বিঁধল।
আবার
হাততালি।
হঠাৎ দেখি কিছুক্ষণ
আগে
যে
ছেলেটি
খেলা
দেখাচ্ছিল
সেই
এখন
ঘুরে
ঘুরে
বাদাম
বিক্রি
করছে।
তখন
বুঝিনি,
কিন্তু
এখন
বুঝি
তাদের
দারিদ্র্যের
জ্বালা
কত
তীব্র
ছিল।
তাই
আঘাতের
ভয়
থাকা
সত্ত্বেও
ওইসব
খেলা
দেখিয়েও
তাকে
অতিরিক্ত
কিছু
আয়ের
জন্য
বাদাম
বিক্রি
করতে
হয়।
তারপর আরও বিভিন্ন
খেলা
হয়েছিল।
সব
মনে
নেই, তবে
এটুকু
মনে
আছে
ট্রাপিজ
বা
গ্লোবে
বাইক
রেসের
খেলা
হয়নি।
হয়তো
সার্কাসের
দলের
অতটা
সামর্থ্য
ছিল
না
ওইসব
খেলা
আয়োজন
করার।
তাঁবুটিও
ছিল
খুব
ছোটো,
কিন্তু
বাকি
খেলাগুলোও
সে
বয়সে
বেশ
লেগেছিল।
প্রচণ্ড
আন্তরিকতা
ছিল
খেলোয়াড়দের
নিজেকে
প্রমাণ
করার।
ফলে
পরে
কাউকে যখন
আমি
উৎসাহভরে
এই
কথা
বলতে
গেছি,
আর
তারা - “ধুর! ভারী
তো
তোর
একটা
ছোটো
সার্কাস” - বলে ব্যঙ্গ করেছে, রেগে
বলেছি - মোটেই
না,
খুব
ভালো
সার্কাস।
যাই হোক, সবার শেষে
ছিল
সবচেয়ে
ভালো
দুটি
খেলা।
প্রথমে
এল
দু’জন
জোকার, তারা
এত
বেঁটে
যে
নিজের
চোখকে
বিশ্বাস
হচ্ছিল
না।
সে
কী
মজা! সেই
কুকুরগুলো, ছাগলটা
বিভিন্ন
খেলা
দেখায়
আর
জোকার দু’জন
সেই
খেলা
দেখানোর
চেষ্টা
করে, পারে
তো
না-ই
বরং
বিভিন্ন
মজার
কাণ্ড
করে
নাস্তানাবুদ
হয়।
কখনও
সেই
দড়ির
উপর
হাঁটতে
গিয়ে
ব্যালান্স
হারিয়ে
দড়ি
ধরে
ঝুলতে
থাকে,
আবার
কখনও
ছাগলের
ঢুঁসো
খেয়ে
দৌড়োয়।
কখনও
আবার
একটা
জোকার
সেই
কাঠের
তক্তায়
শোয়
আর
অন্য
জোকারটি
চোখ
বন্ধ
করে
তাতে
চাকু
ছোড়ার
চেষ্টা
করে, যদিও
সবকটা
চাকুই
তার
আগেই
মাটিতে
পড়ে
যায়।
শেষ
অবধি
সে
রেগেমেগে
নিজেই
কাঠের
তক্তার
গায়ে
সব ক’টা
চাকু
গেঁথে
দিল।
এরপর এল হাতির
খেলা।
সেদিনকার
সেই
লোকটা
জানলাম
আসলে
রিং
মাস্টার।
হাতিটা
এসে
প্রথমে
জোকারটার
সঙ্গে
কিছুক্ষণ
মজা
করল।
তারপর
একটা
শিবঠাকুরের
মূর্তি
আনা
হল।
এরপরেই
বিপত্তি।
হাতিটা
একটা
গামলা
থেকে
জল
নিয়ে
শিবঠাকুরের
মাথায়
ছিটোতে
লাগল,
আর
একদম
সামনের
সারির
কয়েকটা
লোক
হাঁইমাই
করে
সটান
পেছনে
চলে
এল।
আরে
তাদেরও
জলের
ছিটে
লাগছে
যে!
জোকারটি
অবশ্য
পুরো
ভিজে
গিয়ে
রেগেমেগে
একশা।
তারপর
হাতি
যেটা
করল
সেটা
সত্যিই
আশ্চর্যের।
সে
দু’হাত,
থুড়ি
পা
জড়ো
করে, শিবঠাকুরকে
প্রণাম
করল। দেখলাম তার দেখাদেখি
সার্কাস
দেখতে
আসা
বহু
মানুষও
প্রণাম
ঠুকল।
এরপরই
একজন
এসে
ঘোষণা
করলেন
খেলা
শেষ।
খেলা শেষ হলেও
গল্পের
এখানেই
শেষ
নয়, তা
হলে
মেলাটা
ঘুরবে
কে? ফলে
খুব
মন
দিয়ে
মেলাও
ঘোরা
হল, জিনিসও
কেনা
হল।
রথ
দেখা
আর
কলা
বেচার
মতো
আর কি, সার্কাস
দেখা
ও
মেলা
ঘোরা।
তারপর
সোজা
বাড়ি।
তবে
সেই
হাতিটার
কথা
আজও
ভুলিনি।
মনে
মনে
হয়তো
তার
সঙ্গে
খুব
বন্ধুত্ব
হয়ে
গেছিল।
তবে
ওই
সার্কাসের
বেশিরভাগ
কলাকুশলীদের
মতো
সেও
ছিল
খুব
দুঃখী।
তাকেও
নিজের
বাড়ি
ঘর
অর্থাৎ
জঙ্গল-বন্ধু-পরিবার
ছেড়ে
ঘুরতে
হত।
আর
কোনোদিন
সে
হয়তো
দেখেনি
তার
প্রিয়জনদের।
তারও
কি
মাঝে
মাঝে
মনে
পড়ত
ফেলে
আসা
জঙ্গলের
কথা? শিবঠাকুরকে
প্রণাম
করে
সে
কি
বাড়ি
ফেরার
প্রার্থনা
করত? এখনও
কি
সে
একইভাবে
খেলা
দেখায়? কে
জানে!
ছবি - সুমিত রায়
No comments:
Post a Comment