ডিঙ্গো আর রহস্যময় লেক
দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়
কুট্টিমামা এলেই আমাদের
বাড়ির
পরিবেশটা
আনন্দমুখর
হয়ে
ওঠে।
রান্নাঘরে
মা
আর
বৌদি
ব্যস্ত
হয়ে
যায়
নতুন
কী
রান্না
করে
মামাকে
খাওয়াবে।
রিন্টি, ফড়িং
বাড়ির
ছোটো
সদস্যদের
পড়ার
চাপ
কমে
যায়।
সন্ধ্যা
পার
হলেই
আড্ডা
বসে
আমার
ঘরে।
দাদাও
তাড়াতাড়ি
ফিরে
আসে
অফিস
থেকে।
আজ বৌদি ফুলকপির
শিঙাড়া
বানিয়েছে, ওদিকে
মা
রাতে
পোলাউ
মাংস
করছে।
দ্বিতীয়
রাউন্ড
চা
খেয়ে
মামাও
বেশ
গুছিয়ে
বসেছে।
কুট্টিমামার
বোহেমিয়ান
জীবনযাত্রা
প্রতিবার
আমাদের
নতুন
গল্প
উপহার
দেয়। পৃথিবীর এক প্রান্ত
থেকে
আরেক
প্রান্ত
ছুটে
বেড়ায়
আমাদের
কুট্টিমামা, আফ্রিকার
আদিম
উপজাতি
থেকে
আমাজনের
অরণ্য,
এমনকি
দক্ষিণ
মেরুও
ঘুরে
ফেলেছে।
বড়ো
বড়ো
এনজিও-র
হয়ে
কুট্টিমামা
বিভিন্ন
অঞ্চলে
সার্ভের
কাজ
করে
দিনের
পর
দিন।
“মামাদাদু, তুমি কখনও
বারমুডা
ট্র্যাঙ্গেল
গেছ? ওখানকার
গল্প
শুনব,”
আধো
আধো
গলায়
আবদার
করে
বড়দার
মেয়ে
ফড়িং।
ও
এ
বাড়ির
সবচেয়ে
ছোটো
সদস্য।
“আজ কিন্তু তুমি
ডিঙ্গোর
গল্প
বলবে
বলেছিলে
কুট্টিমামা,”
রিন্টি,
আমার
বোন
বলে
ওঠে।
মামার
মোবাইলের
স্ক্রিনে
একটা
পাহাড়ি
সাদার
ভেতর
কালো
ছোপ
ছোপ
কুকুরের
ছবি
দেখে
সকালে
রিন্টিই
প্রশ্ন
করেছিল। উত্তরে মামা
বলেছিল
এই
কুকুরটা
মামার
পোষ্য
ডিঙ্গো।
খুব অবাক হয়েছিলাম।
মামা
তো
এক
জায়গায়
বেশিদিন
থিতু
হয়
না! তবে
এই
পোষ্যকে
কোথায়
রেখেছে? দুপুরে
মামার
ক্যামেরায়
তোলা
নাগাল্যাণ্ড, অরুণাচলের
ছবি
দেখতে
দেখতে
আমারও
চোখে
পড়েছিল
মামার
সঙ্গে
অনেক
ছবিতেই
রয়েছে
একটা
সাদা-কালো
পাহাড়ি
কুকুর।
“ডিঙ্গো, সেই কুতুবাচ্চাটার
গল্প
আমিও
শুনব।
কিন্তু
পরে, এখন
বারমুডা
ট্র্যাঙ্গেলের
গল্প
হবে,”
ফড়িং
ওর
জেদে
অনড়।
মামার
কোলে
উঠে
পড়ে
ও।
আসলে
সদ্য
একটা
টম
এন্ড
জেরির
কার্টুনে
ও
দেখেছে
বারমুডার
গল্প।
তাই
উচ্চারণ
করতে
না
পারলেও
ঐ
রহস্যময়
সমুদ্র
সম্পর্কে
ওর
এখন
ভীষণ
কৌতূহল।
“কুকুরটাকে কি ঐ অরুণাচলের
পাহাড়েই
পেয়েছিলে? খুব
মিষ্টি
দেখতে,”
বড়দা
চায়ের
কাপটা
নামিয়ে
বলে।
“হ্যাঁ, আমি দু’জনের
কথাই
রাখব, বারমুডা
ট্র্যায়াঙ্গেলের
কথা
তো
সারা
পৃথিবী
জানে,
কিন্তু
এমনই
আরেক
রহস্য
লুকিয়ে
আছে
আমাদের
খুব
কাছেই, সেটা
জানো
কি?”
মামা
রিন্টি
আর
ফড়িং-এর
দিকে
তাকিয়ে
বলল।
প্রশ্নটা
ওদের
করলেও
আমি
একটু
মাথা
চুলকে
নিলাম।
একটা
বড়ো
ম্যাগাজিনের
ভ্রমণ
বিভাগের
দায়িত্বে
রয়েছি, অথচ
কত
কম
জানি।
প্রতিবার
কুট্টিমামা
এলে
তা
প্রমাণ
হয়।
“ভারত আর মায়ানমার
সীমান্তে
পাংসাউ
পাসের
খুব
কাছে
রয়েছে
এমন
একটা
হ্রদ
যাকে
বলা
হয়
লেক
অফ
নো
রিটার্ন।
নামটা
শুনেই
নিশ্চয়ই
বুঝতে
পারছ
যে
জায়গাটা
কতটা
ভয়ঙ্কর
হতে
পারে।
ঐ
লেকের
কাছ
থেকেও
নাকি
কেউ
ফিরে
আসে
না।
ঐ
লেকের
উপর
দিয়ে
হেলিকপ্টার
উড়ে
গেলে
কম্পাস
কাজ
করে
না।
অদৃশ্য
হয়ে
যায়
পশুপাখি, এমনকি
মানুষও।
নানারকম
ঘটনার
কথা
শোনা
যায়
ঐ
সীমান্তে।
আজ
তোদের
সেই
গল্পই
বলব,”
গরম
ফুলকপির
শিঙাড়ায়
কামড়
দিয়ে
মামা
বলল।
বৌদিও ততক্ষণে চলে এসেছে
আমাদের
আড্ডায়।
“আর ডিঙ্গো!” রিন্টি
প্রশ্ন
ছুড়ে
দেয়।
“ডিঙ্গো... একটা উন্নত
পাহাড়ি
কুকুর, বয়স
মাত্র
ছ’মাস।
নাগাল্যাণ্ডের
লোকেরা
কুকুর
খায়
জানিস
তো
তোরা।
সেই
নাগাল্যাণ্ডেই
ওকে
পেয়েছিলাম
একটা
বনের
ভেতর।
আদিবাসীদের
কোনো
গ্ৰাম
থেকে
পালিয়েছিল
ছানাটা, একটা
নালায়
পড়ে
পা
ভেঙে
গেছিল।
ভয়ে, ঠাণ্ডায়
কাঁপছিল।
আমি
আর
গোল্ডি,
আমার
সঙ্গী,
ওকে
উদ্ধার
করে
আমাদের
সঙ্গে
নিয়ে
আসি।
শুশ্রূষায়
ওর
পা
ভালো
হয়ে
ওঠে।
গোল্ডি
লতাপাতা
চিনত।
বাঁশের
কঞ্চি
আর
লতা
দিয়ে
বেঁধে
দিয়েছিল
ওর
পা।
ডিঙ্গো
নামটা
গোল্ডির
দেওয়া। ডিঙ্গোর জন্য
নাগাল্যাণ্ড
ছেড়ে
আমরা
আসামের
তিনসুকিয়ার
দিকে
চলে
গেছিলাম।
আসলে
ওরা
তো
কুকুর
খায়।
কিছু
লোক ডিঙ্গোর
দিকে
এমন
করে
তাকাত
যে
আমাদের
খারাপ
লাগত।
তিনসুকিয়ার
কাছে
যে
গ্ৰামে
আমরা
কাজ
করছিলাম
সেখানকার
আদিবাসীরা
অবশ্য
ডিঙ্গোকে
ভালোবাসত।
ততদিনে
ওর
পা
ঠিক
হয়ে
গেছিল।
ও
প্রজাপতির
পেছনে
ছুটত।
কাক
দেখলে
তাড়া
করত।
গলায়
বেশ
জোর
ছিল
ডিঙ্গোর।
এভাবেই
একটা
কাজে
আমরা
অরুণাচলের
পুবে
নামপোং
গ্ৰামের
চার্চে
চলে
আসি।
ঐ
এলাকার
আদিবাসীদের
উন্নয়ন, ওদের
চিকিৎসা
এসব
সম্পর্কে
একটা
এনজিও-র
হয়ে
রিপোর্ট
বানাচ্ছিলাম
আমরা।
লেক
অফ
নো
রিটার্নের
কথা
এখানেই
প্রথম
জানতে
পারি।
এত
জায়গা
ঘুরলেও
এই
লেকের
কথা
আগে
শুনিনি
কখনও।”
“লেকটা কি খুব বড়ো? মানুষ
ডুবে
যায়?”
ফড়িং
চোখ
বড়ো
বড়ো
করে
জানতে
চায়।
“লেকটির দৈর্ঘ্য ১.৫
কিমি,
প্রস্থ
০.৮
কিমি।
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের
সময়,
১৯৪৩
সালের
দিকে
এ
অঞ্চলে
একটি
রাস্তা
তৈরি
হয়।
তখনই
এ
লেকের
খোঁজ
মেলে।
আদিবাসী
বৃদ্ধরা
বলে
বিশ্বযুদ্ধর
সময়
জাপানি
সেনার
একটা
দল
এই
লেক
পার
করে
এদেশে
প্রবেশ
করতে
গিয়ে
হারিয়ে
গেছিল।
আবার
যুদ্ধ
চলাকালীন
বেশ
কিছু
প্লেন
হারিয়ে
গেছিল
এই
লেকের
উপর।
যুদ্ধের
ডামাডোলে
এনকোয়্যারিও
সেভাবে
হয়নি
কখনও।
একসময়
ম্যালেরিয়ার
প্রকোপে
আশেপাশের
গ্ৰামগুলো
জনশূন্য
হয়ে
গেছিল। এই সব ভূতুড়ে
ঘটনা
ঘটার
পর
মানুষ
আতঙ্কিত
হয়ে
পড়ে।
আস্তে
আস্তে
এই
স্থান
সম্পর্কে
নানা
কল্পকাহিনিও
লোকমুখে
প্রচলিত
হতে
থাকে।
এই
অঞ্চলের
মানুষজন
ভুলেও
লেকটির
ধারে কাছে
যায়
না।
লেকটি এখন
পরিত্যক্ত
অবস্থায়
পড়ে
আছে।
তবে
প্রাকৃতিক
দৃশ্য
মনোরম। এই লেকের
গল্পে
পরে
আসছি।
প্রথমে
আমাদের
পোষ্য
ডিঙ্গোর
কথা
বলি।
প্রচণ্ড
ঘ্রাণশক্তি
ছাড়াও
একটা
ষষ্ঠ
ইন্দ্রিয়
কাজ
করত
ওর
ভেতর।
“সেদিন আমরা পাহাড়ের
দিকে
একটা
গ্ৰামে
গেছিলাম।
ফেরার
পথে
রাস্তা
ভুলে
অন্যদিকে
চলে
যাচ্ছিলাম।
ঐ
বনে
চিতা, বন্য
শুয়োর
এসব
রয়েছে।
হঠাৎ
ডিঙ্গো
আমার
প্যান্ট
কামড়ে
টানতে
থাকে।
গোল্ডি
একটু
এগিয়ে গেছিল।
ভৌ
ভৌ
করে
ওকেও
ডাকতে
থাকে
ডিঙ্গো।
ওর
ডাকেই
গোল্ডি
ফিরে
এসেছিল।
পরে
শুনেছিলাম
ঐ
বনে
একটা
চিতা
বাচ্চা
দিয়েছিল।
মা
বাঘিনী
কেউ
কাছে
গেলেই
আক্রমণ
করত।
আট-দশজন
গ্ৰামবাসী
আহত
হয়েছিল।
দু’জন
মারাই
গেছিল।
বড়ো
বিপদের
হাত
থেকে
বেঁচে
গেছিলাম
আমরা
ডিঙ্গোর
জন্য।
“আরেকদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে
গেল
ডিঙ্গোর
চাপা
স্বরে
গরর... গরর... আওয়াজে।
একটা
বাঁশের
চাটাইয়ের
দশ
বাই
চোদ্দ
ফুট
ঘরে
আমি
আর
গোল্ডি
থাকতাম।
মাথায়
টালির
চাল।
দু’ধারে
দুটো
বাঁশের
মাচায়
আমরা
শুতাম।
ঘরে
মৃদু
চাঁদের
আলোয়
চোখ
সয়ে
যেতে
বুঝলাম
ডিঙ্গো
কিছু
দেখে
ভয়
পাচ্ছে।
ওর
সারা
গায়ের
লোম
ফুলে
উঠেছে, উপর
দিকে
তাকিয়ে
ক্রমাগত
অমন
চাপা
আওয়াজ
করছে। উপরে তাকিয়ে
আমার
চক্ষু
চড়কগাছ।
একটা
প্রায়
আট-ন’ফুট
লম্বা
মোটা
লালচে
রঙের
পিট
ভাইপার
বাঁশের
মাচা
থেকে
ঝুলছে।
এরা
মারাত্মক
বিষাক্ত
হয়।
চাপা
গলায়
গোল্ডিকে
দু’বার
ডাকতেই
ও
উঠে
বসল।
আর
ঠিক
তখনই
সাপটাও
লাফিয়ে
পড়ল
গোল্ডির
বিছানায়।
আর
সঙ্গে
সঙ্গে
ডিঙ্গো
ঝাঁপিয়ে
পড়ল
ওর
উপর।
গোল্ডি
ততক্ষণে
এমারজেন্সি
লাইটটা
জ্বালিয়ে
দিয়েছিল।
ডিঙ্গো
সাপের
পেটটা
চিরে
ফেললেও
মূর্তিমান
মৃত্যুদূত
ফণা
তুলেছে
মাটি
থেকে
দু’ফুট
উপরে।
ডিঙ্গো
স্থির
হয়ে
ওর
চোখের
দিকে
তাকিয়ে
রয়েছে।
কয়েকটা
সেকেন্ড
যেন
কয়েকটা
ঘণ্টার
সমান।
দু’জন
কেউ
হারতে
রাজি
নয়।
ডিঙ্গোর
বড়ো
বড়ো
লোমের
জন্য
ছোবল
মারার
জায়গা
পাচ্ছে
না
সাপটা।
তবুও
দু’বার
চেষ্টা
করেছিল।
ডিঙ্গো
বিদ্যুৎগতিতে
সরে
যাচ্ছিল।
তৃতীয়বার
সাপটা
ছোবল
মারার
মুহূর্তে
ডিঙ্গো
ওর
মাথাটা
চেপে
ধরেছিল
নখযুক্ত
থাবা
দিয়ে।
দ্বিতীয়বার
বেঁচে
গেলাম
আমরা
ডিঙ্গোর
জন্য। ডিঙ্গোর এমন প্রখর
অনুভূতির
প্রমাণ
আরও
বহুবার
পেয়েছি।”
“এমন গল্প বইয়ের
পাতায়
পড়েছি
মামা,”
আমি
বললাম।
“কখনও কখনও বাস্তব
ঘটনা
কল্পনাকেও
ছাপিয়ে
যায়।
অরুণাচলের
নামপোং
গ্ৰামটা
ছবির
মতো
সুন্দর।
পাশেই
মায়ানমার।
বর্ডার
পার
করে
মাঝে
মাঝে
মায়ানমারের
গ্ৰামগুলোতেও
কাজ
করতাম
আমরা।
সে
সব
পারমিশন
ছিল
আমাদের।
গ্ৰামগুলো
দেখতে
খুব
সুন্দর, সবুজ
খেত, নীল
পাহাড়ের
সারি, সাজানো
বাগান, আদিবাসীদের
মধ্যে
চেহারাগত
সাদৃশ্য
রয়েছে।
লোকগুলো
খুব
সরল
সাদাসিধা।
পাংসাউ
পাসের
এই
লেককে
ওরা
শয়তানের
ঝিল
বলত।
দূর
থেকে
দু’বার
লেকটা
দেখেছিলাম।
কেউ
কখনও
মাছ
ধরতেও
যেত
না
ঐ
লেকে।
এমন
সময়
একদিন
শুনলাম
পাশের
গ্ৰামের
একটা
ছেলে
হারিয়ে
গেছে।
সবার
ধারণা
ও
ঐ
লেকে
গেছিল।
ছেলেটা
নাকি
খুব
সাহসী
ছিল।
“আমি আর গোল্ডি
সেদিন
ঐ
গ্ৰামে
গেলাম
সত্যি
ঘটনার
সন্ধানে।
ঐ
লেকের
ধারে
পারতপক্ষে
কেউ
যেত
না।
দূর
থেকে
ছবি
তুললেও
ঝাপসা
লাগত
দেখতে।
কেমন
যেন, আগুনের
উপর
দিয়ে
কিছু
ছবি
তুললে
বা
দেখলে
যেমন
কেঁপে
যায়
অনেকটা
সেরকম।
আমাদের
চার্চের
পাদ্রি
বলতেন
ওখানে
কোনো
ব্ল্যাক
হোল
রয়েছে,
আর
তার
চারপাশে
রয়েছে
অজানা
কোনো
রশ্মি।
যে
রশ্মির
কথা
আমরা
এখনও
জানি
না।
ডায়মেনশন
বদলে
যায়
ঐ
লেকের
কাছে
গেলে।
তার
কারণে
লোকজন
হঠাৎ
অদৃশ্য
হয়ে
যায়।
আর
ফিরে
আসে
না
কখনও।
অন্য
দুনিয়ায়
পৌঁছে
যায়।
অথচ
ঐ
লেকের
থেকে
নাকি
মানুষের
গলায়
আওয়াজ
শোনা
যায়।
সৈন্যদলের
বুটের
আওয়াজ
ভেসে
আসে।
প্লেনের
আওয়াজ
পাওয়া
যায়।
যত
শুনছিলাম
আকর্ষণ
বাড়ছিল।
ঐ
গ্ৰামে
গিয়ে
শুনলাম
একটি
ছেলে
বন্ধুদের
সঙ্গে
বাজি
ধরে
ঐ
লেকে
গেছিল।
বন্ধুরা
দূর
থেকে
ওকে
লেকের
একদম
ধারে
দেখেছিল।
একটু
পরেই
নাকি
ওকে
আর
দেখতে
পায়নি।
একটা
জীবন্ত
ছেলে
যেন
হাওয়ায়
মিশে
গেছিল। ওরা ওদের
সস্তার
ফোনে
তোলা
কয়েকটা
ফটো
দেখিয়েছিল।
নিরাপদ
দূরত্বে
দাঁড়িয়ে
ফটোগুলো
তুলেছিল
ওরা।
কয়েকটা
ফটো
বেশ
কেঁপে
গেছে। খুব হেজি
ফটো।
তারপর
আর
নেই
কেউ।
টলটলে
লেকের
জল, নীল
আকাশ,
দুটো
গাছ, সবুজ
ঘাসজমি
সব
রয়েছে।
ছেলেটা
একদম
গায়েব।”
“কোনো চোরা ঘূর্ণি
থাকতে
পারে, হয়তো
চৌম্বক
ক্ষেত্র
রয়েছে
ওখানে,
যার
টানে
সবাই
তলিয়ে
যায়।
ডুবে
যেতে
পারে।
হয়তো
সাঁতার
জানত
না,”
দাদা
বলল।
“কিন্তু কিছু হলে ছেলেটার
চিৎকার
তো
শোনা
যাবে।
ওর
বন্ধুরা
শোনেনি
কিন্তু
তেমন
কিছু।
অবশ্য
গ্ৰামের
লোক
বলেছিল
মাঝে
মাঝে
ঐ
লেক
থেকে
বিভিন্ন
চিৎকার
ভেসে
আসতে
শোনা
যায়।
আমরাও
শুনেছি
তেমন
চিৎকার।”
“তারপর... তোরা গেছিলি
ঐ
লেকে?”
মাও
হাতের
কাজ
শেষ
করে
এসে
যোগ
দিয়েছে
আমাদের
আড্ডায়।
কুট্টিমামা বলল, “অলৌকিক
বিভিন্ন
ঘটনার
পিছনেও
অনেক
বৈজ্ঞানিক
ব্যাখ্যা
থাকে।
আমরা
তো
সাধারণ
মানুষ, কতটুকুই
বা
জানি।
মায়ানমার
দেশটা
তৃতীয়
বিশ্বের
দেশ, তাই
প্রচার
কম
এই
লেকের।
নাহলে
হয়তো
বৈজ্ঞানিক
ব্যাখ্যা
পাওয়া
যেত।
চার্চের
ফাদার
অবশ্য
বার বার
বলেছিলেন
ওখানে
একধরনের
মহাজাগতিক
রশ্মি
রয়েছে,
যার
কবলে
পড়লে
মানুষ
অদৃশ্য
হয়ে
যায়।
শব্দগুলো
ইকো
হয়, তাই
কখনও
কখনও
ফিরে
আসে।
কিছু
শব্দ
বাতাসে
ভাসে।
শব্দর
গতিবেগ
আলোর
থেকে
কম,
কিন্তু
তা
ধাক্কা
খেয়ে
ফিরে
আসে।
যাই হোক
আমরা
ঐ
গ্ৰামবাসীদের
সঙ্গে
লেকের
ধারে
গেলাম।
প্রায়
তিনশো
মিটার
দূর
থেকে
ওরা
আর
এগোতে
চাইল
না।
আমি,
গোল্ডি
আর
ডিঙ্গো
আরও
কিছুটা
এগোলাম, আবহাওয়া
কেমন
গুমোট।
একটা
গাছের
পাতাও
নড়ছে
না।
স্থির
জলের
লেকটা
যেন
আমাদের
হাতছানি
দিয়ে
ডাকছে। আমি পা বাড়াতেই
ডিঙ্গো
হঠাৎ
আমার
পা
আঁকড়ে
ধরল।
ও
চাইছে
না
আমি
আর
এগোই।
গোল্ডি
আরও
দু’পা
এগিয়ে
গেছিল।
আমি
বললাম
দাঁড়িয়ে
যেতে।
ও
পাত্তা
দিল
না।
ডিঙ্গো
আমায়
ছেড়ে
ওর
প্যান্ট
কামড়ে
ধরল।
লেকটাকে
গোল
করে ঘিরে
রয়েছে
কিছুটা
সবুজ
ঘাস
জমি, লতাগুল্ম।
আমরা
উত্তর
দিকে
হেঁটে
গেলাম
কিছুটা।
বুগ
বুগ
করে
কোন
পশু
জল
খেলে
যেমন
আওয়াজ
হয়
তেমন
একটা
আওয়াজ
ভেসে
আসছিল।
ডিঙ্গোর
লোম
খাড়া
হয়ে
উঠেছিল
সেই
আওয়াজ
শুনে।
চাপা
গরর
গরর
আওয়াজ
করছিল
ও।
আমি
একটা
বাইনোকুলারে
চোখ
রাখলাম।
কিছুই
দেখা
যায়
না, ঘষা
কাচের মতো ঝাপসা সব কিছু।
অথচ
উলটোদিকের
গাছপালা, গ্ৰামের
লোকদের
দেখতে
পাচ্ছি
পরিষ্কার।
বাইনোকুলারের
দোষ
নেই।
আওয়াজটা
ঠিক
কোথা
থেকে
আসছে
দেখতে
এগোতেই
ডিঙ্গো
বাধা
দিল।
“ওদিকে গ্ৰামের যে দলটি
এসেছিল
ওরা
একটু
দূরে
দাঁড়িয়ে
আমাদের
দেখছিল
ভয়ার্ত
চোখে।
হঠাৎ
একজন
এগিয়ে
এসে
বলল
আমাদের
ফিরে
যেতে।
আমরা
বিদেশী, ওদের
অতিথি।
ওরা
চায়
না
আমাদের
ক্ষতি
হোক। গোল্ডি ওদের
বলেছিল
একটা
নৌকা
পাওয়া
গেলে
আমরা
জলে
নামতেই
পারি,
কিন্তু
ওদের
চোখে
ভয়ের
ছাপ।
উৎসাহ
দেখাল
না
কেউ।
হঠাৎ
দেখি
জলের
মধ্যে
ছলাৎ
ছলাৎ
আওয়াজ, ঢেউ
উঠেছে
যেন।
বেশ
বড়ো
বড়ো
ঢেউ
ভাঙছে
পারের
কাছে।
এদিকে
হাওয়া
নেই।
জলাশয়ে
ঢেউ
ওঠে
হাওয়ায়
বা
ভূমিকম্প
হলে।
কিছুই
মাথায়
ঢুকছে
না।
দূর
থেকে
জলের
কম্পন
দেখে
গ্ৰামবাসীরা
ভয়
পেয়েছিল।
ওরা
বার
বার
অনুরোধ
করছিল
ফিরে
যেতে।
ওদের
আশ্বস্ত করে আমরা বললাম
লেকের
চারদিকটা
একটু
ঘুরে
দেখব।
ওরা
তবুও
ভরসা
পাচ্ছিল
না। আমাদের থেকে
পঞ্চাশ
ফুটের
দূরত্ব
রেখে
ওরাও
ঘুরছিল।
হঠাৎ
লেকের পাশে
একটা
ঝাঁকড়া
ফুলের
ঝোপ
দেখে
গোল্ডি
এগিয়ে
গেছিল
কিছুটা।
ফটো
নিচ্ছিল
ওর
ডিএসএলআর-এ।
মাঝে
মাঝে
টিভির
ছবি
যেমন
হেজি
হয়ে
যায়
তেমনি
ফ্র্যাকশন
অফ
সেকেন্ড
কী
যে
হল
আমার
চোখে! পরক্ষণেই
ডিঙ্গো
প্রবল
চিৎকার
করে
ওদিকে
ছুটে
গেল।
কিন্তু
কোথায়
গোল্ডি, কোথায়
ডিঙ্গো।
ইরেজার
দিয়ে
মুছে
ফেলার
মতো
ওদের
কেউ
মুছে
দিয়েছে
যেন
ফ্রেম
থেকে।
আমিও
পা
বাড়িয়েছিলাম।
গ্ৰামের
দুটো
ছেলে
টেনে
না
ধরলে
হয়তো
আমিও...
“ডিঙ্গোর চিৎকারটা এখনও
কানে
বাজছে, আমার
থেকে
ফুট
পঞ্চাশের
দূরত্বে
লেকের
জল
আবার
শান্ত।
কয়েক
মিনিট
কেমন
বোকার
মতো
দাঁড়িয়ে
ছিলাম।
তারপর
চিৎকার
করে
উঠেছিলাম
- ডিঙ্গোওও...
গোল্ডিইই...। বাতাসে প্রতিধ্বনি হতে হতে মিলিয়ে
গেছিল
আমার
আওয়াজ।
“দুটো ছেলে আমায়
টানতে
টানতে
নিরাপদ
দূরত্বে
সরিয়ে
নিয়ে
গেছিল। আমি তখনও
বিশ্বাস
করতে
পারছিলাম
না
ঠিক
কী
হয়ে
গেল।
গোল্ডি
আমার
শেষ
তিন মাসের
সহকর্মী
বন্ধু।
ডিঙ্গো
আমার
দু-দু’বার প্রাণদাতা।
এভাবে
ওরা
হারিয়ে
যাবে... কখনও
ভাবিনি। একটা বড়ো পাথর
ছুড়ে
মেরেছিলাম।
মুহূর্তে
হারিয়ে
গেল।
একটা
গাছের
ডাল
ছুড়লাম, সেটাও...। অভিশপ্ত হ্রদের চারদিকটাই
আসলে
ফাঁদ, মৃত্যুফাঁদ। কীভাবে যে গ্ৰামে
ফেরত
গেছিলাম, পুলিশ, সীমান্তরক্ষীদের
কী
বলেছিলাম
জানি
না। গাঁও
প্রধান
বলছিল
চোরাবালির
থেকেও
ভয়ঙ্কর
কিছু
রয়েছে
ঐ
অঞ্চলে
এবং
জিনিসটা
জীবন্ত,
অর্থাৎ
স্থান
বদলায়।
একসঙ্গে
একশো
বা
আরও
বেশি
সেনাকে
গিলে
খেতে
পারে
সে
চোরাবালি।
“ফাদার এসে বাকিটা
সামলেছিলেন।
আমায়
জোর
করে
ফিরিয়ে
নিয়ে
গেছিলেন
উনি।
চলে
আসার
আগের
দিন
আবার, হয়তো
শেষবার
গেছিলাম
ঐ
লেকের
ধারে।
ডিঙ্গোর
একটা
বল
ছিল
আমার
কাছে।
আমি
ছুড়ে
দিলে
ও
লাফিয়ে
ক্যাচ
করত
মুখ
দিয়ে।
আর
একটা
রবারের
শক্ত
ব্যাট
মতো
ছিল।
ও
চেবাত।
বাচ্চা
কুকুরদের
দাঁত
শুলোয়।
গোল্ডি
ওটা
এনেছিল
ওর
জন্য। চিবিয়ে বেশ মজা পেত ও।
আমি
জিনিসগুলো
নিয়ে
গেছিলাম।
ওই
রাক্ষুসে
ঝোপটা
ফুলে
ফুলে
সেজে
উঠেছিল।
খুব
ইচ্ছা
করছিল
এক
ছুটে
ওখানে
চলে
যাই।
নিজে
গিয়ে
দেখি
ঠিক
কী
রয়েছে
ওখানে।
কতক্ষণ
দাঁড়িয়ে
ছিলাম
জানি
না।
হাতের
বলটা
আর
ডিঙ্গোর
চেবানোর
ব্যাটটা
ছুড়ে
দিলাম
ঝোপটার
দিকে।
মুহূর্তে
নিচে
পড়ার
আগেই
অদৃশ্য
হল
ঐ
দুটো।
চলে
আসছিলাম।
হঠাৎ
মনে
হল
পরিচিত
সেই
ভৌ
ভৌ
ডাক।
স্পষ্ট
শুনতে
পেলাম।
পেছন
ফিরলেই
বোধহয়
দেখতে
পাব
ডিঙ্গোকে।
দু’মিনিট
স্তব্ধ
হয়ে
দাঁড়িয়ে
ছিলাম।
পেছন
ঘুরতেই
চোখে
পড়ল
শান্ত
নীল
জলের
লেক, একটুকরো
ঘাস
জমি
আর
ঐ
ফুলের
ঝাড়,
কিন্তু
বাতাসে
ভেসে
আসছে
আমার
চেনা
গন্ধ।
ডিঙ্গোর
গন্ধ।
জানি
না
দুটো
দুনিয়ার
মধ্যে
কী
অদৃশ্য
দেয়াল
আছে! যা
পার
হয়ে
ওদিকে
যাওয়া
যায়,
কিন্তু
ফেরা
যায়
না
আর।
আমায়
মায়ায়
বাঁধতে
পারেনি
পরিবারের
লোকেরা, পথেই
জীবন
কাটাব
বলে
ঘর
বাঁধিনি,
অথচ
একটা
ছোট্ট
কুকুরছানা
কেমন
মায়ার
বাঁধনে
বেঁধে
ফেলেছিল
আমায়।”
মামা খাট থেকে
নেমে
বারান্দায়
এসে
দাঁড়াল।
একটা
মনখারাপের
রেশ
পাক
খাচ্ছিল
ঘরের
ভেতর।
হঠাৎ
নিস্তব্ধতা
চিরে
‘ভৌ
ভৌ’
আওয়াজে
প্রায়
সবাই
চমকে
উঠেছিলাম।
তারপর
দেখি
মামার
ফোনটা
ফড়িঙের
হাতে, ও
একটা
ভিডিও
অন
করেছে
হঠাৎ।
ছোট্ট
বলটা
ছুড়ে
দিচ্ছে
এক
ভদ্রলোক
আর
ডিঙ্গো
ছুটে
গিয়ে
লুফে
নিচ্ছে।
“গোল্ডি আর ডিঙ্গো
এভাবেই
হয়তো
খেলছে
আমাদের
সমান্তরাল
কোনো
দুনিয়ায়।
ভালো
থাকুক
ওরা।
এভাবেই
থাকুক
একসঙ্গে।
সেদিন
যদি
ডিঙ্গো
ছুটে
না
যেত
হয়তো
আমিও
গোল্ডির
সঙ্গে
পাড়ি
দিতাম
অন্য
ডায়মেনশনে।
ও
আমার
আগে
ছুটে
গিয়ে
সেদিন
আমায়
আরেকবার
বাঁচিয়ে
দিয়েছিল! আটকে
রেখে
গেছিল
এ
পৃথিবীতে,”
মামার
গলা
ভেসে
এল
বারান্দা
থেকে।
মানুষটা
এখানে
থাকলেও
তার
মনটা
চলে
গেছে
অন্য
কোথাও,
অন্য
দুনিয়ায়, সব
যুক্তি
তর্কের
বাইরে।
ছবি - সুমিত রায়
ডিঙ্গোর কথা ভেবে সত্যিই মন খারাপ লাগছে।
ReplyDeleteঅনবদ্য লেখা 👌
ReplyDelete