![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg2dlHwmbvVN2KulEhePRzwhbNpOL0SxHh2W_Wt5ev3TBbDJp2yN0t9XjQPcudZIDb918FQTL9x_8lyAN0x3j6wjzl_Jd2F6dw3qr7qoBf84CbvQG0ReU6dtKLlvME1aiQR7_JGBiHLvLx1/w640-h546/Anish+Deb2.jpg)
আমার
গল্প
চুমকি চট্টোপাধ্যায়
চুমকি চট্টোপাধ্যায়
ম্যাজিক
ল্যাম্পের বন্ধুরা, সবাই ভালো আছ নিশ্চয়ই? আজ একটা
গল্প বলব যেটা আমার জীবনের চলার পথটাকে বেশ খানিকটা বদলে দিয়েছে। ঘটনাটা সত্যি,
তাও গল্প কেন বলছি বলো তো? আসলে, অতীতে ঘটে
যাওয়া যে কোনো ঘটনাই পরবর্তীকালে গল্প হয়ে যায়।
গল্পটা ২০১৩
সালের। কবিতা ক্লাব নামে যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি চালান গায়ক সুরজিৎ চ্যাটার্জী
এবং কমলিনী চ্যাটার্জী, তারা তাদের সদস্যদের বাছাই করা লেখা
নিয়ে প্রতি বছর একটা করে বই প্রকাশ করেন।
কমলিনীর
অনুরোধে আমি প্রথম একটা ছোট্ট গল্প লিখি সেই সংকলনে। বইটি প্রকাশিত হবার পর আমার
পরিচিত অনেক ভাই বোন, যারা লিটল ম্যাগাজিন চালায়, তারা আমাকে
লেখার আবদার করতে শুরু করে। আমিও তাদের আবদার রেখে লিখতে শুরু করি। তবে সবই ছোটো
গল্প বা অণু গল্প।
২০১৪ সালে
শারদীয়া কিশোর ভারতীর প্রস্তুতি চলছে। সেই সময় ত্রিদিব (কিশোর ভারতীর সম্পাদক
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়) আমাকে বলে একটা গল্প লিখতে।
এই
প্রস্তাবে খুশি হবারই কথা, তাই না? এরকম ঐতিহ্যবাহী একটা কিশোর পত্রিকা, তাতে
লেখার সুযোগ পাওয়া তো বড়ো ব্যাপার। কিন্তু বিশ্বাস করো বন্ধুরা, আমি
একেবারে ঘেমে-নেয়ে অস্থির!
কোনোদিন তো
লেখালিখিই করিনি, ভাবিওনি লেখার কথা। যে সমস্ত পত্রিকায় দু-চারটে গল্প লিখেছি
সেগুলো সবই বড়োদের। কিশোর ভারতীর উপযুক্ত গল্প লিখে উঠতে পারব কি!
একটা প্লট
মাথায় এল। লিখলাম। গল্পের নাম দিলাম ‘প্রার্থনা’। দেড়
পাতার ছোট্ট গল্প। একই ক্লাসে পড়ে এমন দুটি মেয়ের কথা। একটি মেয়ে অন্য মেয়েটিকে বড়োই
হিংসে করে। হিংসে করে অবশেষে কী হল জানার জন্য পড়তে হবে ‘সুন্দর আর ভালো’ বইটা।
গল্প ছাপা
হল ২০১৪ সালের কিশোর ভারতী শারদীয়া সংখ্যায়। পাঠক বন্ধুদের কেমন লাগল সেটা জানতে
গেলে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিশোর ভারতী হাতে পেয়ে, পুরোটা পড়ে
তবে তো চিঠি দিয়ে বা ই-মেল করে পাঠ -প্রতিক্রিয়া জানাবে তারা।
এরপর ঘটল
সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা। আমার কাছে অন্তত অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। সেটা ছিল একটা
শনিবার। সেই সময় প্রতি শনিবার আমাদের কিশোর ভারতীর সদর দপ্তরে কোনো না কোনো
সাহিত্যিক আসতেন। একই সঙ্গে দু-তিন জনও আসতেন। আর অবশ্যই আসতেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক
অনীশ দেব।
অনীশ দেব
ছিলেন আমাদের অনীশদা। অন্য কেউ যদি নাও আসতেন, অনীশদা
আসতেনই। যখন অন্যান্য লেখকরা আসতেন তখন জমজমাট একটা আড্ডা হত। দুপুর গড়িয়ে বিকেল
হত চা আর নোনতা মিষ্টির সঙ্গে। সেই দিনগুলো ছিল আনন্দে ভরা। এখন ভাবলে কষ্ট হয়। এই
অতিমারি পরিস্থিতিতে আমাদের সেই আড্ডা আর হয়ে উঠছে না।
যদি আবার সব
স্বাভাবিক হয়েও যায়, তাও আমাদের সেই আড্ডা অপূর্ণ থেকে যাবে। কারণ, আড্ডার
মধ্যমণি অনীশদা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তারার দেশে।
যে গল্প
বলতে গিয়ে এত কথা বললাম এবার সেই ঘটনায় ফিরি। শারদীয়া প্রকাশিত হবার মাস খানেক পর
এক শনিবার অনীশদা এলেন আমাদের দপ্তরে। আমি সেই সময়ে অফিসেই ছিলাম। অনীশদার
মুখোমুখি হলাম। বললাম, “ভালো আছেন তো দাদা?” দেখা হলে এই
প্রশ্নটা আমি করে থাকি। অনীশদা হেসে বললেন, “হ্যাঁ গো, ভালোই
আছি। তোমার সঙ্গে দরকার আছে। দাঁড়াও, হাতটা ধুয়ে আসছি।”
বাইরে থেকে
এসে হাত ধুতেন অনীশদা। পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে চলেছেন সুস্থ অবস্থার শেষ দিন
পর্যন্ত। এই করোনা-কালে মুখে মাস্ক, হাতে স্যনিটাইজার নিয়ে ঘুরতেন।
চেয়ারে বসার আগে সারফেস স্যানিটাইজার স্প্রে করে তবে বসতেন। এ আমার নিজের চোখে
দেখা। তাও ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর পরিহাস, অনীশদাকে চলে যেতে হল সেই করোনা
আক্রমণেই।
অনীশদার কথা
বলতে বলতে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি। জীবনে যাঁদের অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি, অনীশ
দেব তাঁদেরই একজন। চোখ আপনিই ভিজে ওঠে।
অনীশদার
মুখে ‘দরকার আছে’
শুনে আমি একটু ঘাবড়েই গেলাম। কোনো বিরাট রকমের ভুলভ্রান্তি করেছি নাকি! কিশোর
ভারতীতে প্রকাশিত কোনো গল্প বা ছড়া-কবিতা যদি অনীশদার অপছন্দ হত, উনি
অকপটে বলতেন,
“এটা কিশোর ভারতীর মানের সঙ্গে একটুও যায়নি। এটি কার মনোনীত করা?”
অনেক সময়ে
আমিও মনোনয়ন করেছি। সেই চিন্তা দলা পাকাতে লাগল। তাহলে কি সে বিষয়ে অনীশদা কিছু
বলবেন? ভেতরে
ভেতরে বুড়বুড়ি কাটতে লাগল ভয়।
অনীশদা হাত
ধুয়ে এসে চেয়ারে বসলেন। আমাকেও বসতে বললেন। মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসলাম। অনীশদা
বলতে শুরু করলেন, “শারদীয়া কিশোর ভারতী প্রায় পঁচাত্তর ভাগ পড়ে ফেলেছি। বাকি
পঁচিশ ভাগও আগামী সপ্তাহেই পড়ে ফেলব। তোমার গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছে। একটাও
বাড়তি কথা নেই,
থিমও খুব সুন্দর, ভালো একটা মেসেজও আছে। খুব ভালো, খুব
ভালো।”
আমি হতবাক!
এ কী শুনছি?
অনীশ দেবের মতো বিখ্যাত মানুষ আমার মতো চুনোপুঁটির গল্পের প্রশংসা করছেন!
স্বপ্ন দেখছি না কি!
আমার অবস্থা
দেখে হেসে ফেললেন অনীশদা। “কী হল গো চুমকি, অন্য কিছু
চিন্তা করছ নাকি?” অনীশদার কথায় ঘোর কাটল। “আরও লেখো, বুঝলে?” আমি মাথা নিচু
করে ফেললাম। আনন্দে জল এসে গেছিল চোখে।
খুব লজ্জার
সঙ্গে অনীশদাকে বললাম, “দাদা, আপনি প্রশংসা করছেন এ আমার কাছে কত বড়ো
পুরস্কার সে বলে বোঝাতে পারব না। কিন্তু কাউকে যদি বলি এ কথা, সে
হয়তো অবিশ্বাস করবে। ভাববে, বানিয়ে বলছে। আপনি যদি আপনার
ভালোলাগাটা একটু লিখে দেন তাহলে আমি ধন্য হব।”
“আরে, কী
যে বলো। তুমি ভালো লিখেছ বলেই তো বলেছি। তুমি তো জান, স্পষ্ট কথা
বলতে আমি দ্বিধা করি না। ঠিক আছে, আমি ‘তোমাদের কথা’ দপ্তরে চিঠি
দেব।”
চিঠি
দিয়েছিলেন অনীশদা। সেই চিঠি আমি পরম যত্নে রেখে দিয়েছি। এ আমার এক অমূল্য গয়না। কী
লেখা ছিল সেই চিঠিতে? তোমরা নিজেরাই দেখে নাও। এই লেখার সঙ্গে দিলাম আমার পরম
শ্রদ্ধার মানুষ,
প্রিয় সাহিত্যিক অনীশ দেবের হাতে লেখা চিঠি।
সক্কলে ভালো
থাকো। নিজেদের যত্ন নাও, পরিবারের সকলের খেয়াল রাখো।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhVGaybQZ3fQuFGjY1LmjM0ikdWvQ8NShrpHOTWruyDhQr-UlfYXIt7ABHE2lrgHPYIUaezMwAmCwOgA5IO1CpoTKqGaUo8dTzscJRAQmqCmi67xdTCxMvnjpKn5rzsbHJOtWkl6nHotD__/w612-h640/DEPARTMENT+OF+APPLIED.jpg)
----------
অনীশ দেবের ফোটোগ্রাফ - সৌরদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
খুব ভালো লাগলো জেনে ❤❤
ReplyDelete