![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjv_Jg4ETOqMW9NH1DVTNu3qZJt6HIXTq0FKJ-vckqnnDE8QeDED6oGcNfhSTKWdoXVwkWTNPqNZPtnRakHgfqtyeOhrxMpmn9kqNLw_wyj4FW_mjJmmCP21FB63Dn86vAp8F7Qe1ihcJrR/s400/Bengali_Movie_Art_Poster_-_Goopy_Gayen_Bagha_Bayen_-_Satyajit_Ray_Collection_14021f60-9faa-428b-9961-a900a2253c9e.jpg)
ছোটোদের সিনেমা
দেবমাল্য মুখোপাধ্যায়
সিনেমা বা চলচ্চিত্র আজকের
যুগে সেরকম মূল্যবান না হলেও একটা সময় ছিল যখন এই সিনেমা ছিল বিনোদনের একটা অংশ। সত্যি কথা বলতে
সিনেমা আজও বিনোদনের অংশ। কিন্তু এখন ক’টা লোকই
বা সিনেমা দেখে হলে গিয়ে। আর সিনেমা বলতেই এখন বড়োদের সিনেমা। ছোটোদের জন্য সিনেমা বলতে গেলে কেউ
বানায় না। অথচ একটা সময় ছিল যখন ছোটোদের জন্য
সিনেমা বার হত।
আমাদের সময়েই যদি দেখি, তাহলে
আমরা দেখতে পাই যে সেই সময় ছোটোদের কথা
চিন্তা করে প্রচুর সিনেমা বেরিয়েছে। কিন্তু এখনকার দিনে নাকি ছোটোদের উপযুক্ত গল্প নেই। অন্তত অনেক পরিচালকই এই কথা বলেন। কিন্তু আমরা যদি একটু সাহিত্যের
অন্দরমহলে উঁকি মারি তাহলে দেখতে পাব ছোটোদের
সিনেমা করার মতো বিষয়ের কোনও অভাব নেই। উপেন্দ্রকিশোর বা সুকুমার রায়ের রচনাগুলি যদি দেখি তাহলে আমরা
দেখতে পাব শিশুদের বা ছোটোদের
উপযুক্ত সিনেমা করার মতো অনেক বিষয় আছে।
ছোটোদের মন হল কল্পনাপ্রবণ। তারা
কল্পনার জগতে বাস করে। আর তাদের ভালো লাগে রূপকথা, আজব কল্পকাহিনি। তারা পছন্দ করে কার্টুন জাতীয় সিনেমা। আর এখন ডরেমন, শিঞ্চ্যান বা অগির মতো নানা রকমের কার্টুন বেরিয়েছে যা ছোটোদের সত্যিই খুব প্রিয়। কিন্তু আমার ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা জানো না বোধহয় যে একদম প্রথম কার্টুন বেরিয়েছিল মিকি মাউস। বার করেছিলেন
ডিজনি সেই ১৯২৮ সালে। তারপর আসে আরও অনেক কার্টুন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৩৭
সালে স্নো হোয়াইট। আর ১৯৪০ সালে পিনক্কিও বানিয়ে ডিজনি যে যাত্রা শুরু করেন তা আজও অব্যাহত।
তবে ছোটোদের জন্য তৈরি যে সিনেমাটি সাড়া ফেলেছিল
সেটি হল ১৯৩৯ সালে মেট্রো গোল্ডেন মাইয়ার বা এম জি এম-এর তৈরি উইজার্ড অফ ওজ, যেটি সবচাইতে বেশিবার দেখা হয়েছে। ১৯৪০ সাল থেকে নির্মিত হয়ে চলেছে এক
দুষ্টু বিড়াল আর এক মিষ্টি ইদুরের গল্প। মানে তোমাদের বা আমার প্রিয় টম আর জেরি।
এই টম আর জেরির সৃষ্টি যারা করেছিলেন তারা হলেন উইলিয়াম হানানা আর জোসেফ বারবেরা।
এবার আসি আমাদের বাংলায়।
বাংলা চলচ্চিত্রের দিকে যদি তাকাই, তাহলে কিন্তু
অনেক সিনেমার সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন সত্যজিৎ রায় পরিচালিত পথের পাঁচালি, গুপি
গাইন বাঘা বাইন, হীরক রাজার দেশে, সোনার কেল্লা বা জয় বাবা ফেলুনাথ আজও সকল বয়সের
জন্য সমানভাবে সমাদৃত। এছাড়াও সেই সময়ের আরও কিছু সিনেমার নাম না বললেই নয়। এর
মধ্যে অনেক সিনেমাই এখন পাওয়া যায় না। যেমন পরিচালক বিভাস চট্টোপাধ্যায়-এর গোলক ধাম রহস্য এবং ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা। এ ছাড়া দূরদর্শনে সত্যজিৎ রায়ের
ছোটো গল্পগুলো নিয়েও একটা সিরিজ হত।
তারপর হত পরশুরামের গল্প এবং আরও অনেক কিছু। তারপর দামু, হিরে মানিক, দাদু নাতি আর
হাতি এইসব সিনেমাগুলো সেই সময়ের একেকটা
মাইলস্টোন ছিল। এরপর আসে পাতাল ঘর, মনোজদের অদ্ভুত
বাড়ি, ছায়াময় ইত্যাদি সিনেমা।
মিকি মাউসের পর আশির বেশি
বছর পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রযুক্তির আরও উন্নতি হয়েছে, যার ফলে সিনেমার জগতে
ঘটেছে এক বিশাল বিপ্লব। কারণ আগেকার
দিনের সিনেমাগুলোতে প্রযুক্তিগত অভাব দেখা যেত। তবে সত্যজিৎ রায়ের গুপি গাইন বাঘা বাইন
কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আলাদা, কারণ তখন এত
সুন্দর ভি এফ এক্স-এর কাজ সত্যিই খুব কম দেখা গেছে। তবে
এখন আরও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সিনেমা হয়ে উঠেছে এক চোখ ধাঁধানো কর্মকাণ্ডের
সমাহার। এর যেমন মন্দ দিক রয়েছে তেমনই ভালো দিকেরও শেষ নেই। কারণ এই সমস্ত প্রযুক্তি ছাড়া হ্যারি পটার-এর সিনেমাগুলো করা সম্ভব হত না। এছাড়া মারভেল, এভেঞ্জার ইত্যাদি সিনেমাগুলোও
করা সম্ভব হত না। আর সত্যি কথা বলতে এই সিনেমাগুলো আধুনিক প্রযুক্তির এক অন্যতম
নিদর্শন।
এছাড়া ইটি, টয়স্টোরি, স্পাইডার ম্যান, ব্যাটম্যান এইসব সিনেমার কথাও না বললে নয়। কারন ভি এফ
এক্স-এর সুন্দর ব্যবহার এতে দেখানো
হয়েছে। আবার শুধুমাত্র কল্পনাশক্তি বা আঁকার দিক দিয়েও কিছু সিনেমা খ্যাতির চরমে পৌঁছে গেছে। যেমন প্রখ্যাত জাপানি পরিচালক হায়াও মিয়জাকি ‘মাই নেইবার টটার’ নামে একটা সিনেমা
বানিয়েছিলেন।
সব শেষে একটা কথা বলি, আজ পড়াশোনা এবং কোচিং-এর চাপে
শিশুরা ঠিক মতো খেলতেই পারে না, বা ভালো বইও পড়তে পারে না, বা ভালো
ভালো সিনেমা দেখতেও পারে না।
ছোটোদের মনের আনন্দ আর সূক্ষ্ম অনুভূতির জানালা খুলে দেয় ভালো বই বা ভালো ছায়াছবি। তাই আমাদের সকলের কর্তব্য শিশুদের জন্য
ভালো ও শিক্ষামুলক বা মনীষীদের জীবনীমূলক সিনেমা দেখার
সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment