মহাভারতের এক তেজস্বিনী মেয়ের কথা
সুমনা সাহা
(তৃতীয় পর্ব)
জল-জঙ্গল অতিক্রম করে বহু
কষ্টে অর্জুন তাঁর দুজন বিশ্বস্ত অনুচরকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের যে অংশে প্রবেশ করতে
পারলেন, সেদিকে জনবসতি নেই। নির্জন নদীতীরে কেবল লাল কাঁকড়ার ছুটোছুটি আর শনশন
হাওয়া। অর্জুন বনের পথ ধরে এগোনোর কথা ভাবলেন। কিন্তু ক্ষুধায় তাঁরা এতদূর কাতর
হয়ে পড়েছেন যে আর পথ চলা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। দূরে কলাগাছের ঝোপ দেখতে পেয়ে তাঁরা
সেদিকেই এগোলেন, আপাতত কলা খেয়েই পেট ভরানো যাক। অর্জুন পিঠের তিরের বোঝা নামিয়ে
রাখলেন। জলরোধক চামড়ার খাপে তিরগুলো সুরক্ষিত। একজন সঙ্গীর সঙ্গে রয়েছে ছোটো
একখানা কাটারি গোছের অস্ত্র। সেটাই কলার কাঁদি কেটে নামাতে কাজে লাগবে। প্রচুর
পাকা কলা খেয়ে গ্রামের দিকে যাত্রা করার আগে তাঁরা নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা ছকে
নিচ্ছিলেন, এমন সময় দূর থেকে সৈনিকের বেশধারী কয়েকজনকে ছুটে আসতে দেখেই তিনজন যে
যেদিকে পারলেন ছুট দিলেন, কারণ উলটোদিক থেকে অনর্গল তির ধেয়ে আসছে। অর্জুন দেখলেন
সৈনিকরা প্রত্যেকেই বর্ম আচ্ছাদিত, আর তাঁদের তিনজনের খালি গা। সুতরাং এদের সঙ্গে
লড়তে যাওয়া বোকামি। তাই তিনি পলায়নই শ্রেয় মনে করে বনের দিকে দৌড়াতে আরম্ভ করলেন।
কিন্তু কিছুদূর যেতে না যেতেই তাঁর বাম কাঁধের পিছনে বিঁধল তীক্ষ্ণ তিরের ফলা।
যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে গিয়ে তিনি অনুভব করলেন তাঁর চেতনা দ্রুত অসাড় হয়ে আসছে। তিরন্দাজীতে
তাঁর সমকক্ষ ভূভারতে কমই আছে। কিন্তু এক নতুন স্থানে, অজানা প্রতিপক্ষকে বুঝে ওঠার
সুযোগ তিনি পাননি। তবে বেশ বুঝতে পারছেন, তিরের ফলায় চেতনানাশক ঔষধির প্রলেপ
রয়েছে। সম্পূর্ণ জ্ঞান হারানোর আগে তিনি দেহটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলেন
ঝোপ-জঙ্গলের একেবারে ভিতরে। তারপর গাঢ় নিদ্রায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে রইলেন।
যখন চেতনা ফিরে এল,
অর্জুন উঠে বসলেন। দেখলেন তাঁর সমস্ত শরীরের দখল নিয়েছে লাল কাঁকড়ার দল।
নিম্নাঙ্গের বসন জলে কাদায় মাখামাখি। অবসন্ন বোধ করলেন পার্থ, কিন্তু মনের জোর
তাঁর বজায় আছে পূর্ণ মাত্রায়। ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করলেন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ চলার
পর দেখতে পেলেন জঙ্গল ক্রমে হালকা হয়ে এসেছে। বনের প্রান্তে দেখা যাচ্ছে একটি
প্রাচীন মন্দিরের আদল। অর্জুন সেই মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলেন সাহসে ভর করে। মন্দির
যখন রয়েছে, হয়তো মানুষের গমনাগমন থাকবে। তিরের বোঝাটিও আর সঙ্গে নেই, তিনি
নিরস্ত্র, সঙ্গীহীন, প্রয়োজনে দুটি হাত ঊর্ধ্বে তুলে জানু পেতে বসে পড়বেন, অসহায়ভাবে
সাহায্য চাইবেন, তারপর যা হবার তা দেখা যাবে। মন্দিরটি একেবারে সাধারণ ও ক্ষুদ্র।
চারদিকে আগাছার লতাপাতায় ছাওয়া। ভিতরে একটি কালো পাথরের শিবলিঙ্গ। মন্দিরের ভেতরে
ঠান্ডা পাথরের চাতালে ক্লান্ত দেহ এলিয়ে দিলেন অর্জুন, নিদ্রার ভাবে আবার আচ্ছন্ন
হলেন। হঠাৎ একটি মৃদু সুগন্ধে তাঁর তন্দ্রা ছিন্ন হল। এক সশস্ত্র কিশোর তাঁর মুখের
উপর ঝুঁকে আছে কৌতূহলে, সুগন্ধটি সেই কিশোরের দেহ থেকেই উঠে আসছে। অর্জুন ওঠার
চেষ্টা করতেই সে তলোয়ারের বাঁট তাঁর বুকে ঠেকিয়ে একটি তীক্ষ্ণ শিস দিল। সঙ্গে
সঙ্গে বনের শুকনো পাতা মাড়িয়ে ছুটে এল তারই মতন সশস্ত্র কয়েকজন কিশোর। তারা তাঁকে
ঘিরে ধরে দুর্বোধ্য ভাষায় কিছু বলছে। শুয়ে শুয়ে কী করে জবাব দেবেন অর্জুন? তবে
তিনি মনে মনে তারিফ করলেন এই গ্রামের শাসনব্যবস্থার, অল্পবয়সি ছেলেদের যুদ্ধের
প্রশিক্ষণ দিয়ে কেমন অঞ্চল রক্ষায় নিযুক্ত করেছে! অর্জুন দুর্বল শরীরেও একশো
যোদ্ধাকে হারিয়ে দিতে পারেন। এক ঝটকায় তিনি বুকের উপর ঠেকিয়ে রাখা তরোয়ালের বাঁট
সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন আর এক হাতে সজোরে পেঁচিয়ে ধরলেন আক্রমণকারীর গলা। তার
সঙ্গীরা খানিকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ল। কিন্তু অর্জুনের বাহুবন্ধনে বন্দি কিশোর
প্রবলভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে লাগল। এক সময় খসে পড়ল তার
শিরস্ত্রাণ আর লুটিয়ে পড়ল ঘন কুঞ্চিত একঢাল কেশরাশি। নিমেষেই হতচকিত অর্জুনের
ভুজবন্ধন শিথিল হয়ে গেল আর ত্রস্তা হরিণীর মতো ক্ষিপ্র গতিতে পালিয়ে গেল সৈনিকের
দল। যেতে যেতে একবার পিছু ফিরে চাইল সেই পুরুষ বেশী কিশোরী কন্যা, তার টানা টানা
কালো চোখের চাউনি অর্জুনের একেবারে বুকের মাঝে গিয়ে বিঁধল। যাওয়ার আগে সেই মেয়ে
শিবের উদ্দেশে ছুঁড়ে দিয়ে গেছে অঞ্জলিতে রাখা এক গুচ্ছ শুভ্র গুঞ্জা ফুল। ঐ ফুলেরই
ঘ্রাণ পেয়েছিলেন অর্জুন তন্দ্রা ঘোরে। তিনি ভাবলেন, এই মেয়েটি বুঝি শিবপুজো করতেই
এই মন্দিরে প্রতিদিন সকালে আসে। মেয়েটির একাধারে বীরভাব ও পূজারিণী ভাবের অনিন্দ্য
সৌন্দর্যের যুগলবন্দি বীর সেনাপতি অর্জুনের মন কেড়ে নিল। মন্দিরের পাশেই জঙ্গলে গা
ঢাকা দিয়ে তিনি প্রতীক্ষা করতে লাগলেন, কখন আবার সেই মেয়ে আসে শিবপুজো করতে।
ওদিকে রাজকুমারী
চিত্রাঙ্গদাও সেদিন থেকে ঐ বীরপুরুষের ধ্যান করে চলেছেন। কে তিনি? এখানে কেমন করে
এলেন? দেখে তো মনে হল ভিনদেশি। তবে এমন একাকী নিরস্ত্র অবস্থায়
মন্দিরে কেন শুয়েছিলেন? অনেক প্রশ্ন তার মনে। খুব ইচ্ছে করছে, আবার ঐ মন্দিরে গিয়ে
দেখতে, তিনি এখনও সেখানে আছেন কি না! পিতাকে এখনই কিছু জানাতে সে সখীদের নিষেধ করেছে। পরদিন তারা লুকিয়ে থেকে
দেখতে গেল, কিন্তু না, তিনি নেই। চিত্রাঙ্গদা মনে মনে অধীর হয়ে উঠল। হায়, মন্দিরে
যাকে দেবতার প্রসাদের মতন হাতের উপরে পেলাম, তাঁকে কী হারিয়ে ফেললাম? এরপর সে
গোপনে একাই গেল মন্দিরে, শিবপুজোর থেকেও এখন সেই ভিনদেশির দেখা পাওয়ার আগ্রহ বেশি। বাঞ্ছিত ফলও পাওয়া গেল। লোকটি ঘুমিয়ে আছে
মন্দিরের ভিতরে। চিত্রাঙ্গদা পা টিপে টিপে নিঃশব্দে কাছে গেল। গাঢ় ঘুমে অচৈতন্য
অর্জুন, তাঁর দেহে যেন জীবিতের কোনো লক্ষণই নেই। চিত্রাঙ্গদা অতি সন্তর্পণে স্পর্শ
করল তাঁকে, চমকে উঠল, জ্বরে যে গা পুড়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থাসহ
দ্রুত সখীদের নিয়ে ফের হাজির হল সে। তার আগে লতাপাতা দিয়ে শক্ত করে
তারা বেঁধে দিল ভিনদেশীর হাত-পা, বলা তো যায় না, চোখ মেলেই তিনি আবার রাজকুমারীকে
আক্রমণ না করে বসেন! অর্জুনের কাঁধে লাগা তিরের জখম থেকেই সংক্রমণ ও জ্বর হয়েছে
বলে তারা বুঝতে পারল। ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে জড়িবুটি লেপে তার উপর সযত্নে তারা
পটি বেঁধে দিল। উষ্ণ জলে তাঁর শরীর সেঁকতে লাগল। ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে এল মধ্যম
পাণ্ডবের। তিনি ওঠার চেষ্টা করতেই চিত্রাঙ্গদা কোমল হাতে তাঁকে শুইয়ে দিয়ে ঠোঁটে
আঙুল রেখে ইশারায় কথা বলতে বারণ করল। অর্জুন বুঝলেন, তিনি বন্দি, দেহে তো বটেই, এই
মৃগনয়নী সুন্দরী তাঁর মনটিকেও বন্দি করে ফেলেছে। একান্ত নিশ্চেষ্ট হয়ে কুন্তীপুত্র
তাঁর দেহমনের শুশ্রূষার ভার সঁপে দিলেন মণিপুরের এই যোদ্ধা রাজকুমারীর হাতে।
খানিকটা সুস্থ হওয়ার পর,
রাজকুমারীর কাঁধে ভর রেখে অতি ধীরে অর্জুন রওনা হলেন রাজ-সাক্ষাতে। মণিপুরের রাজা
চিত্রবাহন ভারি ভালোমানুষ। অর্জুনের সুন্দর চেহারা, তাঁর নম্র বিনয়ী আচরণ তাঁর ভালো
লেগেছে। চিত্রাঙ্গদার হাবভাব দেখে রাজা-রানি কারোই বুঝতে বাকি নেই যে, তাঁদের
কন্যা ঐ ভিনদেশি যুবককে মনপ্রাণ সমর্পণ করেছে। অর্জুনেরও মনের অবস্থা তথৈবচ।
চিত্রাঙ্গদার স্বভাবের কঠোর-কোমলের অপূর্ব সমাহার তাঁকে এক অনন্য ব্যক্তিত্বের
অধিকারিণী করে তুলেছে। আশৈশব রাজা তাঁকে নিজের পুত্রসন্তান তুল্য যুদ্ধবিগ্রহে
তালিম দিয়ে বড়ো করে তুলেছেন। ফলে সে যেমন সাহসী, তেমনই সকল সংস্কার মুক্ত। কিন্তু
দেবদ্বিজে ভক্তি, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের প্রতি করুণা প্রভৃতি মহৎ গুণ তাঁর
ব্যক্তিত্বকে পূর্ণতা দিয়েছে। ভাগ্যচক্রে দ্রৌপদীর সঙ্গে অর্জুনের বন্ধুত্ব জমে
ওঠার সুযোগ পায়নি। উলুপী অর্জুনের রূপে মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং তাঁর প্রেম আকাঙ্ক্ষা
করেছে, কিন্তু চিত্রাঙ্গদার ও অর্জুনের বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা উভয় দিক থেকেই সমান
ভাবে এগিয়েছে। অর্জুন ভাবেন, এখন যদি রাজা চিত্রবাহনকে নিজের সম্পূর্ণ বংশপরিচয় ও
যে কর্তব্য পালনে তাঁর এই মণিপুরে এসে পড়া—সে সমস্ত কথা জানিয়ে দেন, তাহলে রাজা
হয়তো রাজকুমারীর সঙ্গে অর্জুনের বিবাহে মত নাও দিতে পারেন। তাই অর্জুন নিজের
সম্পূর্ণ পরিচয় গোপন করে রাখলেন। কেবল বললেন, “আমি ক্ষত্রিয় বংশ জাত। দেশভ্রমণে
বের হয়ে আমার তরি ডুবেছে, সঙ্গীসাথিদের হারিয়ে ফেলেছি।” রাজা অর্জুনের হাত দুটি
ধরে বললেন, “আমার মেয়ের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে তোমাকে আমার কাছে রেখে দিতে চাই, তোমাদের
যে সন্তান হবে, তার উপর তোমার বংশের নয়, আমার বংশের দাবি থাকবে। ভগবান আমাকে
পুত্রসন্তানের ভাগ্য থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। তাতে আমার ক্ষোভ নেই। চিত্রাকে আমি
পুত্রের মতোই লালন করেছি। কিন্তু ওকে কাছছাড়া করলে আমি বাঁচব না। বলো, এতে তোমার
কোনো আপত্তি আছে?” রাজার চোখে জল চিক চিক করে উঠল। অর্জুনের মন রাজার প্রতি মমতায়
পূর্ণ হয়ে উঠল। নতুন রাজ্যের ভাষা তাঁর খুব বেশি রপ্ত হয়নি, রাজকুমারী
চিত্রাঙ্গদাই বর্তমানে তাঁর ভাষা-শিক্ষয়িত্রী। কিন্তু রাজার হৃদয়ের আকুল আর্তির
ভাষা বুঝে নিতে তাঁর অসুবিধা হল না। খুব ছেলেবেলার কথা আবছা মনে পড়ল অর্জুনের,
বাবা তাঁকে পরম স্নেহে কোলে বসিয়ে মুখচুম্বন করতেন। খুব অল্প বয়সেই পিতৃহারা
হয়েছেন অর্জুন। আজ তাঁর হাত দুটি জড়িয়ে ধরে তাঁর মুখের দিকে গভীর আশা নিয়ে চেয়ে
থাকা এক পিতার ইচ্ছার অমর্যাদা তিনি কীভাবে করবেন? বললেন, “রাজা! চিত্রাঙ্গদাকে
আমিও মনেপ্রাণে স্ত্রীরূপে পেতে ইচ্ছা করি। সে আপনার কাছেই থাকবে, কথা দিলাম।
আমাদের সন্তানের উপরেও আপনার অধিকার থাকবে। সে মণিপুর রাজ্যের উত্তরাধিকারী হোক,
তা আমার কাছে গৌরবের। কিন্তু সন্তান হওয়ার পর আমাকে আমার নিজের পরিজনদের কাছে ফিরে
যেতেই হবে। আমি স্ত্রী ও সন্তানের কাছে আবার ফিরে আসব। কিন্তু আমার বিদায়কালে বাধা
সৃষ্টি করবেন না, কেবল এই শর্তেই আমি রাজি।”
অর্জুন আর চিত্রাঙ্গদার
বিবাহ হয়ে গেল। এক বছর সুখে অতিক্রান্ত হয়ে গেছে যেন চোখের পলকে। হস্তিনাপুরে অর্জুনের কোনো
সংবাদ পৌঁছায়নি। যে ব্রাহ্মণরা বৈতরণী নদীর তীর থেকে অর্জুনের সঙ্গবিচ্ছিন্ন
হয়েছিলেন, তাঁরাও ফিরে গিয়ে তিরস্কারের ভয়ে যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
মাতা কুন্তী প্রতীক্ষা করে থাকেন, কবে তাঁর মধ্যম পুত্র, বীর অর্জুন, ফিরে আসবে।
তিনি জানেন, ফিরে সে আসবেই। মণিপুর রাজ্য পেয়েছে তাদের ভাবী রাজাকে। চিত্রাঙ্গদা
এক শিশুপুত্রের জন্ম দিয়েছে। সর্বসুলক্ষণ সেই পুত্রের মুখ দর্শন করে অর্জুন
অনাস্বাদিত এক অনুভূতিতে প্লাবিত হয়েছেন, প্রথম পিতা হওয়ার গর্বিত আনন্দ। চিত্রবাহনের মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে ধনরত্ন
দান করলেন, মন্দিরে পুজো পাঠালেন, নিজের ভাগ্যকে বারংবার ধন্যবাদ দিলেন আর
চিত্রাঙ্গদার প্রতি তাঁর মন আগের চেয়ে আরও বহুগুণ প্রেমে পূর্ণ হয়ে উঠল। অর্জুন
জানেন, তাঁকে তীর্থ পরিক্রমা সম্পূর্ণ করে ফিরতে হবে। কিন্তু শিশুকণ্ঠের আধো আধো
বুলি, চিত্রাঙ্গদার অশ্রুসজল চোখ দুটি তাঁর ফেরার দিন ক্রমেই পিছিয়ে দেয়। সন্তান
স্নেহ যে এত মধুর, তা যেমন অর্জুন আগে বোঝেননি, তেমনই তিনি জানতে পারেননি, তিনি এর
আগেই পিতা হয়েছেন, পৃথিবীর বুকে তাঁর আরেক সন্তান জন্ম নিয়েছে, গঙ্গাদ্বারের নিকটে,
নাগলোকে। উলুপী
জন্ম দিয়েছে ৩৩টি সুলক্ষণ যুক্ত এক সুদর্শন পুত্রসন্তান, রাজা কৌরব্য লাভ করেছেন
তাঁর রাজ্যের ভাবী উত্তরাধিকারী, তার নাম রাখা হয়েছে ইরাবান। পিতার স্নেহ সে
পায়নি। উলুপী তাকে একলাই বড়ো করে তুলছেন। চিত্রাঙ্গদার চেয়ে কোনো অংশেই তিনি কম
সাহসী নন!
(ক্রমশ)
ছবি - আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment