ইচ্ছামৃত্যু
সুবোধ কুমার
দে
প্রথম পর্ব
কফি হাউসের বিখ্যাত
সব
আড্ডার
কথা
অনেক
শুনেছি।
তবে
আমাদের
অনাদিদার
চায়ের
দোকানের
আড্ডাকে
আমরা
মোটেই
ছোটো
চোখে
দেখি
না।
অনাদিদার বিখ্যাত চায়ের
দোকানটা
একদম
গঙ্গার
ঘাটের
গা
ঘেঁষে।
চারিদিকে
পাঁচ-ছয়
তলা
ফ্ল্যাটের
ভিড়ে
একটুও
বেমানান
লাগে
না।
আমরা
ছোটোবেলা
থেকেই
দেখে
আসছি
সকাল
পাঁচটা
থেকে
রাত
এগারোটা
অবধি
খোলা।
উলটো
দিকের
পার্টি
অফিস
এই
দোকানের
মাহাত্ম্য
আরও
বাড়িয়ে
দিয়েছে।
নানান
আলোচনাতে
এক
কাপ
অনাদির
চা
যেন
বাড়তি
মাত্রা
যোগ
করে
দেয়।
বিভিন্ন সময় এখানে
বিভিন্ন
বয়সের
ভিড়
জমে।
ভোরের সাথিরা আসর জমায়
সকাল
সকাল।
বেলা
বাড়ার
সঙ্গে
সঙ্গে
কাগজওয়ালা, টোটোর
চালক, বাজার
ফিরতি
কাকু
জেঠু, তারপর
আমরা
মানে
কলেজ
পড়ুয়ার
দল।
পড়ন্ত
বিকাল
থেকে
রিটায়ার্ড
দাদু
আর
সন্ধের
পর
থেকে
অফিসফেরতা
বাবুদের
ভিড়ে
দোকান
সর্বদা
জমজমাট।
বেশি
রাতে
পাড়ার
দাদাদের
রিলাক্সের
জায়গাও
এই
দোকান।
নন্দ দাদু আর গোরা
দাদুর
কথা
অবশ্য
আলাদা।
দিনের
বিভিন্ন
সময়
ওঁদের
এখানে
পাওয়া
যায়।
দুজনই
বাড়িতে
কম
আর
এখানে
থাকেন
বেশি।
দুজনের
বসার
জায়গাও
নির্দিষ্ট।
ডান
দিকের
কোনার
বেঞ্চ।
নতুন
ক্রেতা
না
হলে, কেউ
ওখানে
বসেন
না।
ঐ
দুটো
সিট
দুজনের
নামে
অলিখিতভাবে
রিজার্ভড।
এখনও কোনো বন্ধু
আসেনি।
খবরের
কাগজটাও
দাদুদের
দখলে।
কী
আর
করি।
এক ভাঁড়
চা
নিয়ে
বসে
যাই
দাদুদের
পাশের
বেঞ্চে।
ওনাদের
উচ্চ
মার্গের
কথা
শুনতে
বেশ
লাগে।
গোরা
দাদু, মানে
শ্রী
গৌরাঙ্গ
মুখার্জি
ছিলেন
ডাকসাইটে
প্রোফেসর।
আর
নন্দলাল
কর্মকার
ছিলেন
রেলের
ড্রাইভার।
দুজনের
মধ্যে
যেমন
ভাব
ভালোবাসার
অন্ত
নেই
তেমনি
খটাখটিও
লেগে
থাকে
হরবখত।
-
বুঝলি নন্দ, গডার্ড
সাহেব
কিন্তু
দেখিয়ে
দিলেন
বাঁচা
কাকে
বলে।
-
সেটা আবার কে।
-
অশিক্ষিতদের নিয়ে এই হয়েছে
জ্বালা।
জেন
লুস
গডার্ড, বিখ্যাত
পরিচালক।
-
কী করেছেন উনি?
-
ইচ্ছামৃত্যু বুঝিস?
-
বুঝব না কেন।
এটা
তো
ভারতীয়
সংস্কৃতিরই
আমদানি।
-
ভ্যাট!
-
জীবনে তো রামায়ণ, মহাভারত
কিছু
পড়লি
না, খালি
ইঞ্জিরি
বুকনি।
-
ও, তুই ভীষ্মের
কথা
ভাবছিস
বুঝি।
-
নয়তো কী।
-
বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও
কিন্তু
সজ্ঞানে
মারা
যেতে
পারেন।
আমি
দাদুদের
আলোচনাতে
ঢুকে
পড়ি।
-
বলিস কী।
সত্যি?
আমি ইউটিউব খুলে
দেখাই।
এক
প্রবীণ
বৌদ্ধ
সন্ন্যাসী
এসে
নীল
রঙের
চাদর
পাতা
একটা
বিছানায়
শুয়ে
পড়লেন।
ওনাকে
ঘিরে
হাত
জোর
করে
বসে
আছেন
পাঁচ-ছয়
জন
অন্য
সন্ন্যাসী।
কিছু
সময়ের
মধ্যেই
মহাসমাধিতে
চলে
গেলেন
তিনি।
দৃশ্য
দেখে
দুই
দাদুই
কিছুক্ষণের
জন্য
বাকরুদ্ধ
হয়ে
রইলেন।
খানিক
পর
নন্দ
দাদুই
মুখ
খুললেন
প্রথম।
-
গোরা, কী হল এটা?
-
অনেক সাধনার ফল বুঝলি।
দেখি
গোরা
দাদুর
চোখে
জল।
-
ইশ, আমরাও যদি পারতাম, ছেলে
বউয়ের
হড়কানি, গিন্নির
ক্যাটক্যাটানি
আর
ভাল্লাগে
না…
-
আমার মাথায় একটা
চিন্তা
এসছে।
বলব? গোরা
দাদুকে
আমতা
আমতা
করতে
দেখে
অবাক
হলাম।
-
বল না, অত কিন্তু
কিন্তু
করছিস
কেন?
-
ধর যদি আমি খাওয়া
বন্ধ
করে
দিই।
সুস্থ
শরীরে, সজ্ঞানে?
-
অনাদি, দুটো ডবল ডিমের
অমলেট – জলদি।
তুই
কিছু…?
-
না না, আমি মাথা
নাড়ি।
-
এই জন্য তোর সঙ্গে
কিছু
শেয়ার
করতে
ভাল্লাগে
না।
রাগে
গরগর
করে
ওঠে
গোরা
দাদু।
-
আরে, এখন থেকেই
তুই
খাওয়া
বন্ধ
করবি
নাকি? যা
বলছিলিস
বল।
-
যা বলব না।
মুখ
গোঁজ
করে
থাকে
দাদু
আর
প্রমাদ
গুনি
আমি।
সুমন অ্যান্ড টিম আজ কলেজ
আসছে
না।
ব্রহ্মাস্ত্র
দেখতে
যাবে।
মেসেজ
দেখে
মাথাটা
গরম
হয়ে
গেল।
ধুমায়িত অমলেট টেবিলে
আসতেই, দুই
দাদু
আবার
খোশমেজাজে।
চামচ
দিয়ে
টুক
টুক
কাটছেন
আর
ফুঁ
দিয়ে
দিয়ে
চুক
চুক
মুখে
ভরছেন।
দেখি
দুজনে
আবার
ফিস
ফিস
করে
কথা
চালু
করেছেন।
-
ভাজাটা একটু পুড়িয়ে
ফেলেছে, না
রে?
-
আমারটা তো ঠিকই
আছে।
গোরা
দাদু
মাথা
তোলে।
-
কী যেন বলছিলি।
-
দেখ, আমি ভাবছিলাম, আমি
যদি
খাওয়া
বন্ধ
করে
দিই, তাহলে
কত
দিন
বাঁচব?
-
যতীন দাস ৬৩ দিন বেঁচেছিলেন।
-
ওনার বয়স কম ছিল বুঝলি।
-
কত ছিল?
-
২৪ কি ২৫।
তা
ছাড়া
ওঁদের
সময়টাই
আলাদা
ছিল।
অগ্নিযুগের
বিপ্লবী
বলে
কথা।
কপালে
হাত
ঠেকান
গোরা
দাদু।
-
ধর ৩০ দিন।
ব্রজেন
ডাক্তারকে
ফোন
কর
না।
-
তোর যেমন বুদ্ধি।
তা
হলে
তো
সবাই
জেনে
যাবে।
-
তোর মতলবটা কী বল তো?
-
আমি চাই একটা
নিরিবিলি
জায়গা, যেখানে
আমি
একা
থাকব।
কিচ্ছু
খাব
না
আর
ধীরে
ধীরে
মৃত্যুর
দিকে
এগিয়ে
যাব।
-
আরিব্বাস! বুড়ো কোবরা
সাপেরা
তো
এমনি
করেই
প্রাণত্যাগ
করে।
সদগুরু
বলেছিলেন
একবার।
আমার
সংযোজন।
-
তাতে কী হবে? নন্দ
দাদু
অবাক
চোখে
চেয়ে
থাকে।
-
কী হবে মানে? আমি
রোজ
একটা
খাতায়
আমার
মৃত্যুর
দিকে
তিল
তিল
করে
এগিয়ে
যাবার
অভিজ্ঞতা
লিখে
রাখব।
যেদিন
আমার
যেমন
লাগবে
সব।
-
খিদে পেটে লিখবি? তোর
ইচ্ছে
করবে
লিখতে?
-
এই লেখা গবেষণার
জন্য
কত
কাজে
আসবে
জানিস?
-
তার সঙ্গে যদি পুরো
সময়টা
ক্যামেরাবন্দি
করা
যেত।
আমি
ফুট
কাটি।
-
ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া।
এই
না
হলে
ইয়াং
ব্রেন।
-
কিন্তু ব্যপারটা ঘটাবি
কী
করে।
কত
খরচ
জানিস? তা
ছাড়া
ওরকম
নিরিবিলি
জায়গা
আমাদের
দিচ্ছে
কে? না
হলে
সারাদিন
এইখানে
কাটাতে
হয়।
গোরা
দাদুকে
কল্পনার
দুনিয়া
থেকে
বাস্তবে
নামিয়ে
আনেন
নন্দ
দাদু।
কথাটা সত্যি।
নন্দ
দাদুর
বাড়িতে
ঘরের
তুলনায়
লোক
বেশি।
ছেলে, বউমা, নাতি
নাতনি
নিয়ে
ভরা
সংসার।
দিদা
তো
সারাক্ষণ
খিট
খিট
করে।
গোরা
দাদু
চিরকুমার।
ভাইয়ের
সংসারে
থাকেন।
যা
আয়
করেছেন
তার
একটা
বড়ো
অংশ
খরচ
করেছেন
ভাইয়ের
সংসারে
আর
ভাইপো
ভাইঝির
পড়ার
পিছনে।
থাকাখাওয়ার
জন্য
মাসে
মাসে
একটা
মোটা
টাকাও
তুলে
দেন
ভাইয়ের
হাতে।
কিন্তু
কিছুতেই
কারও
মন
পান
না।
এই
বয়সে
ঠাঁই
নাড়া
হতে
তেমন
ইচ্ছাও
করে
না।
যেমন
চলছে
চলুক।
-
দাদু, যদি কোনো
প্রোডাকশান
হাউসকে
ধরা
যায়।
বিগ
বসে
যেমন
হয়
গো।
-
পাবলিক দারুণ খাবে
কিন্তু।
গোরার
পটল
তোলা।
সব্বাই
টিভি-তে
দেখবে।
নন্দ
দাদু
বেশ
উত্তেজিত।
মাথা নাড়েন গোরা
দাদু।
-
হবে না।
কেউ
ওরকম
রিয়েলিটি
শো
বানাতে
পারবে
না।
-
কেন?
-
ইচ্ছামৃত্যু আমাদের দেশে
ইল্লিগাল।
পুলিশ
ধরবে।
-
আমি বিদেশি সিনেমায়
দেখেছি, অনেক
ধনকুবের
এরকম
এক্সপেরিমেন্টে
টাকা
ঢালে।
মৃত্যুকালে
কেমন
অনুভূতি
হয়, আজ
পর্যন্ত
কেউ
তো
তেমন
জানে
না।
আমি
আবার
বিদ্যে
ফলাই।
-
সেখানেও একটা গেরো
আছে।
দেশটার
নাম
ভারতবর্ষ।
-
তাতে কী? আমাদের
দেশেও
আম্বানি, আদানি
আছে।
সিঙ্গুরের
পর
মনে
হয়
না
রতন
টাটা
ইন্টারেস্ট
দেখাবে।
-
দে তাহলে মুকেশ
আম্বানির
নম্বরটা।
ঝাঁঝিয়ে
ওঠেন
গোরা
দাদু।
-
তোর আইডিয়াটা কিন্তু
খাসা।
যদি
করা
যেত
একটা
দারুণ
ব্যপার
হত।
নন্দ
দাদুর
মনে
ধরেছে
কথাটা।
সবে গরম গরম শিঙ্গাড়া
ভাজা
হয়েছে।
অনাদিদা
চেয়ে
থাকে
দুই
প্রৌঢ়ের
দিকে।
-
দেব নাকি দুইখান।
-
দিবি, দে।
-
আমি খাব না।
এই
অবেলায়
শিঙ্গাড়া
খেলে
ভাত
খাব
কখন? এই
বলে
উঠে
পরে
গোরা
দাদু।
আমিও পা বাড়াই
বাড়ির
দিকে।
এরপর বেশ কিছু
দিন
গোরা
দাদুকে
একাই
বসে
থাকতে
দেখেছি
অনাদিদার
দোকানে।
মন
খারাপ।
বন্ধু
মাঝে
মাঝে
কাউকে
কিছু
না
বলে
বেপাত্তা
হয়ে
যাচ্ছে।
খোলসা
করে
কিছুই
নাকি
বলছে
না।
আজ সকালে দেখি
পাড়ার
মোড়ে
মোড়ে
জটলা।
নন্দ
দাদু
কাল
রাত
থেকে
বেপাত্তা।
দ্বিতীয় পর্ব
বেশ কিছুদিনের ছোটাছুটি
শেষ
পর্যন্ত
কাজে
এসেছে।
নন্দলাল
কর্মকার
অবশেষে
খুঁজে
পেয়েছেন
তার
পছন্দের
বাসস্থান।
ইন্ডিয়ান রেলওয়েজের ড্রাইভারের
চাকরি
থেকে
যখন
অবসর
নিয়েছিলেন
বেশ
কিছু
এককালীন
টাকা
পেয়েছিলেন
নন্দবাবু।
বুদ্ধি
করে
তার
থেকে
লাখ
তিনেক
সরিয়ে
রেখেছিলেন
উনি।
দু-লাখের
এম.আই.এস থেকে
যা
পাওয়া
যায়
তাতেই
চলে
হাতখরচ।
বাকি
এক
লাখ
সেভিংস।
হঠাৎ
যদি
লাগে।
ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ, গিন্নির
নামে
বাড়ি, জয়েন্ট
অ্যাকাউন্ট, গয়না
এই
সবেই
নিঃশেষ
হয়ে
গেছে
সারা
জীবনের
বাকি
উপার্জন।
গিন্নি বেশ আছেন
সব্বাইকে
নিয়ে।
ছেলে, ছেলের
বউ, মেয়ে, জামাই
সব্বাই
মা
বলতে
অজ্ঞান।
কাজের
লোক
ওনার
কথায়
ওঠে
বসে।
নাতি
নাতনিদের
সব
আবদার
মেটানোর
দায়িত্বও
ঠাকুমার।
আজ
এই
মন্দিরে
পুজো, কাল
ঐ
বাড়ির
নেমন্তন্ন, সব
কিছুর
মধ্যমণি
হয়ে
দিব্যি
কাটিয়ে
দিচ্ছেন
উনি
আর
চোখের
বালি
হল
গিয়ে
এই
নন্দ
বুড়ো।
ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে
একটা
বিভেদ
ঘটানোর
চেষ্টাও
করেছিলেন
নন্দবাবু।
-
তোমার সঙ্গে সবার
এত
পিরিত
কেন
জানো?
-
কেন? পান চিবোতে
চিবোতে
জানতে
চায়
সরমা।
-
বাড়ি, টাকা সবই তো তোমার
নামে।
-
তাতে কী?
-
তুমি মরলেই তোমার
গয়না
নিয়ে
মারদাঙ্গা
লাগবে।
-
দূর হও মুখপোড়া
বুড়ো।
তারপর থেকেই মনে মনে প্ল্যান
ভাঁজেন
নন্দবাবু।
জীবনে
কোনো
শখ-আহ্লাদ
পূরণ
করতে
পারেননি।
অন্তত
একটা
ইচ্ছা
পূরণ
হোক।
আজকের দিনে কেউ যদি ভ্যানিস
হতে
চায়, তাকে
দুটো
কাজ
করতে
হবে।
প্রথমে, মোবাইলটির
মায়া
ছাড়তে
হবে
আর
অনলাইন
কেনাকাটা, মায়
এটিএম
পর্যন্ত
ব্যবহার
করা
চলবে
না।
খবরের
কাগজের
কল্যাণে
এটা
ভালোভাবেই
জানতেন
নন্দবাবু।
প্রথমেই তাই ব্যাংক
থেকে
খেপে
খেপে
নিজের
নামে
রাখা
এক
লাখ
টাকা
থেকে
৯০
হাজার
বের
করে
নিয়েছিলেন
উনি।
তারপর
শুরু
করেছিলেন
ঘর
খোঁজা।
দালাল
ধরলে
এসব
এখন
হাতের
মোয়া।
তারকেশ্বর জায়গাটা বরাবরের
পছন্দ
নন্দবাবুর।
উনি
আর
গোরা
তিনবার
পায়ে
হেঁটে
জল
ঢেলেছিলেন
বাবার
মাথায়।
ওইদিকটায়
এখনও
অনেক
গ্রাম-টাম
আছে।
বাসুদেবপুর
তার
মধ্যেই
একটা।
নন্দবাবুকে প্রথমে তেমন
পাত্তা
দেয়নি
মধু।
মধুসূদন
সাঁতরা
এই
গ্রামেরই
ছেলে।
শিক্ষিত
বেকার।
দালালি
করে
খায়।
নন্দবাবু
বাড়ি
খুঁজছে
দেখে
প্রথমেই
চেপে
ধরে
ও।
-
দাদু, ব্যাপারখানা কী?
-
মাস ছয়েকের জন্য
ঘর
ভাড়া
চাই
বাবা।
-
কেন?
-
বাবার কাছে মানত
করেছি।
একা
একা
ধ্যান
করব, নিরিমিশি
খাব।
পাপ
তো
এ
জীবনে
কম
করিনি।
-
কী মানত?
-
ছেলেটা টেট দিয়ে
বসে
রয়েছে।
মেয়েটার
বিয়ে
দিতে
পারিনি।
-
তাহলে তুমি এখন কষ্ট
করবে
কেন? সবাই
তো
মানত
পূরণ
হলে…
-
ঐ দেখ ছেলের
কথা।
আমি
সাধনা
না
করলে
বাবা
আশীর্বাদ
করবেন
কেন?
-
দু-মাসের ভাড়া অ্যাডভান্স
আর
আমার
দালালি
পাঁচ।
-
পাঁচ তো বড্ড
বেশি।
-
তিনের কমে পারব
না।
-
ঠিক আছে বাবা, খালি
দেখো
ঘরখানা
যেন
সাধনার
উপযোগী
হয়।
মাঠের মাঝখানে বাড়ি।
চারিদিকে
ধানখেত।
বাড়িওয়ালা
থাকে
বেশ
খানিকটা
দূরে, বাজারের
কাছে।
আশপাশে
তেমন
ঘরবাড়ি
নেই।
উঠোনের
মাঝে
কুয়ো।
খাবার
জলের
জন্য।
এছাড়া
দৈনন্দিন
কাজের
জন্য
পুকুর
তো
আছেই।
পাকা বাড়ি।
ওপরে
টালি।
বাড়ির
পিছনের
দিকেও
একটা
দরজা
দেখলেন
নন্দবাবু।
গ্রামের
বাড়িতে
পিছনের
দরজা
বেশ
বেমানান।
মধুকে জিজ্ঞেস করে জানা
গেল, আগে
এখানে
খুব
ডাকাতি
হত।
ডাকাত
পড়লে
সবাই
পিছনের
দরজা
দিয়ে
পালাত।
এখন
পিছনের
দিকটা
বাঁশঝাড়
আর
জঙ্গলে
ভরে
গেছে।
একটা অ্যাটাচ বাথরুম
হলে
বেশ
হত।
তবে
কিনা
এই
অজ
গ্রামে
ওটা
নিষিদ্ধ।
রান্নাঘর
আর
পায়খানা
দূরে
বানানোই
রীতি।
আর
শৌচকর্ম
করতে
পায়খানা
ব্যবহার
করাও
বিলাসিতা।
প্রথম একমাস লাগল
সব
কিছু
গুছিয়ে
নিতে।
একটা
সেকেন্ড
হ্যান্ড
তক্তপোশ
আর
বিছানা
কিনতে
গেল
হাজার
খানেক
টাকা।
লাইটের
মিটার
দেখে
গেছে
এই
মাসে, তাই
এখন
আগামী
তিন
মাস
নিশ্চিন্ত।
একটা
পড়ার
টেবিল
আর
চেয়ারও
কিনতে
হয়েছে।
রান্নার
সরঞ্জাম
ভাড়া
নেওয়া
হয়েছে
মাস
ছয়েকের
জন্য।
মধুই
সব
বন্দোবস্ত
করে
দিয়েছে।
বারান্দার
একপাশে
সেট
করে
নিয়েছেন
কেরোসিন
স্টোভ।
স্টোভ
জ্বালিয়ে
রান্না
করতে
সিদ্ধহস্ত
নন্দবাবু।
চাকরি
শুরু
করেছিলেন
মালগাড়ির
ড্রাইভার
হিসাবে।
সঙ্গে
রান্নার
সরঞ্জাম
না
থাকলে
এই
কাজ
করা
বেশ
শক্ত।
এছাড়া, মনটাকে একটু
একটু
করে
তৈরি
করারও
দরকার
ছিল।
একমাস এখানে কাটিয়ে
নন্দবাবু
বুঝে
গেছেন, এই
বাড়ির
আশেপাশে
কেউ
তেমন
আসে
না।
তবু
সাবধানের
মার
নেই।
অনেক চিন্তা করে নন্দবাবু
বুঝেছেন, তিনি
যদি
খাদ্য
জল
ত্যাগ
করেন, ৩০
দিনের
বেশি
টিকবেন
না।
তবু
হাতে
আরও
৩০
দিন
নিয়ে
রাখলেন।
বলা
তো
যায়
না।
১০০% ফ্যাক্টর
অফ
সেফটি
যথেষ্ট।
প্রতিদিন যদি ১০ পাতা
লেখেন, তবে
৩০০
পাতার
বেশি
লেখা
হবে
না।
তবু
২০০
পাতার
দুটো
ভালো
পাতাওয়ালা
খাতা
কিনে
রেখে
দিলেন,
সঙ্গে
পছন্দের
খান
চারেক
পেন।
মধু এই একমাসে
বারতিনেক
খোঁজ
নিয়ে
গেছে।
মধুকে
কাটান
দেবার
একটা
উপায়
বের
করে
নিয়েছেন
আগেভাগেই।
‘অপারেশান ইচ্ছামৃত্যু’ শুরুর
আগের
দিন
সবার
সঙ্গে
একবার
দেখা
করে
নিলেন
নন্দবাবু।
সবার
মানে, বাড়ির
মালিক
আর
মধু।
বাজারে
যার
থেকে
মাল
কেনেন
আর
মুদির
দোকান
এই
দু-জায়গায়
তার
আগেই
শুনিয়ে
রেখেছিলেন – ছেলেমেয়ের
জন্য
মনখারাপ।
তারকেশ্বর
গিয়ে
বাবার
সঙ্গে
দেখা
করে
বুঝিয়ে
বলবেন
যে, ক’টা
দিন
বাড়ি
থেকে
ঘুরে
এসেই
আবার
সাধনায়
বসবেন।
ঘর বাইরে থেকে
তালা
দিয়ে, চাবিটা
রেখে
দিলেন
মধুর
কাছে।
বাড়িওয়ালাকে
আগাম
দিয়ে
দিলেন
আরও
দু-মাসের
ভাড়া।
বাড়িওয়ালা
আর
মধু
দুজনেই
বুড়োর
কীর্তি
দেখে
মনে
মনে
হাসল।
মধুকে বারবার করে বুঝিয়ে
দিলেন
নন্দবাবু।
ঘরে
বাবার
আসন
পাতা।
উনি
না
আসা
পর্যন্ত
যেন
ঘর
না
খোলা
হয়।
আর
যদি
আসতে
দু-মাসের
বেশি
সময়
লাগে, ফোন
নম্বর
লিখে
নিলেন
মধুর।
জানিয়ে
দেবেন
ফোন
করে।
সব কাজ সেরে
নিয়ে
ঢুকলেন
জয়
বাবা
হোটেলে।
লাস্ট সাপারের কথা আগে শুনেছেন।
যিশুর
শেষ
ডিনারের
সঙ্গে
তুলনীয়
না
হলেও
ব্যাপারটা
অনেকটা
একরকম
বলে
বেশ
রোমাঞ্চ
অনুভব
করছেন
নন্দবাবু।
বেশ তারিয়ে তারিয়ে
পাবদা
মাছের
ঝাল
আর
খাসির
মাংস
সহযোগে
এক
থালা
ভাত
খুব
তৃপ্তি
করে
খাওয়ার
পর
নিলেন
কাঁচা
আমের
টক।
মনটা
একটু
খারাপই
হয়ে
গেল
এরপর।
এই
স্বাদের
পৃথিবী
ছেড়ে
স্বেচ্ছা
নির্বাসন
নিতে
মনটা
কেমন
কেমন
করছে
যেন।
এরপর
খেলেন
এক
ভাঁড়
মিষ্টি
দই।
না, আর
মায়া
বাড়াবেন
না।
আস্তে
আস্তে
চললেন
বাড়ির
দিকে।
বাড়ির পিছনের দিকের
রাস্তাটা
নিজে
হাতে
একটু
একটু
করে
সাফ
করে
রেখেছিলেন
এই
দিনের
জন্য।
সন্ধ্যা
নামার
পর
পর
খুব
সাবধানে
পিছনের
ভেজানো
দরজা
খুলে
ঢুকলেন
বাড়িতে।
সব
দরজা
জানলা
বন্ধ
করে
রেখেছিলেন
আগে
থেকেই।
লাইট
জ্বালানো
যাবে
না
কিছুতেই।
আজকের
রাতটা
কাটবে
আগামী
দিনগুলোর
পরিকল্পনাতে।
খানিক চিন্তাভাবনার
পর
নন্দবাবু
ঠিক
করলেন, আজ
রাতটা
যাক।
মেলা
সময়
হাতে
আছে।
কাল
থেকে
যা
করার
করা
যাবে।
ভরা
পেটে
বেশিক্ষণ
জেগে
থাকতে
পারেন
না
উনি।
নন্দবাবুর ঘুম ভাঙল
পাখিদের
কলতানে।
আজ
থেকে
শুরু
হবে
আমৃত্যু
অনশন।
না
ঠিক
অনশন
নয়।
স্বেচ্ছায়
মৃত্যুকে
আলিঙ্গন।
নিজের
ইচ্ছায়
নিজের
মতন
করে
মরা।
সকালে
উঠে
প্রাতঃকৃত্য
সেরে
দাঁত
মাজার
অভ্যাস
সেই
ছোটোবেলাকার।
আজ
প্রথম
নিয়ম
ভাঙা
হল।
পিছনের
দরজা
খুলে
শৌচকর্ম
সেরে
আর
দাঁত
মাজলেন
না।
কী
হবে
মেজে।
আর
তো
খাবেনই
না
কিছু।
সারাদিন অঢেল সময়।
সত্যি, মানুষের
যদি
খাওয়ার
চিন্তা
না
থাকত
তবে
৭৫
ভাগ
কাজই
কমে
যেত।
দিনের
আলো
ফোটার
পর
খাতা
খুলে
বসলেন
নন্দবাবু।
একটা
রুটিন
বানিয়ে
ফেলতে
হবে।
ভেবেই
নিজের
মনে
হেসে
ফেললেন।
ছোটোবেলায়
অনেক
রুটিন
বানাতেন।
কখন
কোন
সাবজেক্ট
পড়বেন, কখন
খেলবেন
এই
সব
আর
কী।
কোনো
রুটিনই
একদিনের
বেশি
মানা
হয়নি।
কিন্তু
আজ
থেকে
জীবনের
সেরা
মিশন
চালু।
সকালটা তিনি রাখলেন
একটু
ঠাকুর
দেবতার
নাম
করার
জন্য।
অল্প
নামগানের
বিনিময়ে
যদি
মরার
পর
একটু
ভালোভাবে
থাকা
যায়
মন্দ
কী?
এরপর তিনি বসবেন
খাতা
নিয়ে।
প্রথম
দিন
থেকেই তো
আর
মৃত্যুভাব
আসবে
না।
তাই
এই
সুযোগে
যদি
একটা
আত্মজীবনীমূলক
কিছু
লিখে
ফেলা
যায়।
মৃত্যুপথযাত্রীর
নিজের
হাতে
লেখা
আত্মজীবনী।
একটা
দারুণ
ব্যাপার
হবে।
ছাপা
যে
হবে
তাতে
কোনো
সন্দেহই
নেই।
পয়সাও
পাওয়া
যাবে
বিস্তর।
কিন্তু
কাকে
উৎসর্গ
করে
যাবেন
তাঁর
এই
লেখা? পরে
ভাবা
যাবে।
হাতে
অঢেল
সময়।
এরপর পড়বেন রাজশেখর
বসুর
লেখা
মহাভারত।
বহুদিন
আগে
কিনে
রেখেছিলেন।
এখনও
পড়া
হয়ে
ওঠেনি।
শুধু
এই
বইটাই
বাড়ি
থেকে
আসার
সময়
নিয়ে
এসেছিলেন।
একটু বেলা বাড়লে
হাত
দেবেন
নিজের
শারীরিক
আর
মানসিক
অবস্থা
নিয়ে
লেখাতে।
এটা
লিখবেন
দ্বিতীয়
খাতাটাতে।
এরপর সন্ধ্যা নামলে
দরজা
বন্ধ
করে
শুয়ে
পড়বেন।
খালি
একটা
পিছনের
খোলা
দরজা
দিয়ে
সারাদিন
যে
আলো
আসবে
তাতে
আর
কতটাই
বা
লেখালেখি
সম্ভব?
আজ প্রথম দিন।
বেশ
মন
দিয়ে
হরিনাম
করলেন
নন্দবাবু।
ঘড়িতে
সবে
সকাল
সাতটা।
এর
মধ্যেই
খিদেটা
জানান
দেওয়া
শুরু
করেছে।
একটু
চা
হলে
বেশ
হত।
না। এত অল্পতে
দমে
যাওয়ার
পাত্র
নন
নন্দলাল
কর্মকার।
তিনে
শুধু
নিজের
প্রতিজ্ঞাতে
অটলই
রইলেন
না, কাটিয়ে
দিলেন
পরবর্তী
১৫
দিন।
প্রথম
দু-দিনের
পর
ওনার
আর
খিদে
বা
তেষ্টা
পেত
না।
পাঁচ
দিন
পর
ওনার
দিনগুলো
কাটত
একটা
ঘোরের
মধ্যে।
জীবনে এই প্রথম
নিজের
আর
অন্য
সবার
কথা
ভাবার
সময়
পেয়েছেন
নন্দবাবু।
নিজেকে
উনি
যতটা
উদার
ভাবতেন, আজ
মৃত্যুর
কাছাকাছি
এসে
আর
ততটা
উদার
মনে
হচ্ছে
না।
তবে
নিজের
মনের
কথা
লিখে
ফেলার
পর
বেশ
হালকা
লাগতে
শুরু
করেছে।
প্রথম দশ দিন তারিখ
মনে
রেখেছিলেন,
তারপর
ভারী
এক
আলস্য
চেপে
ধরল
নন্দবাবুকে।
এরপর
কতগুলো
দিন
আর
রাত
কেটেছে, খেয়াল
নেই।
অবশেষে এল সেই কাঙ্খিত
ক্ষণ।
দিন
তারিখ
সময়
কিছুই
খেয়াল
ছিল না
নন্দবাবুর।
কতদিন
পিছনের
দরজাটা
খোলা
হয়নি
সেটাও
আর
মনে
পড়ে
না।
খুব
ইচ্ছা
হচ্ছিল
এই
সময়টার
কথা
লিখে
রেখে
যাবার।
কিন্তু
শরীর
জবাব
দিয়ে
দিয়েছে।
একটা স্বর্গীয় আলোতে
কেটে
গেছে
সব
অন্ধকার।
নন্দবাবু
ভেসে
চলেছেন
স্বর্গীয়
দোলায়
চেপে
পরপারের
দিকে।
তৃতীয় পর্ব
গোরা দাদু একপ্রকার
জোর
করেই
আমায়
নিয়ে
চললেন
উত্তরপাড়া।
অনেক জিজ্ঞেস করে এটুকু
জেনেছি
যে, মিচকা
ম্যাডাম
হলেন
দাদুর
ছোটোবেলাকার
সহপাঠিনী
আর
ত্রিশ
বছরের
সহকর্মীও
বটে।
দাদুর
মতোই
এখন
অবসর
জীবনযাপন
করছেন।
স্বামী
থাকেন
ছেলের
সঙ্গে
ব্যাঙ্গালোরে।
ফেলু
মিত্তির, ব্যোমকেশ
আর
মিতিন
মাসির
থেকেও
নাকি
ক্ষুরধার
বুদ্ধিসম্পন্না।
নন্দ
দাদুকে
নাকি
উনি
ঠিক
খুঁজে
দেবেন।
দশটার শ্রীরামপুর লোকাল
ছাড়ল
প্রায়
সাড়ে
দশটায়।
নন্দ
দাদুকে
নিয়ে
যে
গোরা
দাদু
বেশ
চিন্তিত
বোঝা
যাচ্ছে।
তেমন
একটা
কথা
বলছেন
না
দাদু।
আজ প্রায় চল্লিশ
দিনের
উপর
হয়ে
গেল
নন্দ দাদু
বেপাত্তা।
পুলিশ
কিছু
করে
উঠতে
পারেনি
এই
পর্যন্ত।
আর
করবেনই
বা
কীভাবে? বাড়ি
থেকে
প্রায়
এক
কাপড়ে
ভ্যানিশ
হয়ে
গেছেন
দাদু।
মানি
ব্যাগ, মোবাইল
সবই
ঘরে
পড়ে
আছে।
শুধু
মানুষটাই
নেই।
বার তিনেক মর্গে
যেতে
হয়েছিল
সরমা
দিদিমাকে।
তিন
বারই
গোরা
দাদু
সঙ্গে
ছিলেন।
কোনো
দেহের
সঙ্গেই
মেলেনি
বন্ধুর
অবয়ব।
গোরা
দাদু
নিশ্চিত, তার
প্রিয়
নন্দের
এরকম
পরিণতি
অসম্ভব।
আত্মহত্যা
করার
বান্দা
নন
নন্দলাল
কর্মকার।
সরমা দিদিমার সঙ্গে
দীর্ঘক্ষণ
কথাবার্তা
চালিয়ে
দাদু
জেনে
নিয়েছেন, কারো
সঙ্গেই
এমন
কোনো
বাদানুবাদ
হয়নি
যার
জন্য
বিবাগী
হয়ে
যাবেন
নন্দ দাদু।
তাহলে
কি
ইচ্ছামৃত্যুর
টানেই
ঘরছাড়া
হল
তার
বোকা
বন্ধুটা।
মিচকা ম্যাডামের ফ্ল্যাট
উত্তরপাড়া
স্টেশন
থেকে
পাঁচ-সাত
মিনিটের
হাঁটা
পথ।
এইটুকু
পথ
হেঁটেই
বেশ
কাহিল
হয়ে
পড়েছেন
দাদু।
ঘরে ঢুকেই হুকুম
দিলেন –
এক
গ্লাস
জল
খাওয়া
তো
মিতু।
এই আনছি, বলে দরজা
না
বন্ধ
করেই
রান্নাঘরে
ছুটলেন
মিতুদি।
-
এই তোর একটা
বড়ো
দোষ।
বাইরে
থেকে
এসেই
ঢক
ঢক
করে
জল
খাওয়া।
আমাদের পৃথিবীবিখ্যাত
গোয়েন্দা
দেখি
একটা
১৬–১৭
বছরের
মেয়ের
সঙ্গে
সকাল
এগারোটার
সময়
লুডো
খেলছেন।
বোর্ড
থেকে
চোখ
না
সরিয়েই
আওয়াজ
দিলেন –
দরজাটা
বন্ধ
করবে
কে
শুনি?
-
বুড়ির একদম শকুনের
চোখ।
জলটা
দাদুর
হাতে
দিয়েই
ফিসফিস
করে
কথাটা
বলতে
বলতে
দরজা
বন্ধ
করতে
ছুটল
মিতুদি।
-
কী বললি রে মিতু?
-
বললাম তোমার একদম
বাজ
পাখির
মতো
চোখ।
অত
দূর
থেকে
ঠিক
বুঝে
গেছ
দরজা
খোলা। ধন্যি ধন্যি।
-
দেখ গোরা কী খাবে।
সঙ্গে
কাকে
এনেছিস
রে?
দাদু আমাকে পরিচয়
করিয়ে
দেয়।
তারপর
লুডোর
বোর্ডটা
দেয়
উলটে।
মেয়েটা
খিলখিল
করে
হেসে
ওঠে।
-
হাসবিই তো মুখপুড়ি।
তিন
গুটি
ঘর
পচিয়ে
হারাতাম
যে।
মিচকা
ম্যাডাম
দারুণ
খেপেছেন
মনে
হল।
তারপর নিজেই হেসে
ওঠেন।
-
ও হল আমার
ছোটো
ভাইয়ের
মেয়ে।
পুঁটিরানি।
-
ভালো হবে না কিন্তু
পিসিমণি।
-
আরও হাস।
পিসি আর ভাইঝি
দুজনেই
স্বাস্থ্য
নিয়ে
খুব
একটা
ভাবিত
নন।
আসা
থেকে
দেখছি
দুজনের
হাত
আর
মুখ
সমান
চলে।
দু-প্লেট
চানাচুর
শেষ
হতে
না
হতেই
মিতুদি
দিয়ে
গেছে
এক
বাটি
নিমকি।
আমাদের
জন্য
কী
বানাবে
জানতে
চেয়ে
বেশ
খানিক
দাবড়ানি
খেল
একবার।
-
আমরা কি বানের
জলে
ভেসে
এসছি? সবার
জন্য
ডবল
ডিমের
অমলেট
আর
গোরা
কী
এনেছে
তাড়াতাড়ি
দে।
-
আমি তো কিছু
আনিনি।
বলে
জিভ
কাটে
দাদু।
-
মানে। কিছু
না
নিয়ে
আমার
বাড়িতে
কী
মনে
করে?
-
আসলে নন্দের চিন্তায়
ভুলে
গেছি।
গোরা
দাদু
সাফাই
দেয়।
-
তুই জানিস না, পেটে
কিছু
না
পড়লে
আমার
মাথা
কাজ
করে
না।
এখন
কী
হবে?
-
আমি এনে দেব? গোরা
দাদুর
দিকে
তাকাই।
-
যা তো বাবা, সামনের
দোকান
থেকে
গোটাকতক
চিকেন
প্যাটি
আর
পেস্ট্রি
নিয়ে
আয়।
এই
গোরা
পয়সা
ছাড়।
দাদুর থেকে পয়সা
নিয়ে
আমি
দুদ্দাড়
করে
রাস্তায়
নামি।
এ
কোথায়
এসে
পড়েছি।
একটা
সিগারেট
ধরিয়ে
এদিক
ওদিক
দেখি।
কেক
পেস্ট্রির
দোকান
স্টেশনের
কাছেই।
মাইক্রোওয়েভ
আছে
কিনা
জানা
নেই।
প্যাটিগুলো
গরম
করতে
বলে
পেস্ট্রি
বাছতে
থাকি।
আগেরবার বাড়িতে
ঢোকার
সময়
খেয়াল
করিনি।
এবার
বেল
বাজানোর
সময়
নেম
প্লেটটার
দিকে
নজর
পড়ল।
অরুন্ধতী
সেনশর্মা – অনিরুদ্ধ
সেনশর্মা।
মানে
আমাদের
গোয়েন্দা
ম্যাডামের
ভালো
নামটা
বেশ
ভারিক্কি।
গরম চিকেন প্যাটি
আর
বাটার
স্কচ
পেস্ট্রি
পেয়ে
পিসি
ভাইজি
একেবারে
আহ্লাদে
আটখানা।
এই
সুযোগে
আমি
ভয়ে
ভয়ে
জিজ্ঞেস
করি –
-
আপনাদের কি বলে ডাকব?
-
কেন মিচকা দিদা
আর
পুঁটি।
চোখ
বুজে
খেতে
খেতে
নিদান
হাঁকেন
গোরা
দাদু।
-
না না, আমার
ভালো
নাম
সুকন্যা।
আমায়
ঐ
নামেই
ডেকো।
-
আচ্ছা।
-
আর আমাকে মিচকা
পিসি।
-
কেন, পিসি কেন?
আমাকে
দাদু
আর
তোকে
পিসি?
-
বাঃ! পুঁটি আমায়
পিসি
ডাকবে
আর
ও
ডাকবে
দিদা?
-
তা বলে…
-
এরপর এই নিয়ে
কথা
বললে, আমি
কেস
নিতে
পারব
না
বলে
রাখলাম।
প্রায় সত্তর কিলোর
ভারী
শরীরটা
নিয়ে
দুলে
দুলে
বেসিনের
দিকে
চললেন
মিচকা
পিসি।
ফিরে
এসে
দাদুর
দিকে
তাকিয়ে
জিজ্ঞেস
করলেন –
-
কী রে গোরা, চা
না
কফি?
-
কফিই বল।
মিতুদিকে কফির হুকুম
দিয়ে, পুঁটির
দিকে
চাইলেন
পিসি।
এ
চাহনির
মানে
পুঁটির
অজানা
নয়।
টুক
করে
একটা
খাতার
মাঝখান
থেকে
দুটো
পাতা
ছিঁড়ে
ফেলে
তৈরি
হয়ে
বসলেন
পুঁটিরানি।
-
তোকে কতবার বলেছি
খাতার
পাতা
ছিড়বি
না।
-
মাঝখানের পিনের জায়গা
থেকে
ছিঁড়েছি, কিছু
হবে
না।
-
একটা ডাইরি তো রাখতে
পারিস।
-
এই কেসটা সল্ভ
করো।
তারপর
থেকে
রাখব।
-
কী বললি রে মুখপুড়ি।
যা
তোকে
আমার
চাই
না।
এবার হাল ধরেন
গোরা
দাদু।
-
মিচকা, নন্দকে খুঁজে
দে।
খুব
আশা
নিয়ে
এসেছি।
গোরা দাদুর গলায়
কিছু
একটা
ছিল।
পিসি
আর
ভাইঝি
দুজনেই
দেখি
সুপার
সিরিয়াস।
-
যা যা ঘটেছে
সব
বল।
গোরা দাদুর যা যা মনে হয়েছে
সবই
বলে
দিলেন।
ইচ্ছামৃত্যুর
পরিকল্পনার
কথাটাও
বাদ
দিলেন
না।
-
পুলিশ কি ঘর সার্চ
করেছিল?
-
করেছিল। কিন্তু
কিছুই
পায়নি।
-
পুলিশ ঠিক কী খুঁজছিল
মনে
হয়?
-
জানি না।
-
নন্দ যে মাঝে
মাঝে
গায়েব
হয়ে
যাচ্ছিল, সেই
সম্পর্কে
তোর
সঙ্গে
কোনো
কথা
হয়নি?
-
না তেমন কিছু
নয়।
জানতে
চাইলে
কিছু
বলত
না।
-
যাঃ! কিছু তো উত্তর
দিত।
-
হ্যাঁ! ছাড়া ছাড়া!
-
যেমন?
-
“আজ একটু
হাওড়া
গেলাম, অনেকদিন
পর
লঞ্চ
চড়লাম” -
এই
সব।
-
হাওড়া কেন গেল জানতে
চাসনি?
-
বলল – হাওড়া ব্রিজ
দেখতে
ইচ্ছা
করছিল
তাই।
-
আত্মহত্যার চান্স কত?
-
শূন্য।
-
দেখ গোরা, কাউকে
বেঁচে
থাকার
জন্য
টাকা
লাগে।
তোর
বন্ধুর
হাতে
কেমন
টাকা
থাকত?
-
সামান্যই। সবই তো সরমার
নামে।
-
ঠিক আছে।
তুই
বন্ধুর
বাড়ি
যা।
আমি
কিছু
প্রশ্ন
লিখে
দিচ্ছি, উত্তর
জেনে
ফোন
কর।
-
নন্দকে পাওয়া যাবে
তো?
-
জানি না।
দেখি
চেষ্টা
করে।
আর
হ্যাঁ, নন্দ
মোবাইল
ইউজ
করত?
-
করত, তবে আনস্মার্ট
ফোন।
-
দে দেখি নম্বরটা, একটা
রিং
দিয়ে
দেখি।
-
মোবাইলটা তো বাড়িতেই
রেখে
গেছে।
-
ও!
দেখি
মিচকা
পিসি
বেশ
অপ্রস্তুত।
- চেয়েছি
যখন
তখন
দিবি।
অত
কৈফিয়ত
দেবার
কী
আছে? -
বলে
কোনোরকমে
সামাল
দিলেন।
আমি মনে মনে হাসি।
নড়বড়ে
গোয়েন্দার
গড়বড়ে
আবদার।
চোখের
কোনা
দিয়ে
দেখে
নিলাম, পিসির
কাণ্ড
দেখে
সুকন্যাও
মিটি
মিটি
হাসছে।
একটা কাগজে কী যেন লিখে
দাদুর
হাতে
ধরিয়ে
দিল
পিসি।
নন্দ
দাদুর
নম্বরটা
সেভ
করে
নিল
নিজের
মুঠোফোনে।
বাড়ি ফিরে নাওয়াখাওয়া
সেরেই
ছুটলাম
গোরা
দাদুর
বাড়ি।
হোক
না
বোকা
বোকা, কিন্তু
একটা
সত্যিকারের
রহস্যের
লাইভ
টেলিকাস্ট
দেখার
ভাগ্য
ক’জনেরই
বা
হয়।
দুজন যখন নন্দ
দাদুর
বাড়ি
পৌঁছোলাম
তখন
বিকাল
চারটে।
কালের
নিয়মে
সবই
স্বাভাবিক
হয়ে
গেছে।
স্বাভাবিক
হননি
শুধু
সরমা
দিদা।
ডাকাবুকো
ভদ্রমহিলা
কেমন
যেন
কুঁকড়ে
গেছেন
এই
দেড়
মাসে।
শুকনো
চেহারা
দেখে
মনে
হয়
খাওয়াদাওয়ার
চরম
অনিয়ম
চলছে।
-
চা খাবে তো ঠাকুরপো?
-
ব্যস্ত হোয়ো না বৌদি।
আমার
ক’টা
ইনফরমেশান
লাগে।
এরপর বুড়োবুড়ি তন্ন
তন্ন
করে
খোঁজা
শুরু
করলেন
নন্দ
দাদুর
ঘর।
দাদু
শেষ
ক’টাদিন
যে
পাঞ্জাবি, ধুতি
পরেছেন, ব্যাঙ্কের
বই, পাশ
বই
সব
কিছু।
তারপর
চা
খেতে
খেতে
ফোন
লাগালেন
মিচকা
পিসিকে।
সরমা দিদার ইশারাতে
লাউডস্পিকার
অন
করে
দিলেন
দাদু।
-
কিছু পেলি?
-
পাঞ্জাবির পকেটে ট্রেনের
টিকিট।
হাওড়া
টু
তারকেশ্বর।
-
তারিখ?
-
অন্তর্ধানের দিন পনেরো
আগের।
-
আর কিছু?
-
বইয়ের তাক থেকে
মহাভারত
গায়েব।
-
ব্যাঙ্কের বই?
-
সবই ঠিক আছে।
-
নন্দের বউকে ফোনটা
দে
তো।
-
বল না। লাউডস্পিকার
অন
আছে।
-
গাধা কোথাকার, আগে বলিসনি
কেন? কিছু
মনে
কোরো
না
ভাই, আমি
অরুন্ধতী।
-
জানি। গোরা
ঠাকুরপো
তোমার
খুব
সুখ্যাত
করে।
আমি
সরমা।
-
কেমন আছ?
-
আর কেমন! যা পোড়া কপাল
আমার।
-
সরমা, মনে করে বলতে
পারবে, পরিবারের
প্রতি
নন্দবাবুর
কোনো
চাপা
রাগ
ছিল
কিনা?
-
যখন একসঙ্গে সংসার
করেছি, অতশত
খেয়াল
করিনি।
এখন
মনে
হয়, থাকলেও
থাকতে
পারে।
যা
চাপা
স্বভাব।
মুখ
ফুটে তো
কিছু
বলেনি
কোনোদিন।
হাউ
হাউ
করে
কেঁদে
ফেলেন
দিদা।
ও প্রান্ত বেশ কিছুক্ষণ
নীরব।
হয়তো
দিদাকে
সামলে
নেবার
সময়
দিলেন
খানিক।
দাদু
একটা
জলের
বোতল
এগিয়ে
দিলেন।
মিনিট
দুয়েকের
মধ্যেই
সামলে
উঠলেন
দিদা।
ফোন
হাতে
নিয়ে
বললেন –
-
আমি ঠিক আছি।
-
আচ্ছা গোরা, তুই আর নন্দবাবু তো
একসঙ্গেই
বেশিরভাগ
সময়
কাটাতি?
-
হ্যাঁ!
-
তোদের দৈনিক খরচ কত হত?
-
তা ধর, মেরেকেটে
ত্রিশ-চল্লিশ
টাকা তো
বটেই।
-
কোনো নেশা?
-
না না।
খালি
চা।
আর
একটু
ভালোমন্দ
খাবার।
চোখের
কোনা
দিয়ে
একবার
দিদিমাকে
দেখে
নিলেন
গোরা
দাদু।
-
আচ্ছা সরমা, ব্যাঙ্ক
একাউন্ট
তো
সব
তোমার
নামে।
নন্দবাবুকে
তুমি
কি
হাত
খরচের
টাকা
দিতে?
-
না তো।
কখনও
তো
চায়নি
আমার
কাছে।
-
তুমি কখনও জানতে
চাওনি?
-
ভেবেছিলাম হয়তো ছেলেমেয়েরা
দেয়।
-
ছেলেমেয়ে কাকে বেশি
ভালোবাসে? তোমাকে
না
ওঁকে?
-
আমাকেই। ওঁর সঙ্গে
তো
কথাবার্তাই
নেই।
-
তোমায় ছেলেমেয়েরা হাতখরচ
দেয়?
-
নিজেরাই হাত পাতে
আমার
কাছে, ওরা
দেবে
হাতখরচ।
-
নন্দবাবুর স্যালারি একাউন্টটাই
কি
পরে
জয়েন্ট
করেছিলে?
-
না না, এটা তো দুজনে
মিলে
খুলেছি।
পেনসন
তো
সব
এতেই
আসে।
-
ঠিক আছে।
গোরা
রাতের
দিকে
ফোন
কর।
আমি
একটু
ভাবি।
-
আমার স্বামীকে খুঁজে
দাও
বোন।
সরমা
দিদার
গলায়
কাকুতি
ঝরে
পরে।
পিং পিং শব্দ
তুলে
ফোন
কেটে
যায়।
বাড়ি ফেরার আগে নিজের
ফোনে
সেভ
করে
নিই
গোরা দাদুর
নম্বর।
একটা
মিস
কল
দিয়ে, আমার
নামটাও
সেভ
করে
দিই
গোরা
দাদুর
মোবাইলে।
-
যখনই দরকার পড়বে
আমায়
জানাবে।
-
ঠিক আছে বাবা।
মিচকা পিসি কি সত্যি
দাদুকে
খুঁজে
দিতে
পারবে? মনে
তো
হয়
না।
তবু
কেন
জানি না, এই
ঘটনার
সঙ্গে
নিজেকে
জড়িয়ে
রাখতে
বেশ
মজা
লাগছে।
রাত ন’টায় দেখি
গোরা
দাদু
ফোন
করেছে।
কাল
একবার
তারকেশ্বর
যেতে
হবে
দাদুর
সঙ্গে।
সকাল আটটার তারকেশ্বর
লোকালে
তেমন
একটা
ভিড়
নেই।
পাশাপাশি
সিট
পেয়ে
গেছি
দুজনেই।
বসেই
চেপে
ধরি
দাদুকে।
যা
যা
হয়েছে
সব
জানতে
হবে।
ধীরে ধীরে এক এক করে বলা চালু
করলেন
গোরা
দাদু।
নন্দ দাদুর আলমারির তাক থেকে
দিদা
উদ্ধার
করেছেন
একটা
ইউ.বি.আই
ব্যাঙ্কের
এ.টি.এম কার্ড।
ধুতির
ভাঁজে
ছিল
তাই
প্রথমে
পাওয়া
যায়নি।
মিচকা
পিসির
প্রশ্নে
খটকা
লেগেছিল
দিদার।
তাই
নিজেই
প্রথমে
ছেলেমেয়েদের
জেরা
করে
জেনে
নেন
যে
কেউ
বুড়োকে
এক
কানাকড়িও
দিত
না।
তারপর
কোমর
বেঁধে
নেমে
পড়েন
খানাতল্লাশিতে।
কার্ড
হাতে
পেয়ে
দিদার
নাকি
খুব
অভিমান
হয়েছে।
আরও জানা গেছে, ইউ.বি.আই
ব্যাঙ্কের
হাওড়া
শাখাতে
নন্দ
দাদুর
স্যালারি
অ্যাকাউন্ট
ছিল।
নন্দ
দাদুর
এক
সহকর্মীর
থেকে
এই
খবর
বের
করে
ফেলেছেন
দিদা।
নন্দ
দাদু যে
সেই
অ্যাকাউন্ট
এখনও
ক্লোজ
করেননি, এ.টি.এম কার্ডের
ভ্যালিডিটিই
তা
জানান
দিচ্ছে।
কার্ডটা
ইস্যু
হয়েছে
দাদুর
অবসর
নেবার
মাস
দুয়েক
পরে।
-
তা আমরা তারকেশ্বর
যাচ্ছি
কেন?
-
মিচকার মতে, নন্দকে
যদি
কোথাও
পাওয়া
যায়, তবে
তারকেশ্বরেই
পাওয়া
যাবে।
-
তা, এত বড়ো তারকেশ্বরে
আমরা
দাদুকে
খুঁজব
কী
করে?
-
মন্দিরের আশপাশের হোটেলগুলো
একবার
খুঁজে
দেখব
ভেবেছি।
-
মিচকা পিসি জানে?
-
না না।
ও
বলল
কী
সব
ভাবছে।
তাই
ভাবলাম
এই
সুযোগে
আমি
একবার
ভাগ্য
পরীক্ষা
করে
দেখি।
সারা দিনে অন্ততঃ
খানদশেক
হোটেলে
খোঁজ
নিলাম।
কেউ
কিছু
বলতে
পারল
না।
অগত্যা
গোরা
দাদু
ফোন
করে
সারাদিনের
রিপোর্ট
জানাল
পিসিকে।
মিচকা
পিসি
সব
মন
দিয়ে
শুনলেন।
তারপর
আমরা
কীভাবে
খোঁজ
চালাচ্ছি
জেনে
নিলেন।
শেষে
বললেন, কাল
পুঁটি
তোদের
সঙ্গে
যাবে।
ওর
দেখাশোনা, খাওয়াদাওয়ার
দায়িত্ব
তোর।
সারা রাত দু-চোখের
পাতা
এক
করতে
পারলাম
না।
কাল
সুকন্যা
আমাদের
সঙ্গী
হবে।
ভাবতেই
একটা
রোমাঞ্চ
হচ্ছে।
কলেজের
ফার্স্ট
ইয়ার
হয়ে
গেল।
আজ
পর্যন্ত
কোনো
অচেনা
মেয়ের
সঙ্গে
কোথাও
যাইনি। বারো ক্লাস
অবধি
পড়েছি
রামকৃষ্ণ
আশ্রমে।
টিউশনেও
তেমন
কিছু
করে
উঠতে
পারিনি।
খালি
দূর
থেকে
দেখে
গেছি, আমার
স্বপ্নের
প্রিয়তমারা
অন্য
বন্ধুদের
বাইকে
চেপে
এমাথা
ওমাথা
ঘুরছে।
নামটাও
বেশ।
সুকন্যা।
একটু
মোটা।
না
না
ঠিক
মোটা
না।
স্বাস্থ্যবতী।
গজগামিনী…
-
কী বিড়বিড় করছিস?
মায়ের এক ধাক্কায়
সব
স্বপ্নের
অবসান।
ঘড়িতে
সাড়ে
ছ’টা।
তাড়াতাড়ি
রেডি
হয়ে
ছুটি
গোরা
দাদুর
বাড়ি।
আজ তারকেশ্বরে নেমে, প্রথমেই
আমরা
গেলাম
বাবার
মন্দিরে।
পিসি
নাকি
বলে
দিয়েছে, ভালো
কাজে
ঠাকুরের
আশীর্বাদ
চাই-ই
চাই।
এরপর
তিনজনে
গিয়ে
বসলাম
কাছের
মিষ্টির
দোকানে।
দু-দফায়
আটটা
ডালপুরি
খাবার
পর
অ্যাসিস্ট্যান্ট
ম্যাডাম
জানতে
চাইলেন,
-
ছানার জিলিপি কবেকার?
-
টাটকা দিদিমণি।
-
দাও তবে দুটো।
মিনারেল ওয়াটারের বোতল
থেকে
জল
নিয়ে
হাত
ধুয়ে, খানিক
গলায়
ঢালার
পর
ম্যাডামের
ইতি
উতি
চাহনি
জানান
দিচ্ছে, আরও
কিছু
চাই।
-
কিছু খুঁজছেন?
-
একটু চা পেলে…
অতএব, আমরা বসি চায়ের
দোকানের
বেঞ্চে।
গরম
চায়ে
প্রথম
চুমুক
দিয়ে
মুখ
খুলল
সুকন্যা।
-
আচ্ছা দাদু, তুমি
যদি
নিজে
ইচ্ছামৃত্যুতে
যেতে, কোথায়
থাকতে?
-
হোটেলে। আরাম
করে
থাকতাম
আর
বাইরে
ডু
নট
ডিস্টার্ব
বোর্ড
লটকে
দিতাম।
-
কিন্তু দু-এক দিনের
মধ্যেই
তো
জানাজানি
হয়ে
যেত, তুমি
কিচ্ছু
খাচ্ছ
না।
-
হ্যাঁ! তাই তো।
তার
চেয়ে
একটা
ফ্ল্যাট
ভাড়া
পেলে
মন্দ
হত
না।
ফ্ল্যাটে
কেউ
কারও
খোঁজখবরও
নেয়
না
শুনি।
-
তোমার কি মনে হয়, ফ্ল্যাট
ভাড়া
নেবার
সঙ্গতি
নন্দ
দাদুর
ছিল?
-
না মনে হয়।
সব
টাকাই
তো
সরমা
বউদির
কব্জায়।
-
না না, তা কেন? খানিকটা
তো
উনি
সরিয়ে
রেখেছিলেন
নিশ্চয়ই।
তা
না
হলে
ওঁর
চলত
কী
করে।
-
সরালেও তেমন বেশি
কিছু
নয়।
মাসের
শেষে
হাত
খালি
থাকত
নন্দর।
-
তবে এই অবস্থায়
নন্দ
দাদু
কোথায়
থাকতে
পারে।
-
আচ্ছা, গ্রামের দিকে
বাড়ি
ভাড়া
পাওয়া
যায়
নিশ্চয়।
-
কিন্তু গ্রামে সবাই
সবার
খোঁজ
রাখে।
-
যদি কোনো নিরিবিলি
জায়গা
পাওয়া
যায়।
-
তাহলে দেখ চেষ্টা
করে।
আমরা
এখানেই