সত্যি রাজপুত্র - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
আলোচনা - সুলগ্না ব্যানার্জী
বই:
সত্যি রাজপুত্র ।। লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রকাশক:
আনন্দ পাবলিশার্স; মূল্য: ৫০ টাকা
সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সত্যি রাজপুত্র’ উপন্যাসটি সম্প্রতি আমার হাতে এল গ্রন্থাগারের সৌজন্যে।
বর্তমানে উক্ত উপন্যাসটি ‘আনন্দ পাবলিশার্স’ থেকে প্রকাশিত সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘দশটি কিশোর উপন্যাস’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
গল্পের মুখ্য চরিত্র ‘মলয়’-এর পূর্বপুরুষরা সোনাপুরা নামক এক জায়গায় রাজা ছিলেন।
কিন্তু বর্তমানে সেই রাজ্যপাট না থাকলেও কলকাতায় ঝাঁ চকচকে বাড়ির
ছোটোবাবু মলয়কে সরকারবাবু এবং দাসদাসীদের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয় বেশিরভাগ সময়।
এমনকি ছেলেমানুষ বলে তার হাত খরচের জন্য একটা টাকাও দেন না বাড়ির
বড়োরা।
তার বাবা সেবার কাজের সূত্রে বিলেতে আর মলয়ের মা প্রতি বছর গরমকালে
দার্জিলিং-এ চলে যান। স্কুলের
ছুটি পড়লে মলয় চলে যায় মায়ের কাছে। এছাড়াও
বাড়িতে আছেন তার দাদা-বৌদি।
তবে সেবার দাদা বৌদিও বেড়াতে গেছেন সিমলায়।
মা-বাবা না থাকলে পিসিমণি
প্রায়ই চলে আসেন মলয়ের কাছে তার ইচ্ছে পূরণ করতে।
সেবার স্কুল বন্ধ হতে আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি,
ওদিকে বাড়িতে গুরুদেব আসায় পিসিমণিও ব্যস্ত।
এহেন অবস্থায় একদিন স্কুলে ক্লাস চলাকালীন ক্লাস-টিচার ফাদার ডেভিড ডেকে পাঠিয়ে মলয়কে জানালেন তার পিসিমণি তাকে গুরুদেবের
সঙ্গে আলাপ করাতে জরুরি তলব করেছেন গাড়ি পাঠিয়ে। সরল
বিশ্বাসে মলয় গিয়ে ওঠে গাড়িতে। তবে
খানিক পরেই গাড়ির ড্রাইভার ও পাহারাদারের আচরণে প্রবল সন্দেহ জাগে মলয়ের মনে।
সে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবার আগেই পাহারাদার তার নাকে একটা রুমাল
চেপে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
জ্ঞান ফিরলে কিছুক্ষণ থিতু হয়ে মলয় বোঝে তার আশঙ্কা কিছুমাত্র
ভুল নয়। তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
কিন্তু কেন? কিছুক্ষণের
মধ্যেই উত্তর পায় সে। ‘গুরুদেব’
বলেই একজন কারও নির্দেশে সে অপহৃত, কিন্তু সে গুরুদেব কোনো ডাকাতদলের সর্দার,
পিসিমণির গুরুদেব নন। কিশোরমনে
ফুটে উঠতে থাকে নানান চিন্তা। কিন্তু
একদল ডাকাতের মাঝে পাঁচদিন হাতে পায়ে শেকল বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে বাড়ির
লোকজনদের ওপর তীব্র অভিমান হয় তার। অবশেষে
সম্বিত ফিরে পায় সে। বোঝে আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজন
বুদ্ধির। উপায় খুঁজে বের করে প্রথমবার
পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় মলয়, এমনকি মারও
খেতে হয় তাকে। তবুও সে দমে না,
দ্বিতীয়বারের চেষ্টা বিফলে যায় না তার।
ডাকাতদলের ঘাঁটি থেকে অনতিদূরেই ‘হরিচরণ’-দের গ্রামে এসে ওঠে সে। অতিথিবৎসল
গরিব চাষি হরিচরণ মলয়কে নিজের সন্তানস্নেহ দেয়।
সত্যিই কি মলয়ের বাড়ির লোকজনের কোনো দায়িত্ব নেই মলয়ের প্রতি?
মলয় কি হরিচরণের সহযোগিতায় ফিরতে পারবে নিজের বাড়িতে নাকি ধরা পড়বে
ডাকাতদলের হাতে? শেষ পর্যন্ত কী হয় তা জানতে হলে অবশ্যই পড়তে
হবে সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমে ‘সত্যি রাজপুত্র’ উপন্যাসটি।
এখানে নেই কোনো গোয়েন্দা চরিত্রের কথা, তবুও কী যেন এক অমোঘ আকর্ষণে
এই উপন্যাসের প্রতি আকর্ষিত হবে আট থেকে আশির পাঠকবৃন্দ।
----------
সত্যি রাজপুত্রের মলয়ের সঙ্গে ফটিকচাঁদের বাবলুর খুব মিল পাই। তবে এই বইয়ের প্রচ্ছদ এত বাজে ছিল বলে মনে পড়ছে না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একসময় ছোটদের জন্য কত মায়াবী উপন্যাস লিখেছেন তারপর কাকাবাবু সন্তুর ইনফাইনাইট লুপে পড়ে গেলেন। সুলগ্নাকে ধন্যবাদ প্রিয় উপন্যাসের রিভিউ লেখার জন্য। যাই দশটি কিশোর উপন্যাস বইটা তাক থেকে নামাই।
ReplyDelete