দুলেরাম
রবীন্দ্রনাথ হালদার
সন্ধে হয় হয় এমন সময় বাসটা
ঢুকল
মানালি
শহরের
বাস
টারমিনাসে। প্রায় বারো
ঘণ্টা
ধরে
বাস
জার্নি
করে
তখন
সকলেই
ক্লান্ত।
বাসের
ছাদ
থেকে
অভিযানের
মালপত্র
ও
আমাদের
স্যাক
এক
জায়গায়
জড়ো
করে
নামিয়ে
রাখা
হল।
আগে
থেকেই
হোটেল
নীলকমলকে
চিঠি
দিয়ে
দুটো
রুমের
জন্য
জানানো
হয়েছিল।
সেই
মতো
পুরো
দলই
মালপত্র
নিয়ে
পৌঁছে
গেলাম
হোটেল
নীলকমলে।
রুমও
দুটো
পেয়ে
গেলাম। গত বছরও
এই
হিমাচলেই
আমাদের
অভিযান
হয়েছিল।
পর পর
দ্বিতীয়
বছর। এবার আমাদের
অভিযান
স্পিতি
জেলার
কাজা
অঞ্চলে। সারাদিন বাস জার্নি
করে
সকলেই
ক্লান্ত।
তাই
অভিযান
সংক্রান্ত
কোনো
আলোচনাই
রাতে
হল
না। মানালি শহরে
রাতে
বেশ
ঠাণ্ডা।
সবাই
বাইরের
হোটেল
থেকে
খাবার
খেয়ে
রুমে
ঢুকেই
বিছানায়
যে
যার
মতো
কম্বলের
তলায়।
শুতে
শুতেই
অনেকের
নাক
ডাকার
শব্দ
কানে
আসতে
লাগল। বিশেষ করে দলের
যিনি
লিডার।
এপাশ
ওপাশ
করছি
কিন্তু
কিছুতেই
ঘুম
আসছিল
না। কারণ দলের
ট্রান্সপোর্টের
দায়িত্ব
আমার
কাঁধে। বিষয়টা নিয়ে
খুবই
চিন্তা
হচ্ছিল
কীভাবে
কাজটা
করব।
অতএব
আগামীকাল
সকাল
থেকে
পোর্টার
ও
গাইডের
সন্ধানে
ছুটতে
হবে
আমাকেই।
সেই
চিন্তা
করতে
করতেই
কখন
যেন
ঘুমিয়ে
পড়লাম।
সকাল সাতটা, ঠাণ্ডায়
কেউ
যেন
বিছানা
ছেড়ে
উঠতেই
চাইছে
না।
আড়মোড়া
ভেঙে
প্রাতকৃত্য
সেরে
গরম
জলে
স্নানও
করে
নিলাম। একে একে সকলেই
তৈরি
হয়ে
ব্রেকফাস্টও
সেরে
নিলাম।
এবার
দলনেতাকে
সামনে
রেখে
ক্লাবের
সম্পাদক
মিটিং
ডাকলেন। উনি সবার
থেকে
বয়সেও
জ্যেষ্ঠ, অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত
মানুষও
বটে। সেই কারণে
দলনেতা
হওয়া
সত্ত্বেও সম্পাদকের কথাই ওনার
কথা। মিটিংয়েই ঠিক হয়ে গেল কে কোথায়
কী
কী
কাজের
দায়িত্বে
থাকবেন। যথারীতি পোর্টার
ও
গাইডের
দায়িত্ব
আমার
উপরেই
ন্যস্ত
হল।
মাত্র
এক
বছর
আগের
অভিজ্ঞতা
নিয়ে
ছুটলাম
মানালি
মার্কেটে
পোর্টার
ও
গাইডদের
নির্দিষ্ট
আড্ডায়।
ওখানে
পৌঁছে
পুরোনো
চেনা
কোনো
মুখ
নজরে
পড়ল
না।
নানা
জনকে
জিজ্ঞেস
করতে
করতে
একটা
খোঁজ
পাওয়া
গেল।
চায়ের
দোকানের
মালিকই
বলে
দিলেন,
‘আপ
পহলচাঁন
ভিলেজ
চলে
যাও
দুলেরামকি
পাস।
উঁহা
যানেসেই
আপকো
পোর্টার
মিল
যায়েগি।’ নামটা
আঁচলে
গিট
দেওয়ার
মতো
করে
ছুটলাম
পহলচাঁন
ভিলেজে।
মানালি
থেকে
রোতাং
যাওয়ার
বাসে
তেরো
কিলোমিটার
পথ। পহলচাঁনের বুক চিরেই
পাকা
রাস্তা
ডান
দিকে
বাঁক
নিয়ে
পাকদণ্ডি
হয়ে
চলে
গেছে
রোতাং-এর
দিকে। এখান থেকেই
আরেকটি
রাস্তা
বাঁদিকে
বিপাশা
অতিক্রম
করে
চলে
গেছে
ধূন্দি।
বাসে
যেতে
যেতে
বহুবার
দুলেরামের
নাম
মনে
মনে
আওড়ে
যাচ্ছিলাম
যেন
কোনোভাবেই
ভুলে
না
যাই।
পাহাড়ি
পথে
প্রায়
ঘণ্টাখানেক
এগোনোর
পর
বাস
আমায়
পহলচাঁন
ভিলেজে
নামিয়ে
দিয়ে
গাঁ
গাঁ
শব্দে
সামনের
দিকে
এগিয়ে
গেল।
বাস থেকে নামতেই
দু’পাশে
বাড়ি।
কোনোটা
একতলা
কোনোটা
দোতলা।
তবে
সব
বাড়ির
ছাদ
কিন্তু
একই
রকম।
সবই
পাথরের
স্লেট
দিয়ে
তৈরি।
সময়
বেলা
সাড়ে
দশটা।
রাস্তা
একেবারে
ফাঁকা।
লোকজনও
তেমন
নজরে
পড়ছে
না। এদিক ওদিক
তাকিয়ে
রাস্তা
ধরে
একটু
উপর
দিকে
উঠতেই
একজন
বয়স্ক
মানুষ
নজরে
এল।
ওনাকে
দুলেরামের
কথা
জিজ্ঞাসা
করতেই
আঙুল
দিয়ে
একটা
বাড়ির
দিকে
দেখিয়ে
দিলেন।
ঐ
বাড়ির
দরজার
সামনে
গিয়ে
দুলেরামজি
দুলেরামজি
দু’বার
ডাকতেই
এক
কমবয়সি
ভদ্রমহিলা
বেরিয়ে
এলেন।
উনি
দেখতে
সম্পূর্ণ
একজন
পাহাড়ি
এবং
ততোধিক
সুন্দরী
ও
সরল
মহিলা।
একগাল
হেসে
লোকাল
ভাষায়
আমায়
কিছু
একটা
জিজ্ঞাসা
করলেন।
আমি
কিছুই
বুঝতে
পারলাম
না।
আমার
মুখ
দেখে
উনিও
সেটা
বুঝতে
পারলেন।
আমি
মুচকি
হেসে
শুধু
বললাম,
‘দুলেরাম।’ উনি হাতের
ইশারায়
আমাকে
দাঁড়াতে
বললেন।
একটু
বাদেই
এক
মাঝবয়সি
ভদ্রলোক
একটা
কাঠের
চেয়ার
এনে
আমায়
বসতে
বললেন।
হিন্দিতে
বললেন,
‘দুলে
ঘরমে
নহি
হ্যাঁয়।
ম্যাঁয়
উনকো
দেখ রহা
হুঁ।’ একা একা বসে সামনের
প্রকৃতিকে
দেখছিলাম
আর
মনে
মনে
ভাবছিলাম
সত্যিই
এরা
কত
ভাগ্যবান।
প্রায়
আধঘণ্টা
একাই
বসে
আছি।
হঠাৎ
এক
হিমাচলি
যুবক
দূর
থেকেই
হাত
জোড়
করে
আমার
দিকে
এগিয়ে
আসছে দেখলাম।
কাছে
এসেই
বললেন,
‘নমস্তে
জি।’ আমি উঠে দাঁড়াতেই
জিভ
কেটে
খুবই
বিনয়ের
সঙ্গে
বলে
উঠলেন,
‘বৈঠিয়ে
বৈঠিয়ে।
আপ
মেরে
মেহমান
হ্যায়।
মেরা
নাম
দুলেরাম।’ আমি
কিছু
বলতে
যাওয়ার
আগেই
বললেন,
‘বৈঠিয়ে,
ম্যায়
সব
বাত
শুনুঙ্গা।’ বলেই
বাড়ির
ভিতর
দিকে
চলে
গেলেন।
কিছুক্ষণ
বাদে
নিজে
হাতেই
দু’কাপ
চা
নিয়ে
আমার
সামনে
হাজির
হলেন। এক কাপ আমার
দিকে
এগিয়ে
দিতে
দিতেই
সেই
ভদ্রমহিলা
আরেকটি
চেয়ার
নিয়ে
এলেন।
এবার
সামনা-সামনি
বসে
দু’জনার
মধ্যে
কথা
শুরু
হল।
‘ফরমাইয়ে
ম্যায়
আপকো
কেয়া
সেবা
কর
সকতা
হুঁ।’ (আদেশ
করুন
আমি
আপনার
কী
সেবা
করতে
পারি।)
বললাম
পোর্টার
ও
গাইডের
জন্য
আমি
আপনার
কাছে
এসেছি।
জানতে
চাইলেন
কোন
অভিযান
এবং
কবে
আমরা
যাব।
আমার
কথা
সব
শুনে
বললেন,
‘গোয়েনেলদা
পর্বতের
জন্য
আমার
কোনো
গাইড
জানা
নেই,
কিন্তু
পোর্টারের
ব্যবস্থা
সব
হয়ে
যাবে।
তবে
আপনাকে
আগামীকাল
আমার
এখানে
একবার
আসতে
হবে।
ভুল
বুঝবেন
না,
একটা
কথা
আপনাকে
বলব
যেটা
খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।
সেটা
হল
পোর্টারদের
পয়সাকড়ি
ঠিক
ঠিক
মিটিয়ে
দেবেন।’ কথাটার
মধ্যে
অন্য
একটা
গন্ধ
লুকিয়ে
আছে
বলে
মনে
হল। যাক, বললাম,
‘না
না,
টাকাপয়সা
নিয়ে
কোনো
চিন্তা
করতে
হবে
না।
আপনি তো
সঙ্গে
থাকছেনই।’ দুলেরাম
সঙ্গে
সঙ্গে
বলে
দিলেন,
‘না
না,
আমার
যাওয়া
হবে
না।
কারণ
আমার
শরীরটা
ভালো
নেই।
একবার
কাল
কষ্ট
করে
আসুন, পোর্টারদের
সঙ্গে সামনা-সামনি কথা হয়ে যাবে।’
পরের দিনের আশা নিয়ে
ফিরে
এলাম
মানালি
শহরে।
ফিরবার
সময়
বাসে
বসে
ভাবছিলাম,
মানুষটার
ভারি
সুন্দর
একটা
চেহারা,
যেমনি
লম্বা
তেমনি
শরীরে
একটুও
মেদ
নেই,
কিন্তু
বললেন
শরীর
খারাপ। যাক পরের
দিন
গিয়ে
জানা
যাবে।
এদিকে
হোটেলে
সকলে
অধীর
আগ্রহে
অপেক্ষা
করছে
পোর্টারের
ব্যবস্থা
হল
কিনা জানার
জন্য। হোটেলে ফিরে এসে সকলকে
বিস্তারিত
ঘটনা
জানানো
হল।
যে
কোনো
অভিযানের
ক্ষেত্রেই
যতক্ষণ
পোর্টার
ঠিক
না
হবে
ততক্ষণ
একটা
উৎকণ্ঠা
থেকেই
যায়।
যাই হোক,
পরের
দিনও
সকাল
সকাল
ছুটলাম
বাস
ধরতে।
পেয়েও
গেলাম
রোতাং
যাওয়ার
বাস।
ঠিক
সাড়ে
ন’টায়
পৌঁছে
গেলাম
পহলচাঁন ভিলেজে। হাজির হলাম
দুলেরামের
বাড়ির
দরজায়।
ডাক
দিতেই
দুলেরামজি
হাতে
চেয়ার
নিয়ে
বেরিয়ে
এসে
আমায়
বসতে
দিলেন। বললেন, ‘আপ বৈঠিয়ে,
ম্যায়
আ রহা
হুঁ।’ (আপনি
বসুন,
আমি
আসছি।)
গ্রামের
দিকে
কোথাও
গেলেন।
আধঘণ্টা
বাদে
একাই
ফিরে
এলেন।
ভিতর
থেকে
আরেকটা
চেয়ার
নিয়ে
মুখোমুখি
বসলেন।
কথা
শুরু
করতে
করতেই
দ্বিতীয়
বারের
জন্য
চা
চলে
এল।
গতকালই
জিজ্ঞাসা
করেছিলেন
কত জন
পোর্টার
চাই।
জানিয়ে
ছিলাম
আট জন। কারণ কাজা
থেকে
ঘোড়া
বা
খচ্চর
পাওয়া
যাবে।
কিছুক্ষণ
পরেই
একে
একে
সব
পোর্টার
হাজির
হল
আমাদের
সামনে।
দুলে
রামের
কানের
কাছে
মুখ
নিয়ে
খুব
আস্তে
করে
জানতে
চাইলাম
এদের
প্রত্যেককে
প্রতিদিন
কত
টাকা
করে
দিতে
হবে।
একটু
মুচকি
হাসলেন, বললেন
৪৫ টাকা
করে
দৈনিক
দেবেন।
এখানে
কোনো
কমিশনের
ব্যাপার
নেই।
ওদের
টাকা
ওদের
বুঝিয়ে
দেবেন।
জিজ্ঞাসা
করলাম,
‘আপনি
যাবেন তো?’
উনি
পরিষ্কার
বললেন,
‘না
স্যার, ডাক্তার
আমাকে
বলেছে
আমার
এখন
কোনো
কাজই
করা
চলবে
না।
কারণ
আমার
বুকে
একটা
দোষ
ধরা
পড়েছে।
মাঝে
মাঝে
রাতে
সামান্য
জ্বরও
হয়।
এই
অবস্থায়
আপনাদের
সঙ্গে
যাওয়া
আমার
একদম
ঠিক
হবে
না।
এই তো
সবাইকে
ঠিক
করে
দিলাম।
আপনাদের
কোনো
অসুবিধা
হবে
না।
তবে
হ্যাঁ,
এদের
কেউ
যদি
আপনাদের
কথা
না
শোনে
আমাকে
ফিরে
এসে
অবশ্যই
জানাবেন।
এদের
পয়সা
কেটে
নেওয়া
হবে।
এই
বিষয়
নিয়ে
আপনি
নিশ্চিন্ত
থাকুন।’
এবার আমাকে সামনে
রেখে
সবাইকে
বলতে
লাগলেন।
‘শুনো
ভাই,
আপনা
আপনাহি
হোতা
হ্যায়,
অউর
পরায়া
যো
উও
পরায়াহি
হোতা
হ্যায়।’ (নিজের
মানুষ
নিজেরই
হয়, পর
কখনোই
আপন
হয়
না।) দুলেরাম
সবাইকে
আরও
যে
কথাগুলো
বলেছিল
সেই
কথাগুলো
আজও
মনকে
নাড়া
দিয়ে
চলে।
‘দেখ,
তোমরা
সবাই
আমার
গ্রামের
মানুষ।
তাই
তোমাদেরকেই
আমি
কাজে
পাঠাচ্ছি।
তোমরা
ভালো
করেই
জানো
অন্য
গ্রামেও
আমার
ভালো
পরিচিতি
আছে।
তাদেরকে
না
ডেকে
তোমাদেরকে
ডেকেছি।
প্রথম
কথা,
তাদের
উপর
আমার
কোনো
জোর
বা
অধিকার
নেই,
যেটা
তোমাদের
উপর
আমার
আছে।
তোমাদের
উপর
আমার
সম্পূর্ণ
বিশ্বাস
ও
অধিকার
আছে
গ্রামের
মানুষ
হিসাবে।
অভিযানে
তোমরা
খারাপ
কিছু
করলে
আমি
তোমাদের
জোর
দিয়ে
কিছু
বলতে
পারব।
যে
কথাগুলো
অন্যদের
বলা
সম্ভব
হবে
না।
তোমরা
দুটো
পয়সা
পেলে
তোমাদের
সংসার
ও
তোমাদের
ছেলে-মেয়ে
সব
সুখে
থাকবে
ও
তোমরা
ভালো
থাকবে।
এর
পরেও
বলি,
পয়সাগুলো
আমাদের
গ্রামের
লোকেরা
পাক
এটাই
আমি
চাই।
এতে
আমাদের
গ্রামেরই
উপকার
ও
মঙ্গল
হবে।
অভিযানে
গিয়ে
আমাদের
গ্রামের
ভাই
বন্ধুরা
সুনামের
সঙ্গে
কাজ
করলে
আমাদের
গ্রামেরও
সুনাম
হবে।
এই
কারণেই
আমি
নিজের
গ্রামের
মানুষের
কথা
আগে
চিন্তা
করি।
সকলে
ভালোভাবে
যাও
এবং
ভালো
করে
কাজ
করে
ফিরে
এসো।
দেখো,
এই
পহলচাঁন
ভিলেজের
যেন
মান
থাকে।’ এই বলে দুলেরাম
ওদের
সঙ্গে
কথা
শেষ
করলেন।
দুলেরাম এবার ফিরলেন
আমার
দিকে।
বললেন,
‘স্যার, আপ
চিন্তা
না
করো।
আপ কো
অভিযান
জরুর
সফল
হোগি। ইনলোগ কল মানালি মে
আপকি
হোটেল মে
পৌঁছ
যায়েঙ্গে।’ (স্যার,
আপনি
চিন্তা
করবেন
না।
আপনার
অভিযান
অবশ্যই
সফল
হবে। আগামীকাল ওরা সকলেই
আপনার
মানালি
হোটেলে
পৌঁছে
যাবে।)
পোর্টার
সব
দুলেরাম
ব্যবস্থা
করে
দিলেন
ঠিকই,
কিন্তু
নিজে
যেতে
রাজি
হলেন
না।
এর
মানে
শরীর
সত্যিই
ওনার
খারাপ।
পাহাড়ি
মানুষ
এরা, অক্লান্ত
পরিশ্রম
করতে
পারে,
তবুও
নিজেকে
সেখান
থেকে
দূরেই
রাখলেন।
দুলেরামের
কাছ
থেকে
বিদায়
নিয়ে
মানালি
হোটেলে
ফিরলাম।
ফেরার
সময়
বাসে
বসে
দুলেরামের
জন্য
খুবই
চিন্তা
হচ্ছিল।
মানুষটার
সঙ্গে
মাত্র
দু’দিন
কিছু
সময়
কাটালাম।
ঐ
অল্প
সময়ের
মধ্যেই
ও যেন
কোথায়
আমায়
ছুঁয়ে
ফেলেছে।
যে
নিজে
দলের
সঙ্গে
যেতে
পারল
না,
অথচ
দলটার
জন্য
কত বড়ো
একটা
কাজ
নিঃস্বার্থভাবে
করে
দিল।
মনের
মধ্যে
কেবলই
একটা
কথা
ঘুরপাক
খেতে
থাকল।
এই
মানুষটার
জন্য
আমরা
কি
কিছুই
করতে
পারি
না?
হোটেলে
ফিরে
সম্পাদক
ও
দলনেতাকে
পোর্টারের
নিশ্চয়তার
কথা
জানালাম। এবং ওরা পরের
দিন
সকালেই
হোটেলে
দেখা
করতে
আসবে
সেটাও
জানিয়ে
দিলাম।
বিষয়টা
জেনে
সকলেই
খুব
উৎফুল্ল
এবং
খুশি।
এরপরই
সকলের
মাঝেই
সম্পাদক
ও
দলনেতাকে
দুলেরামের
শরীরের
বিষয়টা
জানিয়ে
বলেছিলাম
আমরা
কি
কিছু
পয়সা
দিয়ে
ওর
চিকিৎসায়
সাহায্য
করতে
পারি?
এই
ছোট্ট
কথায়
নিমেষেই
যেন
আকাশ
মেঘলা
হয়ে
উঠল।
সম্পাদক
বেশি
কথা
না
বলে
একটা
কথাই
বলল, আমরা
এখানে
এসেছি
অভিযান
করতে,
অতএব
ঐটা
নিয়েই
আগে
ভাবনাচিন্তা
করো।
আমার
প্রস্তাবের
বিষয়টা
নিয়ে
আড়াল-আবডাল
থেকে
পারিষদদেরও
অনেক
টিপ্পনী
শুনতে
হয়েছিল।
এই
সমাজে
এটাই
স্বাভাবিক।
দুলেরাম পরের দিন নিজেই
সকল
পোর্টারদের
সঙ্গে
নিয়ে
মানালি
হোটেলে
দেখা
করতে
এলেন।
সঙ্গে
এক
ব্যাগ
আপেলও
নিয়ে
এলেন।
তার
সঙ্গে
দেখা
হতেই
মুখে
হাসির
ঝলক।
হোটেলের
ভিতরে
কামরায়
নিয়ে
এসে
বসালাম।
সম্পাদকের
সঙ্গে
দুলেরামের
পরিচয়
করিয়ে
দিতেই
উনি
সম্পাদকের
হাতে
আপেলের
ব্যাগটা
আগে
তুলে
দিলেন
এবং
বললেন,
‘ইয়ে
হামারি
তরফ
সে।’ এই আপেল
পেয়ে
দলের
সকলেই
খুব
খুশি। মুহূর্তেই এক হাসি
ও
আনন্দের
লহর
বয়ে
গেল।
সদ্য
গাছ
থেকে
ছিঁড়ে
নিয়ে
আসা
আপেল।
এর
স্বাদ
গন্ধ
রং
ও
রস
সবটাই
যে
আলাদা।
এরপর
বেশ
কিছুক্ষণ
ধরে
দুলেরামের
সঙ্গে
পোর্টারদের
নিয়ে
আলোচনা
হল।
সকলকে
চা-বিস্কুটও
খাওয়ানো
হল।
এরপরে
সম্পাদক
ও
লিডার
দু’জনেই
দুলেরামের
স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ
করলেন।
তারপর
তাকে
কী
কী
করতে
হবে
সেই
ব্যাপারে
কিছু
পরামর্শ
দিতে
থাকলেন। এরপরে তার স্বাস্থ্যের
শুভকামনা
করে
তাকে
বিদায়
জানালেন।
আমি
দুলেরামকে
বাস
স্ট্যান্ডে
পৌঁছে
দিতে
গেলাম। ফিরে এসে হোটেলের
কামরায়
ঢুকতেই
নজরে
এল
দুলেরামের
দেওয়া
আপেলগুলো
যে
যার
মতো
ভাগ
করে
নিয়ে
নিয়েছে।
তার
খালি
ব্যাগটাকে
ঘরের
এক
কোণে
ফেলে
রেখেছে।
ঘরে
ঢুকতেই
আমার
নজর
পড়ল কোনার
দিকে
পড়ে
থাকা
ঐ
অবহেলিত
খালি
ব্যাগটার
উপর।
বোধহয়
এটাই
ওর
ভাগ্য।
ব্যাগটা
হয়তো
আমার
দিকে
চেয়েই
মুচকি
হাসছে।
এটাই তো
জগৎ
সংসার
থেকে
বেচারা
দুলেরামের
প্রাপ্য।
উলটো
দিকে
নজর
পড়তেই
দেখি
গোটাচারেক
ছোটো
ও
তোবড়ানো
আপেল
বিছানার
উপর
পড়ে
রয়েছে
যেটা
আমার
জন্য।
ওরাও
আমার
দিকে
বিস্ময়ে ভ্রূকুটি নাড়ছে।
ওটা
ছিল
আমার
ভাগ্যে
অভিযানের
অজানা
পরিহাস।
অভিযান সফল হয়ে দল মানালিতে
ফিরে
এল।
তখন
সম্পাদক
ও
দলনেতাকে
জানালাম,
দুলেরামের
সঙ্গে
দেখা
করতে
যাব।
ভুরু
কুঁচকে
সম্পাদক
জানালেন,
সে
তোমার
ব্যাপার, তবে
শুনে
রাখো,
এত
ইমোশন
ভালো
নয়।
কথাটা
শুনে
কিছুক্ষণ
থমকে
গেলাম, মনটাও
খারাপ
হল।
তবে
হ্যাঁ,
বয়সটা
ছিল
কম।
নিজে
একাই
গিয়েছিলাম
দুলেরামের
বাড়িতে।
অভিযানের
সফলতার
খবর
নিয়ে
এবং সেই
সঙ্গে
ওকে
ধন্যবাদ
জানাতে।
ওর
সঙ্গে
দেখা
করতে
যাওয়াতে
ও
ভীষণ
খুশি
হয়েছিল।
আমাকে
দেখেই
একটু
অবাক,
‘সাব
অভিযানকে
পহলে
সব
আতে
হ্যাঁয়,
বাদ মে
কোই
নহি
আতে। আপনে তো কামাল কি
আদমি
হ্যায়।’ দু’জন
দু’জনকে
জড়িয়ে
ধরলাম।
তখন
উভয়ের
চোখে
জল
গড়িয়ে
পড়ছে।
ও
আমায়
এই
প্রথম
ঘরের
মধ্যে
টেনে
নিয়ে
গেল।
ঐদিন
ওর
কাছে
যথেষ্ট
আপ্যায়ন
পেলাম।
ফিরে
আসার
সময়
ওর
হাতে
পঞ্চাশটা
টাকা
দিয়ে
এলাম।
প্রথমে
ও
কিছুতেই
নিতে
রাজি
হয়নি।
ওকে
অনুরোধ
করাতে
পরে
ও
টাকাটা
নিল।
বিদায়
জানিয়ে
বেরিয়ে
এলাম
বড়ো
রাস্তায়।
পিছন
ফিরতেই
দেখি
নিজের
গেটের
সামনে
দাঁড়িয়ে
আমার
দিকে
তাকিয়ে
রয়েছে।
চোখাচোখি
হতেই
দু’জনাই
হাত
নাড়লাম।
১৯৮৬-র অভিযানের পরে ১৯৮৭
বাদ
দিয়ে
আবার
১৯৮৮-তে
মানালি
যাই।
ঐ
বছর
গিয়েছিলাম
পহলচাঁন
ভিলেজে
দুলেরামের
সঙ্গে
দেখা
করতে।
বাস
থেকে
নেমে
ওর
দরজার
সম্মুখে
যেতেই
দেখি
সেই
পুরোনো
বয়স্ক
মানুষটা
সামনে
দাঁড়িয়ে,
যিনি
প্রথম
দিন
দূর
থেকে
আঙুল
দিয়ে
দুলেরামের
বাড়িটা
দেখিয়ে
দিয়েছিলেন।
ওনার
দিকে
তাকিয়ে
মুচকি
হেসে
ওনাকে
বললাম,
‘দুলেরাম
সে
মিলেঙ্গে।’ হাতের
ইশারায়
আমাকে
দাঁড়
করালেন।
অনেকক্ষণ
আমার
চোখের
দিকে
তাকিয়ে
থাকলেন।
বুঝলাম
কিছু
একটা
ঘটনা
ঘটেছে।
কথাটা
ওনার
ভিতর
থেকে
বেরোচ্ছিল
না।
তবুও
উনি
জোর
করে
বললেন,
‘দুলেরাম
গয়ে সাল
গুজর
গয়ে।’ কথাটা
শুনতেই
কেমন
যেন
দিশেহারা
হয়ে
পড়লাম।
ডান
হাতের
তালুটা
আমার
চোখ
দুটোকে
আলতো
করে
ঢেকে
দিল।
চোখটা
বুজলাম। একটু স্বাভাবিক
হয়ে
জানতে
চাইলাম,
‘ক্যায়া
হুয়া থা।’ বললেন,
‘মুহ সে
খুন
আ রহা থা, টিবি।’ হায় দুলেরাম,
আজ
সত্যিই
বুঝলাম –
আপনা
আপনাহি
হোতে
হ্যায়,
অউর
পরায়া
যো
উও
পরায়াহি
হোতে
হ্যায়।
ক্ষণিকের
জন্য
আমার
দৃষ্টিটা
চলে গেল
দূরের
তুষারধবল
শৃঙ্গের
মাথার
উপর
দিয়ে
দূর
ঘন
নীলিমায়।
হে
পথিক,
এবার
ফিরে
চল নিজ
নিকেতনে।
----------
শীর্ষচিত্র - বিয়াস বা বিপাশা নদী, মানালি
ফোটো - তাপস মৌলিক
Thanks Robinda to present us, this extraordinary characters of ordinary and neglected people. We go to mountain for our enjoyment and utilize the service of these hard working simple minded mountain people. We need to change our attitude towards them.
ReplyDeleteদুলেরাম'রা চিরকাল এরকমই হয়ে থাকে। "যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ .. .. " এই ব্রতেই তারা দীক্ষিত। চারপাশের হারাম দের ভিড়ে এই দুলেরাম'দের পাওয়াও এক ব্যাপার বইকি। তাও যদি সাধ্য সাধনা করে পাওয়াও যায়, সেও ক্ষনিকের পাওয়া হয়। বড়ো নির্মম বাস্তব। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার, ওই ক্ষনিকের পাওয়া কিন্তু দাগ কেটে যায় চিরতরে। যা রবীনদাদের অভিযানে নিজের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিতেও একইভাবে জানান দিয়ে গেছে দুলেরাম। কিছু পাওয়ার স্বার্থে কিছু করার অঙ্ক তারা জানেনা।
ReplyDeleteজানতেও চায়না।
রবীনদা এক আশ্চর্য পাহাড়ী। পাহাড়ে যেমন তাঁর পা চলে, তেমনি সমতলে নেমে এসে চলে কলম। এই স্বল্প পরিসরে তিনি কী অপূর্ব ভাবেই না দুলেরাম কে মেলে ধরেছেন। তাঁরই মতো আমরাও একই ভাবে দুলেরামের প্রতি সমর্পিত হয়ে পড়ি।
বুঝিবা এখানেই সার্থক যেমন রবীনদার অভিযান, তেমনি সার্থক তার লেখনি।
..তাঁর লেখনী।
ReplyDeleteঅনবদ্য একটা কাহিনী । লেখক কে অভিনন্দন। তার অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য। দুলেরাম এক বিরল চরিত্র । এমন মানসিকতার মানুষ আজকের দিনে দেখা পাওয়া ভার। তবে পাহাড়ী মানুষেরা কর্মদক্ষতায় ও মানসিকতায় আমাদের মত তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
ReplyDeleteএক্ষেত্রে অবশ্য লেখক তথা অভিযাত্রীর মানবিক দিক টাও প্রশংসনীয় । অভিযানের পরেই সাধারণত এই গরীর শেরপাদের কথা কেউ প্রায় মনেই রাখেনা। কিন্তু ইনি কিন্তু পরেরবার শুধুমাত্র মানবিক তাগিদেই দুলেরামের খোঁজ করতে গিয়েছিলেন আর তাই দুঃসংবাদ পান। আর নাহলে যে দুলেরামকে আমরা চিনতামই না। তাই আরও একবার ধন্যবাদ জানাই রবীন্দ্রনাথ বাবুকে।
Who entered in imotional discussion about the porter and their leader in a expeditional adventure?
ReplyDeleteRobinda wonderfully placed it in his story. Sensitive humor also very nicely mentioned.
I think it is a nice story.
Thanks to publisher.Thanks to Robinda.
Soura commented the above.
ReplyDeleteএই ঘটনায় দুটি সমো চিন্তাধারার ব্যাক্তির ব্যাক্তিত্বের অসাধারণ সাদৃশ্য লক্ষণীয়। যা এই লেখা কে আরো সুন্দর করে তুলেছে। দুলারাম অতিথিদের প্রায়োজন মেটানোও গ্রামবাসীদের সাহায্যের জন্য একজন উপকারী চরিত্র। অন্যদিকে ভাড়া কারো এবং ছুড়ে ফেলো নীতির কিছু ব্যাক্তি, তাদের মধ্য একজন উপকারী কে মনে রাখা এবং তাকে সম্মান জানানো ব্যাক্তির এই সবকিছু নিয়ে এক হৃদয় ছুইয়ে যাওয়া লেখা। খুব ভালো লাগলো।
ReplyDelete