আপনজন
দেবব্রত দাশ
এক
“স্যার, আপনি!” প্রায়
মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বলল মেয়েটি, “আমাকে
চিনতে
পারছেন
না
স্যার... আমি
আপনার গ্রাম কুসুমপুরের আপ্লুজা
পারভিন।”
“কে? আপ্লুজা!” প্রৌঢ়
মানুষটি
বিছানা
থেকে
উঠে
বসার
চেষ্টা
করতেই
ব্যস্তসমস্ত
হয়ে
আপ্লুজা
বলে
ওঠে,
“আপনি উঠবেন না,
আমি
বরং
আপনার
বেড-এর
মাথার
দিকটা
খানিক
উঁচু
করে
দিচ্ছি...” বলতে
বলতে
আপ্লুজা
নিজেই
হাত
লাগিয়ে
চাকা
ঘোরাতে
শুরু
করে
দিল
আর
তা
দেখে
হাঁ
হাঁ
করে
ছুটে
এল
দায়িত্বে
থাকা
নার্স, “আমি
করে
দিচ্ছি
ম্যাডাম, আপনি
এই
চেয়ারে
বসে
কথা
বলুন।”
অমলিন হাসি হেসে
আপ্লুজা
তাকে
বলল, “ঠিক
আছে, আই
অ্যাম
কোয়াইট
ও.কে।
তুমি
ব্যস্ত
হয়ো
না। তোমার আর যা যা করার, সেগুলো
করো।
আমাকে
এই
পেশেন্টের
মানে
ভূপতি
পাণিগ্রাহির
ফাইলটা
দেখাও
তো।”
“ও.কে
ম্যাম।”
ফাইলে দ্রুত চোখ বুলিয়ে
নিয়ে
আপ্লুজা
ভূপতিকে
জিজ্ঞেস
করল, “আপনার
এখন
কী
কী
অসুবিধে
হচ্ছে
স্যার?”
প্রশ্ন শুনেও যেন কিছুই
কানে
ঢোকেনি, এমন
নির্লিপ্ত
দৃষ্টি
মেলে
ভূপতি
চেয়ে
রইলেন
আপ্লুজার
মুখের
পানে।
তারপর...
ধীরে
খুব
নিচু
গলায়
প্রশ্ন
করলেন, “তুমি
মানে
তুই
এই
নার্সিংহোমে...
এখানে
তোর
কোনো
আপনজন
কি...”
“না স্যার,” ভূপতিকে
কথা
শেষ
করতে
না-দিয়ে
আপ্লুজা
বলে
ওঠে, “আমি
এখানকার
মেট্রন, বেশ
কয়েক বছর
ধরেই
আছি।
আসলে, দু’দিন
ছুটি
নিয়েছিলাম
বলে
গত
পরশু
যখন
আপনি
অ্যাডমিটেড
হন, তখন
আমি
উপস্থিত
ছিলাম
না।
হ্যাঁ, যা
জিজ্ঞেস
করলাম, তার
উত্তর
দিন
স্যার।
যে
সব
শারীরিক
অস্বস্তি
ছিল
আপনার,
সেগুলো
থেকে
কিছুটা
রিলিফ
পেয়েছেন
কি?”
“রিলিফ? ...তা
পেয়েছি, কিন্তু
খাওয়ার
ইচ্ছে
একেবারেই
নেই! কে
জানে...
সুস্থ
হয়ে
বাড়ি
ফিরতে
পারব
কিনা
কোনোদিন!”
“একদম
নেগেটিভ
কথা
বলবেন
না
স্যার,” আপ্লুজার
কণ্ঠস্বরে
ছদ্ম উষ্মা, “আপনিই
তো
ক্লাস
নিতে
এসে
আমাদের
বলতেন - সবসময়
পজিটিভ
চিন্তা
করবে।
একবার
পরীক্ষায়
রেজাল্ট
খারাপ
হলে
হতাশ
না-হয়ে
চেষ্টা
করবে
পরের
বার
ভালো
করার।
জীবনে
প্রতিষ্ঠিত
হওয়ার...
বড়ো
হওয়ার
স্বপ্ন
দেখবে, তবেই
না...
সেই
আপনি
কিনা
এখন
হতাশার
কথা
বলছেন
স্যার!”
“আমার
ফাইল
তো
দেখলি
তুই, তোর
কি
মনে
হয় - আমি
ভালো
হব?”
“অবশ্যই
হবেন,” জোর
দিয়ে
বলে
আপ্লুজা, “হ্যাঁ, সময়
লাগবে।
আপনার
রক্তে
বিলুরুবেনের
মাত্রা
বেশি। লিভারের অসুখ
তো...
চট
করে
সারে
না।
এখন
মেডিক্যাল
সায়েন্স
কতখানি
অ্যাডভান্সড, আপনার
ধারণা
নেই
স্যার।
আমি
বলছি
মানে
কথা
দিচ্ছি - আপনাকে
পুরোপুরি
সুস্থ
করে
বাড়ি
ফেরানোর
দায়িত্ব
এই
মুহূর্ত
থেকে
আমি
নিলাম।
সবচেয়ে
ভরসার
কথা
কী
জানেন
স্যার? আপনার
চিকিৎসা
করছেন
যে
স্পেশালিস্ট
ডাক্তার, সেই
সার্জেন
ডক্টর
তলাপাত্রর
সাকসেস
রেট
খুবই
হাই...
আমি
তো
এ যাবৎ
ওঁকে
একটা
কেস-এও
ব্যর্থ
হতে
দেখিনি।
কাজেই, একদম
দুশ্চিন্তা
করবেন
না
আপনি।”
ভূপতির মাথায় আপ্লুজা
তার
কোমল
হাতের
পরশ
বুলিয়ে
দিতে
দিতে
বলে, “স্যার, তাহলে
এখন
চলি...
আবার
আসব
সন্ধেয়
ভিজিটিং
আওয়ারের
মধ্যে।
তখন
নিশ্চয়ই
কাকিমা
আসবেন?”
“কাকিমার
আসার
কথা।
অনেকটা
জার্নি
করে
কুসুমপুর
থেকে
আসা
তো...
ওর
শরীরও
তো
ভালো
নয়...
শাম্ব
আসবেই।”
“শাম্বদা
এখন
কী
করছে? কতদিন
যে
দেখি
না
ওকে! ও
কি
কুসুমপুরেই
আছে?”
“কুসুমপুর
থেকেই
যাতায়াত
করে।
বছর
দুই
হল, সল্ট
লেকের আই.টি সেক্টরে
চাকরি
করছে।”
“বাহ্! খুব
ভালো
খবর, এখন
থেকে
মাঝে মধ্যে
দেখাসাক্ষাৎ
হবে...
নিউটাউনে
থাকি
আমি।”
“সেই কবে কত বছর আগে কুসুমপুর
ছেড়ে
চলে
গিয়েছিলি
তোরা, তারপর...
আর
তো
গাঁয়ে
ফিরিসনি, হারিয়ে
গিয়েছিলি
জনারণ্যে!”
“সন্ধেবেলায়
এসে
সব
বলব
স্যার, আপনি
আমায়
কথা
দিন, দুশ্চিন্তা
করবেন
না
একদম।
আপনার
একসময়ের
প্রিয়
ছাত্রী
আমি
আপনার
জন্যেই
তো...
আপনি
সেই
দুর্দিনে
ঝাঁপিয়ে
পড়ে
পাশে
না-দাঁড়ালে...”
“সে সব
মনে
আছে
তোর!” ছলছল
করে
ওঠে
ভূপতির
চোখ, “করুণাময়ের
ইচ্ছে...
এত
বছর
বাদে
আমাদের
দু’জনকে
মিলিয়ে
দিয়েছেন
আবার!”
“মনে না-থেকে
পারে
স্যার!” আপ্লুজার
গলা
ধরে
আসে, অতি
কষ্টে ভিতরের আবেগ প্রশমিত
করে
বলে,
“আজ আমি এই যে পায়ের
তলায়
মাটি
খুঁজে
পেয়েছি, সে
তো
শুধুমাত্র
আপনার
জন্যেই
স্যার! কেমন
করে
ভাবলেন, অতীতের
সেই
চরম
দুর্দশার
দিনগুলো
ভুলে
যাব?”
“তোর মা এখন কেমন
আছে
রে
মেয়ে?” ভূপতি
জিজ্ঞেস
করেন, “তোর
বাবা
যখন
গ্রাম
ছেড়ে
তোদেরকে
নিয়ে
চলে
গিয়েছিলেন, তার
আগেই
তো
তোর
মা
অনেকটাই
সুস্থ
হয়ে
উঠেছিলেন, তাই
তো?”
“আপনি
যদি
ওই
দুর্দিনে
দু’মুঠো
অন্ন
জোগানোর
ব্যবস্থা
না-করতেন, তাহলে
মা’র
অ্যানিমিয়া
কি
সারত?”
ভূপতি আপ্লুজার হাত নিজের
হাতের
মুঠোয়
নিয়ে
বলেন, “আসবি
তো
আজ
ভিজিটিং
আওয়ারে, ভুলে
যাবি
না
তো?”
“ভুলে
যাব! কী
বলছেন! আসতেই
হবে
আমাকে,” আপ্লুজা
আবার
ভূপতির
মাথায়
হাত
বুলিয়ে
দিতে
দিতে
বলে, “ভুলে
গেলেন
স্যার, কী
বলেছি
আমি - এখন
থেকে
আপনার
সব
দায়িত্ব
আমার!”
দুই
ভরা ভাদরের মেঘমেদুর
দ্বিপ্রহর।
পুরোনো
দিনের
হাজারো
স্মৃতি
ভিড়
করে
আসে।
ভূপতি
দেখতে
পান
চতুর্দশী
কিশোরী
আপ্লুজাকে।
কুসুমপুরের
আপার
প্রাইমারি
স্কুলের
ক্লাস
এইটের
মেধাবী
ছাত্রী।
শিশু
বয়েস
থেকেই
দারিদ্র্যের সঙ্গে পরিচয়।
কষ্টেসৃষ্টে
চলছিল
একরকম, কিন্তু
যখন
বাবার
ফ্যাক্টরি
লক
আউট
হয়ে
গেল, তখন
থেকে
দিনগুজরান
যে
কী
দুঃসহ, বুঝেছিল
ওইটুকুন
একরত্তি
এক
মেয়ে।
স্কুলে
এসে
খিদেয়
ছটফট
করতে
করতে 'মিড
ডে
মিল'-এর
জন্যে
অপেক্ষা
করত।
ক্লাস-টিচার
ভূপতি
বুঝে
গিয়েছিলেন - মেয়েটা
অভুক্ত
থাকে
রোজই।
একদিন
তাকে
একান্তে
ডেকে
জানতে
চেয়েছিলেন, “কী
রে - খেয়ে
আসিসনি, না?”
ঝরঝর করে চোখের
জল
ঝরে
পড়েছিল
আপ্লুজার
দু’চোখ
বেয়ে।
সংবেদনশীল
মানুষ
ভূপতি
সেই
দিনই
স্কুলছুটির
পর
ওকে
সঙ্গে
নিয়ে
গিয়েছিলেন
ওদের
বাড়ি।
আপ্লুজার
বাবা
টুকটাক
কাজের
ধান্ধায়
বেরিয়েছিল
রোজকার
মতোই।
তাকে
বাদ
দিয়ে
তার
রোজগারের
মুখাপেক্ষী
তিন
তিনজন।
আপ্লুজার
ভাই
তখন
খুব
ছোটো।
স্কুলে
ভরতি
হওয়ার
বয়েস
হয়েছে
সবে।
কিন্তু
সে-ভাবনা
শিকেয়
তুলে
তার
বাবা
তাকে
নিয়ে
কাজে
বেরোয়।
ইচ্ছে - হাতেকলমে
কিছু
শেখানো...
নিদেনপক্ষে
জোগাড়ের
কাজ
তো
করতে
পারবে।
আপ্লুজার মাকে অতি কষ্টে
রাজি
করিয়ে
হাজার
দুই
টাকা
হাতে
ধরিয়ে
দিয়েছিলেন
সেদিন
তিনি, “ধার
হিসেবেই
দিলাম
বউঠান, পরে
শোধ
করে
দেবেন।”
সেই আপ্লুজা! ভূপতি
অবাক
হয়ে
ভাবেন - সে
এখন
লেখাপড়ার
পাট
চুকিয়ে
কলকাতার
এই
নামী
নার্সিংহোমে
মেট্রন
পদে
অধিষ্ঠিত
হয়েছে! মানুষ
চাইলে
পারে
না, এমন
কাজ
ত্রিভুবনে
নেই।
চাই
স্ট্যামিনা, লড়াই
চালিয়ে
যাওয়ার
অনমনীয়
ঐকান্তিক
প্রচেষ্টা।
এরপর... একদিন
‘মিড
ডে
মিল’
নিয়ে
যা
ঘটেছিল, সে-কথা
মনে
পড়ে
যেতেই
এত
বছর
পরেও
ভূপতি
অস্থির
হয়ে
পড়েন, তাঁর
মনে
হয় - ঘটনাটা
যেন
এইমাত্র
ঘটে
চলেছে
তাঁর
চোখের
সামনে...
কাঁচুমাচু
মুখ
করে
সামনে
দাঁড়িয়ে
বিব্রত-বিধ্বস্ত
এক
কিশোরী।
হেডমাস্টার
মশাইয়ের
গম্ভীর
কণ্ঠস্বর, “বাড়ির
জন্যে
তুমি
তোমার
ভাগের
চাল-ডাল-আলু
নিয়ে
যেতে
পারো
না
আপ্লুজা...
এটা
নিয়মবিরুদ্ধ
কাজ।
স্কুলে
বসে
তোমাকে
রান্না করা
খাবারই
খেতে
হবে।”
ভুল কিছু বলেননি
হেডমাস্টার
মশাই।
তিন জন
রান্নার
মাসির
মধ্যে
একজন
নালিশ
জানানোয়
ঘটনার
পরের
দিন
ডাক
পড়েছিল
আপ্লুজার।
আসলে, খেতে
না-পেয়ে
ক্রনিক
অ্যানিমিয়ায়
ভুগতে
থাকা
মা’র
জন্যে
নির্মলা
মাসির
কাছ
থেকে
চেয়ে
নিয়ে
গিয়েছিল
সে।
নিয়ম
তো
নিয়মই...
প্রয়োজন
তারও
উপরে - মনে
হয়েছিল
ভূপতির
এবং
সেজন্যেই
তিনি
নিজে
উদ্যোগী
হয়ে
মুচলেকা
দিয়েছিলেন
সেদিন - ভবিষ্যতে
এমন
গর্হিত
কাজ
আর
কোনোদিন
করবে
না
আপ্লুজা, করলে
কঠোর
শাস্তি
পেতে
হবে
তাকে।
হেডমাস্টার মশাইয়ের রাগি
রাগি
গম্ভীর
মুখটা
চোখের
সামনে
ভেসে
ওঠে
তাঁর
এবং
ঠিক
তখনই
নার্সের
কণ্ঠস্বরে
স্মৃতির
অলিন্দ
থেকে
বাস্তবের
সরণিতে
ফেরেন
ভূপতি, “স্যার, পাশ
ফিরে
শোন।
আপনার
কোমরে
ইনজেকশন
পুশ
করতে
হবে...
জাস্ট
এ
ফিউ
সেকেন্ডস
ওনলি...”
পিঁপড়ের মৃদু দংশন, তারপরেই
সদাহাস্যময়ী
নার্সের
মধুর
সম্ভাষণ, “থ্যাংক
ইউ
স্যার, হ্যাভ
আ
নাইস
ডে।”
তিন
অলস বিকেল গড়িয়ে
সন্ধে
নামছে।
পশ্চিমের
জানালার
ঘষা কাচের
মধ্যে
দিয়েও
অস্তমিত
দিনমণির
রঙিন
উদ্ভাসে
রঞ্জিত
ঘরের
দেয়াল।
এবার
আসার
সময়
হয়ে
গিয়েছে
শাম্বর।
তার
মা
আসবে
কি? ভিতরে
ভিতরে
প্রত্যাশার
চাপ
অনুভব
করেন
ভূপতি।
ঘড়ির
কাঁটা
যে
এত
আস্তে
ঘোরে, এখানে
না
এলে
বুঝতেই
পারতেন
না
তিনি।
অথচ, কাজের
মধ্যে
যখন
থাকতেন, সময়ের
সঙ্গে
এঁটে
উঠতে
পারতেন
না...
আশ্চর্য!
দরজার বাইরে পায়ের
শব্দ
এবং
প্রায়
সঙ্গে
সঙ্গেই
ঘরে
ঢোকে
শাম্ব।
একা।
অজান্তেই
দীর্ঘশ্বাস
বেরিয়ে
আসে
ভূপতির
বুকের
গভীর
থেকে।
শাম্ব
চেয়ার
টেনে
নিয়ে
বসতে
না
বসতেই
আপ্লুজা
হাজির, “স্যার, আমি
ঠিক
সময়েই
এসে
গেছি।
আর
এ
নিশ্চয়ই
শাম্বদা, তাই
তো?”
আপ্লুজার প্রশ্নের জবাব
না-দিয়ে
ভূপতি
শাম্বকে
প্রশ্ন
করেন, “চিনতে
পারছিস
একে?”
“হ্যাঁ...
মানে
চেনা
চেনা
লাগছে, দেখেছি
কোথাও
যেন...” শাম্ব
স্মৃতি
হাতড়ায়।
“আমিও
পারিনি
রে, ও
কিন্তু
আমাকে
একবার
দেখেই
চিনেছে।” ভূপতি
আরও
সময়
দেন
শাম্বকে, “চেষ্টা
কর
আর
কিছু
সময়।”
আপ্লুজা ফিক করে হেসে
ফেলতেই
শাম্ব
বলে
ওঠে, “চিনতে
পেরেছি
এবার।
তুমি
আমাদের
কুসুমপুরের
আপ্লুজা
তো?”
“হ্যাঁ
শাম্বদা,”
আপ্লুজা
উচ্ছ্বসিত, “কতদিন
পরে...
দিন
নয়, কত
কত
বছর
পরে
দেখছি
বলো
তো! আমি
কিন্তু
এক
নজরেই
চিনতে
পেরেছি
তোমাকে।”
“শাম্ব, তুই
জানতে
চাইলি
না
তো - আপ্লুজা
কেন
এখানে
আমার
কাছে
এসেছে
এখন
এবং
আগে
আজ
সকালেও
এসেছিল
একবার?”
“কেন বাপি?”
“আপ্লুজা...
আমাদের
গ্রামের
সেই
একরত্তি
মেয়েটা
অনেক
লড়াই
করে
সাফল্যের
সিঁড়ি
বেয়ে
আজ
কলকাতার
এই
নামি
নার্সিংহোমের
মেট্রনের
পদে
অধিষ্ঠিত।”
“তাই!” শাম্ব
যেন
হাতে
স্বর্গ
পেয়ে
গেছে
এমন
ভাব
করে
বলে
ওঠে, “বাপি, তাহলে
তো
আমাদের
আর
কোনো
চিন্তাই
নেই।”
“নেই-ই
তো,” আপ্লুজার
বরাভয়
কণ্ঠস্বর, “স্যারকে
তো
আমি
বলেইছি - আপনার
সব
দায়দায়িত্ব
এখন
থেকে
আমি
নিলাম, আপনি
টেনশন-ফ্রি
হয়ে
জাস্ট
রিল্যাক্স
করুন।”
“ডক্টর
তলাপাত্রর
সঙ্গে
একটু
আগে
আমার
কথা
হল,”
বলল
শাম্ব।
“আমারও
হয়েছে,” আপ্লুজা
বলে, “ডক্টর
তলাপাত্র
খুবই
কনফিডেন্ট, আশ্বাস
দিয়ে
বললেন - এর
চেয়েও
খারাপ
লিভারের
অবস্থা
ছিল, এমন
পেশেন্টকেও
আমি
সুস্থ
করে
বাড়ি
পাঠিয়েছি।”
“তাহলে
তো
নিশ্চিন্ত
হওয়াই
যায়, কী
বলো?”
“অবশ্যই
যায়,” আপ্লুজার
তাৎক্ষণিক
জবাব, “তবে, কাকিমার
সঙ্গে
একবার
কথা
বলা
দরকার।
আগামীকাল
নিয়ে
আসতে
পারবে
শাম্বদা?”
“কেন বলো তো আপ্লুজা? কোনো
ডিসিশন
নেওয়ার
ব্যাপারে
কিন্তু
মা
সাহায্য
করতে
পারবে
না
তোমায়, তুমি
বরং
আমার
সঙ্গে
আলোচনা
করো...
আমার
সঙ্গেই
বা
কেন, তুমি
যা
ভালো
বুঝবে, তাই
করবে।”
“তোরা
কী
করতে
চাইছিস
বল
তো
আপ্লুজা - আমাকে
শিগগির
ছাড়বি
না, না
কি?”
“সুস্থ
হয়ে
গেলেই
আপনাকে
ছুটি
করে
দিয়ে
বাড়ি
পাঠিয়ে
দেব
স্যার।
কিন্তু, কিছুটা
সময়
তো
লাগবেই।”
চার
দিন দশেক পর এক সন্ধেয়
আপ্লুজা
শাম্বকে
তার
চেম্বারে
নিয়ে
গিয়ে
বলল, “শোনো
শাম্বদা, ডক্টর
তলাপাত্র
অপারেশন
করতে
চাইছেন...”
“অপারেশন?” হোঁচট
খায়
শাম্ব, “তবে
যে
বললে - চিন্তার
কোনও
কারণ
নেই!”
“চিন্তার
কারণ
তো
নেই-ই,” আপ্লুজার
কণ্ঠস্বরে
আত্মবিশ্বাস, “অপারেশন
মানেই
তো
ভয়ের
ব্যাপার
নয়। বোঝার চেষ্টা
করো
শাম্বদা, জোড়াতালি
দিয়ে
স্যারকে
রিলিজ
করে
দিলে
আবার
লিভারের
অবস্থা
খারাপ
হতে
পারে
যে
কোনো
সময়ে।
তুমি
কি
সেটা
চাও?”
“কিন্তু
কী
জানো
তো
আপ্লুজা, এতদিনে
এই
নামী
নার্সিং হোমে
এ যাবৎ
যে
অ্যামাউন্টের
বিল-পেমেন্ট
করতে
হবে, সেটাই
হয়তো
বাপির
মেডিক্লেম
কভার
করবে
না!”
“সে-চিন্তা
তোমার
নয়, আমার,” আপ্লুজা
শাম্বর
চোখে
চোখ
রাখে, “মন
দিয়ে
শোনো
তুমি।
ডক্টর
তলাপাত্র
বলেছেন - পেশেন্টের
লিভারের
যা
অবস্থা, তাতে
এখন
পার্শিয়াল
লিভার
ট্রান্সপ্লান্ট
করলেই
চলবে।
কিন্তু
দেরি
করলে
সে-সুযোগ
আর
থাকবে
না।
তুমি
কী
চাও
শাম্বদা?”
“বেশ, তুমি
যখন
বলছ...”
“যত তাড়াতাড়ি
সম্ভব, আমি
ব্যবস্থা
করছি।
আর
জানো
তো - এখন
মেডিক্যাল
সায়েন্স
এত
অ্যাডভান্সড
যে, এতে
সাফল্য
আশা
করা
যেতেই
পারে।”
পাঁচদিন পর অপারেশন।
তার
আগে
ভূপতির
প্রয়োজনীয়
সব
পরীক্ষা-নিরীক্ষা - যেমন, ই.সি.জি, ইকো
কার্ডিওগ্রাম, চেস্ট
এক্স
রে
ইত্যাদি
করিয়ে
নেওয়া
হল।
শাম্বর
মা
মাঝে
দু’দিন
এসেছেন।
আপ্লুজা
তাঁকে
ভরসা
জুগিয়ে
নিশ্চিন্ত
করেছে।
দুপুর দুটোয় ও.টি-তে
নিয়ে
যাওয়া
হল
ভূপতিকে।
বাইরে
মা’র
সঙ্গে
শাম্ব।
তার
দু’জন
ঘনিষ্ঠ
অফিস-কলিগও
এসেছে।
কখন
কী
প্রয়োজন
হয়, বলা
তো
যায়
না! শাম্ব
ব্যবস্থাপনায়
ফাঁকফোকর
রাখেনি।
শুধু
একটা
ব্যাপারে
সে
কিছুটা
বিস্মিত।
এমনটা
হওয়ার
তো
কথা
নয়, কিন্তু
হয়েছে।
অপারেশন
শুরুর
পরেও
এসে
পৌঁছাতে
পারেনি
আপ্লুজা।
তবে
কি
হঠাৎ
করে
শরীর খারাপ
হল
ওর? - ভাবে
শাম্ব।
ও.টি-র বন্ধ
দরজার
উপরে
জ্বলজ্বল
করছে
লাল
আলো।
দেয়াল-ঘড়ির
টিকটিক
আওয়াজ
যেন
বুকের
মধ্যে
হাতুড়ি
পেটাতে
থাকে।
শত
চেষ্টাতেও
অশান্ত
মন
শান্ত
করতে
পারে
না
শাম্ব।
ক্ষণে
ক্ষণে
বাবার
রোগ-জর্জরিত
মুখটা
ভেসে
ওঠে
তার
চোখের
সামনে।
আর
বসে
থাকতে
না-পেরে
একসময়
সে
উঠে
পায়চারি
শুরু
করে
দেয়।
ঘড়িব
কাঁটা
যেন
হঠাৎ
ক্লান্ত
হয়ে
ঘোরাই
বন্ধ
করে
দিয়েছে!
দু’আড়াই ঘণ্টার অপারেশন
বলেছিল, কিন্তু
ও.টি-র
লাল
আলো
যখন
নিভল, তখন
শাম্বর
মনে
হল, সে
অনন্তকাল
ধরে
অপেক্ষা
করছে।
হাসিমুখে বেরিয়ে এসে ডক্টর
তলাপাত্র
বললেন, “সাকসেসফুল
অপারেশন।
একদম
টেনশন
করবেন
না
আপনারা।
মিস্টার
পাণিগ্রাহি
ভালো
আছেন।
আরও
ঘণ্টা
দুই
পর
একজন
একজন
করে
আপনারা
‘আই.সি.ইউ’-তে
গিয়ে
দেখে
আসবেন, তবে
চুপচাপ...
এমন
কিছু
বলবেন
না
বা
করবেন
না, যাতে
পেশেন্টের
উত্তেজনা
হতে
পারে।”
শাম্ব সামনে এগিয়ে
গিয়ে
ডক্টর
তলাপাত্রর
উদ্দেশে
বলল, “আপনি
আমার
বাবাকে
যে
আজ
জীবনের
পথে
ফিরিয়ে
আনলেন, সে-কথা
মনে
রেখে
আমরা
আপনার
কাছে
চিরকৃতজ্ঞ
থাকব
স্যার।
কিন্তু
একটা
প্রশ্ন
কি
আপনাকে
করতে
পারি?”
“কী প্রশ্ন? - করুন।”
“আজ আপ্লুজা
পারভিন
কি
আসেননি
নার্সিং হোমে? ইন
ফ্যাক্ট, গতকাল
বিকেলেও
ওঁকে
দেখিনি!”
“আশ্চর্য! উনি
আপনাদেরকে
বলেননি?”
“কী কথা স্যার?”
“এই যে আপনার
বাবার
লিভারের
আংশিক
প্রতিস্থাপন
হল, তার
জন্যে
তো
একজনের
লিভার
দরকার। আপ্লুজা পারভিনের
লিভারের
পার্ট
নিয়েই
তো
কাজটা
করা
হয়েছে।
গতকালই
ওঁকে
ও.টি-তে
আনা
হয়েছিল।
চিন্তা
করবেন
না, উনিও
পুরোপুরি
সুস্থ
আছেন।”
চার জোড়া চোখ নির্বাক
বিস্ময়ে
চেয়ে
থাকে
ডক্টর
তলাপাত্রর
মুখের
দিকে।
----------
ছবি - লাবণি চ্যাটার্জি
অসাধারণ গল্প,শেষের মোচড়টি অনবদ্য। তোমার এ গল্প জাতি,ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে আবার বলে"সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নেই"।
ReplyDeleteঅনেক শুভেচ্ছা নিও দাদা,এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
অনবদ্য!👌
ReplyDeleteঅসাধারণ... মানবিকতার সুন্দর উপস্থাপন।
ReplyDelete