ভ্রমণ:: দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া - সুদীপ ঘোষাল


দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
সুদীপ ঘোষাল

আমি দূর দূরান্তে না গিয়ে কাছাকাছি না-দেখা গ্রাম দেখতে ভালোবাসি। এবার গেলাম বেলুন ইকো ভিলেজ পরিদর্শনে। হাওড়া-আজিমগঞ্জ লোকাল ধরে শিবলুন হল্টে নামলাম। সেখান থেকে অম্বলগ্রাম পাশে রেখে দু’কিলোমিটার টোটো রিকশায় বেলুন গ্রাম। একদম অজ পাড়াগাঁ। মাটির রাস্তা ধরে বাবলার বন পেরিয়ে তন্ময়বাবুর স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করলাম। তন্ময়বাবু ঘুরিয়ে দেখালেন। তাঁর জগৎ। প্রায় একশো প্রজাতির গাছ। পশু, প্রাণীদের উন্মুক্ত অঞ্চল। বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে সেখানে। তার নিজের হাতে বানানো মা কালীর মূর্তি দেখলাম। কাচের ঘরে ইকো সিস্টেমের জগৎ। কেউটে সাপ, ব্যাঙ থেকে শুরু করে নানারকমের পতঙ্গ যা একটা গ্রামের জমিতে থাকে। বিরাট এক ক্যামেরায় ছবি তুলছেন তন্ময় হয়ে। আমি ঘুরে দেখলাম প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ করে বানানো রিসর্ট। ওপেন টয়লেট কাম বাথরুম। পাশেই ঈশানী  নদী। এই নদীপথে একান্ন সতীপীঠের অন্যতম সতীপীঠ অট্টহাসে যাওয়া যায় নৌকায়। তন্ময়বাবু হাতে সাপ ধরে দেখালেন। শিয়াল, বেজি, সাপ, ভাম আছে। তাছাড়া পাখির প্রজাতি শ’খানেক। একটা পুকুর আছে। তার তলায় তৈরি হচ্ছে গ্রন্থাগার। শীতকালে বহু বিদেশী পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেনতন্ময়বাবু বললেন, স্নেক বাইটের কথা ভেবে সমস্ত ব্যবস্থা এখানে করা আছে। ঔষধপত্র সবসময় মজুত থাকে।
তারপর বেলুন গ্রামটা ঘুরে দেখলাম। এখানকার চাষিরা সার, কীটনাশক ব্যবহার করেন না। তারপর বিকেলে নৌকাপথে চলে গেলাম অট্টহাস সতীপীঠ। এখানে মা মহামায়ার ওষ্ঠ পতিত হয়েছিল সোন মহারাজ এই সতীপীঠের প্রধান। তারপর দেখলাম পঞ্চমুণ্ডির আসন। ঘন বনের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। মন্দিরে মা কালীর মূর্তি। রাতে ওখানেই থাকলাম।

তার পরের দিন সকালে হাঁটাপথে চলে এলাম কেতুগ্রাম বাহুলক্ষীতলা। কথিত আছে এখানে মায়ের বাহু পতিত হয়েছিলএটিও একান্ন সতীপীঠের এক পীঠ। তীর্থস্থান। সুন্দর মানুষের সুন্দর ব্যবহারে মন ভালো হয়ে যায়। এর পাশেই আছে মরাঘাট। সেখান থেকে বাসে চেপে চলে এলাম উদ্ধারণপুর। এখানে লেখক অবধূতের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। গঙ্গার ঘাটে তৈরি হয়েছে গেট, বাথরুম সমস্ত কিছু। শ্মশানে পুড়ছে মৃতদেহ। উদ্ধারণপুর থেকে নৌকায় গঙ্গা পেরিয়ে চলে এলাম কাটোয়া। এখানে শ্রীচৈতন্যদেব সন্ন্যাস নেবার পরে মাথা মুণ্ডন করেছিলেন। মাধাইতলা গেলাম। বহুবছর ব্যাপি এখানে দিনরাত হরিনাম সংকীর্তন হয় বিরামহীনভাবে। বহু মন্দির, মসজিদ বেষ্টিত কাটোয়া শহর ভালো লাগল

----------
ফোটো - লেখক

No comments:

Post a Comment