মৃত্যুতুষার
তন্ময় বিশ্বাস
(১)
স্যাটেলাইট ফোনটা ছুঁড়ে দিল নরবু। ফেলে আসা রাস্তাটার দিকে একবার তাকাল। তারপর তাকাল আকাশের দিকে। মাঝবেলার চোখ ধাঁধানো রোদটুকু ঢাকা পড়ে গেছে উড়ে বেড়ানো বরফকুচির নিচে। হাওয়ার তোড় একটু একটু করে বাড়ছে। ঝড় উঠছে।
এখানে পায়ের নিচের বরফ বেশ নরম। হাঁটতে কষ্ট হয়। ছোটার তো প্রশ্নই ওঠে না। ডানদিকে ছোট্ট একটা চূড়া। পায়ে হেঁটে ওঠা যায়। মার্চিং পিক। আর দু’দিকের ঠাণ্ডা দেওয়াল নেমে গিয়ে মৃত্যুর সাথে মিশেছে।
এবার ছায়াটাকে দেখতে পেল নরবু। বরফকুচির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে আসা পোড় খাওয়া দু’টো পা। এগিয়ে আসা সবুজ চোখে দু’টুকরো নরক।
ছায়াটার মধ্যে ঝলক দিয়ে উঠল খানিকটা কমলা রঙের আগুন। তার ঠিক পরের মূহর্তে চেপে যাওয়া একটা শব্দ শুনল ও। আর মনে হল কীভাবে যেন একটা বরফের ক্রিস্টাল প্রচণ্ড গরম হয়ে ঢুকে পড়ল ওর বুকের বাঁদিকে। গোটা হিমালয় টাল খেয়ে নেমে এল মাটিতে। মনাস্ট্রির মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাগনদু’টো যেন হঠাৎ জেগে উঠেছে ওর ভেতর, ছড়িয়ে দিচ্ছে বছরের পর বছর ধরে জমিয়ে রাখা আগুনের
নিঃশ্বাস।
নরবু নড়তে পারে না। শুধু শেষটুকু দিয়ে বুঝতে পারে পিঠের নিচে বরফে ফাটল ধরছে। খুব দ্রুত।
ছায়াটা সরে গেছে। একবার পাঁচ বছরের কচি মুখটা মনে করার চেষ্টা করল, এল না। অনেক অনেক পুরনো একটা ঘুম নেমে আসছে ওর চোখে। সব যাওয়া শেষ হয়ে গেছে। এখন সে অতিথি। হিমালয় তার মেহমানকে যত্ন করে রেখে দেয়। চোখের সামনে লাল চাদরে এখন ঢেকে যাচ্ছে পাহাড়, মার্চিং পিক, পেরিয়ে আসা একুশটা বছর।
যখন কানের পাশ দিয়ে বরফগুলো সরে গেল, যখন ধুলো বরফের সাথে সাথে পাহাড়ে চড়া মানুষটা নেমে আসছিল নিচে, হিমালয় নিজের মুখ লুকোচ্ছিল রক্তের লজ্জায়। তখন নিভে যাচ্ছিল নরবু। পাক খেতে থাকা শরীরটায় নেমে আসছিল অন্ধকার। টানা ছেদহীন সাদা অন্ধকার।
(২)
আকাশ। আবির
গোলা। আবির গোলা বিকেল। গোলাপি আবির। আবির-রোদ গায়ে মেখে ফিরে যাচ্ছে কয়েকটা পাখি। কোনও এক পাতাঝরা গাছের একলা বাসা অপেক্ষা করে আছে তাদের জন্য। ক্লান্ত জোড়া জোড়া ডানাগুলো
এবার একটু আরাম চায়। শান্তি চায়। চায় উষ্ণতা। পাহাড়ে এই তিনটে জিনিসেরই বড্ড অভাব। সবাই চায়। কেউ পায়, কেউ পায় না। আর আছে ফুরিয়ে যাওয়া একটা সূর্য। পাইনগাছটার ফাঁক
দিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে উঁকি মারছে। একটু পরেই ডুবে যাবে হিমালয়ের বুকে। রক্ত এঁকে।
পাহাড়ের দিকে
তাকিয়ে বসে আছে গুরাং। তার অনেকদিনের বন্ধু এই পাহাড়। অনেক কিছুর সাক্ষী। এই পাহাড়টা ওর মাকে দেখেছে। তখন সেই কোন ছেলেবেলা। হাওয়ায় অল্প অল্প উড়ে যাওয়া কিছু চুল আর
ছোটো ছোটো দু’টো চোখ। স্মৃতিপটে মাঝে মাঝে
এইটুকু জেগে ওঠে। তারপর মিলিয়ে যায়।
অনেক ছোটোবেলায় মা চলে গেছে। ওই তারাদের দেশে। যেখান থেকে
কেউ ফেরে না। ফিরতে পারে না। তার বাবা মা দুই-ই ছিল নরবু। ওর বাবা। তাকে সেই ছোট্টবেলা থেকে আগলে
আসছে। সময়ের ঝড় বাঁচিয়ে একটু একটু করে তাকে বড়ো করে তুলেছে শেরপা মানুষটা।
ছোট্ট পরিবার।
সে, বাবা আর ওই হিমালয়। বাবা
প্রায় বলত, ‘পাহাড় আমাদের খেতে দেয়। তাই তাকে ভালোবাসতে হবে। জানতে হবে।’ তারপর চোখদু’টো বড়ো বড়ো করে পাঁচটা আঙুল সামনে ধরে বলত, ‘নহি তো ওয়হ পাহাড় খা লেগা। খপাৎ!’
হুট করে
পাঁচটা আঙুল খপাতের ভঙ্গিতে ছুঁচলো হয়ে কাতুকুতু দিত গুরাং-এর বগলে। গুরাং খিলখিল করে হেসে উঠত। বাবাও হাসত। ছোটো ছোটো চোখদু’টো আরও ছোটো হয়ে হারিয়ে যেত বলিরেখার
ভিড়ে। হাসত হিমালয়। সে সবসময় হাসে। কক্ষনো কাঁদে না।
পাইনগাছটার নিচে ছোটো ছোটো ঘাস। পট করে কয়েকটা ঘাস ছিঁড়ে নেয় গুরাং। কোনও কারণ নেই। এমনি! কারণ ছাড়া, খেয়ালের বশে কাজ মানুষই করে। আর কেউ করে না। বরফ পড়েনি অনেকদিন। তাই ঘাস বেরিয়েছে। আজকাল বরফ কমই পড়ে।
পাইনগাছটার নিচে ছোটো ছোটো ঘাস। পট করে কয়েকটা ঘাস ছিঁড়ে নেয় গুরাং। কোনও কারণ নেই। এমনি! কারণ ছাড়া, খেয়ালের বশে কাজ মানুষই করে। আর কেউ করে না। বরফ পড়েনি অনেকদিন। তাই ঘাস বেরিয়েছে। আজকাল বরফ কমই পড়ে।
আগে কত বরফ
পড়ত! সকালে উঠেই ছুট্টে বেরিয়ে আসত গুরাং। পুরো শেরপাপাড়া চাপা পড়ে যেত বরফের
আদরে। বাবা হাসিমুখে বাড়ির সামনে থেকে বরফ তুলত। পাশে একটা বরফপুতুল। স্নো ম্যান। মাথায় শেরপা টুপি, গলায় মাফলার। গাজরের নাক, গর্ত গর্ত চোখ
আর নাকের নিচে ছোটো ছোটো নুড়ি-পাথরের হাসি।
গুরাং মুখ
ফুলিয়ে বলত, ‘আবার একা একা বানিয়েছ? যাও কথা বলব
না।’ বলে মুখ
ঘুরিয়ে নিত। দু’চোখে টলমল করত দু’টো নীল আকাশ। দু’টো হিমালয়।
‘আরে আরে, গুরাং সাহাব গুসসা হো গয়া!
স্ন্যু ম্যান, তুমি তো বোজ্জাত আছো। সাহেবকে
রুলাই দিলে!’ বলে বেলচার এক কোপ বসাত বরফমানুষের ওপর, ‘স্ন্যু ম্যান ফিনিশ!’
সারাদিন চলত
বাবা ছেলের ভাঙাগড়ার খেলা। খেলতে
খেলতে বাবাই একদিন অদৃশ্য হয়ে গেল। ফিনিশ! থেকে গেল স্নো ম্যানটা। নুড়ি-পাথরের হাসি নিয়ে।
চোখ চুঁইয়ে একফোঁটা মুক্তো খসে পড়ে গুরাং-এর কোলে। নিঃশব্দে। ঠোঁট দু’টো হালকা কাঁপে। আজও জল আসে। কান্না পূরণ হয় না। সে সময় মানে
না।
সারাবছর গুরাং-এর আনন্দে কাটত। কিন্তু সিজন এলেই মন খারাপ। গলা ভারি ভারি। কী যেন এসে আটকে যায় গলায়। টুরিস্ট সিজন। ঝাঁকে ঝাঁকে লাল নীল মানুষ। প্রথমেই হানা দেবে শেরপা কলোনিতে। তারপর বেরিয়ে পড়বে ট্রেকিংয়ে। অজানাকে ছোঁয়ার আশায়। গুরাং-এর বাবাও চলে যেত। তার রক্তে পাহাড়। শিরায় শিরায়
সহস্র হিমালয়। শিখরের আহ্বান। শেরপাদের ঘরে বসে থাকলে হয় না। চলে না। শত বিপদ সত্ত্বেও ফিরে যেতে হয় ওই ভয়ংকরের বুকে।
সেবার এক
সাহেব এল। নেস্টর চার্লস। একা, কোনও দল নেই। এসে পাঁচজন শেরপার দল নিয়ে চলে গেল। দলের সর্দার নরবু।
পৃথিবীতে
মুখের চেয়ে মুখোশের সংখ্যা বড্ড বেশি। লাল, নীল, সাদা কতই না তাদের রং।
মুখোশের কোনও চোখ থাকে না। তাতে ইচ্ছে মতো এঁকে নেওয়া যায় হাসি-কান্না।
নেস্টর সাহেবের মুখোশটা ছিল বেশ হাসি হাসি। বিশ্বস্ত বিশ্বস্ত। একদম মুখের মতনই
দেখতে। শয়তানের মুখোশ মুখের সাথে মিশে থাকে। বোঝা যায় না।
একসময় সিজন
শেষ হয়ে গেল। ফিরে এল শেরপারা। শেরপা কলোনির অপেক্ষারত ঘরগুলো আবার ভরে উঠল
কলকলানিতে। ফিরল না শুধু গুরাং-এর বাবা। দলের
বাকি চারজন ফিরে এল। হিমালয় গ্রাস করে নিল একজন বাবাকে। শেরপারা গ্রাস করা বলে না।
বলে হিমালয় তাকে ‘মেহমান’ করে রেখে দিয়েছে তার বাড়িতে। যত্ন করে।
তবে হিমালয় নয়, ওই নেস্টর। নেস্টর শয়তান। বাকি শেরপাদের মুখে
শুনেছিল কী যেন ঝামেলা হয়েছিল ওর সাথে
বাবার। আর তারপর...
তারপর কেউ বলতে
পারে না। কেউ জানে না সেদিন নেস্টরের স্যাটেলাইট ফোন থেকে ফোন এসেছিল ওদের বাড়ির
ফোনে। ওর কানে ভেঙে পড়েছিল বাবার শেষ কয়েকটা নিশ্বাস! “নেস্টার শয়তান.....মুঝে...
মুঝে... মার ডালেগা....” আর কিছুক্ষণ পর চাপা একটা শব্দ। অনেক পরে গুরাং বুঝেছিল
ওটা পিস্তলের ফায়ারের শব্দ।
গুরাং-এর সাতবছরের পা দু’টোর ওপর হঠাৎ করে এসে পড়েছিল অনেকটা ভর। এসে পড়েছিল একটা আস্ত আকাশ। হিমালয়ের ব্লিজার্ড উড়িয়ে নিয়ে গেল তার শৈশব, তার স্কুল। মাথার ওপর থেকে একটা হাত সরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। চিরনিদ্রায়!
হিমালয়ের কোনও
এক অজানা খাঁজে হয়তো কোনওদিন বরফ গলে বেরিয়ে পড়বে একটা শরীর। অবিকৃত! হিমালয় যত্ন করে রেখে দেয় তার মেহমানদের। বুকের
কাছে একটা লাল গর্ত! আর পকেটে একটা সাতবছরের বাচ্চার ছবি। মৃত্যুযন্ত্রণায় বিকৃত
মুখটা কী একটা বলতে গিয়ে থেমে গেছে।
হয়তো বলতে গিয়েছিল ‘গুরাং’।
পাহাড়টাকে
দেওয়াল করে একটু একটু করে বড়ো হয়ে উঠেছে
গুরাং। ও আজ শেরপা। অনেক বিপদ, অনেক ঝড়
দেখেছে হাসিখুশি ছেলেটা। হাসির গভীর খাতে লুকিয়ে রেখেছে এক অন্তর-বাহী নদী। অশ্রু-নদী!
একমুহুর্তের
জন্যও কোনওদিন বাবাকে ভোলেনি। ভোলেনি ওই নেস্টরকেও। মানুষ উপকার অনেকসময় ভুলে যায়।
অপকার ভোলে না। কক্ষনো না।
তাই আজ বাজারে
চিনতে ভুল করেনি ও। সেই ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, সেই হাসি হাসি মুখ। আর সেই মুখোশ। মুখের মতো দেখতে। আবার হয়তো গ্রাস করবে কোনও এক হতভাগ্য
প্রাণ।
পাশে রাখা ফ্লাস্কটা নিয়ে উঠে দাঁড়াল গুরাং। এখানে রাস্তাটা পাক খেয়ে
উঠে গেছে ওপরের দিকে। পাশে খাদ। হাঁ করা মৃত্যু। নীচে কিছু সবুজ আবছাভাবে ধরা
দিচ্ছে। কুয়াশা শুরু হয়ে গেছে।
মাথাটা হালকা
ঝিমঝিম করছে। সকাল থেকে একছিলিমও খাওয়া হয়নি। গুরাং-এর একমাত্র নেশা। এক ট্রেকিং পার্টির
সাথে গিয়ে কীভাবে যেন ধরে গিয়েছিল। একবার ধরলে ছাড়া যায় না। ইচ্ছে করলেও না।
বুটের শব্দ
আসছে। গুরাং জানে এটা কার শব্দ। সে তৈরি হয়।
“নেস্টর!”
“ইয়েস?”
(৩)
কড়, কড়, কড়...
দরজার কড়াটা
নড়ে উঠল। ঘুম চোখে উঠে পড়ল গুরাং। এখন ভোর। সামান্য আলো ফুটেছে। সূর্য উঠব উঠব।
“সাহা-সাহাব, আপ! ইতনা সুবহ্ সুবহ্? হে ভগবান, আব কব আয়ে? ইসবার ভি কলেজ কে সাথ?”
একঝাঁক
প্রশ্নের উত্তরে একটা হাসি উপহার দেয় গুরাং-এর সাহা-সাহাব। বজ্রদীপ সাহা। গুরাং-এর সাথে বেশ কয়েকবার ছোটোখাটো ট্রেকিং করেছে সে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এই ছেলেটা প্রায় গুরাং-এর সমবয়সী, খুব মিশুকে। তাই গুরাং-এর খুব বন্ধু।
“আইয়ে আইয়ে,” গুরাং-এর কেন জানি খুব আনন্দ হচ্ছে। অনেকসময় আনন্দ বা
দুঃখের কারণগুলো ঠিক বোঝা যায় না। ছ’ফুটের ছায়াটা ভেতরে ঢোকে। গুরাং আলো জ্বালতে যাচ্ছিল।
“থাক গুরাং। বহুদিন তোমার বাড়ি থেকে সানরাইজ দেখিনি। সত্যিই! কোথায় লাগে
টাইগার হিল!”
পূবদিকের
জানলাটা খুলে দেয় গুরাং। হু হু করে ঠাণ্ডা বাতাস এসে হালকা কামড় বসায়। সামনে ঘুমন্ত হিমালয়। যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। সারি সারি চূড়ার ফাঁকে আটকে থাকা আকাশ ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে। নীল ছোপ ধরছে।
দু’জনে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে।
“নেস্টরকে মারলে কেন গুরাং?”
গুরাং চমকে
তাকায় বজ্রর দিকে। মুখের একদিকে ভোরের নীল আলো আর অন্যদিকে অন্ধকার। চোখে শত
বজ্রের দৃষ্টি। ফালা ফালা করে
দিচ্ছে গুরাংকে।
“মতলব?” কোনওরকমে বলে গুরাং।
“কলেজে আমাকে কী বলে ডাকে জান?” ভেসে আসে
বজ্রর গলা, “বজ্রবিদ্যুৎ। বি-টেক কলেজে এটা যথেষ্ট আনকমন
নাম। আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না গুরাং।”
তারপর ধীরে
ধীরে জেগে ওঠা হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে বলে চলে বজ্র, “নেস্টরের ওপর যে তোমার রাগ থাকা স্বাভাবিক তা আমার
অজানা নয়। নিজেই বলেছিলে একবার। তাই মোটিভ একমাত্র তোমারই। টিট ফর ট্যাট। লাইফ ফর
লাইফ।”
গুরাং কিছু
একটা বলতে যাচ্ছিল।
“জানি, তুমি প্রমাণ চাইবে। সবুৎ
ছাড়া ইস মুলক মে কুছ নহি হোতা গুরাংজি। সবুৎ ছাড়া বজ্র সাহা কথাও বলে না। তুমি ভাবছ কোনও সবুৎ রাখনি। কিন্তু জান কি না জানি না, একটা কথা আছে, ‘নো মার্ডার ইজ
পারফেক্ট মার্ডার।’ তুমি যে টেকনিকটা ইউজ করেছ, সেটা খুবই পুরনো টেকনিক। তবে এখনও কাজ দেয়।
সাপ মরবে অথচ লাঠি থাকবে না। নো মার্ডার
উইপন। নো ফিঙ্গার প্রিন্ট। আইস নাইফ, বরফের ছুরি। বুকে বসিয়ে দাও, ব্যস! বরফ জল। প্রমাণ মাটি!
“বাট! দেয়ার ইজ আ বিগ বাট! ওই যে বললাম, নো মার্ডার ইজ পারফেক্ট। মেরে তো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে। খাদে বডি পেল
পুলিশ। আর আমি রক্ত পেলাম খাদের ওপরে। আর রক্তের ভেতর পেলাম...”
বজ্র পকেট
থেকে একটা ছোটো প্যাকেট বার করে।
“দু’টো চুল আর কয়েকটা তামাকপাতা।
গুরাংজি, ইস শেরপা কলোনি মে ছিলম কা নশা বস আপ হি কা হ্যায়। কাল থেকে খাওনি। তোমাদের জানলা তো বন্ধই থাকে। তাই খেলে গন্ধ ঠিকই পেতাম। আরে ভাই, খাবে কী করে? ভেজা কলকেতে তামাক ধরে না। ওটাকে ছাঁচ বানিয়েই তো বানিয়েছিলে বরফের ছুরি। আর জলের সাথে জমে গেছে চুল আর তামাকপাতাগুলো। বরফ গলে গেছে। কিন্তু ওগুলো যাবে
কোথায়? নেস্টরের রক্ত ধরে রেখেছিল
তার খুনিকে।”
গুরাং-এর হাতটা এগিয়ে যায় কোমরের কুকরিটার দিকে। কিন্তু কাঁপা হাত কিছু ধরতে পারে না।
“কী জান তো গুরাং,” বজ্রর মুখে সোনালী আলো, “কেউ অপরাধী হয়
নিজে নিজে। আর কাউকে তৈরি করে এই সমাজ। একটা
অপরাধ অনেকগুলো অপরাধীর জন্ম দেয়। আমাদের দিস্তা দিস্তা পেনাল কোডের জঙ্গলে কি সেসবের
বিচার আছে? নাকি তার ক্ষমতা আছে বিচারের? সব ক্রাইম ক্রাইম হয় না।”
হু হু করে
হাওয়া দিচ্ছে হিমালয়ের দিকে। বজ্র প্যাকেটটা খুলে উপুড় করে দিল। এলোমেলো হাওয়া কিছুক্ষণ লোফালুফি করল জিনিসগুলো নিয়ে। তারপর কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
“আইন তো নেস্টরকে শাস্তি দেয়নি। দিলে তো সেই খুনই করত। খাতায় কলমে, ঢাকঢোল পিটিয়ে খুন। শাস্তিটা না হয় তুমিই দিলে।
ওগুলো বরং তোমার বাবার কাছে যাক। খুশি হবেন।”
গুরাং কাঁপা কাঁপা
হাতে বজ্রর হাতটা ধরল। ছোটো ছোটো চোখদু’টোয় বাষ্প জমছে। একটু পরেই টুপ
করে ঝরে পড়বে। বজ্র হাসে। আলতো করে
একটা হাত রাখে গুরাং-এর কাঁধে। তারপর যেভাবে
এসেছিল সেভাবেই চলে যায়। বজ্রবিদ্যুৎ
হয়ে। গুরাং তাকিয়ে থাকে খোলা
দরজা দিয়ে। একটা লম্বা ছায়া আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। তার পিঠে সোনালী ভোর। কখন যেন সূর্যটা উঠে পড়েছে। নতুন তেজে। নতুন সকাল হয়ে।
________
ছবিঃ সুমিত রায়
2nd khun ta je holo ta 2nd adhyay r sesh e bujhte parini, tai hothat kore 3rd adhyay e detection suru holo keno bhabchilam. Lekhata Bhalo legeche
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteGalpata bhalo hoyeche Tonmoy :) lekha chaliye jao....
Delete