শর্মার শনির দশা
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
“না না,
যজ্ঞটা করতেই হবে। শনিটা বক্রী হয়ে থাকবে না হলে একদম। বাস্তুর দোষটাও কাটাতে হবে
যা দেখলাম এই ঘরের। না হলে ওর
শরীরও ভালো হবে না।
যতই ডাক্তার-বদ্যি দেখান না কেন। এই
ত্রিকালজ্ঞ দিবাকর শর্মা ছাড়া আপনার ছেলের কিস্যু হবে না। আমি থাকতে কোনও চিন্তা
নেই আপনাদের। দিন জলদি পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম। বাকিটা যজ্ঞ হবার পর। জয় মা তারা!”
কড়কড়ে দশটা পাঁচশো টাকার নোট জোব্বার
পকেটে ঢুকিয়ে প্রফুল্ল মনে কপালের লাল তিলকে একবার আঙুল ছুঁইয়ে নেন তান্ত্রিক
জ্যোতিষী দিবাকর শর্মা। এগারোতলা ফ্ল্যাটবাড়ির দশতলার শাঁসালো ক্লায়েন্টের ঘরটা
থেকে বেরিয়ে লিফটের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আনমনে গুনগুন করেন, ‘তোমার কর্ম তুমি কর
মা, লোকে বলে করি আমি’। ভাবতে থাকেন, এরকম পয়সাওয়ালা ধর্মভীরু দুর্বলচিত্ত
মানুষগুলো যতদিন রয়েছে বহাল তবিয়তে খাওয়াপরার কোনও অভাব হবে না আমার।
কদমতলার চেম্বার সেরে এখানে
এসে সব কাজ-টাজ মেটানো গেল। রাত প্রায়
দশটা। বাড়ি ফিরতে হবে এবার সোজা। ফাঁকা করিডোর দিয়ে এগিয়ে লিফটে ঢুকে এক নম্বর
বোতামে চাপ দেন দিবাকর শর্মা। কোলাপসিবল গেট আটকানোর আগে করিডোরে হঠাৎ ছায়া ছায়া অদ্ভুতদর্শন
দুটো লোককে দেখতে পেলেন। একজন বেশ ষণ্ডামার্কা গুন্ডা টাইপ, মোটা গোঁফ।
আরেকজনও কৃষ্ণবর্ণ, তবে চোখে কেমন একটা অদ্ভুত নিষ্ঠুরতা। গায়ের পোশাকগুলো আশ্চর্যরকম
জমকালো অথচ সেকেলে। ‘কে!’ বলে চিৎকার করে উঠতে চাইলেন, কিন্তু গলা দিয়ে অস্ফুটে
একটা আওয়াজ ছাড়া আর কিছু বেরোল না। লোকদুটো নিঃশব্দে মুচকি হাসল শুধু। আর নেপথ্যে
যেন দৈববাণীর মতো শোনা গেল দুটো জলদগম্ভীর স্বর ‘তোর যম’, আর ‘তোর শনির দশা’! হাড়
হিম হয়ে যেতে যেতে দিবাকর শর্মা দেখতে পেলেন লিফটের বোতামের আলো ‘১’ ছাড়িয়ে আরও
অনেক নিচে নামছে। এই বোতামগুলো কখনও দেখেননি তিনি আগে। ‘০’ ছাড়িয়ে আবার ১, ২,
৩,... ৯, ১০... নামতেই থাকছে! শুধু সংখ্যাগুলোর আগে একটা করে বিয়োগ চিহ্ন। মাইনাস
চিহ্নিত ফ্লোর!
* * *
লিফটের তার ছিঁড়ে একটা
বিচ্ছিরি দুর্ঘটনা ঘটেছে ‘স্বর্গদ্বার’ অ্যাপার্টমেন্টে। অনেক রাত হয়েছিল। লিফটটা
নিচে নামছিল দেখে সেটাই মনে হয়। কিন্তু
আশ্চর্য ব্যাপার, ভিতরে জীবিত বা মৃত কোনও মানুষই পাওয়া যায়নি!
_____
অলঙ্করণঃ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
ohhhhh daruuuuun lekha. fantastic!!!!
ReplyDeletethank u so much
Delete