ঝিকোর নতুন নেশা
ধূপছায়া মজুমদার
রবিবারের সকালে বাড়ির
বসার ঘরে ঝুম আর ঝিকো ড্রইং-স্যারের কাছে বসে আছে। স্যার ঝুমের খাতায় মন দিয়ে একটা
পেঁপে আঁকছেন। পেন্সিলে পেঁপের আউটলাইনটা ঝুমই করেছিল; কিন্তু সেটাকে আসল পেঁপের
মতো দেখতে হচ্ছিল না কিছুতেই। তাই স্যার একটু বিরক্ত হয়েই খাতাটা টেনে নিয়েছেন
পেঁপের ছবির গায়ে এখানে ওখানে পেন্সিল ঘষে সেটাকে সত্যিকারের মতো করে তুলবেন বলে। জলরঙে
হাত পেকে উঠলেও পেন্সিল স্কেচ ঝুম এখনও সেভাবে রপ্ত করে উঠতে পারেনি। কয়েক সপ্তাহ
ধরে স্যার তাই পেন্সিল স্কেচ নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন।
ঝিকো ঝুমের চেয়ে তিন
বছরের ছোটো। এখনও তুলিতে রং নিয়ে খাতায় আঁকা ছবিতে লাগাতে গেলে হাত কেঁপে রং ধেবড়ে
যায়। প্রতি রোববার স্যারের কাছে বকুনি খাওয়া বাঁধা। আজও ছাড় পায়নি। তবে আজ ঝিকোর
মনখারাপের আরও বড়ো কারণ আছে। হয়েছে কী, কাল বিকেলে সবাই মিলে যাওয়া হয়েছিল পুজোর
বাজার করতে। বাবা, মা, ঝুম, ঝিকো, দাদু-ঠাম্মা, দা-দিম্মা, মামা-মামিয়া, শালুপিসি, তার
ছেলে বলাই, সবার জন্য জামাকাপড় কেনা হয়েছে। কেনাকাটা সেরে
গাড়িতে করে বাড়ি ফেরার পথে ঝুম লক্ষ করল, ভাই নিমপাতা খাওয়া মুখ করে বসে রয়েছে।
তাকে ঠেলা মেরে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই সে ব্যাজার মুখে ‘ডিস্টার্ব করিস না তো’
বলে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বসে রইল। বাড়ি এসে যখন সবাই মিলে নতুন প্যাকেটগুলো
আরেকবার নেড়েচেড়ে দেখা হচ্ছিল তখনও ঝিকো চুপচাপ বসে ছিল। শেষে ফোঁস করে দুটো
নিঃশ্বাস ফেলে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। রাত্রে শোয়ার আগে অনেক সাধ্যসাধনা করে ঝুম জানতে
পেরেছিল, প্যান্টালুনসে নাকি একটা ফাটাফাটি দেখতে কার্গো
ঝিকোর মনে ধরেছিল। মাকে চুপিচুপি দেখিয়েওছিল সেটা। মা নাকি প্রাইস ট্যাগ দেখে সেটাকে
তাকে তুলে রেখে এসেছিল। শেষপর্যন্ত ঝিকোকে কিনে দেওয়া হয়েছে এমন একটা জিনস যেটার
জেরক্স কপি ওর তিনটে বন্ধুর কাছে রয়েছে।
“অন্য রং নিতে পারতিস ওটা
পাল্টে।” ঝুমের কথায় ঝিকোর দুঃখ উথলে ওঠে।
“মা নিতে দিল নাকি? একটা অফ হোয়াইট
দেখালাম, তাঁর পছন্দ হল না। সেই একঘেয়ে ডেনিম কালার নিতে হল। ধুৎ, ভাল্লাগে না।”
“অফ হোয়াইট প্যান্টগুলো
দু’দিনেই তো নর্দমায় পড়ে যাওয়া বেড়ালছানার মতো দেখতে হয়ে যায়। তখন তুইই আর ছুঁয়ে দেখিস না ওগুলো, তাহলে? মা বেশ করেছে ডেনিমটা নিয়েছে। পরার হলে পরবি, নইলে বলাইকে দিয়ে
দেওয়া হবে। ও
খুশি মনে পরবে।”
দিদির এমন নির্দয় সিদ্ধান্তে
ঝিকোর গা চিড়বিড় করে ওঠে। ওহ্, নিজের ভাইয়ের চেয়ে ওই বলাই এখন দিদির আপন হল বেশি! থাক,
পরবে না ঝিকো প্যান্টটা। দিয়ে দিক ওরা ওটা বলাইকে। মনে মনে
গজগজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
সকালে ড্রইং-স্যারের কাছে
বকুনি খেয়ে মনখারাপটা আবার ফিরে আসছিল। এদিকে রান্নাঘর থেকে মাটনের গন্ধ ভেসে আসছে। মনখারাপটা চেপে বসলে দুপুরের
খাওয়াটাও মাঠে মারা যাবে। তার ওপর আবার ঠিক করে ফেলেছে জিনসটা শালুপিসির ছেলেকে
দিয়ে দেবে। তার
মানে বাবাকে বলতে হবে আরেকটা প্যান্ট কেনার কথা। আবার বকুনি, উফ্! ছোটো ছেলে
হওয়ার কম জ্বালা!
এসব ভেবে মনটা ভারী হয়ে
ছিল ড্রইং-স্যার চলে যাওয়ার পরেও। চমকে উঠল পিঠে কার একটা থাবড়া
পড়তে। আরিব্বাস, ঝোলাদাদু কখন এল?
“কী হে, ঝিকো-মাস্টার?
মুড অফ নাকি? আরে ভায়া, এমন
মনমাতানো খোশবু উড়ছে সারা বাড়িজুড়ে, মুড টগবগিয়ে ছুটবে তো!
আর তুমি কিনা মুখে লোডশেডিং মেখে বসে আছ?”
“না দাদু, আমি ঠিক আছি। চলো ওঘরে যাই,” ঝিকো দাদুকে নিয়ে বসার
ঘরে আসে।
“এবার ক’দিন থাকবে
দাদু? আগেরবারের মতো হুট করে চলে যেও না প্লিজ। আমাদের পরশু অবধি টানা ছুটি। সারাদিন তোমার কাছে গল্প শুনব,” ঝুমের
কথায় ঝিকোও নেচে ওঠে।
ঝুম-ঝিকোর ঝোলাদাদু ওদের
মায়ের কাকা। ইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন। রিটায়ারমেন্টের পর নানা জায়গায়
ঘুরে বেড়ান, আর সেসব জায়গার গপ্প ছোটোদের নানা পত্রপত্রিকায় লিখে পাঠান। দাদুকে তাঁর
কাঁধের ঝোলা ছাড়া কখনোই দেখা যায় না বলে ওরা নাম দিয়েছে ঝোলাদাদু।
দুপুরে খাওয়ার পরে টেবিলে
এঁটো হাতে বসে আধঘণ্টা ধরে আড্ডা চলল। দাদু এবার গিয়েছিলেন পাঁচমারি। সেখানকার
পঞ্চপাণ্ডব গুহার অন্ধকার,
প্রতাপ ফলসের রাস্তায় প্রজাপতির ওড়াউড়ি, বী
ফলসের জলরাশি থেকে ছিটকে আসা জলের কণা, যা মৌমাছির মতো তিরবেগে
চোখেমুখে এসে বেঁধে বলে তার নাকি অমন নাম, একটার পর একটা সিঁড়ি ভেঙে অনেকটা নিচে
নেমে অন্ধকারে স্যাঁতসেঁতে গুহায় জলের মধ্যে ডুবে থাকা জটাশঙ্কর শিবলিঙ্গ, সেই সিঁড়িভাঙা রাস্তার দু’ধারে প্রকৃতি খোদাই করে রেখেছে আশ্চর্য সব
মূর্তি - এসব গল্প দাদু বলছিলেন আর এরা হাঁ করে শুনছিল। শেষে
শালুপিসি বাসন তুলতে এসে খ্যানখেনে গলায় হাঁক দিল, তবে সবার
হুঁশ ফিরল। ততক্ষণে বেলা তিনটে বেজে গেছে।
সন্ধ্যাবেলায় ঝুম, ঝিকো আর ঝোলাদাদু
ব্যালকনিতে বসে রয়েছে। একটু আগে বাবা-মাও ছিলেন। এখন বাবা গেলেন দোকানে, আর মা উঠলেন রুটি করতে। ঝোলাদাদু ঝুমের দিকে আড়চোখে চেয়ে নিয়ে শুরু করলেন,
“জানিস ঝিকো, এই পুজো আসার আগের সময়টায়
ছেলেবেলার কথা খুব মনে পড়ে। গাঁয়ের পুজো, ঠাকুরদালানে দুগ্গা
মায়ের প্রতিমা গড়া হত। আমরা পারলে অষ্টপ্রহর ওখানে পড়ে থাকতাম, বুঝলি? বাপ-জ্যাঠারা হাঁকার পাড়লে তবে গিয়ে বাড়ি
ঢুকতাম।”
“ও, তোমরাও যথেষ্ট আড্ডাবাজ ছিলে তার মানে? আমাদের শুধু শুধু
দোষ দাও,” ঝিকো ফুট কাটতে ছাড়ে না।
“আহা, ছেলেছোকরারা চিরকালই আড্ডাবাজ ছিল। তা বলে বড়োরা শাসন করবে না?
এবার শোন, একবারের গপ্প
শোনাই। আমাদের গাঁয়ে দুই ভাই ছিল মধু আর বিধু। তাদের বাবা রাধুকাকার একফালি চাষের
জমি ছিল। সেই
ফসল থেকেই ওদের সম্বচ্ছরের খরচ চলত। অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। কোনওমতে দিন গুজরান হত। সেবার ফসল
একেবারেই ভালো হয়নি। ষষ্ঠীর সকালে দুই ছেলের জন্য দু’খানি ছিটের জামা আর দুটো
হাফ প্যান্ট কিনে বাড়িতে দিয়ে গেলেন রাধুকাকা। দু’ভাই তো উদগ্রীব হয়ে ঘর-বার করছিল, বাবা না জানি কত
কী কিনে আনবেন। বাবা বাড়ি ঢুকে মায়ের হাতে মোড়কটা তুলে দিতেই তারা দু’জনে মাকে
ঘিরে ধরল, ‘ও মা, বাবা কী আনল দেখাও না
একটিবার!’
“দু’জনের বায়নায় শেষটায় অতিষ্ঠ
হয়ে মা মোড়ক খুলে জামাকাপড় দেখিয়ে দিলেন। বিধু তো খুব খুশি। বারবার নতুন জামার গন্ধ শোঁকে, আর মাকে শুধোয়,
‘মা, এগুলো আজকেই পরব না কেন? সেই কাল সকালে চান করে তবে পরতে পাব? ও মা, আজ একটু পরে দেখি কেমন দেখাচ্ছে?’
“মা চোখ পাকিয়ে
বলেন, ‘একদম নয়। কাল চান করে তবে এগুলো গায়ে দেবে। এখন তুলে
রাখি।’
“জামাগুলো তোরঙ্গে
তুলে পেছন ফিরে মায়ের চোখ পড়ল মধুর দিকে। সে-মুখে তখন লোডশেডিং।”
“আজ সকালে ঝিকোর
মুখের মতো?” ঝুম জায়গা বুঝে ফোড়ন কাটে।
“না, তার চেয়েও ঘন আঁধার। ওদের মা তো ঘাবড়ে গেলেন। ভাবলেন ছেলের বুঝি পেট কনকন
কিংবা কান কটকট করছে। তিনি মধুর গায়ে হাত বুলিয়ে শুধোলেন, ‘কী
হল, বাছা? শরীর আনচান করছে? মিছরির
পানা করে দেব?’
“মধু মায়ের হাতটা
সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘কিচ্ছু চাই না আমার। ছেড়ে দাও আমায়।’
‘ও মা, কেন রে?’
‘একটা মাত্তর জামা,
তাও মোটা ছিটের। গায়ে দিলে ঘষে চামড়া উঠে যাবে। ছিঃ! বাবা আর জামা
পেল না? ওদিকে রায়বাবুদের গুপিকে দেখে এস, কেমন সুন্দর ফুলকাটা সাটিনের জামা, মাথায় কাজ করা
জরির টুপি। দেখলেও চোখ জুড়োয়। ওর পাশে আমরা, ইসস্!’ রাগ উগরে
দিয়ে হাঁপাতে থাকে মধু।
“বিধু মধুকে ধমকে
থামাতে গিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে যায়। দ্যাখে, মায়ের চোখে জল টলটল করছে।
গলাটা ঝেড়ে নিয়ে মা বলতে থাকেন, ‘বাছা, এবারে ফসল মোটে ওঠেনি। ঐ ক’টা টাকা পেয়েছেন তোমাদের
বাবা। নিজে না খেয়ে তোমাদের জন্য জামা কিনে এনেছেন মানুষটা। এর বেশি আনার ক্ষমতা কোথায়? রায়েদের ছেলের
সঙ্গে যে তোদের আকাশপাতাল তফাত!’
“বিধু মাকে জড়িয়ে
ধরে বলে ওঠে, ‘মা গো, আমার ভারি পছন্দ
হয়েছে জামাখানা। কাল সকাল সকাল চান করেই পরে নেব, কেমন?’
“এবার আর মায়ের চোখের জল
বাঁধ মানে না। টুপটুপ
ঝরে পড়ে। সেই দেখে আরও চটে মধু ছিটকে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। সারাদিন তার দেখা মেলে
না। মা বিধুকে খাইয়ে ভাতের হাঁড়িতে জল ঢেলে নিজে উপোস করে থাকেন।
“বিকেলে বিধু ভাইকে
খুঁজতে বেরোয়। রায়বাবুদের বাড়ির সামনে এসে দ্যাখে মধু কার একখানা সাটিনের জামা পরে
বাদলকাকা আর নৃপেনজ্যাঠার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে। ওর পাশে ঘুর ঘুর করছে নন্তু, কানাই আর হেবো।
মধুর খড়ি ওঠা গা আর রুখু-সুখু চুলের সাথে সাটিনের জামাখানা যা মানিয়েছে না!
এক্কেবারে কাকতাড়ুয়া।
“কাছে গিয়ে শোনে
মধু ব্যাখ্যা করে সবাইকে গপ্প শোনাচ্ছে। সে নাকি দুপুরবেলায় রায়েদের বাড়ির বাইরে
গাছতলায় শুকনো মুখে বসেছিল। বড়োরায়বাবু ভাত খেতে বাড়ি ঢুকছিলেন। ওকে দেখতে পেয়ে
কাছে ডাকেন। তাঁকে মধু বলে, এবারে পুজোয় ওদের দু’ভাইয়ের
একখানাও ভালো জামা হয়নি। তিনি নাকি সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে ডেকে বলেন তার একটা নতুন
জামা মধুকে দিয়ে দিতে। ভরদুপুরে এসেছে ছেলেটা, ভাত না খাইয়ে
নাকি ছাড়েননি। ভাতঘুম দিয়ে উঠে সাটিনের জামা গায়ে গলিয়ে মধু এখন বাড়ি চলল মাকে
দেখাতে।
“মধুর গপ্প শুনে
বাদলকাকারা হাসতে হাসতে যে যার কাজে গেলেন। বিধুর কানে উড়ে এল তাঁদের কথার টুকরো,
‘রাধুর ছেলের এ কেমন শিক্ষে? শেষে পরের দোরে
মেগে কাপড় পরছে? ওই বাপের এই ছেলে! ছ্যাঃ!’
“কান্না চেপে বিধু
মধুর পিছুপিছু বাড়ির দিকে পা চালায়।”
ঝিকো আর ঝুম মন্ত্রমুগ্ধের
মতো গল্প শুনছিল। দাদু দম নেওয়ার জন্য একটু থামতেই ঝিকো বলে উঠল, “কী বদমাশ ছেলে
রে বাবা! বাবা অত কষ্ট করে জামা কিনে এনেছে, খুশি মনে পরবে তা
নয়, অসভ্যের মতো চাইতে গেছে লোকের কাছে!”
“ঝিকো-মাস্টার,
রাগ হচ্ছে বুঝি?”
“প্রচণ্ড রাগ
হচ্ছে। ওর বাবা সব শুনে ওকে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছিল? আমি ওর
বাবা হলে তাড়িয়েই দিতাম। ঐটুকু ছেলে, এত বদ বুদ্ধি আসে কী করে
মাথায়?” বলতে বলতেই ঝিকো চুপ করে যায়। ওর মনে পড়ে গেছে
আগেরদিন পুজোর বাজার করতে গিয়ে মায়ের সঙ্গে মন কষাকষি, রাত্রে
ও ঠিক করেছে প্যান্টটা পরবে না, বলাইকে দিয়ে দেবে, সেসব কথা। নাহ্, কাজটা ঠিক হবে না। মা-বাবা একটা জিনিস পছন্দ করে
কিনেছে, না পরলে ওরা মনে কষ্ট পাবে।
“কী ভাবছেন, স্যার?”
দিদির ডাকে ঘোর কাটে। এই মেয়েটা বোধহয় ওর মনের কথা পড়তে পারে। আর
এমন মিষ্টি করে ভুলিয়ে ভুলিয়ে পেটের কথা টেনে বের করে আনে ঝিকো বুঝতেই পারে না।
বলাইকে প্যান্ট দিয়ে দেওয়ার কথাটা ভাগ্যিস কাল দিদিকে বলে ফেলেনি! তাহলে এখন মত পাল্টানোর
কথা শুনে মজা করতে ছাড়ত নাকি?
পরেরদিন সকালে পড়ার
টেবিলে একটা বই দেখতে পেল ঝিকো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। নাম ‘শিশু’। বই পড়া কাজটাই ঝিকোর কাছে
একঘেয়ে। তাও আবার বাংলা। দেখলেই পালাতে ইচ্ছে করে। নিশ্চয়ই দিদি পড়ছিল। ওই
তো, বইয়ের
ভেতরে একটা পেন গুঁজে রেখেছে। ঝিকোর নতুন পার্কারটা নিয়ে নেয়নি তো আবার! দিদিকে
বিশ্বাস নেই। কোন পেনটা বইয়ের মধ্যে রাখা আছে সেটা দেখবে বলেই বইটা খুলল ঝিকো।
ওরে বাবা, কবিতা! সে কবিতার
নাম ‘পূজার সাজ’! দিদি আবার কবে থেকে
সাজগোজের ভক্ত হল? আলগোছে চোখ বোলাতে গিয়ে ঝিকো বেজায় অবাক
হল। আরিব্বাস! এখানেও দেখি মধু-বিধুর গপ্প। দাড়িদাদুরও বন্ধু ছিল নাকি এরা?
ভাবতে ভাবতে পুরো কবিতাটাই পড়া হয়ে যায়। কী আশ্চর্য! ঝোলাদাদুর
গল্পের সঙ্গে খাপে খাপে মিলে গেছে যে এই গল্পটা। সেই মধু-বিধু, গুপি, সেই সাটিনের জামা। এমনও হয়! উত্তেজিত হয়ে চেয়ার টেনে
বসে পড়ে ঝিকো। পাতা উল্টে আরেকটা কবিতা পড়তে শুরু করে। সেটাকেও খুব চেনা মনে হয়।
ছোটোবেলায় ঝিকো মাঝে মাঝে
বাবা সাজত। মায়ের আলমারি মিছিমিছি খুলে মিছিমিছি টাকা বের করে শালুপিসিকে বাজার
আনতে দিত। হুবহু সেই খেলাটার কথা লেখা আছে একটা কবিতায়। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল
লোকটা বুঝি আড়াল থেকে তাদের খেলতে দেখত রোজ।
টেবিলের ওপর ঝুঁকে ঝিকো
যখন কবিতায় বুঁদ হয়ে রয়েছে,
তখনই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে তাকে দেখছিল আরও দুটো মাথা।
পাকাচুলো মাথাটি ভারি তৃপ্তির হাসি হেসে পাশে দাঁড়ানো ঝুঁটিবাঁধা মাথাটিকে নেড়ে
দিয়ে বললেন, “কী নেশা ধরালি দিদিমণি, ঝিকোমাস্টার
এবার নাওয়া-খাওয়া ভুলে রবিঠাকুরে মজবে যে!”
ঝুম দাদুকে জড়িয়ে ধরে বলে
ওঠে, “থ্যাঙ্ক ইউ, ঝোলাদাদু! আমায় নেশা ধরিয়েছিলে তুমি, আর
আমি টেনে আনলুম ভাইকে। এ নেশায় ও যত ডুববে, ততই উঠবে যে গো!”
_____
অলঙ্করণঃ সুজাতা চ্যাটার্জী
অলঙ্করণ অনবদ্য। শিল্পীকে কুর্ণিশ,এবং ধন্যবাদ,তুলির টানে গল্পটাকে এমন সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলার জন্য।
ReplyDeleteলেখিকাকে অনেক অভিনন্দন, এতো সুন্দর একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য। শিশুমনকে সুন্দর তুলে ধরা হয়েছে। অলংকরণ খুব সুন্দর।
ReplyDeleteধন্যবাদ।
Delete