প্রেস্টিজ
দৃপ্ত বর্মন রায়
বাংলা নববর্ষের পড়ন্ত
বিকেলে মিলেনিয়াম পার্কে জড়ো হওয়া হাজার হাজার দর্শকের তুমুল চিৎকার, চিয়ার, উল্লাসের মধ্যে ট্রাক মাউন্টেড ক্রেনটা ধীরে ধীরে অ্যাঙ্করে যুক্ত থাকা
ম্যানিলা রোপে বাঁধা কাঠের কফিনটাকে গঙ্গার জলে নামিয়ে দিল। দু’পাশে বাঁধা একশো
একশো মোট দু’শো কেজি ওজনের লোহার ওয়েটের টানে কফিনটা কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই জলের
অতলে তলিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই পোডিয়ামের ওপরে রাখা মস্ত বড়ো ডিজিটাল টাইমারটা
ত্রিশ মিনিট থেকে এক এক সেকেন্ড করে কাউন্টডাউন শুরু করে দিল। একটা ক্যামেরা লং
রেঞ্জ থেকে কন্টিনিউয়াস শট নিচ্ছে, যেটা পরে বিভিন্ন মিডিয়ায়
সম্প্রচারিত হবে। বাকি আরও তিনটে ক্যামেরা রয়েছে, যেগুলো
পর্যায়ক্রমে পোডিয়ামে বসা জনাত্রিশেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বা একটু দূরে ব্যারিকেডের
বাইরে ভিড় করে থাকা দর্শকদের রি-অ্যাকশন ইত্যাদি ক্যাপচার করছে। সামনে রাখা
জায়েন্ট স্ক্রিনটাতে এই ক্যামেরাগুলোর লাইভ ফিড দেখা যাচ্ছে। মঞ্চে উপস্থিত
অ্যাঙ্কর পুরো ঘটনাপ্রবাহের বিবরণী দিয়ে চলেছে মাইকে।
টাইমারটা টিক টিক করতে
করতে মিনিট পঁচিশে এসে দাঁড়িয়েছে। তবুও পার্কে উপস্থিত জনতার উত্তেজনা কমার
বিন্দুমাত্র লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সবাই উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে কী
হয় তা দেখার জন্যে। প্রায় সাতবছরের দীর্ঘ স্বেচ্ছাবসরের পর আশি ও নব্বই দশকের
শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ম্যাজিশিয়ান অমরেশ সাহা ওরফে ‘দ্য গ্রেট ওমর’ কি
তাঁর হৃত সম্মান উদ্ধার করতে সফল হবেন এই প্রশ্ন আজ মহানগরের প্রত্যেকটি
বাসিন্দাকে কৌতূহলী করে তুলেছে। বিগত প্রায় তিনমাস ধরে শহরের বিভিন্ন স্থানে
স্ট্র্যাটেজিক্যালি প্লেস করা বিজ্ঞাপনগুলো যে বিফলে যায়নি আজ মিলেনিয়াম পার্কে
জমায়েত হওয়া কাতারে কাতারে দর্শকই তার প্রমাণ।
সত্যি বলতে কী, আমারও যে
টেনশন একদম হচ্ছিল না সেটা বলাটা ঠিক হবে না। কিন্তু যাকে ঘিরে আজকের এই বিপুল
কর্মযজ্ঞ, সেই অমরেশদার হাবেভাবে এতক্ষণ মনে হচ্ছিল যেন এটা কিছুই নয়, রোজ সকালে উঠে পেপার পড়তে পড়তে ব্রেকফাস্ট করার মতোই খুব সাধারণ একটা
ব্যাপার। দীর্ঘদিন ধরে অমরেশদার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হওয়ায় বলতে পারি আজকে
দাঁড়িয়ে বছর তেষট্টির এই মানুষটিকে আমার থেকে ভালো আর কেউই চেনে না। আরেকজন যে
চিনত, মানে অমরেশদার বেটার হাফ মালবিকাদি এগারো বছর আগে এই
সংসারের মায়া কাটিয়ে বিদায় নিয়েছে। মালবিকাদি ছিল অমরেশদার সহযোগী বা ষ্টেজ
হ্যান্ড। ‘দ্য গ্রেট ওমর’-এর জন্মলগ্ন
থেকে তারা দু’জনে এক সঙ্গে কাজ করত। কিছুদিন পরে তাদের অন-স্টেজ
কেমিস্ট্রিটার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাস্তব জীবনেও তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ
হয়েছিল। ততদিনে অমরেশদার নামডাক দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে সাতসমুদ্র তের নদীর
পারেও। ভারতবর্ষের সেরা ম্যাজিশিয়নের তকমা পাওয়া তো হয়েই গেছে। তার তুলনা শুরু হয়ে গেছে হুডিনি, ব্ল্যাকস্টোনদের
সঙ্গেও। ভারতবর্ষের মতো গরিব দেশে থেকেও যে অনেক কম খরচে এত উন্নতমানের ম্যাজিক
দেখানো যায় সেই ধারণাটা বিশ্ববাসীর মনে প্রথম প্রবর্তন করে অমরেশদাই। এরকম সময় আমি
যোগ দিই তার দলে ইল্যুশন ডিজাইনার হিসেবে। ম্যাজিক তো আসলে বিজ্ঞান ছাড়া কিছুই নয়।
প্রত্যেকটা ম্যাজিক ট্রিকের পিছনে রয়েছে কারিগরিবিদ্যা আর সায়েন্টিফিক টেকনোলজি।
আমার কাজ ছিল অমরেশদার প্রতিটি ইল্যুশন বা ম্যাজিক ডিজাইন করা। কী কী ম্যাজিক
দেখানো হবে, ঠিক কীভাবে ম্যাজিকগুলো দেখানো হবে, কী কী প্রপস ব্যবহার করা হবে, কোন
পজিশন থেকে ঠিক কতটা পরিমাণ আলো ফেলতে হবে, অমরেশদার সঙ্গে আলোচনা করে এইসব ঠিক
করা আর শোয়ের সময় মঞ্চের পিছনে থেকে এসব তদারকি করাই ছিল আমার কাজ। শোয়ের শেষে
অমরেশদা অকৃপণভাবে সমস্ত কৃতিত্ব আমার আর মালবিকাদির সঙ্গে শেয়ার করে নিত। এখনও
মাঝে মাঝে একলা বসে মনে মনে ভাবি কী সুন্দরই না ছিল সেসময়ের দিনগুলো।
কিন্তু সব সুখেরই একটা
শেষ থাকে। দু’হাজার তিন সালে ‘দ্য গ্রেট ওমর’ যখন সাফল্যের
সর্বোচ্চ চূড়ায়, সবেমাত্র থার্ড ওয়ার্ল্ড ট্যুরটা শেষ করে
ভারতে ফিরে এসেছে, হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মালবিকাদির
ক্যান্সার ধরা পড়ল। একদম ফাইনাল স্টেজে। অমরেশদা চেষ্টার কোনও ত্রুটি না রাখলেও
মাত্র দেড় বছরের মধ্যে আমাদের সবাইকে ছেড়ে মালবিকাদি চলে গেল অজানার দেশে। ভীষণ
ভেঙে পড়েছিল অমরেশদা। সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। স্টেজ শো বন্ধ করে
দিয়েছিল। বার বার বলা সত্ত্বেও মঞ্চে ফিরতে চাইত না। মঞ্চে ফেরা তো দূরের কথা, খুব
প্রয়োজন না পড়লে বাড়ি থেকেই আর বেরোত না। সারাদিন খালি শুয়ে-বসে থাকত আর মাঝে
মাঝেই অ্যালবাম খুলে অথবা ভিসিপি বা কম্পিউটারে পুরনো শোগুলোর ছবি বা রেকর্ডিং
দেখে দেখে দিন কাটিয়ে দিত। আস্তে আস্তে পুরো দলটা ভেঙে গেল। আমিও বেরিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু কী যেন এক মায়ায়
আটকে গেলাম।
তারপর অনেক অনেক বোঝানোর
পর প্রায় দুই বছর পরে আবার নামতে রাজি হল স্টেজে। নতুন করে দল সাজালাম আমরা। অনেক
জাঁকজমক করে আবার প্রত্যাবর্তন হল ‘দ্য গ্রেট ওমর’-এর।
কিন্তু আগের মতো চলল না শো। কোথাও যেন একটা তাল কেটে গিয়েছিল। স্পনসর পাওয়া
যাচ্ছিল না ঠিকভাবে। শো করার ইনভাইটেশনও কমে আসছিল। এভাবে দু’বছর কোনওভাবে চালানোর
পর দু’হাজার আট সাল থেকে শো করা একদম ছেড়েই দিল অমরেশদা।
অবশ্য প্রত্যাবর্তনের পর
আগের সাফল্য না পাবার পিছনে আরেকটা কারণও ছিল। অমরেশদার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে এই
সময়ে রুদ্র বলে নতুন এক ম্যাজিশিয়নের আবির্ভাব হয়েছিল কোলকাতায়। সে আগে ছিল
আমাদেরই দলের একজন জুনিয়র আর্টিস্ট। টানা লম্বা শোতে অমরেশদা মাঝে মাঝে বিরতি নিত।
সেই সময়টাতে স্টপ গ্যাপ হিসেবে টুকটাক ম্যাজিক দেখাত রুদ্র। কয়েকজন পয়সাওয়ালা স্পনসরদের
পৃষ্ঠপোষকতায় আর নিত্যনতুন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে সে বেশ সহজেই অল্প দিনের
মধ্যেই নাম করে ফেলল। স্টেজ শো করা ছাড়াও টিভিতে একটা স্ট্রিট ম্যাজিকের অনুষ্ঠানও
শুরু করে দিল। সেখানে ক্যামেরার কারসাজিতে পেইড অ্যাক্টরদের ম্যাজিক দেখিয়ে অবাক
করে সহজেই শহরে-গ্রামে-গঞ্জে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠল। কিন্তু শুধু এটুকুতে
ক্ষান্ত হলে ঠিক ছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই ছেলেটা বিভিন্ন ইন্টারভিউতে আগের দিনের
ক্লাসিক্যাল ম্যাজিকের অপ্রাসঙ্গিকতা বোঝাতে বড়ো বড়ো কমেন্ট করতে শুরু করল যার
অনেকগুলোই নাম না করে অমরেশদার উদ্দেশে কটাক্ষ করা। কী আর করা যাবে। গায়ে জ্বালা করলেও মুখ বুজে সহ্য
করে নিতে হত।
এরকম সময়ে মাস ছয় আগে
একদিন হঠাৎ করে অমরেশদা ডাকল ওর বাড়িতে। ভাবলাম, আড্ডা দেবার জন্যে ডাকা। কিন্তু
আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল যে ও আবার শো-বিজে ফিরে আসতে চায়। প্রচণ্ড খুশি হয়ে বললাম
যে এটা তো খুব ভালো কথা। তাহলে তো আবার নতুন করে দল গড়তে হয়। রিহার্সালও শুরু করতে
হবে। স্পনসর যোগাড় করতে হবে। অনেক কাজ। কিন্তু ও বলল যে এবার নাকি আর স্টেজে নয়, ওপেন এয়ারে
পারফর্ম করবে। আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না। তাই জানতে চাইলাম, ঠিক কী করতে চাইছে
ও। তাতে আমাকে স্তম্ভিত করে দিয়ে অমরেশদা বলল যে ও এবার হুডিনির ‘ওভারবোর্ড বক্স এস্কেপ’টা করতে চাইছে। প্রথমে
কিছুক্ষণ কিছু বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না আমার কথাটা শুনে। তারপর অনেক বোঝানোর
চেষ্টা করলাম যে ব্যাপারটা বলতে বা শুনতে যতটা সহজ লাগছে, বাস্তবে
কিন্তু ততটা নয়। যে কাজ হুডিনির মত বিশ্ববরেণ্য ম্যাজিশিয়ন আটত্রিশ বছর বয়সে তাঁর
ক্যারিয়ারের শিখরে থাকাকালীন করে গেছেন, সেই কাজ তেষট্টি বছর বয়সে করে দেখানো
প্রায় বলতে গেলে অসম্ভবকে সম্ভব করার একটা দুঃসাহস ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া
অমরেশদা বরাবরের স্টেজ পারফর্মার। এতগুলো বছর কোনওরকম টাচে না থেকে কামব্যাক করে
প্রথমেই ওপেন এয়ারে এরকম একটা ট্রিক দেখানো মুখের কথা নয়। যারা ম্যাজিক নিয়ে চর্চা
বা পড়াশোনা করেন তাদের সবাই একবাক্যে মানতে বাধ্য হন যে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানো
অবস্থায় একটা জলের তলায় ডোবানো কাঠের প্যাকিং বাক্স থেকে বেরিয়ে আসা কোনও ছেলেখেলা
নয়। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও অমরেশদার জিদের কাছে হার মানতে হল আমাকে। একবার গোঁ
ধরে বসলে সেখান থেকে অমরেশদাকে নড়ানো শিবেরও অসাধ্য। তাই বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হল।
শুরু হল আমাদের
প্রস্তুতিপর্ব। খুঁজেপেতে কয়েকজন পুরনো স্পনসরকে রাজি করানো হল। আমাদের আগেকার
দলের বেশিরভাগ লোকই ততদিনে রুদ্রের দলে গিয়ে ভিড়েছে। আমার মতো যারা যারা খালি বসে
ছিল তাদেরকে ডেকে আর নতুন কয়েকজনকে নিয়ে আবার দল গড়া হল। একদিক থেকে সুবিধে হল। যেহেতু ওপেন এয়ারে একটাই
পারফর্মেন্স, তাই দল অত ভারী না হলেও চলবে। একবার সাকসেসফুলি ইভেন্টটা নামিয়ে দিতে পারলে
আবার নতুন স্পনসর জোটানো বা বড়ো করে দল গঠনের কাজটা সহজ হয়ে যাবে। ভেবে দেখলাম,
আইডিয়াটা অমরেশদা খারাপ বের করেনি। এতদিন পরে ‘দ্য গ্রেট ওমর’-এর লাইমলাইটে ফিরে আসার জন্যে এরকম একটা বড়ো মঞ্চেরই দরকার ছিল। তবে বুকটা
মাঝে মাঝেই দুরু দুরু করত। মনে হত ঠিকঠাকভাবে উৎরোতে পারব তো আমরা? এধরনের ম্যাজিক ট্রিকের সবচেয়ে বড়ো সমস্যাটা হল, যে কোনও একটা ছোট্ট ভুলও
ডেকে আনতে পারে চরম পরিণতি। কিন্তু অমরেশদাকে দেখে মনে হত যেন কিছুই নয় ব্যাপারটা।
ওর কনফিডেন্স দেখেই নিজেকে মনে মনে সাহস জোটাতাম।
হুডিনির অ্যাক্টটাতে একটু
রদবদল করা হল। তিনি কাঠের প্যাকিং বক্স ব্যবহার করেছিলেন। আমরা ব্যাপারটাকে আরেকটু
নাটকীয় করার জন্যে ঠিক করলাম, প্যাকিং বক্সের বদলে কফিন ব্যবহার করা হবে। হুডিনির
মতোই অমরেশদার হাতেও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে কফিনটাতে। তারপরে কফিনটা
তালা মেরে সীল করে দেওয়া হবে। হুডিনি সহ প্যাকিং বাক্সটা ডোবানো হয়েছিল নিউ
ইয়র্কের ইস্ট নদীতে। আমাদের ক্ষেত্রে অমরেশদাকে নিয়ে কফিনটা একটা ক্রেনের সাহায্যে
ডোবানো হবে গঙ্গায়। শ্বাসপ্রশ্বাস নেবার জন্যে আর সহজে জলের তলায় ডোবানোর জন্যে
কফিনে কয়েকটা ছোটো ছোটো ছিদ্র থাকবে। সেই ছিদ্র দিয়ে অমরেশদার সঙ্গে শেষমুহূর্ত
পর্যন্ত কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া হবে। জলে ডোবানোর আগে কফিনটা একটা লোহার শিকল দিয়ে
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দেওয়া হবে। সেই শিকলে লাগানো থাকবে তিন-তিনটে তালা। কোনও
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটা পর্যবেক্ষণ করানো হবে। তিনি অমরেশদার
হ্যান্ডকাফ, কফিন, কফিনে লাগানো লোহার শিকল আর তাতে লাগানো
তালাগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখবেন যাতে কোনও ফাঁকি না থাকে। তবে তাঁর এবং
উপস্থিত সকলের নজর এড়িয়ে অমরেশদার কাছে হ্যান্ডকাফের চাবিটা কৌশলে পৌঁছে দেব আমি।
সাধারণ দৃষ্টিতে কফিনটা স্বাভাবিক মনে হলেও আসলে সেটাতে থাকবে একটা লুকোনো ট্র্যাপ-ডোর। কফিনটা ক্রেনের
অ্যাঙ্করের সঙ্গে আটকানোর আগে মঞ্চের ওপর একটা সুনির্দিষ্ট জায়গায় রাখা থাকবে
যেখানে ঠিক কফিনটার নিচে স্টেজের গায়েও থাকবে একটা ট্র্যাপ-ডোর। এবার কফিনটা যখন
ক্রেনের অ্যাঙ্করের সঙ্গে আটকানোর কাজ চলবে তখনই শেষমুহূর্তে কফিনের ট্র্যাপ-ডোরটা
খুলে অমরেশদা কফিনটা থেকে বেরিয়ে এসে স্টেজের ট্র্যাপ-ডোর দিয়ে সবার চোখের আড়ালে
নেমে যাবে মঞ্চের নিচে। এবার অমরেশদাকে ছাড়াই খালি কফিনটা ক্রেনে করে নিয়ে গঙ্গায়
ডোবানো হবে। রুদ্ধশ্বাসে আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আবার ক্রেনে করে কফিনটা জল থেকে
তুলে আনা হবে। এবার কফিনটা যখন সবার সামনে খোলা হবে তখন দেখা যাবে তাতে অমরেশদা
নেই। এরপরই আসবে সেই চরম মুহূর্ত, যাকে ম্যাজিকের পরিভাষায় বলা হয় ‘দ্য প্রেস্টিজ’। উপস্থিত সমস্ত দর্শক যখন কফিনে
অমরেশদাকে দেখতে না পেয়ে অবাক বিস্ময়ে বাক্যহারা, তখনই আতশবাজি আর প্রচণ্ড আওয়াজের
মধ্যে দিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট লুকোনো জায়গা থেকে আত্মপ্রকাশ করবেন ‘দ্য গ্রেট ওমর’। এই পুরো অ্যাক্টটার নাম বদলে রাখা
হল ‘সাবমার্জড
কফিন চ্যালেঞ্জ’।
কামব্যাকের জন্যে পয়লা
বৈশাখের দিনটা ধার্য করা হল। ফার্স্ট জানুয়ারি থেকে শুরু হল বিভিন্ন মিডিয়ায়
বিজ্ঞাপন দেওয়া। আস্তে আস্তে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ল ইভেন্টটার কথা। প্র্যাকটিসও চলছিল
পুরোদমে। কিন্তু হঠাৎ জানুয়ারির লাস্ট উইকে অমরেশদার একটা মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক
হল। এতদিনের অনিয়মিত বেহিসাবি জীবনযাপন, তার ওপর প্রত্যাবর্তনের এই বিশাল চাপ,
এতটা অত্যাচার শরীর সইবে কী করে? নাম মহাশয়
হলেও তারও তো একটা সহ্য ক্ষমতা রয়েছে। আমরা সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম।
এতদিনের এই প্রস্তুতি, এত অ্যাড, এত
প্রমোশন সব বিফলে যেতে বসল বলে। ডাক্তারেরা পরিষ্কার বারণ করলেন কোনও রিস্ক না
নিতে। আমরাও বার বার করে বোঝালাম। কিন্তু শ্রীযুক্ত অমরেশ সাহাকে টলানো গেল না।
বলল, “দ্য শো মাস্ট গো অন।”
মাস খানেকের মধ্যেই আবার
সুস্থ হয়ে দ্বিগুণ উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ল রিহার্সালে, যেন কিছুই হয়নি। বুঝলাম, হারানো
সম্মান ফিরে পেতে কতটা মরিয়া হয়ে আছে ও।
“দেবুদা!”
হঠাৎ পাশ থেকে একটা ডাক
শুনে অতীত থেকে চমকে ফিরে এলাম বর্তমানে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট
প্রতীক ডাকছে। কেন ডাকছে জানতে চাইলে ও ইশারায় ঘড়িটার দিকে দেখাল। অবাক হয়ে দেখলাম
কী করে জানি এত তাড়াতাড়ি সময় কেটে গেছে। আধঘণ্টা শেষ হতে আর মাত্র দুই মিনিট বাকি। তাড়াতাড়ি মানসিকভাবে রেডি
হলাম বাকি কাজগুলো সুসম্পন্ন করতে। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিলাম উপস্থিত দর্শকদের।
তাদের উত্তেজনা এতক্ষণে চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে। স্টেজে বসা আমন্ত্রিত বিশিষ্ট
অতিথিদের অবস্থাও একইরকম। উপস্থিত হাইকোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি, যিনি পুরো
ব্যাপারটার পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি পাশে বসা তাঁর স্ত্রীর কানে কানে
কিছু একটা বলছেন। তাঁর স্ত্রীও যেন উৎকণ্ঠা চেপে রাখতে পারছেন না। দশ সেকেন্ড বাকি
থাকতে মঞ্চে দাঁড়ানো অ্যাঙ্করের সঙ্গে সমস্ত দর্শকরা এক সঙ্গে কাউন্টডাউনে যোগ
দিল। স্টপ ওয়াচটা জিরো শো করতে না করতেই দর্শকদের চিৎকারে কান পাতা দায় হল। আমার
ইশারায় আস্তে আস্তে ক্রেনের ড্রাইভার লিভারের টানে জলে ডোবা অবস্থা থেকে কফিনটা
তুলে নিয়ে এসে মঞ্চে স্থাপন করল। পুরো ম্যাজিকের সিক্রেটটা জানা সত্ত্বেও আমার
হাত-পা কাঁপছিল অ্যাড্রিনালিন রাশে। কোথাও কোনও কিছু ভুলচুক হয়ে যায়নি তো? তালাগুলো খোলার জন্যে দুরু দুরু বুকে এগিয়ে গেলাম তখনও জল ঝরতে থাকা
কফিনটার দিকে।
হঠাৎ স্টেজের একপাশে একটা
পর্দা-ঢাকা উঁচুমতো অংশ থেকে প্রচণ্ড জোরে একটা আওয়াজ শুনে চমকে তাকালাম। ওখান
থেকেই তো কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে আসার কথা অমরেশদার। অবাক হয়ে দেখলাম, আওয়াজের সঙ্গে
সঙ্গে তীব্র আলোর ঝলকানির সঙ্গে এক সঙ্গে দু-তিনটে আতশবাজির বিস্ফোরণ হল। পর্দাটা
এক ঝটকায় ছিটকে সরে গেল একধারে। মিলেনিয়াম পার্কে উপস্থিত প্রত্যেকটা দর্শকের
সঙ্গে আমিও অবাক হয়ে দেখলাম, চোখ ধাঁধানো আলোর মাঝখানে ঝলমলে জাদুকরের পোষাকে মুখ
তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে স্প্রেড ঈগল পজিশনে দাঁড়িয়ে আছে অমরেশদা, সবার প্রিয় ‘দ্য গ্রেট ওমর’।
এটা কী হল? কিচ্ছু বুঝতে
পারছিলাম না আমি। এখন তো অমরেশদার বেরিয়ে আসার কথা নয়। তাহলে? ও বুঝেছি। ইম্প্রোভাইজেশন। ওফ! মাঝে মাঝে এইজন্যেই লোকটার ওপর এত্ত রাগ
হয়। নিজে যেটা ঠিক মনে করে সেটাই করে। এই নতুন প্ল্যানটার কথা আমাকে পর্যন্ত
বলেনি। কী হত বললে? আমি কি আপত্তি করতাম? সবসময় সারপ্রাইজ দেওয়া। মনে মনে ওর ওপর খুব রাগ হল আমার।
কিন্তু সব রাগ মুহূর্তে
ভুলে গেলাম। সমস্ত দর্শকের চিৎকারে তৈরি হওয়া শব্দব্রহ্ম যেন আজ ডেসিবলের কোনও
বাধানিষেধ মানতে আর রাজি নয়। মঞ্চে হাজির হওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও সবাই উঠে
দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে অমরেশদাকে। মাইক হাতে অ্যাঙ্করের গলা এবার
চিরে যাবার উপক্রম হয়েছে। আমরা পেরেছি। ‘দ্য গ্রেট ওমর’ ইজ ব্যাক উইথ অ্যা ব্যাং।
উপস্থিত প্রত্যেকটা লোকের চোখ যেন অবাক বিস্ময়ে আটকে আছে শুভ্রকেশ ষাটোর্ধ
ব্যক্তিটির দিকে। এতটা অসুস্থতা সঙ্গে নিয়েও অসম্ভবকে সম্ভব করেছে আজ অমরেশদা।
সবার সঙ্গে হাততালি দিতে দিতে অজান্তে কখন যে চোখের কোণটা ভিজে উঠেছে খেয়ালই
করিনি।
সবার অভিনন্দন গ্রহণ করতে
করতে ধীরে ধীরে মূল মঞ্চে এসে দাঁড়াল অমরেশদা। হাততালির রেশ তখনও পুরোমাত্রায় বজায়
রয়েছে। থামতেই চাইছে না। আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম ওর দিকে। দর্শকদের দিকে হাত
নাড়তে নাড়তে একবার আড়চোখে আমার দিকে তাকাল অমরেশদা। মুখে একটা দুষ্টু দুষ্টু হাসি।
ভাবখানা যেন ‘কী, কেমন দিলাম?’ রাগে আবার গাটা জ্বলে গেল আমার।
কিন্তু আজ ও যা করে দেখাল তাতে ওর সাতখুনও মাফ করে দেওয়া যায়। আমি মন থেকে ক্ষমা
করে দিলাম অমরেশদাকে।
পার্কে উপস্থিত মিডিয়ার লোকজন
এবার মঞ্চে উঠে আসার উপক্রম করছে। অ্যাঙ্করও মনে হয় অমরেশদার সঙ্গে
কথা বলতে চায়। মাইকে প্রত্যেকের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে চায় অমরেশদার নিজের মুখে বলা
অভিজ্ঞতাটা। প্রত্যেকে উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে অমরেশদার বক্তব্য শোনার জন্যে।
কিন্তু এই তুমুল হট্টগোলের মধ্যেই অমরেশদা আমাকে ইশারায় কাছে ডাকল। কাছে যেতেই
আমাকে বলল, “দেবু, প্রচণ্ড টায়ার্ড লাগছে রে। তুই প্লীজ এদিকটা
একটু সামলা। আমি এখান থেকে কাটি। আই ডেসপারেটলি নিড সাম রেস্ট।” বলে কোনও উত্তরের অপেক্ষা না করেই সবাইকে হতাশ করে স্টেজ থেকে টুক করে নেমে
রওয়ানা দিয়ে দিল পাশে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা গ্রিনরুমটার দিকে।
বোঝো! এইজন্যেই লোকটার
কিছু হয় না। আরে, আজকের দিনের তুমিই তো হিরো। প্রত্যেকে তোমার মুখ থেকে দুটো কথা শোনার
জন্যে মুখিয়ে রয়েছে, তোমাকে একবার ছুঁয়ে দেখবে বলে অপেক্ষা
করছে। আজকাল পি.আর. ছাড়া কিস্যু হয় না। কেউ কিছু করুক না করুক, ঢাক পেটানোর সুযোগটা অন্তত ছাড়ে না। আর তুমি? আজ
অসাধ্য সাধন করেও মিডিয়া থেকে পালাতে চাইছ। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম, থাক, অনেক স্ট্রেস গেছে ওর ওপর দিয়ে এ ক’দিন। এখন সত্যিই একটু রেস্ট ওর প্রাপ্য।
অমরেশদাকে না পেয়ে
মিডিয়ার লোকজন নিউজ বুম আর ক্যামেরা তাক করে মুহূর্তের মধ্যে ছেঁকে ধরল আমাকে।
ওঁদের হাজার হাজার জিজ্ঞাসা। এরকম অভিনব প্রত্যাবর্তনের প্ল্যানটা আসলে কার, কীরকম প্রস্তুতি
নেওয়া হয়েছিল, শুরুর আগে টেনশন হচ্ছিল কি না, ‘দ্য গ্রেট ওমর’-এর পরবর্তী প্ল্যান কী, রেগুলার স্টেজ শো কবে থেকে শুরু হবে আরও কত কী। সবার প্রশ্নের জবাব দিতে
দিতে প্রায় আধঘণ্টা সময় কোথা দিয়ে চলে গেল বোঝাই গেল না।
মিডিয়ার আক্রমণ থেকে
বেরিয়ে এসে দেখি সন্ধে হয়ে এসেছে। মিলেনিয়াম পার্ক প্রায় খালি হয়ে এসেছে। বাকি
কিছু সংখ্যক অত্যুৎসাহী দর্শক যাঁরা এখনও রয়েছেন তাঁরা সবাই এই অভিনব শোতে উপস্থিত
থাকার প্রমাণস্বরূপ সেলফি তুলতে ব্যস্ত। বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও সবাই ফেরার পথ ধরেছেন।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লোকেরা স্টেজ খুলে ফেলতে ব্যস্ত। আমাদের দলের ছেলেরাও সব
সাজসরঞ্জাম খুলে গুছিয়ে রাখতে শুরু করে দিয়েছে। এমন সময় এগিয়ে এল সাদা ইউনিফর্ম
পড়া সোফার জাতীয় একটা লোক। হাতে একটা মস্ত বড়ো ফুলের বোকে। কাছে এসে বোকেটা আমার
হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, এটা নাকি হাইকোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহাশয় এবং তাঁর
স্ত্রীর তরফে। সঙ্গে একটা সুন্দর কংগ্র্যাচুলেশনস কার্ড। গর্বে বুকটা ভরে উঠল।
ধন্যবাদ জানিয়ে বোকেটা নিয়ে এগোলাম গ্রিনরুমের দিকে আসল প্রাপকের হাতে এটা তুলে
দেওয়ার জন্যে।
কিন্তু অবাক কাণ্ড!
গ্রিনরুমে এসে কোথাও অমরেশদাকে খুঁজে পেলাম না। বাইরে যে সিকিউরিটি ছিল তাকে
জিজ্ঞেস করলাম। সে জানাল অমরেশদা নাকি গ্রিনরুমে আসেনইনি। মানে? গেল কোথায় লোকটা?
নিশ্চয়ই ফিরে গেছে বাড়িতে। হয়তো এতক্ষণে এসি চালিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে
শুয়ে পড়েছে বিছানায়। সত্যি, একে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। কী আর করা যাবে। এমনিতেই ভেবেছিলাম ফেরার পথে
একবার ওর বাড়ি হয়ে যাব। বোকেটা না হয় তখনই ওকে দিয়ে দেব।
এমন সময় দেখি প্রতীক
এগিয়ে আসছে। কাছে এসে বলল,
“দেবুদা, কফিনের তালাটা খুলে দাও। এবার ওটাকে
ডিসম্যান্টল করে প্যাক করে নিই।”
আরে তাই তো! এতসবের মাঝে
ভুলেই গেছিলাম কফিনটা যে খোলাই হয়নি। তাড়াতাড়ি প্রতীককে নিয়ে পা বাড়ালাম স্টেজের
দিকে। কফিনটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে গায়ে পেঁচানো শিকলের তালাগুলো খুললাম একে একে।
প্রতীকও হাত লাগাল সঙ্গে। তারপর ডালাটার গায়ে লাগানো তালাটা খুলে পিছনের দিকে শিকলটা
বের করে আনতে গেলাম। হঠাৎ প্রতীকের মুখ থেকে একটা চাপা আর্তস্বর শুনে চমকে
তাকালাম। দেখি প্রতীক কফিনের ডালাটা অর্ধেক খুলে বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
ভিতরের দিকে। ওর মুখটা ছাইয়ের মতো সাদা। ডালাটার জন্যে আমি কফিনের ভিতরটা দেখতে
পারছিলাম না। ওর পাশে এসে কফিনের ভিতরে চোখটা পড়তেই আমার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা
হিমশীতল স্রোত নেমে গেল। হৃৎপিণ্ডটা এক সেকেন্ডের জন্যে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে
পারছিলাম না। একবার চোখ বন্ধ করে আবার খুললাম। না, চোখের ভুল নয়। যা দেখছি ঠিকই দেখছি। কফিনের
মধ্যে শুয়ে আছে অমরেশদা। চোখদুটো বন্ধ। জলে ভেজা নিথর নিস্পন্দ দেহটা অস্বাভাবিকভাবে
ফোলা। হাতে হ্যান্ডকাফটা তখনও পরানো আর চাবিটা পড়ে আছে ওর পায়ের কাছে কফিনের
মেঝেতে।
সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে
উঠল আমার। একটা তীব্র ভয়াবহ আশঙ্কায় বুকের ভিতর একটা চাপা কান্না দলা বেঁধে উঠতে
লাগল। কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নিলাম অমরেশদার হাতটা। পাগলের মতো চেষ্টা করেও
অমরেশদার হাতে নাড়ির কোনও স্পন্দন আমি খুঁজে পেলাম না।
জীবনের শেষ পারফর্মেন্সে
অপার্থিব, অলৌকিক কোনও ম্যাজিকের কৌশলে ইহজগতের সমস্ত অপমান, অবমাননার
মুখতোড় জবাব দিয়ে বহুক্ষণ হল অমরেশদা পাড়ি দিয়েছে এক অজানা জগতের উদ্দেশ্যে যেখানে
ওর প্রাণের চেয়েও প্রিয় মালবিকাদি এতদিন ধরে ওর জন্যে অপেক্ষা করে বসে আছে।
_____
অলঙ্করণঃ সুমিত রায়
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteদারুণ! দারুণ! অসম্ভব ভালো নির্মেদ লেখা.... আপনার ফ্যান হয়ে গেলাম।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ পুষ্পেনদা!!! একরাশ শুভেচ্ছা রইল।
Deleteঅনবদ্য৷ খানিকটা প্রেডিক্টেবল৷ তবু একবার ধরলে একনিঃশ্বাসে শেষ না করে থাকা যায় না৷
ReplyDelete