জানালায় কে
কৃষ্ণেন্দু
দেব
বিল্বমঙ্গল বসাক সুজয়ের ছোটোমামা। চিরকালই ডাকাবুকো প্রকৃতির।
যৌবনে পাহাড়-জঙ্গল চষে বেড়িয়েছেন। ইদানীং
হাঁটুর ব্যথার জন্য আর তেমন দৌড়ঝাঁপ করতে পারেন না। তবে ঘোরার নেশা এখনও যায়নি।
অবসর পেলেই বেরিয়ে পড়েন কাছাকাছি কোথাও ছুটি কাটাতে। এবারের গন্তব্য জলপাইগুড়ির
হাতিঝোরা। একেবারে আনকমন স্পট। খোঁজ নিয়ে জেনেছেন ওখানে নদী,
ঝরনা, পাহাড়, জঙ্গল - সব এক সঙ্গে পাওয়া যাবে, অথচ লোকের ভিড়
নেই।
ডিসেম্বরের
মাঝামাঝি সুজয়ের অ্যানুয়েল পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমন সময়ই এল ছোটোমামার কাছ থেকে
হাতিঝোরা বেড়ানোর ডাক। ও তো বেজায়
খুশি। তাড়াতাড়ি একটা ব্যাগে নিজের জামাকাপড়
গুছিয়ে লাফাতে লাফাতে হাজির হল মামাবাড়ি। ওখানে গিয়ে
জানল, প্রমথমামাও ওদের সাথে যাচ্ছে।
প্রমথ সাহা বিল্ব বসাকের এক্কেবারে ছেলেবেলার বন্ধু। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন গতবছর। ওঁর ছেলে পুনেতে থাকে। স্ত্রী কিছুদিন
হল সেখানেই গেছেন। প্রমথর একা ঘরে আর ভালো লাগছিল না।
তাই বন্ধুর সঙ্গে দু’দিন হাতিঝোরা বেড়িয়ে আসার সিদ্ধান্ত।
সুজয়
ছোটোবেলা থেকে দেখে আসছে, ছোটোমামা আর প্রমথমামা
গলায়-গলায় বন্ধু হলেও ওদের মধ্যে সবসময় একটা ঠান্ডা লড়াই চলতেই থাকে। আসলে বিল্বমঙ্গল
একটু হামবড়া প্রকৃতির
মানুষ। একটু সুযোগ পেলেই নিজের পাহাড়-জঙ্গল ভ্রমণের নানা অভিজ্ঞতা এবং
অসীম সাহসের কাহিনি বলতে শুরু করেন। আর
সেটা করেন অত্যন্ত দম্ভের সঙ্গে। এই
ব্যাপারটাই প্রমথ একদম সহ্য করতে
পারেন না। মনে
মনে বিরক্ত হন। একটা সময়ে বিরক্তি চরমে পৌঁছায়। তখন
প্রমথ মনে মনে শপথ নিয়ে ফেলেন, যে করেই হোক বিল্বর দর্প তিনি চূর্ণ করবেনই। কিন্তু
অনেকদিন কেটে গেলেও সেই শপথ রক্ষার সুযোগ উনি আর পাচ্ছিলেন না। শেষে
ঐ হাতিঝোরা বেড়াতে গিয়ে সুযোগটা এসে গেল একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে।
কীভাবে এল, এখন সে কথাই বলব।
কলকাতা থেকে রাতের ট্রেন ধরে ওরা তিনজন পরদিন
সকালেই এনজেপি
পৌঁছে গেল। আর ওখান থেকে গাড়ি নিয়ে বেলা এগারোটার মধ্যেই হাতিঝোরা।
উঠল নিরালা নামের একটা বিশাল লজে। ওটা আসলে এককালে ছিল
বর্ধমানের এক জমিদারের বাংলো। তারই নাতি
শশাঙ্কশেখর হলেন বিল্বমঙ্গলের বিশেষ পরিচিত। সেই সূত্রেই লজটা পাওয়া গেছে। বাংলোটার লোকেশন যে ভীষণ ভালো তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তবে ঘরদোরের হাল বিশেষ সুবিধার নয়। ঠিকমতো
রক্ষণাবেক্ষণ না করলে যা হয় আর কী! আসলে অত বড়ো বাংলোটা দেখভাল করার জন্য সনাতন নামে মাত্র একজনই কেয়ারটেকার আছে এবং
সে লোকটিও মোটেই করিৎকর্মা নয়। সারাদিন ভূতের ভয়ে কাবু হয়ে
থাকে। আর কোনও রোজগারের পথ নেই বলে বেচারি
ঐ বাংলো ছেড়ে যেতেও পারে না।
সনাতনের ঘাড়ে ভূতের ভয় চেপেছে বছর চারেক আগে। মধু নামে একটি মাঝবয়সী লোক
নাকি সেসময় এই বাংলোয় রান্নার কাজ করত, সঙ্গে টুরিস্টদের কিছু ফাইফরমাশও খেটে দিত।
সে তার মা-মরা মেয়েটাকে নিয়ে থাকত বাংলোর
একতলার একটা ঘরে। চার
বছর আগে মাত্র দু’দিনের
জ্বরে মেয়েটা হঠাৎ মারা যায়। মধু তাতে একেবারে ভেঙে পড়ে। বাংলোর সামনের কুয়োতলায়
বসে রোজই নাকি কান্নাকাটি করত। সনাতন সে সময় ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টাও
করেছে। তবে তাতে কোনও ফল হয়নি। একদিন রাত্রিবেলা মেয়ের
শোকে মধু নিজের ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে। আর তারপর থেকে নাকি ভূত হয়ে এই
বাংলোতে ঘুরে বেড়ায়। ভোর-রাত্তিরে এই কুয়োতলায় তার
কান্নার শব্দ সনাতন নাকি আজও শুনতে
পায়। আর এই ভূতের গল্পটা চাউর হয়ে যাওয়ার পর থেকেই এই বাংলোয় টুরিস্ট বড়ো একটা আসে
না।
ভূতের গল্পটা শোনামাত্রই বিল্ব
তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলেন, “যত্তোসব বাজে কথা! ওদিকে মানুষ
মঙ্গলে যান পাঠাচ্ছে, আর এদিকে লোকে ভূতের ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। কোনও মানে হয়!”
মন্তব্যটা শুনে সনাতন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই প্রমথ বলে উঠলেন, “ভয় সব মানুষেরই থাকে, বিল্ব। তুই
যে এত বড়ো বড়ো কথা বলছিস, মধু যে ঘরে আত্মহত্যা করেছিল,
সেখানে তুই একা রাত কাটাতে পারবি?”
প্রমথর এই মন্তব্যে আগুনে যেন ঘি পড়ল।
বিল্ব হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, “পারব না মানে! আলবাত পারব। না পারলে আমার নামে কুকুর পুষিস। আর
যদি পারি তাহলে আমাকে কী খাওয়াবি বল।”
প্রমথ জবাব
দিলেন, “তুই যা খেতে চাইবি।”
“বেশ। তাহলে
খাসির মাংস বাজি হোক, সঙ্গে রসগোল্লা। যে বাজি হারবে, সেই খাওয়াবে।”
কথাটা শেষ
করেই বিল্ব তাকালেন সনাতনের দিকে।
আদেশের সুরে বললেন, “ঐ ঘরেই আমার রাতে শোবার ব্যবস্থা কর।”
মধুর ঘর খুলে তা পরিষ্কার করতে হবে শুনে তো সনাতনের
কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা। সে আপ্রাণ
চেষ্টা করল বিল্বমঙ্গলকে নিরস্ত করতে, “ঐ ঘরে মধু মেয়েকে নিয়ে থাকত। সেখানে বাইরের লোক ঢোকালে আর
দেখতে হবে না। ভূতে করতে পারে না এমন কাজ নেই, বাবু।”
সনাতনের কাঁদুনি শুনে বিল্ব দারুণ খেপে গেলেন। বললেন, “আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। ঐ ঘরে
আমি রাত কাটাব, এটাই ফাইনাল। তুমি নিজে ঘরটা
পরিষ্কার না করতে চাইলে লোক ডেকে কাজটা করাও। আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি। সেটাও না
পারলে আমি নিজেই...”
বাধা দিয়ে আর লাভ হবে না বুঝে সনাতন রাজি হয়ে গেল লোক দিয়ে ঘর পরিষ্কারের প্রস্তাবে। তবে লোক
চাইলেই তো আর এক্ষুনি পাওয়া যাবে না।
তাই জানাল, কাজটা
করতে আগামীকাল সকাল হয়ে যাবে। একথা শুনে
বিল্বমঙ্গলের মুখে একেবারে যুদ্ধ-জয়ের হাসি। উনি তৎক্ষণাৎ সনাতনের হাতে পাঁচশো টাকার একটা নোট
ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “কোই বাত নহি। তবে কাল সকালে যেন কাজটা ঠিকঠাক হয়ে যায়।”
টাকাটা হাতে পেয়ে সনাতনের সদা ব্যাজার
মুখটাতেও একটু যেন হাসি ফুটল বলে মনে হল।
একটা রাঁধুনি ডেকে সনাতন বাংলোতেই অতিথিদের জন্য খাওয়ার
ব্যবস্থা করেছে। দুপুরের খাওয়া সেরে ওরা তিনজন দোতলায় চলে গেল। দোতলার
দুটো ঘর সনাতন খুলে দিয়েছে। একটা ঘরে বিল্ব একা শোবেন আর অন্যটাতে সুজয়
এবং প্রমথ।
ওরা তিনজন ছাড়া নিরালায় ঐ মুহূর্তে আর কোনও লোক নেই। তবে পাশে যে আরও দুটো লজ
আছে, সেখানে টুরিস্টের সংখ্যা ভালোই।
রাতে ট্রেনে সুজয়ের ভালো ঘুম হয়নি। তাই বিছানায় গা এলানো মাত্র ওর দু’চোখের পাতা জুড়ে এল। অন্যদিকে
প্রমথর চোখে কিন্তু ঘুমের লেশমাত্র নেই।
উনি একমনে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছিলেন।
সেদিন বিকালে ওরা তিনজন বের হল
আশপাশটা একটু ঘুরে দেখতে। পরদিন সকালে গাড়ি নিয়ে জঙ্গলের দিকটায় যাবে। বাংলো থেকে সামান্য দূরে একটা স্থানীয় মেলা বসেছিল। ওরা তিনজন বেশ কিছুক্ষণ সেটা ঘুরে দেখল। তবে সন্ধ্যা নামতেই
ফিরে এল বাংলোয়। তারপর
আড্ডা দিতে বসল
সুজয়দের ঘরে। নামেই আড্ডা। আসলে বিল্বমঙ্গলের
সেই চিরাচরিত আত্মপ্রচার। কীভাবে যৌবনে পাহাড়-জঙ্গল চষে বেড়িয়েছেন, তারই অনুপুঙ্খ বর্ণনা। এই
একই গল্প সুজয় আর প্রমথ আগে অন্তত বিশবার শুনেছে। প্রমথ তার প্রিয় বন্ধুকে দু-একবার থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন।
ফলে বন্ধুকে শায়েস্তা করার বাসনা তাঁর মধ্যে আরও প্রবল হয়ে উঠল।
কিছুক্ষণ
বাদে বিল্ব পোষাক বদল করবার জন্য
নিজের ঘরে যেতেই প্রমথ নিজের আলোয়ানের তলা থেকে একটা কঙ্কালের মুখোশ বের করলেন। ওটা আজ উনি মেলা থেকে চুপিচুপি কিনে
এনেছেন। সুজয়
তো মুখোশটা
দেখে হেসেই খুন। ও প্রমথকে বলল, “তোমার শখ বলিহারি। এই বয়সে বাচ্চাদের মতো একটা
মুখোশ কিনে এনেছ!”
প্রমথ তখন মুচকি হেসে বললেন, “এটা শখে কিনিনি ভাগনা, কিনেছি
তোর ছোটোমামাকে জব্দ করার জন্য।”
“তার মানে তুমি কাল ছোটোমামাকে ভূতের ভয় দেখাবে?”
“একদম ঠিক ধরেছিস। কাল রাতেই বাছাধনের বোলচাল আমি বন্ধ করে দেব। খালি লম্বা
লম্বা বাত। তোকে শুধু একটা কাজ করতে হবে। আমার মোবাইলটায় অ্যালার্ম দিয়ে রাখবি। ঠিক রাত একটার
সময় আমাকে ডেকে দিবি। আসলে আমার ঘুম খুব গভীর বুঝলি। ঐ অ্যালার্মের শব্দেও ভাঙে
না। তুই একবার খালি আমাকে জাগিয়ে দে। তারপর যা করার আমি করব।”
“ছোটোমামা যদি ভয় না পায়?”
“পাবে না মানে? আলবাত পাবে। আরে বাবা, ভূত-টুত
তো আমরা কেউই বিশ্বাস করি না। তা বলে অত
বোলচাল ঝাড়ার কী আছে? ও যেন পৃথিবীতে একাই সাহসী। তোর মামার এই হামবড়া ভাবটা ঘুচিয়ে দেওয়া
দরকার।”
“তুমি এতটা নিশ্চিত হচ্ছ কীভাবে যে ছোটোমামা ভয়
পাবেই?”
“আরে বাবা, আমি যা প্ল্যান করেছি, তাতে শুধু ও কেন, ওর চোদ্দপুরুষও ভয় পেতে
বাধ্য। আজ সকালেই আমি বাইরে থেকে মধুর ঘরটা দেখে এসেছি। ঐ ঘরের যে জানালাটা আছে, তার দুটো শিক নেই।
পাল্লাগুলোও খুব নড়বড়ে। তার ওপর ছিটকিনি ফিটকিনি কিছু
নেই। তাই ঐ ভাঙা জানালা দিয়ে যখন আমি মুখ
গলিয়ে... একটা কথা সব সময় জেনে রাখবি, যারা
মুখে যত বেশি তড়পায়, মনে মনে তারা ততটাই ভীতু হয়।”
প্রমথর মনের আশা হয়তো সত্যি
হতে পারত যদি না বিল্বমঙ্গল তাঁর সমস্ত পরিকল্পনা দরজার আড়াল থেকে শুনে ফেলতেন। আসলে বিল্ব সুজয়দের ঘর থেকে বেরনোর
সময় ওদের বিছানায় ভুল করে সিগারেটের প্যাকেটটা ফেলে
গিয়েছিলেন। সেটা নেওয়ার জন্যই উনি আবার
ঢুকতে যাচ্ছিলেন সুজয়দের ঘরে। এমন
সময় ঐ মুখোশের কথাটা ওঁর কানে
আসে। উনি থেমে যান। তারপর দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে চুপচাপ শুনে নেন বন্ধুর গোটা প্ল্যানটাই। এরপর আর ও ঘরে ঢোকেননি। নেশা বুকে চেপে মিটিমিটি হাসতে হাসতে নিজের ঘরেই ফিরে
গেছেন।
পরের দিন সকালবেলাই ওরা তিনজন গাড়ি চেপে বেরিয়ে পড়েছিল হাতিঝোরার
সৌন্দর্য উপভোগ করতে। জঙ্গল-ঝরনা-নদী এক সঙ্গে দেখে
সুজয় তো দারুণ খুশি। ওর
মন চাইছিল আরও কিছুক্ষণ জঙ্গলে থাকতে। কিন্তু
ছোটোমামা তাড়া লাগানোয় সেটা আর সম্ভব হল না। বাংলোয় ফিরেই বিল্বমঙ্গল খোঁজ নিলেন মধুর ঘরটা পরিষ্কার করা
হয়েছে কি না।
কাজটা ঠিকঠাক হয়েছে দেখে তাঁর মুখে দেখা গেল চওড়া হাসি। তা দেখে প্রমথও হেসে উঠলেন। মনে মনে
ভাবলেন, ‘আর মাত্র
কয়েক ঘন্টা হেসে নে। মাঝরাত্তিরের পর থেকে তো আর তোর
মুখে হাসি ফুটবে না।’
বন্ধুর মনের কথাটা অনুমান করে বিল্বমঙ্গলও দ্বিতীয়বার হেসে উঠলেন। তবে সে হাসির কারণ প্রমথর পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল
না।
পাশের একটা হোটেল থেকে সনাতন রাতের খাবার নিয়ে এসেছিল। খাওয়া
শেষ হতেই সে আরেকবার বিল্বকে অনুরোধ জানাল, রাতে মধুর ঘরে না শোওয়ার জন্য। বলাই
বাহুল্য। বিল্ব সেকথায় পাত্তা দিলেন না। আসলে গতকাল প্রমথর পরিকল্পনাটা শোনার পর তাঁর মাথাতেও
একটা দুষ্টু বুদ্ধি জেগেছে। সেটা বাস্তবায়িত করার জন্য ভদ্রলোকের যেন আর তর সইছিল না। তাই খাওয়া শেষ হতেই উনি সত্বর মধুর
ঘরে শুতে চলে গেলেন। ও ঘরে আলোর কোনও বন্দোবস্ত ছিল না। তাই সঙ্গে নিলেন একটা বড়ো টর্চ। সনাতন অবশ্য দিনেরবেলাই
বিছানাপাতি সব পেতে রেখেছিল। সে আগেই জানিয়ে দিয়েছে, রাতে যেন
তাকে কোনও অবস্থাতেই ডাকাডাকি না করা হয়। ভোরের আলো ফোটার আগে সে মোটেই নিজের ঘরের
দোর খুলবে না।
ওদিকে দোতলায় প্রমথ তখন ঘরময় পায়চারি করছেন।
উনি সুজয়কে আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন, “হ্যাঁ রে, মোবাইলে অ্যালার্মটা দিয়েছিস তো? আমাকে কিন্তু ঠিক
ডেকে দিবি।”
সুজয় সঙ্গে সঙ্গে ওঁকে বলল, “তুমি কোনও চিন্তা কোরো না, প্রমথমামা। আমার ঘুম খুব পাতলা। অ্যালার্মটা বাজলেই আমি তোমাকে জাগিয়ে দেব।”
প্রমথ আশ্বস্ত হলেন।
এদিকে মধুর ঘরে বিল্বমঙ্গল তখনও জেগে। শোওয়ার আগে
বাথরুম থেকে এক বালতি জল এনে রেখে দিয়েছেন জানালাটার ঠিক নিচে। এই শীতের রাতে গায়ে এক বালতি ঠাণ্ডা জল পড়লে বন্ধুর কী হাল হবে, সেটা
অনুমান করেই উনি মনে মনে হেসে ফেলছেন। আবার বন্ধুর স্বাস্থ্য নিয়ে একটু আশঙ্কাও হচ্ছে। ভাবছেন, প্রমথর আবার ঠাণ্ডা লেগে জ্বর-সর্দি-নিউমোনিয়া হয়ে যাবে না তো? পরক্ষণেই
মনে হচ্ছে, না, অত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কালই তো আমরা কোলকাতা ফিরে যাচ্ছি।
অসুস্থ হলেও বাড়ি ফিরে ঠিক সামলে নেওয়া যাবে। ওকে একটু শিক্ষা দেওয়াও দরকার।
ব্যাটা আমাকে ভূতের ভয় দেখাবে বলে প্ল্যান করেছে!
রাত তখন প্রায় দেড়টা। বিল্বমঙ্গলের ঘুম চিরকালই পাতলা। জানালার কাছে একটা খসখস শব্দ হতেই ওঁর ঘুমটা ভেঙে গেল। সজাগ দৃষ্টিতে উনি চেয়ে রইলেন জানালার দিকে। পাল্লাটা একটু ফাঁক হতেই চাঁদের আলো এসে পড়ল ওঁর গায়ে। চোখে পড়ল, চাদরে মোড়া একটা ছায়ামূর্তি জানালায় এসে
দাঁড়াল। তারপর দুটো লোহার শিকের মাঝখান
দিয়ে গলিয়ে দিল তার মাথাটা। বিল্ব যেন এমন একটা পরিস্থিতির অপেক্ষাতেই ছিলেন। আর একমুহূর্ত সময়
নষ্ট না করে ঝট করে বিছানা থেকে নেমে উনি বালতির পুরো জলটা ঢেলে দিলেন ঐ ছায়ামূর্তির
গায়ে। সঙ্গে সঙ্গে একটা হুড়মুড় করে শব্দ। ছায়ামূর্তি অদৃশ্য হল।
বিল্ব হাসতে হাসতে এবার জানালা দিয়ে উঁকি মারলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। আসলে জানালার দু’হাত পাশেই বাংলোয় ঢোকার দরজা।
উনি বুঝতে পারলেন, গায়ে জল পড়তেই প্রমথ ঐ দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে
গেছে। ওঁকে হাতেনাতে ধরার জন্য বিল্ব তাই
দরজা খুলে দ্রুত দোতলায় পৌঁছে
গেলেন। দেখলেন, প্রমথ
ইতিমধ্যে নিজের ঘরে ঢুকে দরজায় খিল এঁটে দিয়েছে। এই রাতবিরেতে দরজা ধাক্কাধাক্কির কোনও মানে হয় না। ও তো দরজা খুলবেই না, উপরন্তু পাশের লজের লোক
জেগে যেতে পারে। তাই বিল্ব ঠিক করলেন, বন্ধুকে যা বলার
কাল সকালেই বলবেন। ওর
পোষাক তো নিশ্চয়ই সব ভিজে
একশা হয়ে গেছে। সেসব তো আর এই কয়েক ঘন্টার মধ্যে শুকোবে না।
তাই প্রমথর পালাবার কোনও পথ নেই। ভূতের ভয় দেখাতে গিয়ে
নিজের নাকাল হওয়ার কথা ওকে কাল স্বীকার করতেই হবে। এসব ভেবে মনে একটা
অদ্ভুত তৃপ্তি নিয়ে উনি আবার মধুর ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
ভোর ছ’টা নাগাদ দরজায় ঠকঠকানিতে বিল্বর ঘুম ভাঙল। দরজা খুলেই দেখলেন গোল গোল
চোখে সনাতন দাঁড়িয়ে আছে। উনি যে সুস্থ আছেন সেটাই যেন লোকটা বিশ্বাস করতে পারছে
না। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে সনাতন বিল্বকে বলল, “আপনার জন্য চিন্তায় কাল রাতে
আমার ভালো করে ঘুম হয়নি, বাবু। খালি ভাবছিলাম, ভালোমন্দ যদি একটা কিছু ঘটে যায়...”
“তুমি থামো
তো হে ছোকরা।” বিল্বমঙ্গল এবার হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন। বললেন, “আমি দিব্যি আছি। কাল
রাতে আমি দারুণ ঘুমিয়েছি। তোমার মধুর ভূত আমার ধারেকাছেও আসেনি। তুমি যে রোজ
কুয়োতলায় কারও কান্না শোনো, ওটা আসলে তোমার মনের ভয়, বুঝলে? ওসব ভূত-টুত বলে কিছু
হয় না। এখন যাও, চায়ের ব্যবস্থা কর। তারপর বাজার
থেকে খাসির মাংস কিনে আনবে। জমিয়ে রান্না করবে। দুপুরে
খাওয়াদাওয়া সেরেই কিন্তু আমরা বেরিয়ে পড়ব। এখন আমাদের সকলের চা-টা ওপরে নিয়ে এস। মাংস
কেনার টাকাটা ওখানেই পেয়ে যাবে।”
এই কথার
শেষে সনাতন কিছু একটা বলতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু
বিল্ব তাকে সে সুযোগ না দিয়েই হনহন করে ওপরে চলে গেলেন। দোতলায় উঠেই দেখলেন প্রমথর
বিশাল খয়েরি রঙের আলোয়ানটা বারান্দায় শুকোচ্ছে, আর ঘরের ভিতর থেকে ভেসে আসছে তাঁর
চাপা কণ্ঠস্বর। তবে বিল্ব ওঘরে ঢুকতেই প্রমথ চুপ করে গেলেন। বিল্ব ওঁকে ঠেস দিয়ে
বললেন, “কী রে প্রমথ, শরীর ঠিক আছে তো তোর? অত ঠাণ্ডায় জলে ভিজে আবার জ্বর-টর
আসেনি তো?”
বিল্বর এই
কথা শুনে প্রমথ আর সুজয় দু’জনেই যেন অবাক হয়ে গেল। আর তা দেখে বিল্ব গেলেন ভীষণ
রেগে। প্রমথর দিকে আঙুল তুলে বললেন, “রাত্তিরে আমাকে ভূতের ভয় দেখাতে গিয়ে নিজে
নাকাল হলি। আর এখন এমন ভাব করছিস যেন কিছুই জানিস না? সত্যি এই বুড়ো বয়সে নাটক
করতেও পারিস বটে!”
একথা শুনেই
সুজয় প্রমথর দিকে তাকিয়ে বলল, “তার মানে তুমি কাল রাতে ছোটোমামাকে ভয় দেখাতে
গিয়েছিলে! অথচ সেই ভোর থেকে আমাকে বকাবকি করে যাচ্ছ, কেন তোমাকে কাল রাত্তিরে আমি
ডেকে দিইনি!”
“ডেকে দিসনি
মানে? তোর তো মোবাইলে অ্যালার্ম
দিয়ে রাখার কথা ছিল।” বিল্ব
মন্তব্যটা করলেন।
“তুমি এসব
কথা কী করে জানলে?” সুজয় পালটা জানতে চাইল।
তখন
বিল্বমঙ্গল কীভাবে গতকাল ওদের দু’জনের কথোপকথন দরজার বাইরে থেকে শুনেছেন, তা হাসতে
হাসতে ব্যাখ্যা করলেন। সব শুনে ওদের দু’জনের মুখই কাঁচুমাচু
হয়ে গেল। প্রমথ মিনমিন করে বললেন, “বিল্ব তুই বিশ্বাস কর, কাল রাতে সত্যিই আমার
ঘুম ভাঙেনি। তুই তো জানিসই। রাতে একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর...”
“আবার
মিথ্যা কথা! ধরা পড়ে গিয়ে এখন কাঁদুনি গাওয়া হচ্ছে? যদি কাল রাত্তিরে তুই আমার
জানালার কাছে নাই যাবি, তাহলে তোর আলোয়ানটা অমনভাবে ভিজল কীভাবে, সেটা আমায় বল।”
উত্তরে প্রমথ
যা বললেন, তা সংক্ষেপে এইরকম - সুজয় শুয়ে পড়ার পর উনি বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট
ধরান। ওটা শেষ করে ঘরে ঢুকে আসেন শুয়ে
পড়বেন বলে। গা থেকে আলোয়ানটা খুলতেই ওঁর চোখে পড়ে, ওটার এককোণে বিচ্ছিরি ময়লা লেগে
আছে। সম্ভবত কোনও কাক-টাক কুকর্মটা করেছে। সব দেখে তো আর জিনিসটা এমনি ফেলে রাখা যায়
না। তাই গতকাল রাতেই উনি আলোয়ানটা জলকাচা করে বারান্দায় মেলে দিয়েছেন।
কিন্তু
দুঃখের বিষয়, প্রমথর এই যুক্তি বিল্ব তো বটেই, সুজয়ও বিশ্বাস করল না। বিল্ব পালটা
যুক্তি দিলেন, “কাল রাতে তো আমি তোকে হাতেনাতে পাকড়াও করতে এই দোতলায় এসেছিলাম। কই,
তখন তো আলোয়ানটা এই বারান্দায় ঝুলতে দেখিনি! তার মানে তুই একটা মিথ্যে ঢাকতে
আরেকটা মিথ্যে বলছিস?”
অতঃপর ওরা
দু’জনেই ধরে নিল, গতকাল রাতে বিল্বকে ভূতের ভয় দেখাতে গিয়েই প্রমথর ঐ হাল হয়েছে। প্রমথর
তখন নিতান্তই অসহায় অবস্থা। কেউ ওঁর কথা বিশ্বাস করছে না। বন্ধুকে শায়েস্তা করতে
গিয়ে নিজেই যেন বেকুব বনে গেছেন। এইরকম একটা সময়ে সনাতন চা নিয়ে ওদের ঘরে হাজির
হল। চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই বিল্ব প্রমথকে বললেন, “আমি কাল নির্ভয়ে মধুর ঘরে রাত
কাটিয়েছি। তার মানে তুই বাজি হেরে গেছিস। নে, এক্ষুনি মাংস আর মিষ্টির টাকাটা বের
কর।”
প্রমথ আর
তর্কে গেলেন না। নিজের পার্স থেকে টাকাটা বের করে সনাতনকে দিয়ে দিলেন। এরপর টানা
একঘন্টা বিল্বমঙ্গল তাঁর তিরিশ বছর আগে করা কেদার অভিযানের রোমহর্ষক বিবরণ ওদের সদম্ভে
শোনাতে লাগলেন। চুপচাপ তা শুনে যাওয়া ছাড়া ওদের আর কোনও গত্যন্তর ছিল না।
সেদিন ন’টা নাগাদ টিফিন খেতে ওরা তিনজন বাইরে বের হল। দেখল, পাশের লজটার সামনে
একটা পুলিশের জিপ দাঁড়িয়ে আছে। জিপটার সামনে বেশ কিছু লোকের জটলা। তাদেরই একজনের
থেকে ওরা জানতে পারল, গতকাল ঐ লজটায় নাকি বড়ো চুরি হয়ে গেছে। চোর জানালা দিয়ে হাত
গলিয়ে এক টুরিস্টের ল্যাপটপ আর মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়েছে। লোকটা ঘরের মধ্যেই
সিগারেট খায় বলে নাকি এই প্রবল শীতেও জানালাটা সামান্য ফাঁক করে শুয়েছিল।
কথাটা শুনেই
প্রমথ লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, “এবার তোদের আমার কথা বিশ্বাস হল তো? কাল বিল্ব
রাত্তিরে যার গায়ে জল ঢেলেছে, সে ব্যাটা ওই চোরটাই হবে। আচ্ছা নাকাল হয়েছে যাই হোক।”
যুক্তিটা
সুজয়ের মনে ধরলেও বিল্ব কিন্তু নিজের বিশ্বাসে অটল রইলেন। বললেন, “ওটা চোর হতেই
পারে না। তাহলে আমি জল ছোঁড়ার পর জানালা দিয়ে ওকে অবশ্যই দেখতে পেতাম। কারণ,
বাইরের কোনও লোক গায়ে জল পড়া মাত্রই সামনের রাস্তাটা দিয়ে সোজা দৌড় লাগাবে। কখনওই
দরজা দিয়ে বাংলোর ভিতরে ঢুকে পড়বে না। যাই হোক, তোকে জলে ভেজানো নিয়ে তো আর বাজি
হয়নি, হয়েছিল মধুর ঘরে আমার রাত কাটানো নিয়ে। সেটা আমি নির্ভয়ে করেছি। আর তুই
বাজিটা হেরেছিস, এটাই হল মোদ্দা কথা।”
একথা শোনার
পর প্রমথ একেবারে চুপ করে গেলেন। পরবর্তী প্রায় একঘন্টা তাঁর মুখ দিয়ে আর একটা
শব্দও বের হল না।
দুপুর আড়াইটার
সময় গাড়ি বলা আছে। সেই গাড়িই ওদের তিনজনকে এনজেপি স্টেশনে পৌঁছে দেবে। দুপুরের
খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গাড়িতে উঠবে, এই ভেবে ওরা তিনজন সাড়ে বারোটা
নাগাদই খেতে বসে গেল। আজ মাংসটা সনাতন নিজেই রেঁধেছে। সবাই ওর রান্নার খুব প্রশংসা
করল। সবে ওঁরা খাওয়া শেষ করে উঠেছে, এমন সময় সহসা বেজে উঠল প্রমথর মোবাইলের অ্যালার্মটা। কিন্তু দুপুর একটার সময়ে যন্ত্রটা হঠাৎ চিৎকার করছে
কেন? সুজয় এতক্ষণে নিজের ভুলটা বুঝতে পারল। গতকাল রাতে প্রমথমামার মোবাইলে অ্যালার্ম দেওয়ার সময় ও অসাবধানতাবশত টাইম সেট
অপশনে ‘ওয়ান এএম’-এর পরিবর্তে ‘ওয়ান পিএম’ সেভ করে ফেলেছিল। তাই ওটা গতকাল রাত
একটার পরিবর্তে আজ দুপুর একটায় বেজে উঠেছে।
প্রমথ
ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আরেক দফা লাফিয়ে উঠলেন। বিল্বমঙ্গলকে বললেন, “এবার আমার
কথাটা তোর বিশ্বাস হল তো? অ্যালার্মটাই যখন
বাজেনি, তখন আমার ঘুম ভাঙবে কীভাবে বল? তুই কাল চোরটার গায়েই জলটা ঢেলেছিস।”
বিল্ব
কিন্তু বন্ধুর এই নতুন যুক্তিও মানতে রাজি হলেন না। ওঁর
পালটা যুক্তি, গতকাল রাতে নাকি প্রমথ আদৌ ঘুমোননি। উত্তেজনার বশে জেগেই ছিলেন। তাই
সেক্ষেত্রে অ্যালার্মটা বাজল কি বাজল না, তাতে কিছু যায়
আসে না। বিল্ব নিশ্চিত, প্রমথর গায়েই উনি জলটা ঢেলেছেন। ভেজা আলোয়ানটা সেই প্রমাণই
দিচ্ছে।
বেচারি সুজয়
তখন পুরোপুরি কনফিউজড। একবার মনে হচ্ছে প্রমথমামা সত্যি
কথাই বলছে, আবার পরক্ষণেই মনে হচ্ছে, না, ছোটোমামাই ঠিক। যাই হোক, ঘন্টাখানেক
বিশ্রাম নিয়ে ওরা তিনজন এনজেপি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। নিচে গাড়ি চলে
এসেছে। ওরা গাড়িতে মালপত্রগুলো তুলে দিয়ে সামনের একটা মন্দিরে দশ মিনিটের জন্য
ঘুরে আসবে। শুধুমাত্র এই সময়টায় নাকি এক সাধুবাবা আধঘন্টার জন্য ওই মন্দির চত্বরে
এসে বসে। তার জটাজুটো এবং গোঁফদাড়ি নাকি দেখবার মতো। সুজয়ের
খুব ইচ্ছা ওই সাধুবাবার একটা ছবি তুলে নিয়ে বন্ধুদের দেখাবে।
সনাতন নিজেই
ওদের ঘর থেকে লাগেজগুলো বয়ে নিয়ে এসে গাড়িতে তুলে দিল। এই দু’দিনেই বিল্বমঙ্গলের
কেন জানি লোকটাকে খুব মনে ধরে গেছে। উনি সনাতনকে এক্কেবারে পাঁচশো টাকা বকশিস দিয়ে
বসলেন। তারপর অভিভাবকসুলভ ভঙ্গীতে বলতে লাগলেন, “সনাতন, তোমার ঐ ভূতের ভয় এবার ঘাড়
থেকে নামাও। আর এই লজের ব্যবসাটায় মন দাও। এমন একটা বাংলো
কিন্তু এ তল্লাটে আর একটাও নেই। ঠিকঠাক চালাতে পারলে তোমার খাওয়া-পরার কোনওদিন
অভাব হবে না। বিয়ে-থা করে এখানেই সুখে দিন কাটিয়ে দিতে পারবে।”
একথা শুনে
সনাতন মিনমিন করে জবাব দিল, “সেটাই তো চাই, বাবু।
কিন্তু ঐ হতচ্ছাড়া মধুটার জ্বালায় কিছু করতে সাহস হয় না। ব্যাটা রোজ ভোর-রাত্তিরে
এই কুয়োতলায় বসে এমন কান্নাকাটি শুরু করে যে...”
সনাতন তার
কথা শেষ করতে পারল না। তার আগেই বিল্ব খেঁকিয়ে উঠলেন, “আবার সেই ভূতের কথা! মধুর
ভূতই যদি থাকত, তাহলে সে কি কাল ঐ ঘরে আমাকে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দিত? ওসব
কান্না-টান্না তোমার মনের ভুল। আচ্ছা, একটা কথা সত্যি করে বল দেখি, আজ ভোর-রাতে
তুমি কুয়োতলায় মধুর কান্না শুনেছ?”
“আজ্ঞে না,
তা শুনিনি। তবে...”
“তবে কী,
হতভাগা?”
“আজ ওর প্রচুর
হাঁচির শব্দ শুনেছি।”
সনাতনের
মুখে এই উত্তরটা শোনামাত্রই বিল্বমঙ্গলের মুখটা নিমেষে গম্ভীর হয়ে গেল। উনি প্রমথর
দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বললেন, “ইস, আড়াইটা বেজে গেল। আর মন্দির-টন্দির গিয়ে কাজ
নেই, বুঝলি। আমরা চ’ এক্ষুনি গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।”
ইতিমধ্যে
প্রমথ খালি মুখেও প্রচণ্ড বিষম খেয়ে কাশতে শুরু করেছেন। সেই অবস্থাতেই উনি তৎক্ষণাৎ
বন্ধুর প্রস্তাবে সায় দিয়ে সুজয়কে প্রায় ঠেলে ঢুকিয়ে দিলেন গাড়ির মধ্যে।
কাল রাতে
ছোটোমামা আসলে কার গায়ে জলটা ঢেলেছে, তা নিয়ে এমনিতেই সুজয়ের ধন্দ কাটছিল না। তার
ওপর হঠাৎই বাংলো ছেড়ে যাওয়ার জন্য একই সঙ্গে দুই মামার এই উতলা ভাব দেখে ওর মাথাটা
আরও গুলিয়ে গেল। সুজয় ভাবতে লাগল, এনজেপি থেকে কলকাতার ট্রেন তো
সেই রাত আটটায়। তাহলে ওরা দু’জনেই মন্দিরের ওই বিচিত্র সাধুটাকে দেখতে না গিয়ে সহসা
স্টেশনে যাওয়ার জন্য এতটা হুটোপাটি করছে কেন? কিন্তু বেচারি প্রশ্নটা করার সুযোগই
পেল না। কারণ বিল্ব আর প্রমথর তাড়ায় ওদের গাড়িটা ততক্ষণে দারুণ জোরে ছুটতে শুরু
করে দিয়েছে।
_____
অলঙ্করণঃ
পুষ্পেন মণ্ডল
I am also confused after reading this story! Jokes apart, I think instead of trying Sirshendu style "Bhut", you would try Siraj style "Bhut", which is better for this kind of story
ReplyDeleteগল্পটা ষোলো আনা প্রেডিক্টেবল হলেও বেশ উপভোগ করলাম। শুধু শেষটা আরেকটু বিস্তৃত করাই যেত।
ReplyDeleteসুন্দর গল্প।মন ভালো করে দেয়।এ ভূতে ভয় হয় না।
ReplyDelete