সোনালি
গোলাপ
পুষ্পেন
মণ্ডল
।। এক।।
রিমি
বাড়ি ফিরেই বইয়ের ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে ছাদে এসে দেখল টবটা খালি পড়ে
আছে, গোলাপচারাটি উধাও! গোটা ছাদ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সেটার হদিস পেল না। কেউ কি
এর মধ্যে ছাদে এসেছিল? তারপর ঐ অদ্ভুত জিনিসটা দেখে ফেলে দিয়েছে? কে আসতে পারে
এখানে? সাঁ করে ছুটে গেল মায়ের কাছে।
“আমি
স্কুলে যাবার পরে কে গিয়েছিল উপরে?”
“কেন,
উপরে আবার কে যাবে? কী হয়েছে সেটা বলবি তো?”
“আমি
একটা জিনিস রেখে গিয়েছিলাম, পাচ্ছি না।”
“কী
জিনিস?”
“একটা
নতুন ধরনের গোলাপফুলের চারা।”
“চারা?
তুই আবার চারা পেলি কোথা থেকে? আর স্কুল থেকে এসে আগে জামা পাল্টে, হাতমুখ ধুয়ে,
খাবার খাবি কোথায়, না, কোথাকার চারাগাছ নিয়ে পড়লি!”
“আগে
বল, উপরে তুমি গিয়েছিলে?”
“না,
আমি যাইনি। মিনতি হয়তো গিয়েছিল।”
“সে
কোথায়?”
“সে
বাড়ি চলে গেছে।”
যাহ্!
মিনতিমাসি এক বেলা কাজ করে, সকালে। আবার
সেই কাল সকালে আসবে। তার বাড়ি অনেক
দূরে। মা একটু ভেবে আবার বলল, “আর এ.সি. সারানোর লোক এসেছিল একবার
দেড়টার সময়ে। ওরা উপরে গিয়েছিল
আউটলেট মেশিন পরিষ্কার করতে।”
“এ.সি. সারানোর লোক? কোম্পানি থেকে এসেছিল?”
“হ্যাঁ।”
“ফোন নম্বর আছে?”
“সে তো কোম্পানির নম্বর। তাতে
ফোন করলে কি আর সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাবে?”
“তাহলে কী হবে?”
“তোর কী হয়েছে বল তো?”
রিমির
যে কী হয়েছে সেটা বুঝিয়ে বলা একটু মুশকিল। এদিকে ঝিনিয়া অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে
ছিল এক কোণে। শেষে এগিয়ে এসে অবিশ্বাসী চোখে তার
পিঠে দু’বার চাপড় মেরে চলে গেল। কালকে
স্কুলে গিয়ে নিশ্চয়ই অন্য বন্ধুদের বলবে যে রিমি একটা গুলবাজ। দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকে
ভিতর থেকে লক করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল ধপাস করে। মা বাইরে থেকে চ্যাঁচামেচি
করছে, খেয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু ওর সে ডাক কানে ঢুকছে না। শুধু মনে পড়ছে সেই
ফুলটির কথা।
ফুলটি
ভারি অদ্ভুত ছিল। রঙটাও একদম অন্যরকম। সোনালির
উপর বেগুনির ছিট। পাপড়িগুলির ভিতর দিকটা আবার নীলচে। প্রথম
এক ঝলক দেখলে মনে হবে এটা নতুন ধরনের কোনও বড়ো প্রজাতির গোলাপ। কিন্তু
খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে আমাদের চেনা কোনও গোলাপফুলের সাথে এর খুব একটা মিল নেই।
রিমি
প্রতিদিন সকালে উঠে একবার করে ছাদে ঘুরে যায়। ছাদের
টবে বসানো বিভিন্ন ফুল আর বাহারি গাছগুলি তার খুব প্রিয়। মায়ের
সাথে সেও হাত লাগায়, টবের মাটি খুঁচিয়ে দেওয়া, জল দেওয়া। আজকে মা উপরে
আসেনি। ব্যস্ত ছিল অন্য কোনও কাজে। সে একাই
দাঁত মাজতে মাজতে টবগুলির মাটি খুঁচিয়ে জল দিয়েছে। হঠাৎ
কোণে ছাদের কার্নিশের উপরে চোখটা আটকে গেল। ডাঁটি
সমেত ফুলটা একটা সরু ফাটলের মধ্যে থেকে সোজা বেরিয়ে আছে। সব থেকে
অবাক ব্যাপার, ডাঁটিটাতে হাত দিতেই লো-ভোল্টেজ ইলেকট্রিকের শকের মতো আঙুলের ডগায় একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল। হাতটা
এক ঝটকায় সরিয়ে নিয়ে ভাবল কাঁটা ফুটেছে বুঝি।
কিন্তু না, এতে তো কাঁটা নেই! আবার যখন হাত দিল তখন আর কিছু হল না। ডাঁটি
সমেত ফুলটা ফাটল থেকে টেনে তুলতে গিয়ে দেখল বেশ শক্ত হয়ে এঁটে আছে। খুব
জোরে টানতে ফাটলের ভিতর থেকে শিকড় সমেত উঠে এল। আশ্চর্য,
এটা তাহলে একটা চারাগাছ! না হলে শিকড় থাকবে কেন?
অবাক
ব্যাপার! শিকড়গুলি ছিঁড়ে যেতেই পাতাগুলি কাঁপতে শুরু করল তিরতির করে। কাঁপুনিটা
বাড়তে লাগল। তারপর ধীরে ধীরে গুটিয়ে যেতে শুরু করল। পাতাগুলি
ফুলটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে মুড়ে ফেলে একটা কমলালেবুর আকার নিল। তারপর রঙটা আস্তে
আস্তে কালচে হয়ে শেষে সাদা সরু কাঠির উপর ধুসর কালো একটা বলের মতো হয়ে গেল।
রিমি
এই কাণ্ড দেখে একটু ভয় পেয়েছে। লজ্জাবতী-লতার
পাতায় আঙ্গুল দিলে সেগুলি সঙ্গে সঙ্গে মুড়ে যায়, তা দেখেছে ও। কিন্তু
অন্য কোনও গাছের পাতায় বা ফুলে এত তাড়াতাড়ি এরকম প্রতিক্রিয়া হয়, তার জানা ছিল না। শিকড়
ছিঁড়ে যেতে কি এটা মরে গেল নাকি! কোণে একটা ছোট্ট খালি টব পড়েছিল। সেটাতে
কিছু মাটি ভরে শিকড় সমেত ডাঁটিটা পুঁতে একটু জল দিয়ে মাটিটাকে নরম করে দিল। তারপর
অনেকক্ষণ সেটাকে লক্ষ করল, কিন্তু কিছুই হল না। এটা
কি সত্যি সত্যি মরে গেল নাকি? ধুর! মনটা কেমন
হচ্ছে। ফুলটা শিকড় সমেত না তুললেই ভালো হত। এদিকে
মা ডাকছে। নিচে গিয়ে তাড়াতাড়ি তৈরি হতে হবে। স্কুলবাস
এসে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। টব সমেত
ফুলটিকে কার্নিশের পাশে এক কোণে রেখে চলে গেল।
স্কুলে
গিয়েও শান্তি নেই। মন পড়ে আছে সেই অদ্ভুত গোলাপটার কাছে। এরকম
ফুল তো সচরাচর দেখা যায় না। সেও
এর আগে কখনও দেখেনি। অন্য কেউ দেখেছে
বলেও শোনেনি। এমন অবাক ঘটনা অন্য কারোর সাথে শেয়ার
করতে না পারলে যে কী ভীষণ অস্বস্তি হয় তা সে আগে জানত না। এখন
বেশ টের পাচ্ছে। অঙ্কের ক্লাসে দুটো অঙ্ক ভুল করল, ইতিহাসের ক্লাসে উত্তর দিতে না পেরে বেঞ্চির উপর দাঁড়াতে হল, ইংরাজির ক্লাসে বানান ভুলের জন্য ম্যাডাম বকা দিলেন। আজকে
কেন যে সব উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছে! টিফিনের সময় সুযোগ পেয়ে ঝিনিয়াকে ব্যাপারটা বলল। সে তো
প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইল না। তারপর
অনেক দিব্যি-টিব্যি কেটে বলতে সে বলল, “ঠিক আছে, আমি আজকে বিকালে তোদের বাড়ি যাব। তখন
দেখা যাবে সেই অদ্ভুত গোলাপফুল।”
কিন্তু
তাকে ডেকে এনে রিমি নিজেই মিথ্যেবাদী হয়ে গেল।
।। দুই।।
“আসুন
মিঃ কানোরিয়া, স্যার আপনাদের জন্য উপরে ল্যাবরেটরিতে অপেক্ষা করছেন।”
একটা
দামি গাড়ি পের্টিকোর নিচে এসে দাঁড়াতে দু’জন সম্ভ্রান্ত লোক নামল। একজন যুবক তাঁদেরকে
নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরের বড়ো ঘরে গিয়ে ঢুকল। ঘরের মধ্যে একটা টেবিলের উপরে গোল আলো
জ্বলছে। সেখানে একজন বয়স্ক মানুষ কম্পিউটারের সামনে চেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে কিছু
লিখছেন। মাথায় সাদা চুল, গালে বেশ কিছুদিনের
না কাটা সাদা দাড়ি, চোখে পুরনো ফ্রেমের চশমা। বাকি সারাঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন
আধুনিক বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম।
“নমস্কার, প্রফেসার গুছাইত।”
আওয়াজ
শুনে চোখ তুলে তাকালেন প্রফেসর। “আসুন,
বসুন, কানোরিয়াজী। বলুন,
কী মনে করে?”
চোখটা
একবার চারদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে সামনে রাখা চেয়ারটিতে বসতে বসতে কানোরিয়া বললেন, “স্যার, আমি তো ফোনেই বলেছি আপনাকে। আপনি তো কোনও কথাই শুনতে চাইলেন না।
বাধ্য হয়ে এত দূর আসতে হল। তবে এই সুযোগে আপনাকে সামনাসামনি দেখা হয়ে গেল। আমাকে
এবার আর ফেরাবেন না।”
কানোরিয়াকে
থামিয়ে প্রঃ গুছাইত বলে উঠলেন, “প্লিজ, আবার
সেই একই কথা আমাকে বলবেন না। আমি তো বলেছি, যে ঐ বিষয়ে আমি কোনও
কথা বলতে চাই না। কেন শুনছেন না
আপনি?”
“আমার অফারটা আমি ডবল করছি। ফোনে যা
বলেছিলাম আপনাকে আমি ওর দ্বিগুণ টাকা দেব।”
“আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? শুধু শুধু এত টাকা কেন খরচ করবেন? আর আপনি কী করে নিশ্চিত হচ্ছেন যে জিনিসটা আমার কাছেই আছে?”
“আমাকে যতটা বোকা ভাবেন ততটা নই স্যার। আমি খোঁজ নিয়েছি, ঐ পাথরটা এই পৃথিবীর জিনিস নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে যে ‘রাপা-এল্টি’ দ্বীপে আপনারা গিয়েছিলেন
উল্কাপাতের গর্তটা দেখতে, সেখানে কী ঘটেছিল সব আমি জানি।”
প্রফেসর
ভ্রূ নাচিয়ে বললেন, “তাই নাকি! কী হয়েছিল সেখানে?”
“মোট
পাঁচজন বিজ্ঞানী ছিলেন। প্রায় একশো মিটার
ব্যাসার্ধের গর্ত তৈরি হয়েছিল উল্কাপাতের ফলে। গর্তে আপনারা সবাই নেমেছিলেন। ঠিক
তো?”
প্রঃ
গুছাইত চশমার ফ্রেমের উপর দিয়ে এক দৃষ্টে কানোরিয়ার চোখে চোখ রেখে শুনছেন। “বলে যান, শুনছি।”
“উল্কাটা প্রায় পুরোটাই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু
সেখান থেকে একটা ছোটো কালো পাথর কুড়িয়ে একজন পকেটে পুরেছিল। যিনি
দেখেছেন, নিজে মুখে বলেছেন আমাকে কথাটা।”
“আচ্ছা? তা সে ব্যক্তিটি কে যে তোমাকে বলেছেন?
আর আমি তো নিইনি। তাহলে
আমার কাছে কেন এসেছ?”
“আপনি তখন নেননি, এটা সত্যি। কিন্তু
ফেরার পথে, ‘ফ্রেঞ্চ পলিনেসিয়া’র ‘পাপিটে’তে আপনারা যে হোটেলে রাত্রিবাস করেছিলেন,
সেখানে কী ঘটেছিল একটু বিস্তারিত বলবেন?”
“আপনিই
বলুন। দেখছি সব খবরই তো আছে আপনার কাছে।”
ঠোঁটের
কোণে একটা তির্যক হাসি ঝুলিয়ে রেখে মিঃ কানোরিয়া বললেন, “আপনার পাশের রুমেই ছিলেন ডঃ
সিনাই কু, ইন্দোনেশিয়ার বিজ্ঞানী। আপনি
নিশ্চয়ই জানেন যে তিনি আর ফেরার প্লেন ধরতে পারেননি।”
“হ্যাঁ, তিনি হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন।”
“না, মিঃ গুছাইত। তাঁকে
রাত্রিবেলা সমুদ্রের ধারে ডেকে খুন করা হয়েছিল।”
“তাই নাকি? তা কে খুন করেছিল তাঁকে? আমি তো জানি তিনি নিরুদ্দেশ।”
“এটা ঠিক যে তাঁর লাশটা পাওয়া যায়নি। তবে
সন্দেহের তালিকায় তো বাকি ক’জন থেকেই যায়। তাই
নয় কি? আর ভিকটিমের কাছেই যখন ছিল সেই মূল্যবান জিনিসটি, আপনি কি
অস্বীকার করতে পারেন এই হত্যার সাথে আপনি কোনওভাবে যুক্ত নন?”
প্রফেসর
শান্ত গলায় উত্তর দিলেন, “তা, আপনি কি ইন্টারপোলের
তরফ থেকে তদন্ত করতে এসেছেন?”
“হা হা হা... গুড জোক, মিঃ গুছাইত!
না, আমি ইন্টারপোলের তরফ থেকে আসিনি। শুধু
একটা ভিডিও আপনাকে দেখাতে চাই।” বলে পকেট থেকে একটা ফোন বের করে চালিয়ে দিলেন।
তাতে
দেখা গেল প্রফেসার গুছাইত হোটেলের একটা রুম থেকে বেরিয়ে করিডোর দিয়ে চলে গেলেন।
ছবিটা সিসি টিভি ক্যামেরা থেকে নেওয়া। সময় রাত আড়াইটে। তার কিছুক্ষণ পর অন্য একটি
ঘর থেকে আর একজন মাঝবয়সী লোক বেরিয়ে এল।
কানোরিয়া
বলল, “এনাকে চিনতে পারছেন তো? ডঃ সিনাই কু।”
এর
পরের ছবি তার পনেরো মিনিট পরে হোটেলের গার্ডেনে। প্রঃ গুছাইত আর সিনাই কু অন্ধকারের
মধ্যে একটা গাছের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। শব্দ শোনা না গেলেও, দু’জনেই যে বেশ
উত্তেজিত হয়ে আছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর দু’দিকে চলে গেলেন দু’জনে। এর
প্রায় পনের মিনিট পরে আবার করিডোরের ক্যামেরায় প্রঃ গুছাইতকে দেখা গেল। তিনি হোটেলের
করিডোর দিয়ে হেঁটে এসে নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন।
এরপর
ফোনটি বন্ধ করে পকেটে রেখে কানোরিয়া প্রশ্ন করলেন, “এর পরেও বলবেন ডঃ সিনাই কু-এর বেপাত্তা
হওয়ার পিছনে আপনার কোনও হাত নেই?”
“দেখুন
মিঃ কানোরিয়া, এই ভিডিওটা ফ্রেঞ্চ পলিনেসিয়ার পুলিশ আমাকে আগেই দেখিয়েছে। আমি আমার
বক্তব্য তাদেরকে জানিয়েছি। আপনার যদি সেগুলি জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে উকিলকে বলুন
তাদের সাথে যোগাযোগ করতে। আমাকে বিরক্ত করবেন না প্লিজ।”
শেষের কথাগুলি বেশ কর্কশভাবেই বললেন প্রঃ গুছাইত।
“আপনি
শুধু শুধু রাগ করছেন। যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন আপনি
উপযুক্ত মূল্য নিয়ে জিনিসটা আমাকে দিয়ে দিন। কাকপক্ষীতেও টের পাবে না, কথা দিলাম।”
চেয়ার
থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্রফেসার বললেন, “একই কথা বার বার বলতে আমার খারাপ লাগে। তাছাড়া ওটা
পেলেও আপনি কোনও কাজে লাগাতে পারবেন না। এখন আপনি
আসুন। নমস্কার।”
“বেশ। তবে একটা ইনফরমেশন
আপনাকে দিয়ে যাই, আপনার দুই বন্ধু প্রফেসার জিনিথ লন্ডনে আর প্রফেসর
ওমর ‘দার-এস-সালাম’এ মারা গেছেন। দু’জনেই
আলাদা আলাদা সময়ে বিশ্রী রোড এক্সিডেন্টের শিকার বলে খবর আছে।
আপনি একটু সাবধানে থাকবেন।”
“আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন?”
“না স্যার, আমি আপনাকে খুবই শ্রদ্ধা করি। তবে
এটুকু বলে যাচ্ছি, ও-জিনিস আপনার কাছে রাখতে পারবেন না। এখন
পাঁচজন জানে, পরে দশজন জানবে। জিনিসটা
তো পৃথিবীতে একটাই। ওটাকে প্রোটেক্ট করার মতো ক্ষমতা
আপনার নেই। আমাকে যদি জিনিসটা গোপনে দিয়ে দিতেন, তাহলে আপনি প্রচুর
টাকা আর নিরাপত্তা, দুইই পেতেন।”
“আমার সাদা চুল দেখে আপনি চিন্তা করবেন না মিঃ কানোরিয়া। আপনার
কাছে তথ্য আছে কি না জানি না, তবে আমি বলে দিচ্ছি জেনে রাখুন, আমি
বৈজ্ঞানিক হলেও আমার ছোটোবেলা কেটেছে সৈনিক স্কুলে।
দেরাদুন মিলেটারি একাডেমি থেকে পাশ করে ইসরোতে যোগ দিয়েছিলাম। অতএব আমাকে আপনি বৃথাই
ভয় আর লোভ দেখানোর চেষ্টা করছেন।”
।। তিন।।
বুবাইয়ের
সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। তারপরেই
জয়েন্ট। তাই অনেক রাত জেগে পড়াশোনা করছে
ইদানিং। ঘড়িতে তখন রাত প্রায় একটা। গোটা
পাড়া নিঝুম, নিস্তব্ধ। শুধু
বোসেদের কালো ভুলোটা মাঝে মাঝে চেঁচিয়ে উঠছে। তিনতলার
চিলেছাদে বুবাই একাই পড়াশোনা করে। ছোটোবেলা
থেকেই তার ভয়-ডর খুব কম। পাড়ায় ডাকাবুকো
ছেলে বলেই তার নাম ডাক। ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসের
জটিল অঙ্কের মধ্যে ডুবে ছিল তখন। যদিও
সবক’টা অঙ্কই তার করা। তবুও স্যার প্রাক্টিস করতে বলেছেন
সময় কমানোর জন্য। একই অঙ্ক বার বার করতে আর ভালো লাগে না। এর মধ্যে নতুনত্ব কিছুই
নেই।
আচমকা
জানালা দিয়ে একটা নীল আলো ঘরে এসে পড়ল। প্রথমে
খেয়ালই করেনি ও। একটু পরে ঘরটা বেশ ঠাণ্ডা হয়ে যেতে চোখ
তুলে দেখল নীল আভায় ভরে গেছে গোটা ঘর। অবাক
হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে দেখল। আলোটা
আসছে আকাশ থেকে। আশ্চর্য! আলোটা যেন আস্তে আস্তে হালকা থেকে ঘন হচ্ছে। সাহসী
যুক্তিবাদী বুবাইয়ের বুকের ভিতরটাও ঢিপঢিপ করছে। ব্যাপারটা
কী? কোনও ভৌতিক কাণ্ড নাকি? জানালার পাশে দাঁড়িয়ে
আছে ঠিকই, কিন্তু হাত-পা আর নাড়তে পারছে না। যেন
শক্ত পাথর হয়ে গেছে।
বুবাই
লক্ষ করল, নীল আলোটার মধ্যে একটা ঢেউয়ের মতো তরঙ্গ আছে। ধীরে
ধীরে আলোটা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে ঘরের মেঝেতে। তারপর
বৃত্তাকারে ঘুরতে লাগল, অনেকটা টর্নেডোর মতো। বুবাই
চোখ বড়ো বড়ো করে দেখছে। কী হচ্ছে
এটা? শেষে আলোটা ঘনীভূত হয়ে একটা আড়াই ফুটের পুতুলের আকার নিল। স্বচ্ছ
নীলাকার একটা অবয়ব। সরু সরু হাত-পা, মাথাটা শঙ্কুর মতো লম্বা, চারদিকে চারটে চোখ। একটানা
তীক্ষ্ণ ঝিঁঝিঁর মতো আওয়াজ কানে তালা ধরিয়ে দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ
পর সয়ে গেল শব্দটা। সলিড এলইডি লাইটের মতো জিনিসটা এবার হাতদুটো
নাড়তে শুরু করেছে। তারপর পরিষ্কার বাংলায় শোনা গেল, “আমার নাম ‘পি.আর.টি.’। আমি ‘পিপিটিটি’ গ্রহ থেকে আসছি।”
কম্পিউটার
থেকে শব্দ বের হলে যেমন শোনায়, তেমন কেটে কেটে বের হচ্ছে কথাগুলি।
“এখান থেকে অনেক দূরে আমাদের গ্রহ। এই শহরের
নাম কি কলকাতা?”
বুবাই
ভয়ে ভয়ে মাথাটা শুধু উপরনিচে নাড়ল।
“তাহলে ঠিক জায়গাতেই এসেছি আমি। তোমাকে
বিরক্ত করার জন্য প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি
একটি বিশেষ দরকারে এসেছি তোমাদের গ্রহে। একটা কালো ‘কম্পফ্রোটিক’
ধাতুর তৈরি ছোট্ট কিউবের মধ্যে সাঙ্কেতিক ভাষায় কিছু তথ্য আছে। তোমরা যেমন কম্পিউটার
হার্ড ডিস্ক বা চিপ ব্যবহার কর, অনেকটা সেরকম। এখন
সমস্যা হচ্ছে, একটা আণবিক ঝড়ে টাইম হোলের মধ্যে দিয়ে জিনিসটা চলে এসেছে পৃথিবীতে।
জিনিসটা যে কোনওভাবেই হোক উদ্ধার করতে হবে।”
বুবাই
জিজ্ঞাসা করল, “আপনি কি সেই গ্রহের বাসিন্দা?”
“না, আমি কোনও প্রাণী নই। আমি
হলাম তোমাদের ভাষায় ‘ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রোবট’, বিশেষ ধরনের আলোর তরঙ্গ দিয়ে তৈরি। তাই
দ্রুতগতিতে যাতায়াত করতে পারি। আমাকে ‘পিপিটিটি’ গ্রহের বাসিন্দারা এখানে পাঠিয়েছে। অনুসন্ধান
করে জানা গেছে যে এখন সেই কালো কিউবটা এই গ্রহের এই শহরেই আছে। আমাদের
পাঠানো বিশেষ ধরনের রাডার একদিন আগেও আমাকে এই শহর থেকে সংকেত পাঠিয়েছে। কিন্তু
এই মুহূর্তে সেই সংকেত আমি আর পাচ্ছি না। এদিকে
সময়ও হাতে বেশি নেই। এখন তোমাকে আমার
একটা সাহায্য করতে হবে।”
“আমি কী সাহায্য করব?”
“কালো কিউবটা মহাকাশে ঘুরতে ঘুরতে সম্ভবত কোনও পাথরখণ্ডের সাথে এই গ্রহে এসে
পড়েছে কিছুদিন আগে। যাকে
তোমরা উল্কাপাত বল। তারপর আমাদের মূল মহাকাশযানের স্ক্যানার
এই গ্রহ থেকে স্থির সিগনাল পায়। কিন্তু
তখন আমরা অনেক দূরে ছিলাম। আসতে
তো সময় লাগবে, তাই লোকাল ইউনিটকে বলে একটা বিশেষ ধরনের রাডার
তাড়াতাড়ি এখানে পাঠানো হয়। সেই
রাডারের সাথে সবসময় যোগাযোগে ছিলাম আমি।”
“দাঁড়াও দাঁড়াও, তোমার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। এ শহরে
তো কোনও বড়ো উল্কাপাত হয়নি!” তাকে থামিয়ে বুবাই জানাল।
“উল্কাটা পড়েছিল প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে একটা দ্বীপে। কিছুদিন
পরে সেটাকে কেউ এই শহরে নিয়ে এসেছে। এখন
প্রথমে আমাকে সেই রাডারটা উদ্ধার করে তাকে অ্যাকটিভ করতে হবে, তারপর সেই কিউবটা উদ্ধার করা যাবে। আর এখানেই
তোমার একটু সাহায্য আমার লাগবে।”
“কীরকম?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল বুবাই।
“একটা অঙ্ক তোমাকে সমাধান করে দিতে হবে।”
“মানে?”
“বলছি, বুঝিয়ে বলছি তোমাকে। বিজ্ঞানের
সমস্ত আবিষ্কারই কোনও না কোনও অঙ্কের সূত্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, সেটা জান তো? অঙ্ক ছাড়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অচল। আমাদের
প্রেরিত রাডারটা যদি কোনও কারণে কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে তাকে খুঁজে বের করার জন্য
একটা প্রোগ্রাম আমার সিস্টেমে ভরা ছিল। কিন্তু
আলোর বেগে আসার সময়ে একটা মৃত নক্ষত্রের চৌম্বকক্ষেত্রের কাছাকাছি চলে আসায় আমার কিছু
প্রোগ্রাম মুছে গেছে। তাই সেই রাডারটাকে
আমি আর খুঁজে পাচ্ছি না। তবে এই অঙ্কটা
তুমি যদি সমাধান করে দাও তাহলে আমার খুব সুবিধা হয়।”
“কিন্তু, তোমাদের গ্রহের অঙ্ক আমি সমাধান করব কী করে?
শুনে তো মনে হচ্ছে যে তোমাদের বিজ্ঞান অনেক উন্নত।”
“আরে না না, এমন কিছু কঠিন নয়। অঙ্কের
কিছু ইউনিভার্সাল কোড আছে। আমার
মনে হয় তোমাদের ঐ ক্যালকুলাসের থিওরি দিয়েই এর সমাধান করা যাবে।
আমাদের গ্রহের মানুষেরা যদিও অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করে। আপাতত আমি তোমাদের ভাষায় এটাকে
ট্রান্সলেট করে দিচ্ছি। তুমি একটু মন
দিয়ে চেষ্টা করে দেখ।”
বলতে
বলতেই অঙ্কের কিছু ইকুয়েশন হাওয়ার মধ্যে সাদা ধোঁয়ার লাইন দিয়ে তৈরি হতে শুরু হল। বুবাই
সেগুলো তাড়াতাড়ি খাতায় নোট করে নিল। নোট
করার পরে মন দিয়ে দেখে বুঝতে পারল যে এটা সমাধান করা অসম্ভব কিছু নয়। একটু
সময় লাগবে, কিন্তু হয়ে যাবে।
“তাহলে তুমি চেষ্টা কর, আমি ততক্ষণ তোমাদের শহরটাতে যতটা
পারি খুঁজে আসি। মনে রাখবে হাতে
কিন্তু খুব বেশি সময় নেই।”
।। চার।।
রিমি
কালকে সারাদিন খুঁজেও গোলাপটাকে পায়নি। গোটা
ছাদ তন্ন তন্ন করে চার-পাঁচবার খুঁজেছে। নিচে
কেউ ফেলে দেয়নি তো? এই ভেবে আশেপাশের সবক’টা গলি, এমনকি ডাস্টবিন পর্যন্ত খুঁজে এসেছে। কিন্তু
কোথাও পাওয়া যায়নি।
পরের
দিন সকালে মিনতিমাসি আসতেই তাকে জিজ্ঞাসা করল। সে বলল, “আমি কালকে ছাদে গিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু কোনও গোলাপের চারা তো দেখিনি।”
“আরে তখন তো ওটা গোলাপের চারা ছিল না। একটা
সাদা কাঠির মাথায় কালো রঙের বলের মতো।”
“এই তো কালকে থেকে বলছিস গোলাপের চারা, আবার কালো বল হল
কোথা থেকে?” মা পাশ থেকে জিজ্ঞাসা করল।
“প্রথমে ওটা গোলাপের চারাই ছিল। তারপর
শিকড়গুলো ছিঁড়ে যেতে গুটিয়ে একটা বল হয়ে গেল। আমার
নিজের চোখের সামনে হল। সত্যি বলছি।”
মিনতি
চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, “এরকম আবার হয় নাকি? বাপের
জম্মে শুনিনি।”
“আমিও তো শুনিনি,” মাও সায় দিল।
“তোমাদেরকে আমি বোঝাতে পারব না। কিন্তু, জিনিসটা আমার চাই।”
“আমার মনে হয়, দিদিমণি ভোরবেলা কোনও স্বপ্ন দেখেছে।”
“আমি কি অতই ছোটো আছি, যে স্বপ্ন দেখে চেঁচামেচি করব?”
শেষে
রিমির অনেক অনুনয় বিনয়ের ফলে মা এ.সি.-র কোম্পানিতেও ফোন করল। কিন্তু
যথারীতি কিছুই জানা গেল না।
আজকে
স্কুল ছুটি, তাই বিকালে বন্ধুদের সাথে দেখা হল পাড়ার পার্কে। ইতিমধ্যে
সবাই জেনে গেছে রিমির অদ্ভুত গোলাপের কথা। কিন্তু
কেউ বিশ্বাস করেনি। মিনতিমাসি নাকি এটাও রটিয়ে দিয়েছে যে
গোলাপটা নাকি সোনার ছিল। সেই নিয়েই পার্কে
খুব গোলতাল চলছে। সবাই রিমির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর ফিসফিস
করছে। বন্ধুরাও সবাই জিজ্ঞাসা করছে, কী রে, তোর গোলাপটা পেলি? হারিয়ে
গেল? যাহ্, তুই তো আর একটু হলেই গোলাপসুন্দরী
হয়ে যেতিস! হি হি হি...
রিমি
শেষে মনখারাপ করে পার্কের কোণে রাধাচূড়াগাছটির নিচে চুপ করে বসেছিল। কিছুক্ষণ
পরে দেখল, ঘন্টুদার বয়সী একটি অপরিচিত ছেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
সামনে
এসে ছেলেটি প্রশ্ন করল, “তোমার নাম রিমি?”
“হ্যাঁ।”
“আমার নাম বুবাই। আমি
আসছি বোসপুকুর থেকে। তোমার সাথে একটু
দরকার ছিল।”
“আমার সাথে কী দরকার?”
“শুনলাম, তুমি নাকি একটা গোলাপের চারা হারিয়ে ফেলেছ?
আমি জানি সেটা কোথায় আছে।”
“তুমি কী করে জানলে?”
“সে অনেক কথা। বলতে
একটু সময় লাগবে।”
বুবাই
কালকে রাতের সবকথা রিমিকে বুঝিয়ে বলল। রিমি শুধু হাঁ করে শুনে গেল।
শেষে বলল, “এ তো একেবারে সায়েন্স ফিকশনের গল্প!”
“না, এটা বাস্তব।”
“তুমি তাহলে সেই কঠিন অঙ্কটা সলভ করতে পারলে?”
“হ্যাঁ, খুব শক্ত নয়। মিনিট
চল্লিশ সময় লেগেছিল। যে উত্তরটা পাওয়া
গেল, সেটা ‘পি.আর.টি.’কে দিলাম। সে তার
সিস্টেমে উত্তরটা আপলোড করতেই সিগন্যাল পেতে শুরু করল।”
“তাহলে ঐ সোনালি গোলাপটাই কি ওদের রাডার?”
“হ্যাঁ, আর সেটা এখন আছে তোমাদের দুটো বাড়ি পরে পুরকাইতদের
বাড়িতে। তোমাদের ছাদ থেকে ঐ কালো বলের মতো জিনিসটা
কেউ নিচে ফেলে দিয়েছিল। ওদের বাড়িতে
একটা বাচ্চা ছেলে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে সেটা কুড়িয়ে বাড়ি নিয়ে যায়।”
“বুঝেছি, পিকলু নিয়েছে। এখন
তাহলে কী হবে?”
“আমি তো এ-পাড়ার ছেলে নই, তাই ওদের বাড়িতে আমি চট করে
ঢুকতে পারব না। কিন্তু তুমি
পারবে। পিকলুর কাছ থেকে যেভাবেই হোক ঐ কালো বলটা
ভুলিয়ে ভালিয়ে নিতে হবে। আমরা বাড়ির বাইরে
অপেক্ষা করছি, তুমি যাও।”
“তোমরা মানে আর কে আছে তোমার সাথে?”
“কেন ‘পি.আর.টি.’! ওহো, আমি তো তোমাকে বলতে
ভুলেই গেছি। ‘পি.আর.টি.’কে শুধু রাত্রেই দেখা যায়, সূর্যের আলোয় নয়। তবে
চোখ বন্ধ করলে ওর শব্দ শুনতে পাবে।”
রিমি
চোখটা বন্ধ করতেই শুনতে পেল, “রিমি, তাড়াতাড়ি
যাও, ওরা আজকে রাতের মধ্যেই এসে পড়বে। আমাকে
তার আগেই কালো কিউবটা উদ্ধার করতেই হবে।”
একটু
পরে রিমি পুরকাইতদের বাড়িতে ঢুকল। পিকলু
ক্লাস টু’তে পড়ে। প্রচণ্ড ছটফটে, দুরন্ত ছেলে। জিজ্ঞাসা
করল, “কাকিমা, পিকলু কোথায়?”
“ও তো উপরে নিজের ঘরেই আছে।”
দোতলায়
পিকলুর ঘরে এসে দেখল, সে নতুন একটা কম্পিউটার গেম নিয়ে ব্যস্ত।
“এই পিকলু, তোর জন্য আচার এনেছি, খাবি?”
রিমি
জানে তেঁতুলের আচার পিকলুর খুব পছন্দ। তাই
বাড়ি থেকে দৌড়ে গিয়ে ওর জন্য আচার এনেছে। সে চোখ গোল
গোল করে বলল, “দাও।”
পনেরো
মিনিটের মধ্যেই রিমি সেই ডাঁটি সমেত কালো বল হাতে বেরিয়ে এসে দেখল, বুবাই রাস্তার উলটোদিকে দাঁড়িয়ে আছে।
“পেয়েছ? বাহ্, তাড়াতাড়ি হয়ে গেল!”
“এখন কী?”
“তোমাদের ছাদে একবার যাওয়া যাবে, যেখানে এটাকে প্রথম দেখেছিলে?”
“চল।”
মা এখন
একতলার ঘরে রান্নার ক্লাস করাচ্ছে। রিমি
বুবাইকে নিয়ে চুপি চুপি সোজা তিনতলার ছাদে চলে এল। তখন
সন্ধে নামছে আস্তে আস্তে। বুবাই রিমির
হাত থেকে সেটা নিয়ে ছাদের কার্নিশের ফাটলে বসিয়ে দিল।
।। পাঁচ।।
রাতের
অন্ধকারে বারো ফুট উঁচু প্রাচীরের উপরে কাঁটাতারের লাইনগুলি কেটে পড়ে গেল। নিঃশব্দে
প্রাচীর ডিঙিয়ে ঢুকল কয়েকজন লোক, কালো পোষাকে মোড়া। ক্ষিপ্র
গতি, শরীরে গোঁজা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। একজন
চুপিসাড়ে এগিয়ে গেল নেপালি দারোয়ানের দিকে। অন্যরা
বড়ো বড়ো গাছের পিছনে অন্ধকারের মধ্যে মিশে গেল।
“স্যার, আমার মনে হয় মিঃ কানোরিয়ার কথাটা অত হালকাভাবে
না নিলেই ভালো হত,” টেবিলের উলটোদিকে বসে রঞ্জন কথাটা তুলল
প্রথমে।
প্রফেসার
গুছাইত কাজ করতে করতে শান্ত গলায় শুধু বললেন, “হুম।”
“ওরা খুব সাংঘাতিক লোক। আমি
খোঁজ নিয়েছি। ওঁর কানেকশান ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়াদের
সাথে আছে। প্রঃ সিনাইকুকে নাকি ওদের লোক আগে থেকেই ফলো
করছিল। ঐ পাথরটার জন্য তিনি খুন হয়েছেন। প্রফেসার জিনিথ আর ওমরকেও খুন করেছে। কিন্তু
পাথরটা ওদের কাছে পায়নি। নেক্সট টার্গেট
আপনি।”
“জানি তো। আমি মরতে ভয়
পাই না। তোমার যদি ভয় লাগে, আমার কাছে তুমি কাজ ছেড়ে দিতে পার।”
“না স্যার, আমি সে কথা বলিনি। আমি
আপনার নিরাপত্তার কথাটা ভাবছিলাম।” কিছুক্ষণ চুপ
থেকে সে আবার প্রশ্ন করল, “কী আছে স্যার, ঐ পাথরটার মধ্যে?”
“সেটা জানতে পারলে তো সমস্যা মিটেই যেত। তাছাড়া
ওটা পাথর নয়। কোনও ধাতু। তবে
আমাদের পৃথিবীতে ঐ ধাতু পাওয়া যায় না। হাল্কা
অথচ প্রচণ্ড শক্ত। তবে আমার ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে এটা
অন্য গ্রহের প্রাণীদের দ্বারা তৈরি। এর কার্যকারিতাও
তারাই জানে। বোঝা যায় এর বিজ্ঞান অনেক উন্নত। পৃথিবীর
মানুষ এটাকে কোনওভাবে কাজে লাগাতে পারবে না।”
“মানে, ঠিক বুঝলাম না।”
“ধর, অন্য গ্রহের কোনও প্রাণী আমাদের তৈরি বন্দুকের একটা
গুলি কুড়িয়ে পেল। সেটা দিয়ে সে
কী করবে? সে তো বন্দুক কী জিনিস তাই জানে না। তারপর
যেমন কম্পিউটারের সিডি, পেনড্রাইভ বা চিপ, সেটা তো আমরাই কাজে লাগাতে
পারব, অন্য কোনও সভ্যতার লোকেরা এটা কী জিনিস তাই তো বুঝতে পারবে
না। এটাও সেরকমই কিছু একটা হবে।”
“তাহলে আপনি এই জিনিসটা কানোরিয়াকে দিয়ে দিলেই বা অসুবিধা কোথায়? ওরা তো কিছুই করতে পারবে না।”
“প্রথমত, দিতে হলে আমি কোনও মিউজিয়ামে দেব। দ্বিতীয়ত, আমার একটা সন্দেহ আছে। সেটা
যতক্ষণ না মিটছে ততক্ষণ এটা আমার কাছেই থাক।”
“কী সন্দেহ, স্যার?”
“আমি খুব সঠিকভাবে বলতে পারব না। হয়তো
এই জিনিসটা পাওয়ার জন্য তারা একদিন না একদিন এখানে ঠিকই আসবে।”
“এসে গেছে।”
এই আওয়াজটা
পিছন থেকে এল। দু’জনেই চমকে উঠে দেখল, স্বচ্ছ ত্রিমাত্রিক কাঁপা কাঁপা ছবি। একটি সতেরো-আঠারো
বছরের ছেলে আর একটি এগারো-বারো বছরের মেয়ে তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে
আছে। তাদের মাথার উপরে একটি নীল আলোর স্বচ্ছ
পুতুলের মতো অদ্ভুত জিনিস ভাসছে। ছেলেটি বলল, “এর নাম পি.আর.টি.। এ ‘পিপিটিটি’ গ্রহ থেকে আসছে। আপনার
নাম কি প্রফেসর কণাদ গুছাইত?”
শব্দটা
আসছে একটু ইকো হয়ে।
প্রফেসর
উঠে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলেন, “তোমরা কারা?”
“আমার নাম বুবাই, আর এ রিমি। আপনার কাছে যে
কালো কিউবটা আছে সেটা এদের গ্রহ থেকে এখানে চলে এসেছিল। এ সেটা
ফিরত নিতে এসেছে।”
এরপর
বুবাই আর রিমি প্রথম থেকে ঘটনাটা প্রফেসরকে গুছিয়ে বলল।
প্রফেসার
পি.আর.টি.কে প্রশ্ন করলেন,
“এই জিনিসটা নেওয়ার জন্য কি তারা এখানে আসবে?”
সে
জানাল, “সিগনাল পাচ্ছি, তারা পৃথিবীর কাছাকাছি এসে
গেছে।”
প্রফেসার
আরও কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ একটা বোমা
পড়ার মতো প্রচণ্ড জোরে আওয়াজের সাথে সাথে ঘরের ভিতরটা ধোঁয়ায় ভরে গেল। কালো
পোশাক পরা পাঁচ-ছ’জন লোক ভিতরে ঢুকে এসেছে। প্রত্যেকের
হাতে লাইট মেশিন গান।
“হ্যান্ডস আপ, প্রফেসর। হ্যাঁ,
এবার সেই কালো পাথরটা বের করুন। না কোনও
চালাকি করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে
আপনার প্রাণ আগে যাবে।”
প্রফেসার
দেখলেন, ত্রিমাত্রিক ছবিটি গায়েব হয়েছে। তিনি ঘরের এক কোণে গিয়ে নাম্বারিং লক খুলে
ভল্ট থেকে কালো কিউবটা বের করে বিনা বাক্যব্যয়ে জিনিসটি তাদের হাতে তুলে দিলেন। তারা
পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে মিলিয়ে দেখে নিল। তারপর
মুহূর্তের মধ্যে প্রফেসরকে পিছমোড়া করে হাত-পা বেঁধে বেরিয়ে গেল।
যাওয়ার
সময়ে প্রফেসরের ল্যান্ড ফোন আর মোবাইল দুটোই ভেঙে দিয়ে রঞ্জন বলল, “মাপ করবেন
স্যার, আপনাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আপনি তো কোনও কথাতেই কান দিচ্ছেন
না। বাধ্য হয়ে আমাকে এটা করতে হল। এর বিনিময়ে কানোরিয়াজি আমাকে বিদেশে ভালো চাকরি
আর প্রচুর টাকা দেবেন। তবে তিনি বলেছিলেন আপনাকে প্রাণে মেরে ফেলবেন। কিন্তু আমি
ওদেরকে আটকেছি। আপনি যতক্ষণে এই বাঁধন খুলবেন, আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাব।”
প্রায়
ঘণ্টা দেড়েক চুপচাপ পড়ে থাকার পর দরজায় একটা আওয়াজ শুনে মাথা তুলে দেখলেন সেই ছেলেমেয়ে
দুটি ঢুকছে। বুবাই এগিয়ে এসে একটা ছুরি দিয়ে কেটে দিল বাঁধনগুলি। উঠে দাঁড়িয়ে
প্রফেসর বললেন, “তোমরা এলে কী করে এখানে?”
“ট্যাক্সিতে
স্যার। পি.আর.টি নিয়ে এল পথ দেখিয়ে।”
রিমি
বলল, “ও বলছে আসল কিউবটা নাকি আপনার কাছেই আছে?”
“তা
আছে। এরকম ঘটনা যে হতে পারে সেটা আন্দাজ করেছিলাম। তাই ওটার একটা রেপ্লিকা করে
রেখেছিলাম। আগে থেকেই।”
বুবাই
বলল, “ওদের গ্রহের যান এসে গেছে। উপরে চলুন।”
প্রফেসর
বললেন, “দাঁড়াও, তার আগে ঐ বদমাশগুলোর একটা ব্যবস্থা করি।”
এরপর
মেঝের মধ্যে একটা ভল্ট খুলে একটা স্যাটেলাইট ফোন বের করে ডায়াল করলেন, “হ্যালো!
আইজি অফিস? হ্যাঁ, আমি প্রঃ গুছাইত বলছি, সৌমিত্র সান্যালকে ফোন দিন।”
প্রফেসর
এয়ারপোর্টেই আটকাতে বললেন ওদের। তারপর ফাঁকা ছাদে উঠে দেখলেন অন্ধকার আকাশের গায়ে
ঝিকমিকে তারাদের মাঝে একটা বড়ো নীলচে বেলুন এসে দাঁড়িয়েছে। কাঁপছে তিরতির করে।
ঝিঁঝিঁর মতো একটা তীক্ষ্ণ আওয়াজ তালা লাগিয়ে দিচ্ছে কানে। প্রফেসর, বুবাই আর রিমি
এগিয়ে এসে দাঁড়াল ওদের পিছনে।
সাদা
স্পেস-সুট পরা একটা প্রাণী বেরিয়ে এল সেই বেলুনটির মধ্যে থেকে। মানুষের
মতোই দুটো পা, দুটো হাত, একটা মাথা,
লম্বাতে শুধু অনেকটা ছোটো।
মাত্র তিন ফুট।
“নমস্কার, প্রফেসার গুছাইত,” পরিষ্কার বাংলায় সম্বোধন
করল প্রাণীটা, “অবাক হবেন জানি। ভাবছেন,
আমরা আপনার নাম আর ভাষা জানলাম কী করে। আসলে
আমরাও তো এই গ্রহেরই প্রাণী, মানুষেরই উত্তরসূরি। তবে
সময়কালটা আলাদা। আপনাদের গ্রহের সব তথ্য আমাদের কম্পিউটারে
রয়েছে। ঐ কালো কিউবটি আসলে আমাদের সম্পত্তি। একটা মূল্যবান গবেষণা আটকে আছে ওটার
জন্য।”
প্রফেসর
বললেন, “একটু খুলে বলবেন? যদিও জানি আমাদের বিজ্ঞান অনেক পিছিয়ে।”
ছোটো
মানুষটি বলল, “আমরা সময়ের যাত্রাপথ আবিষ্কার করেছি ব্ল্যাকহোলের মধ্যে দিয়ে,
আপনাদের হিসাবে পাঁচশো বছর আগে। ফলে অতীত,
ভবিষ্যৎ যে কোনও সময়ে আমরা যাতায়াত করতে পারি। যদিও এর নির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা
রয়েছে। তারও অনেক আগে সূর্য ধ্বংস হয়ে গেছে মহা-আণবিক বিস্ফোরণে। এর
আগেই আমরা আলোর থেকেও বেশি গতিতে যাতায়াতের রাস্তা বের করেছি।”
বুবাই
হঠাৎ বলে উঠল, “আলোর থেকেও বেশি গতি কীভাবে সম্ভব?”
“বিশেষ
পদ্ধতিতে মহাকাশের স্থানকে সংকুচিত করে অনেক কম সময়ে লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ পেরিয়ে
যাওয়া যায়। ব্রহ্মাণ্ডের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছানোটা আমাদের কাছে একটা
ঘর থেকে আর একটা ঘরে যাওয়ার মতো ব্যাপার। এখন ‘পিজাতকুরি’ নামে একটি নক্ষত্রের ‘পিপিটিটি’
গ্রহে বাস করছি আমরা। পৃথিবীজাত মানুষরা অন্যান্য প্রাণীদের নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আরও
কয়েকশো নতুন গ্রহে। এছাড়াও আরও চারটি উন্নত প্রজাতির প্রাণী আছে ব্রহ্মাণ্ডে।
তারাও প্রচুর গ্রহ দখল করেছে। এই ব্রহ্মাণ্ড আসলে একটা বিশাল বড়ো ডিমের ভিতরের
অংশ। এই গ্যালাক্সি, গ্রহ, নক্ষত্র এগুলি সবই সেই বিশাল ডিমের মধ্যে অবস্থান করছে।
আমাদের কাছে এটা অনেক বড়ো হলেও এর বাইরে যারা আছে তাদের কাছে হয়তো জিনিসটা ছোটো। সেই
ডিমের বাইরে কী আছে, কী হচ্ছে সেখানে, সেগুলি জানার জন্য আমরা একটা যান পাঠাচ্ছি।
ডিমের বাইরের দুনিয়া থেকে একটা যন্ত্র এসেছিল আমাদের মহাকাশে। যার কিছু
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে ঐ কালো কিউবটাতে। যন্ত্রটি সংরক্ষণ করা হয়েছিল সি-২২৩ নামে
স্পাইরাল গ্যালাক্সির একটা গ্রহে। আচমকা গ্রহটিতে একটা আণবিক ঝড় আছড়ে পড়ে। ফলে
তছনছ হয়ে গেছে সবকিছু।”
একটু
থেমে আবার সে বলল, “সেই ঝড়ের সময়ে একটা টাইম-হোলের মধ্যে দিয়ে
কিউবটা চলে এসেছে পৃথিবীতে। বাকি কিউবগুলিকে খুঁজে পেলেও এটাকে পাচ্ছিলাম না
কিছুতেই। ফলে পুরো পরিকল্পনাটা থমকে গিয়েছিল।”
প্রফেসার
কালো কিউবটা সেই ছোটো মানুষের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “একটা প্রশ্ন ছিল।
আপনাদের কী ধারণা, এই অন্তহীন বিশাল ব্রহ্মাণ্ড ডিমের বাইরে কী আছে?”
কিছুক্ষণ
চুপ করে থেকে সেই ছোটো মানুষটি জানাল, “এর বাইরে এরকমই আরও অনেক ডিম আছে। কোটি
কোটি। সেগুলিকে তা দেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পরে যখন আমাদের মতো প্রাণীগুলি
একেকটি ডিমের ত্বক ভেঙে বাইরে বেরোবে তখন হয়তো তাদের ধরে ধরে খাবে সেই দুনিয়ার
প্রাণীরা। সিম্পল ইকোসিস্টেম।”
“সে
কি! তাহলে আপনারা বাইরে বেরোচ্ছেন কেন?”
হা
হা করে হেসে লোকটি বলল, “তোমাদের সময়ে তো বিগ-ব্যাং থিওরি তৈরি হয়ে গেছে, তাই না?
যখন মহাবিস্ফোরণ হয়েছিল তখন সমস্ত শক্তি আর ভর ছিল একটি কেন্দ্রবিন্দুতে। পরে সেই
ভর মহাশূন্যে ছড়িয়ে যেতে থাকে। তোমাদের সময়ের থেকে আমাদের সময়ে নক্ষত্র আর
গ্যালাক্সিগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে আরও অনেকটা। এটা একটা পূর্বনির্ধারিত পদ্ধতি।
অনেকটা তোমরা যেমন করে মুরগির ডিম সেদ্ধ কর, সেরকম। ব্রহ্মাণ্ডে প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে
হু হু করে। একটা সময়ে গিয়ে এত প্রাণ তৈরি হবে যে এটা বার্স্ট করবে। বাইরের দুনিয়ার
প্রাণীরা তখন এদের ধরে ধরে খাবে।”
আরও
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলল, “তবে আগে থেকে যদি আমরা সেই দুনিয়ার প্রাণীদের সম্পর্কে
তথ্য জোগাড় করে কোনও একটা উপায় বের করতে পারি, যদি তাদের সাথে এঁটে ওঠার কোনও
রাস্তা বের হয় তাহলে হয়তো মানব প্রজাতি টিকেও যেতে পারে। সেই পরিকল্পনা করেই আমরা
একটা যান পাঠাচ্ছি এই মহাবিশ্বের বাইরের দুনিয়ায়।”
সে ধন্যবাদ
জানিয়ে চলে গেল। ধীরে ধীরে আলো বন্ধ হবার মতো অন্ধকার
হয়ে এল চারদিকে।
চোখের
পাতায় যেন আঠা লাগানো ছিল। অনেক কষ্টে চোখ খুলে রিনি দেখল ও নিজের ঘরেই শুয়ে আছে।
সকাল হয়ে গেছে। মা চেঁচিয়ে ডাকছে, “স্কুলের বাস এসে যাবে। উঠে পড় তাড়াতাড়ি।”
_____
অলঙ্করণঃ
পুষ্পেন মণ্ডল
ভালো চেষ্টা পুস্পেন
ReplyDeleteধন্যবাদ দাদা ������
ReplyDeleteBhalo laglo..
ReplyDeleteখুব ভালো গল্প।অনেক কিছুর আভাষ আছে।
ReplyDeleteএকটি ত্রুটি হীন বিজ্ঞানভিত্তিক কাহিনী যা থেকে অনেক ব্যাপারেই জানবার জন্য আগ্রহ তৈরি হবে এবং এই তাই এই সব কাহিনীর উদ্দেশ্য । সেই লক্ষ্যের দিকে লেখক শতকরা একশো ভাগের ওপর সফল । তবু মনে হয় শেষ তা একটু আকর্ষণীয় করা যেতেই পারতো ।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ প্রদীপ বাবু।
ReplyDeleteভালো লাগল।
ReplyDeleteভালো লাগলো। ঘটনার বর্ণনা ও কাহিনী চমৎকার হয়েছে।
ReplyDelete