কিয়ানের হারিয়ে যাওয়া
অনন্যা দাশ
আমার দাদা কিয়ানের হঠাৎ হারিয়ে
যাওয়াটা খুবই রহস্যজনক। আসলে দাদা সবসময়ই
একটু আলাদা। অন্য দাদা-দিদিদের মতন নয় মোটেই। আমার
বন্ধু পিয়ার দাদা যেমন খুব মিশুকে, রোজ ওকে হুভারক্রাফটে
করে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে যায়। সুকির
দাদা ওর জন্যে খেলনা বানিয়ে দেয়, ওর দিদি ওর সঙ্গে খেলে। এখন সাইবার স্কুলের চলই বেশি। তাই
অনেকেই ওগুলোতে যায়। কিন্তু আমি, পিয়া বা সুকি কেউই সাইবার স্কুলে যাই না। অনেক
ঝগড়াঝাঁটি করে আমাদের স্কুলটা তৈরি হয়েছে। এটা
অনেকদিন আগেকার স্কুলের পদ্ধতিতে করা। আমরা
সবাই একসঙ্গে একটা ক্লাসে বসে পড়ি। আমার
মা-বাবা বলেন, সাইবার স্কুলে পড়ে পড়ে বাচ্চারা খুব একা হয়ে পড়ে। নিজের
বয়সের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে না। এমনিতেই
তো এখন মেলামেশা, এক সঙ্গে খেলাধুলো করার সুযোগ কম।
তার মধ্যে যদি আবার সারাদিন বাড়িতে বসে থাকতে হয় সাইবার স্কুলের জন্যে, তাহলে তো
কথাই নেই। তাই ওনারা জোর করেই আমাদের স্কুলটা খুলিয়েছেন। এখন অনেক বাবা-মাই তাদের
ছেলেমেয়েদের আমাদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশলে তবে তো আমরা
সামাজিক হতে শিখব, না হলে স্বার্থপর একাকী প্রাণী হয়ে থেকে যাব! আসলে আমার বাবা-মা
মনের ডাক্তার তো, তাই এইসব নিয়ে ভাবেন।
যাই হোক, যা বলছিলাম। আমার
দাদা কিয়ান অন্যরকম। সে আমার চেয়ে বেশ কিছুটা বড়ো। পিয়ার দাদার মতন অতটা নয়,
কিন্তু কিছুটা। দাদা কিন্তু আমাদের মতন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। সে সাইবার
স্কুলেই পড়ত। এখন স্কুল-স্তরের পড়া শেষ হয়ে গেছে ওর। আর পড়াশোনা করতে চায় না সে।
সারাদিন ধরে ঘরে বসে খুটখাট কী করে সেই জানে। কাউকে বলিনি আমি, কিন্তু আমার মনে হয়
আমার দাদা ইন্টারগ্যালাকটিক নেটওয়ার্কে (ইগ্যান) অন্য গ্রহের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা
বলে। তা বলুক তাতে ক্ষতি নেই। অনেকেই বলে
আজকাল (আমরা ছোটো বলে আমাদের ইগ্যানে ঢোকার অনুমতি নেই অবশ্য)।
কিন্তু আমার ধারণা সে নিক্সের প্রাণী নোভাকনদের সঙ্গে কথা বলে। সেটা যে নিষিদ্ধ
এটা সবাই জানে। নিক্সের লোকজন আসলে আমাদের শত্রু। নিক্স প্লুটোর একটা চাঁদ। আসলে
প্লুটোকে গ্রহের আসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ওদের আমাদের ওপর যত রাগ। বিনা
কারণে অনেকবার পৃথিবীকে আক্রমণ করেছে ওরা। সেই থেকেই ওদের শত্রুজাতি বলে চিহ্নিত
করা হয়েছে। দাদা কিন্তু সেইসব সাবধানতা অগ্রাহ্য করে নিক্সের নোভাকনদের সঙ্গে গল্প
করছে মনে হয়।
আসলে যেটা হয়েছিল, একদিন মা
ওকে ডাকছিলেন ট্রাক-ফোনে। কিন্তু ও শুনছিল না, সাড়াও দিচ্ছিল
না। তখন মা আমাকে বললেন ওকে ডেকে নিয়ে আসতে। আমি
গিয়ে ওর ঘরের দরজায় টোকা দিলাম, কিন্তু ও খুলল না। তখন আমি দরজাটা ঠেলতে দেখি সেটা
খুলে গেল। ওমা দেখি, ইগ্যানের স্ক্রিনটা সবুজ! মানে ফ্লুরোসেন্ট সবুজ। দাদা আমাকে
দেখেই চট করে রঙ বদলে দিল। কিন্তু
ততক্ষণে আমি যা দেখার দেখে ফেলেছি! ওই সবুজ মানে নিক্সের নোভাকন, সেটা আমি জানি।
অ্যালফাকনরা এক বিশেষ ধরনের লাল, বেটাকনরা নীল এইভাবে গ্যালাক্সির সবার জন্যে রঙ
ভাগ করে দেওয়া আছে। দাদা খুব রেগে গিয়েছিল আমার ওপর ওইভাবে ঘরে ঢুকে পড়ার জন্যে।
প্রমিস করিয়েছিল যে কাউকে কিছু বলব না। তা আমি বলিওনি।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বলতেই হবে, কারণ দাদাকে আজ সকালের পর থেকে খুঁজে পাওয়া
যাচ্ছে না।
আসলে আমিও বুঝিনি। মা-বাবা
একটা কনফারেন্সে মার্সে গেছেন। আমি আর দাদা বাড়িতে রয়েছি রোবোটিকার সঙ্গে। রোবোটিকা
আমাদের পরিচারিকা, ন্যানি, গভর্নেস, কাজের লোক – সবকিছু। অনেকদিন ধরে আমাদের সঙ্গে
রয়েছে সে। মাঝে শুধু একবার কী একটা গন্ডগোল হয়ে শুধু ফরাসি ভাষাতে কথা বলছিল। তখন
একটা ছোটো পার্ট বদলে দিতে আবার সব ঠিক হয়ে গিয়ে দিব্যি চলছে। সে
সব পারে। রান্নাবান্না, ঘর পরিষ্কার, আমাদের পড়ানো বা শাসন করা অবধি সবকিছু।
তা আমি স্কুল থেকে ফিরে আসতে
সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কিয়ান কোথায়?”
আমি বললাম, “আমি জানি না। তার
তো বাড়িতেই থাকার কথা!”
রোবোটিকা বলল, “না, বাড়িতে
নেই। সকালে জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে গেছে, এখনও ফেরেনি!”
আমি একটু চমকালাম, “বাইরে বেরিয়েছে?
কোথায় যাচ্ছে বলে যায়নি?”
দাদা তো কখনও বাড়ি থেকে বেরোতেই
চায় না! নিজের ঘরে ঢুকে বসে খুটুর-খুটুর করাই ওর পছন্দ। ও যাতে বাইরে বের হয় তাই
জন্যে বাবা-মা ওকে রোবো পোষ্য জুজোকে কিনে দিয়েছিলেন। অবিকল গোল্ডেন রিট্রিভারের
মতন দেখতে তাকে, কিন্তু আসলে রোবট। সত্যিকারের কুকুরদের মতন ওদের আয়ু চোদ্দো থেকে
পনেরো বছর নয়। যতদিন চাইবে ততদিন বাঁচে এরা। অনেকেই
নিজেদের উইলে লিখে যায় কে পাবে তাদের রোবো পোষ্যকে। ওদের বাইরে নিয়ে যেতে হয়
প্রতিদিন ঘোরাতে। না হলে ওদের মন খারাপ হয়ে যায়। বাড়িতে কখনও কখনও
জুজোর সঙ্গে তাও খেলে দাদা, কিন্তু বাইরে ওকে কিছুতেই নিয়ে যাবে না। তাই ওকে বাইরে
নিয়ে যাওয়ার ভার আমার ওপর পড়েছে। অবশ্য মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছে না করলে রোবোটিকার
ঘাড়েও চাপিয়ে দিই আমি।
এখন আমি খাচ্ছি আর জুজো আমার
পায়ের কাছে বসে আছে। অনেক বাড়িতেই খাবারদাবারের পাট চুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু
আমার মা-বাবা কিছুতেই ঐসব ট্যাবলেট-ক্যাপসুল খেয়ে থাকতে রাজি নন। বলেন, “সর্ষে
দিয়ে ইলিশ কিম্বা বিরিয়ানির স্বাদ বা তৃপ্তি কখনও কি ওই ট্যাবলেট থেকে পাওয়া যায়! না
না আমাদের বাড়িতে রান্নাই হবে।”
জুজো মুখ হাঁ করে খাবার চাইছে
আমার কাছে। ওটা অবশ্য ওর অভ্যাস বলে। না হলে ওর
খাবার লাগে না, ব্যাটারিটা চার্জ করলেই হয়।
রোবোটিকা বলল, “কোথায় গেছে
বলে যায়নি। আমি শাসন করব বলে ভয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে না।”
“দাদা তার মানে সকাল থেকে
বাড়ি ফেরেনি!” আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম।
রোবোটিকা বলল, “না।”
খেয়ে উঠে আমি দাদার ঘরে
গেলাম। দরজাটা ভেজানো ছিল, কিন্তু বন্ধ করা ছিল না।
তাই ঢুকতে অসুবিধা হল না। প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি।
তারপর ভালো করে খেয়াল করতে দেখলাম, ঘরের এদিক সেদিক সবুজ গুঁড়ো গুঁড়ো পড়ে রয়েছে।
কেন? কোথা থেকে এল ওগুলো, বা দাদা কোথায় কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
রোবোটিকাকে ডেকে নিয়ে এসে
দেখাতে সে হাত দিয়ে ওই সবুজ গুঁড়ো ছুঁয়েই বলল, “নোভাকন। কিয়ান তার মানে ঘরে এসেছিল
আবার। আমি খেয়াল করিনি, আর নোভাকনরা ওকে ধরে নিয়ে গেছে।”
“অ্যাঁ! তার মানে নোভাকনের
লোকজনও এখানে এসেছিল। ওরাই দাদাকে ধরে নিয়ে গেছে। এবার কী হবে?”
রোবোটিকা বলল, “আমি জানি না।
তোমার মা-বাবা এলে জিজ্ঞেস কোরো। আমি যাই, কাপড়গুলো কেচে ফেলতে হবে।” বলে সে চলে
গেল।
রোবোটিকার ওই এক সমস্যা।
কাজের রোবট তো, তাই ওকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যে কোনও সিদ্ধান্ত সে নিজে নেবে
না। আবার দাদার হারিয়ে যাওয়াটা যে এক বান্ডিল কাপড়
কাচার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝার মতন ক্ষমতাও ওর নেই। যাক, ওকে বলে
লাভ নেই। এখনকার নতুন মডেলগুলোতে নাকি ওইসব
ত্রুটি শুধরে ফেলা হয়েছে, কিন্তু বাবা-মা কিছুতেই নতুন মডেল কিনবেন না।
এখন দাদার ব্যাপারটাতে আমাকেই
কিছু করতে হবে ভেবে আমি বঙ্কুজেঠুর বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম।
বঙ্কুজেঠুর কত বয়স আমি সঠিক
জানি না, তবে ওনার মাথার চুল আর দাড়ি সব ধবধবে সাদা। দাড়িটা উনি মাঝে মাঝে কেটে
ফেলেন আবার মাঝে মাঝে যখন কাজের চাপ হয় তখন কাটতে ভুলেও যান সময়ের অভাবে। আমাকে
খুব ভালোবাসেন। উনি বৈজ্ঞানিক তো। আমি ওনার বাড়ি গেলেই আমাকে এটা সেটা বোঝাতে শুরু
করেন। ওনার এক ভাগ্নে আছে নেপু, ওনার কাছেই থাকে। সে
প্রায়ই বলে, “মামা তুমি ওকে সব বোঝাতে যাচ্ছ কেন বলো তো? ও তো ছোটো, অনেক কিছুই
বুঝতে পারবে না!”
বঙ্কুজেঠু ও কথা শুনলে বলেন,
“ছোটো তো কী হয়েছে? ছোটোরা অনেক কিছুই বড়োদের থেকে বেশি ভালো বুঝতে পারে।”
জেঠুর বাড়িতে গিয়ে দেখলাম,
জেঠু সামনের একটা ঘরের চেয়ারে মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছেন। ওইরকমটা কখনও দেখিনি।
জেঠু সবসময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
আমি বললাম, “কেলেঙ্কারি হয়ে
গেছে, জেঠু! আমার দাদাকে নিক্সের নোভাকনরা ধরে নিয়ে গেছে!”
জেঠু আঁতকে উঠে বললেন,
“সর্বনাশ! সেকি! কী করে বুঝলে?”
আমি ওই সবুজ গুঁড়োর কথা
বললাম। ওমা হঠাৎ দেখি জেঠুর হাতেও সবুজ গুঁড়ো লেগে রয়েছে!
জেঠুকে বলতে জেঠু যেন প্রথম
দেখছেন এমন করে দেখলেন তারপর বললেন, “বুঝতে পেরেছি! নেপুটাও সকাল থেকে হাওয়া।
তাই মনটা ভালো নেই।”
জেঠু যেখানে বসে ছিলেন,
সেখানে চেয়ার টেবিলে সবুজ গুঁড়ো!
আমি বললাম, “আমার দাদা তো
চুপি চুপি লুকিয়ে লুকিয়ে নোভাকনদের সঙ্গে কথা বলছিল আমি দেখেছি।
কিন্তু নেপুদাকে ওরা কেন ধরে নিয়ে গেল?”
জেঠু মাথা নাড়লেন, “নেপুটারও
তো মতিগতি ভালো নয়। আসলে জেনারেশান গ্যাপ। এখনকার ছেলেমেয়েরা মনে করে তারাই সব
জানে। আমরা বুড়ো হয়েছি, তাই আমাদের পাত্তাই দেয় না। যা বলি তার উল্টোটা করে। আমি
জুপিটারের চাঁদ ক্যালিস্টোবাসীদের সঙ্গে কথা বলে কোলাবোরেশানে একটা কাজ করছি। এদিকে
কারো আর এলারার বাসিন্দারাও আমার সঙ্গে কাজ করার জন্যে অফার দিয়েছে। তা নেপুকে
বলেছিলাম, তুই ওদের সঙ্গে একটু কথা বলে নে না হয়।
তাহলে কাজটা কিছুটা এগিয়ে থাকবে। আমার অত বকবক করার সময় নেই। তা
এখন মনে হচ্ছে কারো আর এলারাবাসীদের সঙ্গে কথা না বলে সে নিক্সেবাসী নোভাকনদের
সঙ্গে গিয়ে মিশেছে! এবার কী হবে? ওরা তো মারাত্মক। কেউ কথা বলে না ওদের সঙ্গে ওরা
পৃথিবীর শত্রু বলে। তা এই দুটোতে কী ভেবে যে...!”
“ওখানে যাওয়া যাবে জেঠু? ওদের
বাঁচাতে?”
জেঠু মাথা নাড়লেন, “না, না।
ওদের ওখানে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আমার তো বয়স হয়েছে, আমার তো ওইসব জায়গার কৃত্রিম
আবহাওয়া একদম সহ্য হয় না। এক কাজ করি। ট্রাইটনে আমার চেনা একজন আছে। তাকে জিজ্ঞেস
করি, সে যদি কিছু বলতে পারে বা কোনওরকম সাহায্য করতে পারে। ওরা
তো অনেক কাছে।”
ট্রাইটনটা নেপচুনের চাঁদ।
সেখানে বঙ্কুজেঠুর চেনা লোকটার সঙ্গে কথা বলতে সে বলল, “খুব সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার!
আপনারা গ্যাল্যাকটিক নিউজ শোনেননি? নিক্সের নোভাকনরা উঠে পড়ে লেগেছে! অনেকদিন ধরে
পরিকল্পনা করছিল ওরা। প্লুটোকে প্লানেট বা গ্রহের মর্যাদা দিতে হবে সেই নিয়ে। ওরা
তাই অন্যসব গ্রহ থেকে প্রাণীদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে যে ওদের গ্রহ
না হতে দিলে তাদের সবাইকে মেরে ফেলবে! খুব সমস্যা। গ্যাল্যাক্সি নেশন স্তরে
কথাবার্তা চলছে কী করা যায় সেই নিয়ে। আমি ওদের সদস্য দলে আছি ট্রাইটন থেকে। তাই
কিছু জানতে পারলেই আপনাকে ফ্ল্যাশ করব।”
আমরা দু’জন কী করব বুঝতে না
পেরে চুপ করে বসে ছিলাম। হঠাৎ দুম করে একটা শব্দ হল। মনে হল
নিচের তলা থেকে এল শব্দটা।
আমি বললাম, “জেঠু, শব্দটা
আপনার ল্যাব থেকে আসছে না?”
জেঠু শুনে বললেন, “হ্যাঁ, তাই
তো মনে হচ্ছে। চল তো, দেখে আসি। অ্যাস্ট্রাকে সার্ভিসিংয়ে দেওয়া হয়েছে কাল। একটা
স্ক্রু ঢিলে হয়ে গিয়েছিল। ফলে ভুলে গিয়ে আমার জন্যে তিনবার জলখাবার এনেছে। আমি
এমনিতে স্ক্র্যামবল্ড ডিম খেতে ভালোইবাসি। কিন্তু
রাশি রাশি ডিম! কত খাব!”
অ্যাস্ট্রা জেঠুর কাজের রোবট।
এমনিতে খুব ভালো। রোবোটিকনের বেশ কিছুটা পরের মডেল।
কিন্তু ওই যে, ওদের স্ক্রু ঢিলে হলে খুব মুশকিল।
এক আর দু’তলার মধ্যে যে
জায়গাটা, সেখানে জেঠুর বিশাল ল্যাব। সেখানে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমাদের দু’জনের
চোখই ছানাবড়া হয়ে গেল। দুটো চকচকে চামড়ার লিকলিকে সবুজ প্রাণী ল্যাবের মেঝের ওপর
শুয়ে রয়েছে। ঘুমিয়েই রয়েছে মনে হয়। মাঝে মাঝে মাথা তুলছে, একটু হাত পা ছুঁড়ছে আবার
ঘুমিয়ে পড়ছে। সেই করতে গিয়েই কিছু জিনিস উলটে ফেলেছে আর আমরা শব্দটা শুনতে পেরেছি।
“এরা কে জেঠু? এখানে কী
করছে?”
জেঠু মাথা চুলকে বললেন, “কাল
থেকে তো এখানে আসা হয়নি। ওই অ্যাস্ট্রার ঝামেলা আর নেপুকে
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এত ধরনের প্রাণী চারিদিকে। এরা
কোথাকার তা তো জানি না। দেখি, ইগ্যানে ছবি দিয়ে খুঁজে দেখি।”
খুঁজে দেখা গেল ওরা দু’জন
নিক্সের নোভাকন!
“কিন্তু এরা এখানে এসে
ঘুমোচ্ছে কেন? ওদের তো নেপুদাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা।”
জেঠু হঠাৎ এদিক ওদিক তাকিয়ে
দেখে বললেন, “বুঝেছি। আমি একটা ওষুধ বানিয়েছি। আজকাল তো
লোকের ঘুমের খুব সমস্যা, সেটা দূর করার জন্যে। বেশ কড়া ওষুধ।
তবে কোনও ক্ষতি করবে না। খুব দুর্লভ সব জিনিস দিয়ে অনেক
খেটেখুটে বানিয়েছি। খেতেও খুব ভালো, একেবারে শরবতের মতন।
যদিও এখনও পরীক্ষা চলছে। সেই মিশ্রণটা একটা টেস্টটিউবে রাখা ছিল। রঙটা সবুজ। কিছুটা
এদের গায়ের রঙের মতনই রঙটা। মনে হয় ওরা
সেটার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওটাকে খেয়ে ফেলেছে। তাই ওদের এই অবস্থা।”
আমি শুনে বললাম, “জেঠু, আমার
মাথায় একটা ফন্দি এসেছে। এই দু’জনকে দিয়ে আমরা দাদা আর
নেপুদাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারি। তাই না?
ওদের তো বলতে পারি যে যতক্ষণ না ওরা দাদা আর নেপুদাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে আমরাও এদের
ছাড়ব না।”
জেঠু বললেন, “হ্যাঁ, খাসা
ফন্দি! দাঁড়াও, আমি ওই ট্রাইটনের লোকটাকে ফোন করে জানাই। সে তো গ্যাল্যাক্সি নেশনের
সদস্য। সে কিছু করতে পারবে।”
এর পর যা হল, তা বেশ
রোমাঞ্চকর। আমি আর জেঠু মিলে ওই ঘুমন্ত দুই প্রাণীকে বেঁধে ফেলে কাচের একটা বাক্সে
বন্দি করে রাখলাম। সেটা করতে গিয়ে আমাদের হাত প্রায় সবুজ হয়ে গেল আর কী! তারা
অবশ্য তখনও ঘুমিয়েই কাদা। একজন অবশ্য একবার তার সবুজ চোখ মেলে আমাদের দিকে দেখল,
তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
জেঠুর কথামতো গ্যাল্যাক্সি
নেশনের লোকজন নোভাকনদের সঙ্গে কথা বলল। ওরা রাজি হল ওই ঘুমন্ত দু’জনের বদলে অন্য
সবাইকে ফিরিয়ে দিতে। কারণ, ওই দুটো নাকি ওদের কসমোর
(রাজা বা রাষ্ট্রপতি গোছের কিছু হবে) দুই ছেলে! তবে ওরা দাবি করল, শুধু ওই দু’জনকে
ফিরিয়ে দিলে হবে না, সঙ্গে পঞ্চাশটা শিশি জেঠুর ওই ঘুমপাড়ানি ওষুধ চাই! ওদের ওখানে
নাকি ঘুমের খুব সমস্যা। ওরা নাকি অনেকদিন ভালো করে ঘুমোয়নি। ওই
ঘুমন্ত ছেলেদুটোকে দেখে ওরা খুব আশ্চর্য, কারণ ওদের আজ পর্যন্ত অমন করে ঘুমোতে
দেখা যায়নি!
তারপর আর কী! আমি, জেঠু,
রোবোটিকা, অ্যাস্ট্রা আর আরও কয়েকজন রোবট কাজের লোক মিলে ওই ঘুমের শরবতটা অনেকটা
করে বানালাম। গ্যাল্যাক্সি নেশনের লোক এসে ওষুধ আর সবুজ প্রাণীদুটোকে নিয়ে গেল অদলবদলের
জন্যে। আর তারপরই দাদা আর নেপুদা ফিরে এল।
ওরা দু’জনেই এখন অনেক বদলে
গেছে। দু’জনেই এখন অনেক বেশি কথা শোনে। আর ওই ঘুমের শরবতটার রেসিপিটা আমার একেবারে
মুখস্থ হয়ে গেছে। সবুজ ব্যাঙের ছাতা, সবুজ শ্যাওলা... না বাবা থাক,
আর বলব না। তোমরা বানিয়ে ফেলে খেয়ে নিলে খুব মুশকিল হবে!
_____
অলঙ্করণঃ স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়
খুব ভাল লাগল। সাবলীল ভাষায় বর্ননা। একটানা পড়ে গেলাম।
ReplyDeleteছোটদের জন্য খুব সুন্দর গল্প
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteNandita Misra ebang ARC-ke anek dhanyabad galpata porar janye...Syamantak keo dhanyabad sundor chobi enke dewar janye :D
ReplyDeletekhub mishti golpo !
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল
ReplyDeleteবাঃ দারুণ লাগল।
ReplyDeleteদারুণ হয়েছে অনন্যাদি।জমজমাট মজা। স্যমন্তক কেও ধন্যবাদ সুন্দর অলঙ্করণের জন্য।
ReplyDeleteMisti goppo kochider jonyo
ReplyDelete