অল্পাহারী বাবা
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
_____
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
স্কুল থেকে ফিরে মিঠুন বারান্দায় সাইকেল তুলেছে কী
তোলেনি, গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে সায়ন চেঁচিয়ে উঠল, “সাইকেল তুলিস না, বেরোতে হবে,
আমারটা বিগড়েছে।”
মিঠুনের প্রাণের বন্ধু সায়ন। ওরা এখন টুয়েল্ভ
ক্লাসের শেষের দিকে। মিঠুন সাইকেল তুলে রাখতে রাখতে বলে উঠল, “দাঁড়া, পেটে
কিছু দিয়ে নিই। তুই তো আজ স্কুলে ডুব মেরে বাড়িতে ভালোমন্দ সাঁটিয়েছিস। ভিতরে এসে
বস, তারপর শুনি কোথায় যেতে হবে।”
গেট খুলে দিতেই মিঠুনের হাত চেপে ধরে সায়ন বলে,
“একটু তাড়াতাড়ি কর। অনেকটা দূর যেতে হবে। সেই দুশো ফুট রাস্তায়। এক বাবাজি এসেছে। আজ
সকালে সেখানেই গিয়েছিলাম, দাদুকে নিয়ে। বাবা অফিসে যাওয়ার সময় আমার ডিউটি লাগিয়ে
দিল...”
মিঠুন চোখের চশমাটা খুলে রুমাল দিয়ে মুছে নিয়ে
হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে, “তুই শেষে বাবাজির পাল্লায় পড়লি? কিসসু হবে না তোর।
সপ্তর্ষি স্যার কী বলেছেন মনে নেই? বাবাগুলো সব এক একটা ধান্দা খুলে রেখেছে। আর
তুই কিনা চলেছিস বাবাজি দর্শনে!”
সায়ন তাড়াহুড়ো করে বলে, “এই হচ্ছে তোর দোষ! পুরোটা
না শুনেই আমার উপর জ্ঞান ঝাড়তে শুরু করলি।”
“পুরোটা একটু ধীরেসুস্থে বল। সবে স্কুল থেকে
ফিরেছি, দেখতেই তো পারছিস। পেটে দাবানল জ্বলছে। আগে সেই আগুন নেভাই, তারপর যেতে
যেতে কথা হবে।”
মিঠুনের বাবা-মা দু’জনেই চাকরি করেন। এইসময় বাড়িতে
কেউ থাকেন না। মিঠুন ফ্রিজে রাখা চিকেন আর ভাত বার করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ঢুকিয়ে
দিয়ে টাচ স্ক্রিন টিপে মেশিন চালু করে। হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে সায়নের দিকে চিকেনের
একটা লেগ পিস বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “নে ধর, আমি খাব, আর তুই বসে বসে দেখবি, শেষে পেট-টেট
খারাপ হয়ে কাল থেকে পড়াশুনোয় তালা ঝুলিয়ে দিতে হবে।”
সায়ন নির্দ্বিধায় চিকেনের লেগে কামড় দিতে দিতে
স্কুল না যাওয়ার খতিয়ান দিতে থাকে। সায়নের দাদুর অনেকদিন ধরে জিভে একটা ঘা মতো হয়ে
খুব জ্বালাচ্ছে। কলকাতায় নিয়ে গিয়ে সায়নের বাবা এক মস্ত চিকিৎসককে দিয়ে দাদুর
ট্রিটমেন্ট করাচ্ছিলেন, কিন্তু দু-তিন মাস ওষুধ খেয়েও কোনও লাভ হয়নি। সায়নের বাবা গতকাল রাতে অফিস ফেরার পথে ট্রেনে
শুনেছেন অল্পাহারী বাবা ওদের এই মফস্বল শহরে আস্তানা গেড়েছেন। কাতারে কাতারে লোক
নাকি সেখানে লাইন দিয়েছে অসুখ সারাবার আশায়। তাই বাধ্য হয়ে দাদুকে নিয়ে অল্পাহারী
বাবার আশ্রমে যেতে হয়েছিল সায়নকে।
খাওয়া শেষ করে ওয়াশ বেসিনে প্লেট নামাতে নামাতে
মিঠুন সুচিন্তিত মতামত দেয়, “এখনি গিয়ে দেখে আসার দরকার নেই। তবে ব্যাপারটা বেশ
ইন্টারেস্টিং। চল বরং সপ্তর্ষি স্যারের কাছে যাই। ওনার সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার।”
মিঠুন ম্যাথস আর কেমিস্ট্রিতে খুব ভালো। সায়নের
আবার ইন্টারেস্ট বেশি বায়োলজিতে। সপ্তর্ষি স্যার ওদের কেমিস্ট্রি পড়ান। সবে
ইউনিভারসিটি থেকে বেরিয়ে এন্ট্রান্স টেস্টে পাশ করে স্কুলে পড়াচ্ছেন। বয়স কম হওয়ায়
সব ছেলেমেয়েদের প্রিয় স্যার। পড়ানোর বাইরেও বিজ্ঞানের প্রগতি নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে
আলোচনা করেন সপ্তর্ষি স্যার।
সায়নকে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসিয়ে মিঠুন ছুটল
সপ্তর্ষি স্যারের বাড়ি। সায়ন আর মিঠুন সপ্তর্ষি স্যারের বাড়ির গলি দিয়ে ঢুকতেই
দেখল কাঁধে বিশাল সেতার ঝুলিয়ে স্যার হেঁটে আসছেন। ওদের দেখে সপ্তর্ষি স্যার
অবাক হয়ে বলেন, “তোরা? এই সময়? আর সায়ন তুই আজ স্কুলে আসিসনি কেন?”
“সেইটা বলব বলেই তো স্যার আপনার বাড়ি দৌড়ে এলাম...”
সায়নের চোখদুটো গোল হয়ে ওঠে।
স্যার ঘাড় নাড়িয়ে বলেন, “সে তো কাল বললেও চলত। আমার এখন সুরের সাধনা
করবার সময়। সেতারের ক্লাস আছে। যা পালা, কাল কথা হবে।”
মিঠুন আর্তনাদ করে ওঠে, “স্যার এক বাবা এসেছে
এখানে, পিলপিল করে লোকে লাইন দিয়েছে।”
সপ্তর্ষি স্যার ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করেন,
“অল্পাহারী বাবা? তোরা জানলি কী করে?” তারপর নীল পাঞ্জাবীর পকেট হাতড়ে ঘরের চাবি
বার করে বলেন, “নাঃ, আজ সেতারের ক্লাসটা মিস হল দেখছি। ব্যাপারটা জানতে হচ্ছে।
রাস্তায় বিজ্ঞাপনে আমিও দেখেছি, কিন্তু কাজের চাপে মাথা ঘামানোর সময় পাইনি। চল বিশদে
শোনা যাক।”
স্যারের ঘরের দেয়ালে চার্লস ডারউইনের এক বিশাল
পোস্টার। একদিকে ছোটো একটা বিছানার পাশে রাখা আলমারিতে অনেক বই। সপ্তর্ষি স্যার
বিছানায় বাবু হয়ে বসে ওদের চেয়ারে বসতে বললেন। সায়নের দিকে ডান হাতের তর্জনী
বাড়িয়ে দিয়ে ক্লাসে পড়া জিজ্ঞেস করার মতো ভঙ্গী করে বললেন, “এবার বল। সকালে কী
হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে বলবি না। ধীরে সুস্থে বল।”
সায়ন সংক্ষেপে সপ্তর্ষি স্যারকে অল্পাহারী বাবার
কাছে ওর দাদুর চিকিৎসা করতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার বর্ণনা দেয়। সপ্তর্ষি স্যার জিজ্ঞেস
করেন, “তোর দাদুর বয়স কত?”
“এই সামনের মার্চে বিরাশি হবে স্যার। তবে দাদু এখনও
বেশ শক্তপোক্ত, দু’বেলা হাঁটতে যায়, বাজার করে...”
সপ্তর্ষি স্যার ভুরু কুঁচকে বলেন, “দু’বেলা হেঁটে
আর বাজার করে তো আর মুখের ঘা সারবে না। এই বয়সে ওষুধের ফলাফল পেতে সময় লাগে। শরীর
ওষুধ নিতে চায় না।”
“স্যার, পিলপিল করে লাইন দিয়ে লোকে অল্পাহারী বাবার
তাঁবুতে যাচ্ছে নানারকম সমস্যা নিয়ে। কিছু একটা ব্যাপার আছে, নইলে...”
সপ্তর্ষি স্যারের চোয়াল শক্ত করে থামিয়ে দেয়
সায়নকে, “কিছু একটা ব্যাপার আছে, তুই সে কথা জানলি কী করে? আসলে মানুষের দুঃখ, রোগ-শোকের
তো অন্ত নেই। গরীব দেশ ভারতবর্ষে মানুষের মাথায় হাত বুলিয়ে খাওয়া চালাক লোকেদের
পক্ষে খুবই সহজ। তুই তোর বাবাকে বোঝাতে পারতিস...”
সায়ন হেসে ফেলে, “তাহলেই হয়েছে। শুধু কী বাবা, মা-ও
নেচে বসল...”
-
“দক্ষিণা কত দিয়ে এলি?”
-
“ওরা সরাসরি কিছু চায়নি। তবে দাদু অল্পাহারী বাবার পায়ে
প্রণাম করে পাঁচশো টাকা পায়ের সামনে রেখে চলে এল। গোটা কয়েক পুরিয়া দিল।
সকাল বিকেল সাত দিন খেতে হবে দাদুকে।”
সব শুনে সপ্তর্ষি স্যার বললেন, “তুই এখনই বাড়ি গিয়ে
একটা পুরিয়া কাউকে না জানিয়ে তুলে নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখ। কাল স্কুলে ল্যাবে নিয়ে
গিয়ে পরীক্ষা করলেই জানতে পারব। এখন তোরা কেটে পড়। আমি বরং সেতার
ক্লাসে যাই। কাল কেমিস্ট্রি ল্যাবে দেখা করবি ছুটির পর।”
পরদিন স্কুল ছুটির পর ল্যাবে ওদের দেখে বেশ খুশি
হয়ে সপ্তর্ষি স্যার বলেন, “আয় ভিতরে আয়। যা ভেবেছিলাম, তাই। ওগুলো স্রেফ
ডাইজেস্টিভ ট্যাবলেট ছাড়া কিছুই নয়। ওই পুরিয়াগুলো খেলে তোর দাদুর হজম ভালো হলেও
হতে পারে, কিন্তু জিভের ঘা কোনোদিন সারবে না।”
সপ্তর্ষি স্যার গম্ভীর গলায় বলেন, “ওই বুজরুকটার
বুজরুকি ফাঁস করে দিতে হবে। কিন্তু অতি সাবধানে। এরা অনেক দলবল পাকিয়ে
থাকে আর বেজায় ধূর্ত হয়। আজ বিকেলেই আমাদের যেতে হবে। আমার বাইকে একজনই যেতে
পারবে। ইলেকট্রিসিটি অফিসের সামনে থেকে টোটো পাওয়া যায়। তোরা দু’জন টোটোয় যেতে
পারিস।”
ওরা তিন জন যখন কেমিস্ট্রি ল্যাবের ভিতরে বসে কথা
বলছিল, ঠিক সেই সময়ে শিঞ্জিনী এসে ল্যাবে ঢুকে ওদের দেখে থমকে গেলো। শিঞ্জিনী ওদের
সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ে। শিঞ্জিনী পড়াশুনোতে যেমন, কথাবার্তাতেও তেমনি চৌখস। সপ্তর্ষি স্যার ওকে দেখে
বললেন, “আয় ভিতরে আয়। এখানে বস।”
স্যার সংক্ষেপে শিঞ্জিনীকে অল্পাহারী বাবার বিষয়টা
বুঝিয়ে দিয়ে চেয়ারের পিছনে হেলান দিয়ে পিঠ সোজা করে শিঞ্জিনীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আজ আমরা অল্পাহারীর তাঁবুতে যাব। তুই স্টেশনের সামনে চলে আসবি। আমি তোকে বাইকে
তুলে নেব। ওরা দু’জন যাবে টোটোতে। ঠিক আছে? ভালো করে শুনে নে, তোর
পরিচয় হবে - আমার বোন, ঠিক আছে?”
স্যারের বোন হতে হবে জেনে শিঞ্জিনীর চোখ দুটো করুণ
হয়ে যাচ্ছে দেখে সায়ন আর মিঠুন মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হেসে ফেলল। কিন্তু সপ্তর্ষি
স্যারের চোয়াল শক্ত হতে দেখে ওরা নিজেদের সামলে নিল।
সপ্তর্ষি স্যার বলে চললেন, “মনে রাখবি, তুই গত বছর
ফেল করেছিস। এবার আবার পরীক্ষা আসছে সামনে, তাই পাস করতেই হবে - এই কথা
বলে বাবাকে পরখ করতে হবে। ঘাবড়ে যাবি না, আমি সঙ্গেই থাকব সব সময়।”
শিঞ্জিনী পরীক্ষায় ফেলের অভিনয় করবে শুনে শব্দ করে
হেসে ফেলে সায়ন। সপ্তর্ষি স্যার ওর হাসি উপেক্ষা করে ওদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “আর তোদের
রোল কী হবে সেটা শুনে নে। তোরা পোলট্রির ব্যাবসা করিস। তোদের ব্যাবসা ভালো চলছে
না। আর এক পোলট্রি তোদের সঙ্গে শত্রুতা করছে। তুকতাক করছে, আর তোদের মুরগিগুলো
পটাপট মরে যাচ্ছে। একটু প্র্যাকটিস করে নে। অভিনয় ভালো হওয়া চাই।”
সায়ন প্রবল উৎসাহ নিয়ে বলে উঠল, “স্যার, পোলট্রির ব্যাবসা
করলে দারুণ হত। রোজ মুরগির ঠ্যাং চিবানো যেত...”
সায়নের দিকে থাপ্পড় দেখিয়ে সপ্তর্ষি স্যার ধমকে
উঠলেন, “হ্যাঁ, পড়াশুনো না করে ওটাই কর তুমি! কেমিস্ট্রি ভালো করে না পড়লে
বায়োলজিতেও ডুববে, সেটা খেয়াল রেখো।”
সপ্তর্ষি স্যারের পরিকল্পনামতো সায়ন আর মিঠুন আগে পৌঁছে
গেল টোটো ধরার জন্য। টোটোতে বসতেই মিঠুনের মোবাইলে মেসেজ এল সপ্তর্ষি স্যারের
– ‘আমরা রওনা দিয়েছি। কথাবার্তা সাবধানে বলিস। সব দিকে নজর রাখিস। পারলে অল্পাহারী বাবার সঙ্গে
আলাপচারিতা রেকর্ড করে রাখিস মোবাইলে। তবে খুব সাবধানে।’
মেসেজ পড়া শেষ হতে না হতেই টোটো চালক হেঁকে উঠল,
“অল্পাহারী বাবা,... এসে গেছে, নামুন নামুন।” টোটোতে বসা প্রায় সব লোকই নেমে
গেল। ধানখেতের মধ্য দিয়ে আলপথের মতো একটা রাস্তা নিচের দিকে
ঢালু হয়ে নেমে গেছে। কিন্তু বড়ো রাস্তা থেকেও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে অল্পাহারী
বাবার তাঁবু। সামনে এসে দেখে প্রবেশ পথে বাবার বিশাল ধ্যানমগ্ন মূর্তি তাদের
স্বাগত জানাচ্ছে।
গেরুয়া পোশাক পরা দুটো লোক গেটের সামনে ওদের নাম আর
মোবাইল নম্বর খাতায় টুকে নিল। তাঁবুর ভিতরে বিরাট এক স্টেজ বাঁধা। দু-চারজন
গেরুয়াধারী চেলাচামুণ্ডা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিচে গালিচা পাতা। তাতে জনা পঞ্চাশেক লোক
ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। ওরা এক কোনায় বসে পড়তেই একজন ষণ্ডা মতো দাড়ি-গোঁফওয়ালা লোক ওদের
প্রশ্ন করল, “বাবার সঙ্গে দেখা করবে, না এখানে শুধু মজা দেখতে এসেছ?”
মিঠুন বুঝে গেল, এরা সদা সতর্ক। ওদের অল্প বয়স দেখে
বাজিয়ে দেখছে। সায়ন হঠাৎ কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,”আমাদের বড়ো বিপদ বাবাজি। বাবা কখন আসবেন? অনেক দূর
থেকে এসেছি। বাড়ি ফিরতে হবে।”
সায়নের কথা শুনে লোকটা খুশি হল। বেশ উৎসাহের সঙ্গে গলা
নামিয়ে জানাল, “বাবাজির বিশ্রাম হয়ে গেছে। এই এলেন বলে। তোমাদের নাম ডাকা হবে
মাইকে। খাতায় নাম লিখিয়ে রেখেছ তো!”
ষণ্ডা লোকটার সঙ্গে কথা শেষ হতেই হঠাৎ পিঠে মিঠুনের
কনুইয়ের খোঁচা খায় সায়ন। মিঠুনের দৃষ্টি অনুসরণ করে সায়ন দেখে, সপ্তর্ষি স্যার আর
শিঞ্জিনী মণ্ডপে ঢুকছে। ঠিক তখুনি বসে থাকা জনতার মধ্যে চাপা গুঞ্জন শুরু হতে ওরা
দেখে, অল্পাহারী বাবা স্টেজে ঢুকছেন। সবাইকে উঠে দাঁড়াতে দেখে মিঠুন আর সায়নও উঠে
দাঁড়ায়। মাঝারি উচ্চতার গেরুয়াধারি অল্পাহারী বাবার নাদুস ভুঁড়ি এতদূর থেকেও
পরিষ্কার দৃশ্যমান। বাবাজি এক হাত তুলে সবাইকে বসতে বলে নিজে একটা সিংহাসন টাইপের
চেয়ারে বসেন। তার দুই পাশে দুই বলিষ্ঠ চেহারার চ্যালা। মনে হল যেন তারা বাবার
দেহরক্ষী।
এক এক করে ভক্তদের নাম ডাকা হল মাইকে। বাবাজির
সামনে এক একজন ভক্ত যাচ্ছে, প্রণামী দিচ্ছে আর দশ মিনিটে স্টেজ থেকে নেমে আসছে। মাইকে
মিঠুন আর সায়নের নাম একসঙ্গে ঘোষণা হলে ওরা স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল। স্টেজের সামনে
শ’খানেক ফুট দূরে মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিঠুন বুঝতে পারল, খুব কাছ
থেকে বাবাজিকে যাতে দেখা না যায়, সেজন্যই মানুষকে দূরে রাখা হয়েছে।
বাবাজির চারিদিকে অন্তত জনাদশেক শিষ্য ঘোরাঘুরি
করছে। একজন হাতের ইশারায় বাবার পায়ের সামনে আসনে ওদের বসতে বলল। এর মধ্যেই পকেটে
হাত দিয়ে মোবাইলে ভয়েস রেকর্ডার চালু করে দিয়েছে সায়ন। বাবার চোখ আধবোজা। তার এক হাত রুদ্রাক্ষের
মালা ঘোরাচ্ছে। ছোট্ট প্রশ্ন এল, “কী সমস্যা?”
সায়ন কান্নাভেজা গলায় বলে উঠল, “আমাদের ব্যাবসা
ভালো চলছে না বাবা - লস খাচ্ছি। আমরা মুরগি পালনের ব্যাবসা করি। আর এক ব্যাবসাদার
তুক করছে মনে হচ্ছে। ওর ব্যাবসা রমরমিয়ে চলছে, আর আমদের মুরগি সমানে মরছে।”
জপের মালায় হাত বুলানো থামিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে হঠাৎ
সামনে ঝুঁকে পড়ে অল্পাহারী বাবা ওদের কপালে হাত বুলায়। কপালে গুঁড়ো গুঁড়ো কীসব ঝরে
পড়তে যেই সায়ন হাত দিতে গেছে, অমনি বাবার এক শিষ্য বলে, “ভগবানের বিভূতি। মুছবি
না। এই যে বিভূতি পেলি, আর তোদের কোনও লস হবে না।”
সায়ন বিস্মিত হয়ে ভাবে, অল্পাহারী বাবা এতক্ষণ জপের
মালায় হাত ঘুরাচ্ছিল, হাতে হঠাৎ করে বিভূতি কোথা থেকে এসে গেল! বাবা বলে ওঠে, “যা,
কাল একবার আসিস। এবার মহাদেবের কৃপায় তোদের উন্নতি আটকায় কে?”
মাইকে নাম ঘোষণা হতেই সপ্তর্ষি স্যার আর শিঞ্জিনী
স্টেজে ওঠার সিঁড়ির দিকে এগোল। শিঞ্জিনীর বেশ ভয় করতে লাগল। তার আবার সব কিছুতেই
একটু বেশি হাসি পেয়ে যায়। শিঞ্জিনীর পেটের ভিতর থেকে বুড়বুড়িয়ে হাসি উঠে আসছে।
আধবোজা চোখ খুলে প্রথমেই শিঞ্জিনীকে দেখে অল্পাহারী বাবার মুখ ফুটল, “আয়, আয়, কী
দুঃখ বল। সব খুলে বল।”
বাবার দৃষ্টি নিজের দিকে ফেরানোর জন্য সপ্তর্ষি
স্যার বলে, “আমার বোন, শম্পা। পরীক্ষায় পাশ করতে পারে না। গতবছর সব সাবজেক্টে......আবার
সামনে পরীক্ষা...।”
বাবার গোঁফদাড়িতে ঢাকা মুখ থেকে শব্দ হল, “ভাবিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে,
ভোলেনাথ সব ভালো করবে।” বলেই সিংহাসনের পাশে রাখা টেবিলের উপর থেকে পিতলের বাঘের
মুণ্ডু লাগানো কারুকার্য করা সুদৃশ্য একটা দণ্ড তুলে নিয়ে শিঞ্জিনীর মাথায় ছুঁইয়ে
বাবাজি মন্ত্র পড়তে শুরু করল, “ওঁ, ড়িং ড়িং, কুলু কুলুং, লুলু লুলুং, ওঁ ড়িং
ড়িং......”
শিঞ্জিনীর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। যদি বাবাজি ধরে
ফেলে, ও পড়াশুনোয় খুব ভালো, আর প্রতিবছর অনেক নম্বর পেয়ে পরের ক্লাসে তরতর করে উঠে
পড়ে! এই সব ভাবতে না ভাবতেই শিঞ্জিনীর মাথায় বাবাজির হাতের লাঠিতে লাগানো বাঘের
মুখ থেকে চিড়িক চিড়িক করে জল ছিটকাতে থাকে। বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে শিঞ্জিনী
দেখে, তার চোখ বোজা, ঠোঁট বিড়বিড় করছে। আড়চোখে সপ্তর্ষি স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখে
স্যার সরু চোখে বাবার হাতের লাঠিকে মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে।
সপ্তর্ষি স্যার বাবার পায়ের কাছে একশো টাকার দুটো
নোট রেখে দেয়। বাবার মুখে স্মিত হাসি ফুটে উঠতেই এবার সপ্তর্ষি স্যার বলে
ওঠেন, “বাবা, আমারও এক সমস্যা হয়েছে...।”
স্যারের কথা যেন মুখ থেকে কেড়ে নেয় অল্পাহারী বাবা,
“বলে ফ্যাল,
উপায় আছে। খালি হাতে আমার কাছ থেকে কেউ ফেরে
না।”
“বাবা, আমার কথাটা ধৈর্য ধরে শুনতে হবে। একটু লম্বা
একটা গল্প,” স্যার ব্যাগ্র হয়ে ওঠেন।
“সময় নষ্ট করিস না। বাবা অন্তর্যামী, সব জানে,” পাশ
থেকে কেউ বলে ওঠে।
শিঞ্জিনী ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে রোগা পাতলা চেহারার
গেরুয়া পোষাকে এক বৃদ্ধ। লোকটা বেশ ধূর্ত, চোখের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে। স্যারের কাছে
ঝুঁকে এসে বুড়ো বলে, “শুধু নামটা বলে দে। তারপর দেখ খেলা।”
“ত্রিদিব সেন, ইয়ে... মানে, আমাদের অফিসের বস... বড্ড
জ্বালায়...।”
মুখ ফসকে স্কুলের হেডস্যারের নামটা বলেই নিজের ভুল
বুঝতে পেরে আফশোশ হয় সপ্তর্ষি স্যারের। শিঞ্জিনী অতি কষ্টে হাসি চাপে।
স্কুলের ভালোমানুষ হেডস্যারের মুখ মনে পড়ে যেতে শব্দ করে হাসতে গিয়েও নিজেকে সামলে
নিয়ে কাশতে শুরু করল শিঞ্জিনী। সপ্তর্ষি স্যার ওকে চোখের ইশারায় ধমক দেন।
অল্পাহারী বাবা হাতের ইশারায় ষণ্ডা লোকটার দিকে বাম
হাত তুলে আঙুল দিয়ে ভিকট্রি সাইনের মতো কিছু একটা দেখাতেই চোখের নিমেষে দু’জন চেলা
একটা বড়ো লোহার ট্রে স্টেজের উপর একটু দূরে রেখে দেয়। আর একজন শিষ্য বাবার হাতে কাপড়ের
এক পুঁটুলি ধরিয়ে দিতেই বাবা বিড়বিড় করে মন্ত্র পাঠ শুরু করল। তারপর কাপড়ের
পুঁটুলিটা লোহার ট্রেতে ছুঁড়ে দিয়ে, আর একজন চেলাকে ইশারা করল। সে আচমকা পুঁটুলির
উপর আর একটা পাত্র থেকে কালো রঙের ছাই ছড়াতে শুরু করল। অল্পাহারী বাবা মাইক নিয়ে
এবার সর্বজন উদ্দেশে বলল, “এই ভক্তের অফিসের বস ওকে শান্তি দিচ্ছে না। এই পুতুলের
দিকে সবাই দ্যাখো। কেমন করে আমার ভক্তকে কষ্ট দেওয়া ওর অফিসের উপরওয়ালা আগুনে
পুড়ে শেষ হয়ে যায়, এবার সেটাই দেখার। দুষ্টের দমনে মহাকাল ভৈরব আমাকে
পাঠিয়েছে। সবাই বল, জয় ভোলেনাথের জয়।”
সমস্ত তাঁবু জুড়ে ‘জয় ভোলেনাথের জয়’ ধ্বনি শোনা যায়। অল্পাহারী বাবা উঠে দাঁড়ায়,
তারপর ছাইমাখা পুতুলের উপর একটা তামার ঘটি থেকে তরল পদার্থ ঢেলে দিয়ে মন্ত্র পড়তে
শুরু করে। ভক্তটি মাইকে তখন বলে চলেছে, “বাবা ঘৃত সংযোগ করেছেন। এইবার বাবার
কোপানলে দ্বগ্ধ হবে দুষ্ট, সবাই দেখ।”
শিঞ্জিনী ভয়ে সপ্তর্ষি স্যারের হাত চেপে ধরতেই
স্যারের মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল যেন। বাবা চেয়ারে ফিরে গিয়ে একাগ্র দৃষ্টিতে চোখ
বড়ো বড়ো করে তার কোপানল ঝাড়তে লাগল ট্রেতে রাখা পুতুলটার দিকে। হঠাৎ দপ করে জ্বলে
উঠল ছাইমাখা পুতুল। মাইকে ভক্তিগীতির আবহে শোনা যাচ্ছে, “জয় বাবা অল্পাহারী
মহারাজের জয়, জয় বাবা ভলেনাথের জয়”।
পরদিন স্কুলে যেতেই সপ্তর্ষি স্যার সায়ন, মিঠুন আর
শিঞ্জিনীকে স্কুল ছুটির পর দেখা করতে বললেন কেমিস্ট্রি ল্যাবে। স্যার বললেন,
“সামনের শনিবার স্কুল ছুটি। সায়ন, তুই আর মিঠুন ঠিক চারটেয় বাবাজির আশ্রমে ঢুকে
পড়বি। আমাকে ওখানেই পেয়ে যাবি। ঢুকেই বলবি, বাবাকে প্রণামী দিতে এসেছি। আর এখন
কোনও প্রশ্ন করবি না। এবার তোরা দু’জন বাড়ি যা। শিঞ্জিনী তুই একটু দাঁড়া। দু-একটা
কথা সেরে নিই।”
শনিবার বেলা চারটেয় অল্পাহারী বাবার তাঁবুতে ঢুকে
সায়ন আর মিঠুন দেখল লোকে লোকারণ্য। কিন্তু সপ্তর্ষি স্যারকে কোথাও দেখা গেল না।
মোবাইলে স্যারকে ফোন করতে গিয়ে মিঠুন দেখল ফোন বেজে গেল, স্যার তুলল না। একটু পরে
মেসেজ এল, “ডানদিকে বাঁশের খাম্বার ঠিক পিছনে বসে আছি। বেশি উৎসাহ দেখাস না।
সাবধান।”
বাঁশের খাম্বার পিছনে এক মৌলবি বসে আছে, স্যার
কোথায়? তার পাশে কালো বোরখায় এক মহিলা সম্ভবত। মনের মধ্যে বিদ্যুৎ খেলে গেল যেন
মিঠুনের। আরে, স্যার ছদ্মবেশে নয় তো!
মাইকে নাম ঘোষণা হল, ‘আলি আসগর কে আছেন? মঞ্চে আসুন।’
সঙ্গে সঙ্গে সপ্তর্ষি স্যার উঠে দাঁড়াল। পিছনে পিছনে বোরখা পরা
মহিলা। বোরখার নিচে যে শিঞ্জিনী, তাতে ওদের আর কোনও সন্দেহই থাকল না। কিছুক্ষণ পর
মাইকে ঠিক আগের দিনের মতো ঘোষণা হল, “এদিকে দেখ ভক্তেরা। আলি আসগরের বউ ফতিমার উপর
শয়তান ভর করেছে। ওদের আল্লাও ওদের ভরসা দেয়নি। কিন্তু বাবাজি দিলেন। বাবাজি ভক্তের
ভগবান, যিনি আল্লা তিনিই ঈশ্বর। শয়তান মরার জন্য প্রস্তুত হও।”
সকলের সম্মিলিত জয়ধ্বনির মধ্য দিয়ে বাবাজি উঠে
দাঁড়াতেই মৌলবির পোষাকে সপ্তর্ষি স্যার লাফ দিয়ে উঠে বুড়ো ঘোষকের হাত থেকে মাইক
কেড়ে নিয়ে নিজেই ঘোষণা করলেন, “সবাই দেখুন। বাবা যা পারে, আমিও তাই পারি। আমার
হাতের এই বোতলে আছে গ্লিসারিন, যা আপনারা শীতকালে গায়ে মাখেন। বাবা গ্লিসারিনকে ঘি বলে
চালায়। এই আমি ছাইমাখা পুতুলের উপর গ্লিসারিন ঢালছি। দেখতে দেখতে পুতুল দাউ
দাউ করে জ্বলে উঠবে।”
ঠিক তখনই মঞ্চের দু’দিক থেকে দুই শক্ত চেহারার লোক
ঢুকে পড়ল। বাবার ষণ্ডামার্কা চেলা যেই না সপ্তর্ষি স্যারের দিকে আক্রমণের ভঙ্গীতে এগিয়ে
গেছে, অমনি পিছন থেকে তারা লোকটাকে চেপে ধরে কুপোকাত করে দিল। সব দেখে বাবাজি ধপ করে
সিংহাসনে বসে পড়ল, যেন কাটা কলাগাছ। সপ্তর্ষি স্যার হাতের শিশিটা ট্রের ছাইয়ের উপর
উপুড় করে দু’মিনিট অপেক্ষা করতেই ট্রেতে রাখা পুতুলটা দপ করে জ্বলে উঠল। এবার মঞ্চ থেকে ভারী গলায়
আর একজন মাইকে ঘোষণা করল, “আপনারা ভয় পাবেন না। কোথাও যাবেন না। আমরা সাদা পোশাকের
পুলিশ। এই ভণ্ডটা আসলে একটা বড়ো ক্রিমিনাল। মৌলবি সাহেব আসলে এই শহরের বিজ্ঞান
শিক্ষক, সপ্তর্ষি চৌধুরী।”
মাইকে স্যারের গলা শোনা গেল, “এই যে বাবাজির পেতলের
ঘটি থেকে আপনারা ঘি ঢালতে দেখেছেন এতদিন, সেটা আসলে গ্লিসারিন, যা আপনারা শীতকালে
গায়ে লাগান। আর ছাইয়ের মধ্যে মেশানো ছিল পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, এক বিশেষ
কেমিক্যাল। এই দুই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আগুন জ্বলে ওঠে, মনে হয় বাবার
কোপানলে আগুন জ্বলে উঠেছে।”
সায়নের কাঁধে হাত রেখে মিঠুন বলে, “এক্সোথারমিক
রিয়াকশন বুঝলি!”
শিঞ্জিনী কাঁধ থেকে হাতটা সরিয়ে বলে, “আমার জানা
আছে। স্যার আগেই এই নিয়ে আমার সঙ্গে সেদিন আলোচনা করেছে।” কোন ফাঁকে শিঞ্জিনী মঞ্চ থেকে নেমে ওর পাশে দাঁড়িয়েছে, লক্ষই করেনি
মিঠুন।
আশ্রম থেকে ফেরার সময় সপ্তর্ষি স্যারসহ ওরা সবাই
পুলিশের গাড়িতে ওঠে। বাবা আর তার চ্যালাদের ততক্ষণে পুলিশ অন্য একটা ভ্যানে তুলে
ফেলেছে। থানায় গিয়ে সপ্তর্ষি স্যার কিছু কাগজে সই করে দেওয়ার পর সবার জন্য আসে গরম
গরম শিঙ্গারা আর রসগোল্লা। থানার অফিসার ওদের দিকে ফিরে বলেন, “শেষ কর তাড়াতাড়ি।
তোমরাই আজকের হিরো। আহা, আমাদের সময় যদি এমন মাস্টারমশাই থাকত!”
সায়ন খেতে খেতে শিঙাড়ার ভেঙে পড়া টুকরোটা সামলাতে
সামলাতে বলল, “স্যার ওই বাবার ছাইয়ের ব্যাপারটা বুঝলাম না। জপের মালা থেকে ছাই এল
কী করে?”
সপ্তর্ষি স্যার টিস্যু পেপারে হাত মুছতে মুছতে
বললেন, “ওটা একটা বহু পুরোনো ট্রিক। ঘুঁটে পোড়া ছাইয়ের গুলি বানিয়ে রেখে দেয়
আলখাল্লার পকেটে। তারপর হাতের কারসাজিতে দুই আঙুলের ফাঁকে এনে জপ করার ভঙ্গীতে
গুঁড়ো করে, আর বোকা ভক্তরা ভাবে সেটা বুঝি বাবার বিভূতি।”
থানার অফিসার সপ্তর্ষি স্যারকে লক্ষ করে বলে উঠলেন,
“একী স্যার, শুধু একটা শিঙাড়া... আপনার বয়সে আমি চারটে উড়িয়ে দিতাম... আর একটা
নিন।”
সপ্তর্ষি স্যার হাত তুলে অফিসারকে থামিয়ে বলেন,
“নাঃ, একটাই যথেষ্ট, নইলে আবার সায়নের দাদুর মতো জিভে ঘা হয়ে কোনও বাবার খোঁজ করতে
হবে।”
সপ্তর্ষি স্যারের কথা শুনে সবাই হা হা করে হেসে
উঠল।
ছবিঃ অতনু দেব
অরূপ,তোমার গল্পটা একটানা পড়ে শেষ করলাম। অনবদ্য গল্প! যেমন উপস্থাপন, তেমনই সংলাপ! সংলাপের গুণে চরিতগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। আসলে, সংলাপই হল গল্প বা উপন্যাসের প্রাণভোমরা । তুমি শেষপর্যন্ত ধরে রাখতে পেরেছ সাসপেন্স । এমন শারদ উপহারের জন্যে ধন্যবাদ তোমাকে। থাকছে শুভেচ্ছা অন্তহীন ।
ReplyDelete