সাকির অ্যডভেঞ্চার আর...
সায়ন্তনী পলমল ঘোষ
_____
সায়ন্তনী পলমল ঘোষ
দুম দুম
করে
পা
ফেলে
ঘর
থেকে
বেরিয়ে
গেল
সংকল্প
ওরফে
সাকি। সাকির চলে
যাওয়া
পথের
দিকে
তাকিয়ে
শিখরবাবুর
দু’চোখে
হতাশা
নেমে
এল। পাশে দাঁড়ানো
স্ত্রী
তিস্তার
উদ্দেশে
বললেন,
“আমরা
কি
খুব
ভুল
সিদ্ধান্ত
নিচ্ছি?”
“সত্যি
বলতে
কি
আমিও
বুঝতে
পারছি
না। সাকি তো
কোনোভাবেই
মেনে
নিতে
পারছে
না
আমাদের
সিদ্ধান্ত,”
তিস্তা
অসহায়
কণ্ঠে
বলেন।
সাকি
বাবা-মায়ের
ঘর
থেকে
বেরিয়ে
সিঁড়ির
দিকে
রওনা
দিল। এ বাড়ির মধ্যে
ছাদটাই
হল
সাকির
একমাত্র
পছন্দের
জায়গা। আসলে ছাদ
থেকে
মস্ত
নীল
আকাশটা
দেখা
যায়। আকাশটা তো
সব
জায়গায়,
সব
দেশে
একই
রকম। ছাদে যেতে
যেতে
সাকির
চোখ
পড়ল
বড়োমা
মানে
ওর
বাবার
ঠাকুমার
ঘরের
দিকে। প্রায় একশো
ছুঁতে
চলা
একটা
মানুষ। এখন বয়স
নাকি
নিরানব্বই। সাকির ঠাকুমা
ওনাকে
কিছু
একটা
খাওয়াচ্ছেন
আর
দাদু
পাশে
দাঁড়িয়ে
আছেন। সাকি একবার
ওনাদের
দিকে
দেখল,
তারপর
রাগে
ফুঁসতে
ফুঁসতে
ছাদে
চলে
গেল।
সাকির
বাবা
শিখর
চৌধুরী
একাধারে
একজন
বিজ্ঞানী
এবং
অধ্যাপক
আর
মা
তিস্তা
একজন
ডাক্তার। সাকির ছোটোবেলার
চার
বছর
কেটেছে
কলকাতায়,
তারপর
কয়েক
বছর
দিল্লিতে,
শেষ
তিন বছর
লন্ডনে। ওর বাবার
একটা
কাজের
সূত্রে
ওরা
ওখানে
গিয়েছিল। সেই ফাঁকে
সাকির
মাও
ডাক্তারি
সম্পর্কিত
কিছু
কোর্স
করেন
ওখানে,
কিন্তু
মুশকিলটা
হল
এরপর। সাকি ওখান
থেকে
দেশে
ফিরতে
রাজি
নয়। বারো বছরের
সাকির
এখন
মনে
হচ্ছে
এ
দেশটা
বসবাসের
অযোগ্য। ওর মতের
বিরুদ্ধেই
ওর
বাবা-মা
দেশে
ফিরে
আসেন। এখানে কাজে
যোগ
দেন,
কারণ
ওনারা
নিজের
দেশকে
ভীষণ
ভালোবাসেন। ওনারা কখনোই
পাকাপাকিভাবে
বিদেশে
থাকার
কথা
ভাবেননি। এখানে থেকে
দেশের
কাজে
লাগার
কথা
ভাবেন,
কিন্তু
সাকির
মনোভাব
সম্পূর্ণ
উলটো। সে রীতিমতো
বিদ্রোহ
ঘোষণা
করছে। সাকির বাবা-মা
পড়েছেন
খুব
দুশ্চিন্তায়
কারণ
শিখরবাবুর
ঠাকুমা
এখনও
জীবিত,
বয়স
নিরানব্বই। শিখরবাবুর বাবার
বয়স
একাশি
আর
মায়ের
সত্তর। বাড়িতে এই
তিন জন
এত
বয়স্ক
মানুষকে
ফেলে
কোনও
মতেই
বিদেশে
থাকতে
চান
না
ওঁরা। ওনারা ভাবতেই
পারেননি
যে
মাত্র
তিন
বছর
ওখানে
থেকে
সাকির
মতো
একটা
বাচ্চা
ছেলে
বিদেশের
মোহে
পড়ে
যাবে। সাকি ওখানে
একটা
স্কুলে
পড়ত। এখানে ফিরে
এসে
রীতিমতো
নামি
একটি
ইন্টারন্যাশনাল
স্কুলে
সাকিকে
ভর্তি
করেছেন
ওঁরা। কিছুদিনের মধ্যেই
ক্লাস
শুরু
হবে,
কিন্তু
সাকির
আচার
আচরণ
নিয়ে
দুশ্চিন্তায়
পড়ে
গেছেন
শিখরবাবুরা। কারও সঙ্গে
কথা
বলছে
না। বাড়ির বয়স্ক
সদস্য
যাঁরা
ওকে
একটু
কাছে
পেতে
চান
তাঁদের
তো
ধারপাশেও
যাচ্ছে
না। বাবা-মায়ের
ওপর
কখনও
রাগ
কখনও
অভিমানের
বহিঃপ্রকাশ
ঘটাচ্ছে
সে। অনেক বুঝিয়েও
কোনও
লাভ
হয়নি। ওর কাউন্সিলিং
করবেন
কিনা
এবার
ভাবছেন
শিখরবাবু।
সন্ধে
নেমে
গেছে
শহরের
বুকে। আস্তে আস্তে
আলোক
মালায়
সেজে
উঠছে
চারিদিক। সাকিদের বাড়িটা
বেশ
পুরোনো। তিন দিকে বেশ
অনেকখানি
জায়গা
আর
এক দিকে
বাড়িটা
একদম
পাঁচিলের
গা
ঘেঁষে
বসানো। পাশের বাড়ির
ছাদে
লাফিয়ে
নামা
যাবে। পাশের বাড়িটা
অবশ্য
এখন
খালি
পড়ে
আছে। বাবা-মায়ের
সঙ্গে
একপ্রস্থ
মান-অভিমানের
পর
ছাদে
উঠে
এল
সাকি। খানিকক্ষণ একলা
থাকার
পক্ষে
আদর্শ
জায়গা
হল
এই
বিশাল
ছাদটা। ছাদে উঠে
মাঝে
মাঝেই
মাউথ
অর্গান
বাজায়
সে। আজ ছাদে
উঠেই
ভ্রু
কুঁচকে
গেল
সাকির। খুব অল্প
পাওয়ারের
একটা
বাল্ব
জ্বলে
এখানে। আধো অন্ধকারের
মধ্যেও
স্পষ্ট
দেখল
ছাদের
পাঁচিলে
হেলান
দিয়ে
একটা
লোক
বসে
আছে। চোর নয়
তো!
সাকিকে
দেখে
ধীরে
সুস্থে
উঠে
দাঁড়াল
লোকটা। তার ভাবভঙ্গী
দেখে
মোটেও
চোর
বলে
মনে
হচ্ছে
না। একটা সাদা
টি
শার্ট
আর
কালো
প্যান্ট
পরে
আছে
লোকটা। দূর থেকেও
বোঝা
যাচ্ছে
বেশ
হ্যান্ডসাম
এবং
ভদ্র
সভ্য
দেখতে।
“হাই,
আয়াম
ভিভান। সবাই আমাকে
ভিভ
বলে
ডাকে। তুমিও তাই
বলতে
পারো। বাই দ্য
ওয়ে
তোমার
নামটা
কী?”
সাকি
দেখল
লোকটার
বয়স
বেশি
না,
এই
পঁচিশ
ছাব্বিশ
বছর
হবে। লোকটার সপ্রতিভ
ভাবভঙ্গী
আর
কথা
বলার
কায়দা
সাকির
ভালো
লেগে
গেছে। সে যখন
লন্ডনে
ছিল
তখন
নতুন
কারুর
সঙ্গে
বন্ধুত্ব
হলে
এই
ভাবে
কথা
বলত।
“আমি
সাকি। তুমি এই
ছাদে
কী
করে
উঠলে?
তোমাকে
তো
আমাদের
বাড়িতে
দেখিনি।”
লোকটা
চোখ
নাচিয়ে
আঙ্গুল
দিয়ে
পাশের
ছাদটা
দেখাল।
“মানে?”
সাকি
বেশ
অবাক
হয়েছে।
“মানে
ওই
বাড়িটা
আমার
এক
রিলেটিভের। ওরা নেই,
তাই
আমি
কিছুদিন
থাকতে
এসেছি। প্রায় সারাদিনই
বাইরে
বাইরে
কাটে। শুধু রাতে
থাকি। তোমাকে প্রায়ই
ছাদে
একলা
দাঁড়িয়ে
থাকতে
দেখি,
তাই
আলাপ
করার
লোভ
হল। আসলে একলা
থাকি
তো। তার ওপর
তোমার
মতো
আমিও
মাউথ
অর্গান
বাজাই,
তাই
চলে
এলাম। তোমাকে দেখেই
বোঝা
যায়
ইউ
আর
আ
স্মার্ট
বয়।”
সাকি
কী
বলবে
ভেবে
পেল
না,
শুধু
একটু
হাসল।
“আচ্ছা
তুমি
ছাদে
একলাই
আসো
দেখি। বাড়ির অন্য
কাউকে
তো
দেখি
না।”
“আমি
একলা
থাকতেই
পছন্দ
করি,”
গম্ভীরভাবে
জবাব
দিল
সাকি।
“নোওওও। ইটস নট
ফেয়ার। আ স্মার্ট বয়
মাস্ট
হ্যাভ
আ
কম্পানি।” সাকি ভালো করে লোকটা বা বলা যায় ছেলেটাকে দেখল।
লম্বা,
ভীষণ
ফরসা,
চোখ
দুটো
উজ্জ্বল
আর
চেহারায়,
কথাবার্তায়
একটা
এমন
কিছু
আছে
যে
তার
সঙ্গে
কথা
বলতে
ইচ্ছে
করছে
সাকির। বস্তুত এখানে
আসার
পর
থেকে
সে
ভীষণ
একলা
হয়ে
গেছে। বাবা-মায়ের সঙ্গেও
দূরত্ব
তৈরি
হয়ে
গেছে।
“তুমি
কি
কখনও
বিদেশে
গেছ?
তোমার
ইংলিশ
অ্যাকসেন্ট
শুনে
মনে
হচ্ছে,”
সাকি
ছেলেটাকে
জিজ্ঞেস
করল।
“আমি
একদম
ঠিক
ধরেছি। ইউ আর
ভেরি
স্মার্ট। তুমি বুঝে
গেলে
যে
আমি
বিদেশে
ছিলাম,”
হাসতে
হাসতে
বলল
ছেলেটা।
“আমিও
বিদেশে
ছিলাম,”
সাকি
বিষণ্ণ
মুখে
বলল।
“ওহ,
রিয়েলি। কোথায় ছিলে?”
এরপর
আস্তে
আস্তে
সময়
কোথা
দিয়ে
কেটে
গেল
সাকি
বুঝতেই
পারল
না। এতদিন পরে
বেশ
মনের
মতো
একজন
মানুষ
পেয়েছে
সে। নিজের সব
দুঃখের
কথা
উজাড়
করে
দিল
সে।
“আজ
আমি
আসি। তবে আমার
আসার
কথা
কাউকে
বোলো
না। আমাকে বলা
হয়েছে
ওই
বাড়ির
সঙ্গে তোমাদের
বাড়ির
কিছু
একটা
সমস্যা
আছে। আমি যেন
তোমাদের
সঙ্গে
মেলামেশা
না
করি,
কিন্তু
আমি
তো
তোমাকে
দেখে
থাকতে
পারলাম
না। বন্ধুত্ব করতে
চলে
এলাম। তাছাড়া ছাদ
টপকে
আসা
তোমার
বাড়ির
লোকেরাও
কীভাবে
দেখবেন
জানি
না। ওকে?”
“ওকে। আমি কাউকে
বলব
না। তুমি কাল
আবার
আসবে
তো?”
“আমার
লিটল
ফ্রেন্ড
বলছে
যখন
তখন
আসতে
তো
হবেই।”
সাকি
পরের
দিন
সারাদিন
অপেক্ষায়
রইল
সন্ধে
হবার। সন্ধে হতেই
ছাদে
উঠে
এল
সে। তার মানসিক
অবস্থা
বিবেচনা
করে
তার
কোনও
কাজে
কেউ
বাধা
দেয়
না
এখন। গতকাল রাতে
খাবার
সময়
দাদু
ওর
বাবাকে
বলছিলেন
যে
সাকি
যখন
চাইছে
না
তখন
ওরা
বিদেশে
চলে
যেতে
পারে। ওনারা ঠিক
থেকে
যাবেন
এখানে। সামলে নেবেন
সব
কিছু,
কিন্তু
সাকির
বাবা
কোনও
কথাই
শুনতে
রাজি
নয়। সাকি একবার
বলেছিল
যে
দাদু,
ঠাম্মা
আর
বড়োমাও
বিদেশে
চলুক
ওদের
সঙ্গে,
তাহলে
ওনাদের
দেখাশোনার
অসুবিধা
হবে
না,
কিন্তু
ওনারা
আবার
এ ব্যাপারে
অনড়। এই পচা
দেশটা
ছেড়ে
ওনারা
নাকি
যেতে
পারবেন
না
কিছুতেই।
“গুড
ইভিনিং
ফ্রেন্ড। মুখটা শুকনো
কেন?
হোয়াট
হ্যাপেন্ড?”
সাকি
গত রাতের
ঘটনা
সব
বলে
ভিভানকে। সব শুনে
ভিভান
সাকিকে
বলে,
“তোমার
এই
দেশটা
একদম
ভালো
লাগে
না
তাই
না?”
“হুম।”
“ওকে,
ও সব
কথা
বাদ
দাও। তোমাকে একটা
মজার
কথা
বলি।”
“কী?”
“আমি কী কাজ করি তুমি জানো?”
“না।”
“আমি
একজন
সায়েন্টিস্ট।”
“ও,
আমার
বাবাও
সায়েন্টিস্ট।”
“জানি,
ওনার
বিষয়
বায়োটেকনোলজি। যাই হোক আমি
একটা
জিনিস
আবিষ্কার
করেছি। তার সাহায্যে
তুমি
আর
আমি
কিন্তু
এডভেঞ্চারে
যেতে
পারি,”
ভিভানের
মুখে
রহস্যময়
হাসি।
“এডভেঞ্চার!
সত্যি বলছ?”
“হুম। মিথ্যে বলে
আমার
কী
লাভ?
আমি
একলাই
যাব
ঠিক
করেছিলাম,
কিন্তু
একা
একা
এডভেঞ্চার
করতে
কি
আর
ভালো
লাগে?
তাই
তোমার
সঙ্গে
আলাপ
হতে
ভাবলাম
তুমি
যদি
সঙ্গে
যাও। তুমিও তো
বোর
হচ্ছ
এখানে।”
সাকি কয়েক মুহূর্ত ভাবল, তারপর বলল, “কবে যাবে? বাবা-মা কি আমাকে ছাড়বে?”
“যেতে
যদি
চাও
এখনই
যেতে
পার। বাবা-মায়ের
পারমিশনের
দরকার
পড়বে
না। ওনারা বোঝার
আগেই
তুমি
ফিরে
আসবে।”
“সেটা কী করে সম্ভব?”
“এটাই
তো
ভিভানের
ম্যাজিক। যাবে কিনা
বল। আমি একটু
পরেই
বেরিয়ে
পড়ব।”
সাকি
কয়েক
মুহূর্ত
ভাবল। অন্য সময়
হলে
বাবা-মাকে
না
জানিয়ে
কিছু
করত
না
সে,
কিন্তু
এখন
ওনাদের
ওপর
ওর
ভীষণ
অভিমান,
তাই
রাজি
হয়ে
গেল।
ভিভান
অদ্ভুত
কায়দায়
সাকিকে
ছাদ
টপকে
ওদের
ছাদে
নিয়ে
এসেছে। এখন ভিভান
আর
সাকি
দাঁড়িয়ে
আছে
ভিভানদের
চিলেকোঠার
ঘরে। চারিদিকে বেশ
কিছু
নতুন
ধরনের
যন্ত্রপাতি। দু’জনের হাতে
দুটো
ব্যান্ড
আটকাল
ভিভান
তারপর
যন্ত্রগুলোয়
কীসব
টেপাটিপি
করে
সাকিকে
বলল,
“চোখ
বন্ধ
কর।” সাকির মনে হল সে যেন একটা দুরন্ত ঘূর্ণির মধ্যে পড়ে গেছে।
নিজের
অস্তিত্বটাই
বুঝতে
পারছে
না
সে। খানিক পরে
সাকির
মনে
হল
সব
কেমন
শান্ত।
“চোখ
খোল,”
ভিভানের
গলার
আওয়াজে
চোখ
খুলল
সাকি।
মুগ্ধ
বিস্ময়ে
চারিদিকে
তাকিয়ে
দেখছে
সাকি। এ কোন জায়গায়
এসেছে
সে!
কেমন
যেন
স্বপ্ন
স্বপ্ন
মায়াময়
একটা
শহর। বাড়িগুলোর স্থাপত্য
একদম
অন্যরকম। লোকজনের পোশাকও
অদ্ভুত
রকমের।
“কোথায়
এসেছি
আমরা?”
ভিভানকে
প্রশ্ন
করে
সাকি।
“এখন
বলব
না। তুমি শুধু
বল
কেমন
লাগছে?”
ভ্রু
নাচিয়ে
বলল
ভিভান।
“দারুণ। মনে হচ্ছে
আরাবিয়ান
নাইটসের
মতো।”
“হুম,
বুঝলাম। তুমি বিন্দাস
আমাদের
এই
অ্যাডভেঞ্চার
উপভোগ
কর।”
“এটা কি খুব ধনী লোকদের শহর?”
“হঠাৎ এরকম বলছ কেন?”
“নাহ,
সব কিছু
দেখে
মনে
হচ্ছে।”
“হুম,
তা
বলতে
পারো। খুব ঐশ্বর্যশালী,
সমৃদ্ধশালী
নগর
এটা। চল একটু
ঘুরি। আশা করি
তোমার
খুব
ভালো
লাগবে।”
ভিভান
আর
সাকি
হাঁটতে
হাঁটতে
একটা
বিশাল
প্রাসাদের
মতো
বাড়ির
সামনে
এল।
“চল
ভেতরে
ঢুকি। দেখি কী
আছে,”
ভিভান
বলল।
“ওখানে তো পাহারাদার আছে, আমাদের যদি ঢুকতে না দেয়?”
ভিভান
একটু
হাসল,
“চিন্তা
কোরো
না। ওরা আমাদের
দেখতে
পাচ্ছে
না।”
“মানে!”
“এটাই
তো
মজা। তোমার আর
আমার
হাতে
যে
কালো
রঙের
ব্যান্ডটা
লাগানো
আছে
ওটা
অন
করা
থাকলে
কেউ
আমাদের
দেখতে
পাবে
না। বলতে পারো
একটা
ইনভিজিবল
স্ফিয়ারের
মধ্যে
আমরা
লুকিয়ে
আছি। যাই হোক ওসব নিয়ে
তুমি
ভেব
না। চল এখন।”
বিশাল
দরজা
দিয়ে
ভেতরে
ঢুকেই
সাকির
মাথাটা
প্রায়
ঘুরে
গেল। এত সুন্দর
বাগান
সে
কখনও
দেখেনি। সে বিদেশ
ঘুরেছে
কিন্তু
এত
সুন্দর
বাগান
কোথাও
দেখেনি। হঠাৎ করেই
একটা
সুরের
মূর্ছনায়
সে
যেন
ভেসে
গেল। সে মিউজিক
ভালোবাসে। বিভিন্ন রকম
মিউজিক
শোনে
কিন্তু
এত
সুন্দর
সুর,
মুগ্ধ
হয়ে
গেল
সে। কোনও
একটা
বাদ্যযন্ত্রের
সুর
এটা। একটা ফোয়ারার
ধারে
কিছুক্ষণ
বসল
তারা। সুরটা বন্ধ
হতেই
ভিভান
বলল,
“চল
এবার
আমরা
ফিরে
যাই।”
“ফিরে
যাব?”
সাকির
মুগ্ধতার
রেশ
যেন
কাটছে
না। সে একটা
ঘোরের
মধ্যে
আছে।
“হ্যাঁ,
এবার
ফিরে
যাব। সময় শেষ
আমাদের। চোখ বন্ধ
কর।”
আবার
সেই
একই
রকম
অনুভূতি
হল
সাকির।
“চোখ
খোল।”
সাকি
দেখল
আবার
ভিভানের
ছাদের
ঘরে
ফিরে
এসেছে
সে।
“কী, কেমন লাগল এডভেঞ্চার?”
“দারুণ!
কিন্তু
কোথায়
নিয়ে
গিয়েছিলে
আমাকে?
কী
করে
গেলাম
আর
ফিরে
এলাম?”
সাকি
প্রশ্ন
করে।
“বললাম
না,
আমার
নতুন
আবিষ্কার। তুমি এখনও
অনেক
ছোটো
তো
তাই
এর
বেশি
কিছু
বুঝবে
না। এখন চল
তোমাকে
ছাদ
পার
করে
দিই।”
সাকিদের
ছাদে
এসে
ভিভান
বলল,
“জিজ্ঞেস
করছিলে
না
আমরা
কোথায়
গিয়েছিলাম?
এই
কাগজে
লেখা
আছে।” সাকির হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দিয়ে ভিভান চলে গেল।
সাকি
নিজের
রুমে
এসে
চিরকুটটা
খুলে
দেখল। তারপর কিছু
একটা
চিন্তা
করে
তার
মায়ের
কাছে
গিয়ে
বলল,
“মা,
তোমার
ল্যাপটপটা
একটু
দেবে?”
“হ্যাঁ,
নিয়ে
যা
না,”
তিস্তা
অবাক
হলেন। অনেকদিন পর
সাকি
স্বাভাবিকভাবে
কথা
বলল
তাঁর
সঙ্গে। সাকি ল্যাপটপটা
নিয়ে
নিজের
ঘরের
খাটে
গুছিয়ে
বসল।
সন্ধে
হতে
না
হতেই
সাকি
ছাদে
উঠে
এসেছে। কে জানে
ভিভান
কখন
কাজ
থেকে
ফিরবে। আজ কি
সাকির
কাছে
আসার
সময়
হবে
তার?
কাল
তো
আসেনি।
আপন
মনে
মাউথ
অর্গান
বাজাতে
লাগল
সে।
“দারুণ
বাজালে।”
“আরে,
তুমি
কখন
এসেছ?
আমাকে
ডাকনি
কেন?”
অনুযোগ
করে
সাকি।
“তুমি
এত
ভালো
বাজাচ্ছিলে,
তাই
শুনছিলাম,
বিরক্ত
করিনি।”
“থ্যাংকস
ভিভ
অ্যাণ্ড
কংগ্রাচুলেশন
অলসো।”
“ফর হোয়াট?”
“পরশুর
এডভেঞ্চারের
জন্য
থ্যাংকস
আর
তোমার
ইনভেনশনের
জন্য
কংগ্রাচুলেশন। তুমি টাইম
মেশিন
আবিষ্কার
করেছ
আর
আমরা
টাইম
ট্রাভেল
করলাম,
তাই
না?
আমি
একটা
ফিল্মে
টাইম
ট্রাভেল
দেখেছিলাম। আমি ভাবতেই
পারছি না
আমি
মুঘল
পিরিয়ড
নিজের
চোখের
সামনে
দেখলাম। জানো, তোমার
ওই
চিরকুটটা
দেখে
আমি
নেট
খুলে
মুঘল
পিরিয়ড
নিয়ে
অনেক
কিছু
পড়েছি। পরশু থেকে
আমি
ওই
পিরিয়ড
নিয়ে
অনেক
কিছু
পড়ে
ফেলেছি।”
“তাই?”
“হুম,
কী
গ্লোরিয়াস
টাইম!
উহঃ,
কী
সুন্দর
সব কিছু। অবশ্য ওই
সময়
খারাপ
যে সব
ব্যাপার
হয়েছিল সেগুলোও
জেনেছি
বাট
ইন্ডিয়ার কোনও
শহর
এরকম
সুন্দর
ছিল
ভাবতেই
পারছি
না
আমি,”
সাকি
উচ্ছ্বসিত।
“হুম,
ইন্ডিয়া
খুব
সমৃদ্ধশালী
ছিল
ওই
সময়। তুমি যদি
তোমার
বাবা-মাকে
বল
তাহলে
ওনারা
নিশ্চয়ই
সময়
করে
তোমাকে
বেড়াতে
নিয়ে
যাবেন
যেখানে
এখনও
ওই
সময়ের
প্রাসাদ,
মহল,
বিভিন্ন
স্থাপত্য দেখতে পাবে তুমি।”
“সত্যি?”
“সত্যি। তুমি তো
খালি
রাগ
করে
বসে
আছ। এখানে কত
কিছু
দেখার
আছে
জান?
যাই হোক
আজ
আবার
এডভেঞ্চার
হবে
নাকি?”
“আজ আবার যাবে? সত্যি যাবে?”
“তুমি
চাইলেই
যাব। তবে আজ
তোমাকে
অন্যরকম
কিছু
দেখাব।”
“অন্যরকম কিছু?”
“হুম।”
একটা
বড়ো
হলঘরের
মধ্যে
দু’পাশে
দুটো
মশাল
জ্বলছে। পুরোনো দিনের
মতো
পোশাক
পরা
একজন
বিদেশী
লোক
হাতে
চাবুক
নিয়ে
দাঁড়িয়ে
আছে।
“হুজুর,
হরেনকে
ধরে
এনেছি,”
গাঁট্টাগোট্টা চেহারার একজন লাঠিধারী এসে বলল।
“হামার
কাছে
লিয়ে
এস
ওকে,”
বিদেশী
লোকটি
চাবুক
আছড়ে
বলল।
দুজন
লাঠিধারী
একজন
ধুতি
পরিহিত
শীর্ণ
লোককে
টেনে
হিঁচড়ে
নিয়ে
এল।
“আমাকে
ছেড়ে
দ্যান। আমাকে ছেড়ে
দ্যান
সাহেব।”
“টুমার
জমিতে
নীল
চাষ
করিবে
কিনা
বল?”
সাহেব
জিজ্ঞেস
করল।
“নাহ,”
এবার
গর্জে
উঠে
প্রতিবাদ
জানাল
ধরে
নিয়ে
আসা
হরেন
নামের
লোকটি।
“কী
বলিলে?”
সপাং
করে
চাবুকের
এক
ঘা
পড়ল
হরেনের
পিঠে।
“বল
নীল
চাষ
করিবে
কিনা।” ক্রমাগত চাবুক আছড়ে পড়ছে হরেনের পিঠে।
যন্ত্রণায়
কুঁকড়ে
যাচ্ছে
সে।
“না
আ
আ। আমার জমি
আমার
অন্নদাতা। সেই জমিতে
আমি
নীল
চাষ
করবনি,”
চিৎকার
করে
উঠল
হরেন।
“সাহেব,
হরেন
আবার
গাঁয়ের
চাষিদের
ন্যাতা
হইছে। সবাইকে উসকাচ্ছে
যাতে
নীল
চাষ
না
করে,”
এক
লাঠিয়াল
বলল।
“কী,
এত
বড়ো
সাহস
এই
নেটিভ
চাষিটার!
ওর
ঘর
জ্বালিয়ে
দাও,”
সাহেব
হুকুম
দিল।
“এসব
করে
আমাদের
ভয়
দেখাতে
পারবেনি
সাহেব। আমরা নীল
চাষ
করবনি,”
জ্বলে
উঠল
হরেনের
চোখ
দুটো।
“বন্দুক
লিয়ে
এস। এই শয়তানটাকে
হামি
আজ
গুলি
করে
মারিব,”
হিস হিস
করে
উঠল
সাহেব।
“ভিভ,
বন্দুক
নিয়ে
কী
করবে
ও?”
আতঙ্কিত
হয়ে
প্রশ্ন
করে
সাকি। এতক্ষণ ওরা
ওই
ঘরের
ফাঁকা
একটা
কোনায়
দাঁড়িয়ে
ছিল।
“চোখ
বন্ধ
কর।”
“কিন্তু
ভিভ...।”
“তাড়াতাড়ি
চোখ
বন্ধ
কর,”
গম্ভীর
গলায়
আদেশ
দেয়
ভিভান। সাকি বাধ্য
হয়ে
চোখ
বন্ধ
করে। দুরন্ত ঘূর্ণির
মধ্যে
ডুবে
যায়
তারা।
“ওই লোকটাকে মেরে ফেলবে, তাই তুমি আমাকে নিয়ে চলে এলে তাই না?”
ভিভান
মুখে
কিছু
বলে
না,
শুধু
একটা
দীর্ঘশ্বাস
ফেলে। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে
সাকিকে
বলে,
“চল,
তোমাকে
ছাদ
পার
করে
দিই।”
সাকিদের ছাদে আসার পর সাকি বলল, “আজ জানাবে না আমরা কোথায় গিয়েছিলাম?”
ভিভান
ম্লান
হেসে
পকেট
থেকে
একটা
চিরকুট
বের
করে
সাকির
হাতে
ধরিয়ে
দিল।
গত
দু’দিন
ভিভান
আসেনি। সাকি একাই
ছাদে
বসে
থেকেছে। সেদিন সে
একটা
অদ্ভুত
ব্যাপার
লক্ষ করেছে। সাকির
হিসেবে
সে
অনেকক্ষণ
ভিভানের
সঙ্গে
ছিল। যখন তারা
ভিভানদের
ছাদে
যায়
তখন
সাতটা
দশ
বাজে। তার হাতে
ঘড়ি
ছিল,
সে
দেখেছে,
কিন্তু
যখন
সে
ফিরে
এসে
ছাদ
থেকে
নিচে
নামল
তখন
মাত্র
সাতটা
পনেরো
বাজে। মানে তার
হিসেবে
আবার
ভিভানদের
ছাদে
তারা
সাতটা
দশের
দিকেই
ফিরেছে। হয়তো একটু
এদিক
ওদিক
হতে
পারে
সময়টা। আজ সাকি
ছাদে
উঠেই
দেখল
ভিভান
ছাদের
পাঁচিলে
ঠেস
দিয়ে
মেঝের
ওপর
বসে
আছে।
“গুড
এভনিং।”
“এভনিং,”
ভিভানের
পাশে
এসে
বসে
সাকি।
“হরেন
দাসকে
স্যামুয়েল
ব্রাউন
গুলি
করে
মেরেছিল
আর
ওর
স্ত্রী
আর
বাচ্চাদের
বাড়ির
মধ্যে
আটকে
জ্যান্ত
পুড়িয়ে
মেরেছিল
তাই
না?”
সাকি
ভিভানের
দিকে
প্রশ্ন
ছুঁড়ে
দেয়। ভিভানকে অবাক
হয়ে
ওর
মুখের
দিকে
তাকিয়ে
থাকতে
দেখে
সাকি
লজ্জা
পেয়ে
যায়। আসলে তোমার
চিরকুটে
ইন্ডিগো
রিভল্ট
লেখা
ছিল,
তাই
দেখে
নেট
সার্চ
করে
অনেক
কিছু
জানলাম। তারপর মনে
হল
দাদু
তো
প্রচুর
বই
পড়েন। দাদু আরও
কিছু
জানতে
পারেন। জানো, দাদুর
কাছে
একটা
বই
আছে
সেটার
নাম
হল,
‘বাংলার
নীলকুঠি’। দাদু সেটা
থেকে
অনেকটা
পড়ে
শুনিয়েছেন
আমাকে। সেখান থেকেই
হরেন
দাসের
কথা
আর
স্যামুয়েলের
নীলকুঠির
কথা
জানলাম।”
সাকি
চুপ
করতেই
ভিভান
এক
মুখ
হেসে
বলে
উঠল,
“বাব্বা,
তুমি
তো
অনেক
কিছু
জেনে
ফেলেছ
দেখছি।”
“ভিভ,
জানো
তো
আজ
অনেক
দিন
পর
দাদুর
কাছে
গেলাম। দাদু খুব
খুশি
হলেন
আমি
কাছে
যেতে।”
“আর তুমি?”
“আমারও
ভালো
লাগল।”
“তাহলে ওঁদের ছেড়ে যেতে চাও কেন?”
“আসলে
এই
দেশে
থাকতে
আমার
ভালো
লাগছে
না,”
সাকির
গলার
স্বরটা
কেমন
যেন
ম্রিয়মাণ।
“সাকি,
এই
দেশটা
কতটা
সমৃদ্ধশালী
ছিল
তুমি
দেখেছ,
কিন্তু
দীর্ঘ
দু’শো
বছর
পরাধীন
থাকার
ধাক্কা সামলাতে
অন্তত
একশো
বছর
তো
লাগবেই। যাই হোক, আজ
যাবে
নাকি
এডভেঞ্চারে?”
“অবশ্যই।”
“আজ
খুব
অল্প
সময়ের
জন্য
তোমাকে
নিয়ে
যাব
একটা
জায়গায়।”
তীব্র
একটা
আওয়াজের
সঙ্গে
চোখ
খুলল
সাকি। একটু ধাতস্থ
হতেই
বুঝতে
পারল
ঘন্টার
আওয়াজ
হচ্ছে। চারিদিকে একটা
হুড়োহুড়ি,
ছুটোছুটি
হচ্ছে। পুলিশের মতো
পোশাক
পরিহিত
কিছু
লোক
এদিক
ওদিক
দৌড়োদৌড়ি
করছে।
“চল,
ওইদিকে
যাওয়া
যাক।”
সাকিরা
যেখানে
এল
সেটা
যে
একটা
বন্দিশালা
তা
আর
বলার
অপেক্ষা
রাখে
না। একটা জিনিস
খুব
অবাক
লাগল
সাকির,
সেটা
হল
যারা
বন্দি
আছে
তাদের
কাউকে
দেখে
অপরাধী
বলে
মনে
হয়
না। খুব সাধারণ
দেখতে
কমবয়সি
সব
ছেলে।
“ফায়ার,
ফিনিশ
দেম।”
সাকি
ভয়
পেয়ে
ভিভানের
হাতটা
চেপে
ধরল। পুলিশগুলো লাঠি
দিয়ে
নির্মমভাবে
ছেলেগুলোকে
মারছে। তারপর শুরু
হল
গুলিবর্ষণ।
“এবার
চল। চোখ বন্ধ
কর।”
সাকি
যন্ত্রের
মতো
ভিভানের
নির্দেশ
পালন
করল। আজ আর
ফিরে
এসে
সে
কোনও
কথা
বলতে
পারল
না। তার কানের
মধ্যে
ছেলেগুলোর
আর্তনাদ
গুঞ্জরিত
হচ্ছে। আজ সাকি
কিছু
না
বললেও
ভিভান
যথারীতি
তার
হাতে
একটা
চিরকুট
গুঁজে
দিল।
চার দিন
হয়ে
গেল
ভিভানের
পাত্তা
নেই। সাকির মন
বেশ
খারাপ। একলা একলা
ছাদে
উঠে
মাউথ
অর্গান
বাজায়। আজ সাকি
ছাদে
উঠে
রাতের
আকাশের
দিকে
তাকিয়ে
ছিল। পূর্ণিমার চাঁদ
জ্যোৎস্না
ছড়িয়ে
দিচ্ছে।
“তারা
গুনছ
নাকি?”
ভিভানের
গলা
শুনে
সাকির
মুখে
হাসি
উপচে
পড়ল।
“কোথায়
ছিলে
তুমি?
আমি
রোজ
অপেক্ষা
করতাম
তোমার
জন্য,”
মৃদু
অনুযোগ
সাকির
কণ্ঠে।
“তাই নাকি?”
“হ্যাঁ
তো।”
“তাহলে
এত্ত
বড়ো
একটা
সরি
তোমার
জন্য।” ভিভানের বলার ভঙ্গিতে হেসে ওঠে সাকি।
তারপর
হঠাৎ
মনে
পড়ে
গেছে
এমন
ভঙ্গিতে
বলে
ওঠে,
“ভিভ,
আমি
সব
জেনেছি।”
খুব আশ্চর্য হয়ে গেছে এমন ভঙ্গিতে ভিভান জিজ্ঞেস করল, “কী জেনেছ?”
তুমি
আমাকে
1931 সালের 16ই সেপ্টেম্বর তারিখে হিজলী জেলে নিয়ে গিয়েছিলে।”
“তাই?”
“হুম,
ওই দিন
ডিস্ট্রিক্ট
ম্যাজিস্ট্রেট
ডগলাসের
নির্দেশে
হিজলী
জেলে
গুলি
চলেছিল। এখন যেখানে
খড়গপুর
আই
আই
টি
ওখানেই
হিজলী
জেল
ছিল। দাদু আমাকে
আরও
অনেক
কিছু
বলেছে। ওই দিন দু’জন
ফ্রিডম
ফাইটার
মারা
গিয়েছিলেন। আমি তো
জাস্ট
ভাবতেই
পারছি না। কয়েকদিন আগেই
ড্যাড
তো
ওখানে
একটা
সেমিনারে
গিয়েছিল,”
খুব
উৎসাহিত
হয়ে
বলে
সাকি।
“তুমি
তো
অনেক
কিছু
জেনে
যাচ্ছ
দেখছি
এই
দেশের
ইতিহাস
সম্বন্ধে।”
“হুম। অল ক্রেডিট
গোজ
টু
ইউ। কিছুটা ক্রেডিট
অবশ্য
গুগল
আর
দাদুরও। দাদু একটু
অবাক
হয়ে
যাচ্ছে
আমি
হঠাৎ
হঠাৎ
এসব
জানতে
চাওয়ায়,”
হাসতে
হাসতে
বলল
সাকি।
“তোমার দাদু অনেক কিছু জানেন তাই না?”
“হুম। দাদু গল্পের
মতো
করে
অনেক
কিছু
বুঝিয়ে
দেয়।”
সাকির
কথা
শুনে
ভিভান
মুচকি
হেসে
বলল, “সাকি, আজ যাবে নাকি?”
“অফ কোর্স।”
সন্ধে
নেমেছে
গ্রামের
বুকে। বাতাসে ভেসে
আসছে
শঙ্খধ্বনি। সাকিরা দাঁড়িয়ে
আছে
একটা
মাটির
বাড়ির
নিকোনো
উঠোনে। বাড়ির ভেতর
থেকে
লাল
পাড়
সাদা
শাড়ি
পরে
একজন
বেরিয়ে
এলেন। হাতে সন্ধ্যা
প্রদীপ। তুলসী মঞ্চে
প্রণাম
করে
শাঁখ
বাজালেন
তিনি। প্রদীপের স্বল্প
আলো
ভদ্রমহিলার
মুখের
ওপর
পড়ছিল। সাকি তাঁর
মুখের
দিকে
অবাক
হয়ে
তাকিয়ে
ছিল।
“মা,
আজও
ভাত
রান্না
হবে নি?
দুপুরেও
তো
মুড়ি
খেইছি,”
একটি
বছর
সাত-আটেকের
ছেলে
এসে
জিজ্ঞেস
করল।
তার
মা
কোনও
উত্তর
না
দিয়ে
ফুঁপিয়ে
কেঁদে
উঠলেন।
“মা,
ভাত
চাই নি
আমাদের,
তুমি
কেঁদো নি,” ছেলেটিও ফুঁপিয়ে উঠল।
“মা,
খিদা
পাচ্ছে,”
একটি
বছর
পাঁচেকের
ছেলে
ছুটে
এসে
মায়ের
আঁচল
জড়িয়ে
ধরল। ছোটো ছেলেটিকে
কোলে
তুলে
নিয়ে
বুকে
চেপে
ধরলেন
মা।
“ভাই,
চল
আমরা
খেলব।”
“দাদা,
আমার
খিদা
পাচ্ছে,”
অসহায়ভাবে
বলল
ছোটো
ছেলেটি।
“চল,
খেললে
আর
খিদা
পাবে নি।”
ভাইকে
নিয়ে
বড়ো
ছেলেটি
চলে
গেল। তাদের মা
তুলসী
মঞ্চে
মাথা
ঠুকে
ঠুকে
কাঁদতে
লাগলেন।
“বৌমা,
মিনুদের
ঘর
থেকে
দুটি
চাল
চেয়ে
এনেচি
আর
দুটা
কচু
উপড়ি
এনেচি। ছ্যানা দুটাকে
দুটি
ভাত
ফুটি
দাও,”
সাদা
থান
পরা
এক
বৃদ্ধা
এসে
ঢুকলেন।
ভিভান
লক্ষ
করল
সাকির
দু’চোখ
দিয়ে
টপ টপ
করে
জল
পড়ছে।
“চল
আমরা
একটু
ঘুরে
আসি।”
সাকিকে
নিয়ে
ভিভান
একটা
পুকুরের
পাড়ে
এসে
বসল। আকাশে কুমড়োর
ফালির
মতো
চাঁদ। পুকুরের জলে
সেই
চাঁদের
প্রতিবিম্ব। মরা চাঁদের
আলো
এসে
পড়ছে
ঝুপসি
ঝুপসি
গাছগুলোয়। ঝিঁ ঝিঁ
পোকার
আওয়াজ
ভেসে
আসছে। ইতি উতি জোনাকির
আলো। এমন পরিবেশ
আগে
কখনও
দেখেনি
সাকি। একটা অদ্ভুত
ভালো
লাগা
জড়িয়ে
ধরছে
তাকে,
কিন্তু
সেই
সঙ্গে
আছে
মন
খারাপের
রেশ।
“ওরা
খুব
গরিব
তাই
না
ভিভ?”
দুঃখিত
কণ্ঠে
বলল
সাকি।
“ওরা
গরিব,
আবার
গরিব
নয়।”
“মানে?”
“আসলে
ওরা
এখানকার
বেশ
অবস্থাপন্ন
পরিবার। অনেক জমিজায়গা
আছে
ওদের
কিন্তু
ওই
ছেলে
দুটির
বাবা
আর
কাকা
স্বদেশী
আন্দোলনের
সঙ্গে
যুক্ত,
মানে
ফ্রিডম
ফাইটার। ব্রিটিশ পুলিশ
ওদের
সব
সময়
খুঁজে
বেড়াচ্ছে,
তাই
বাড়ি
আসতে
পারে
না
ওরা। লুকিয়ে লুকিয়ে
থাকে। ছেলে দুটির
মা
আর
ঠাকুমা
লোকজনের
সাহায্যে
কিছু
চাষবাস
করেছিলেন,
কিন্তু
ইংরেজ
পুলিশ
ওদের
বাবা-কাকার
খোঁজে
এসে
ওদের
ধানের
গোলায়
আগুন
লাগিয়ে
দিয়েছে,
তাই
ওদের
এত
দুরবস্থা।”
ভিভান
কথা
শেষ
করতে
সাকি
বলল,
“ওরা
এইভাবে
না
খেয়ে
থাকে?”
“হুম,
থাকতে
তো
হয়। চল দেখি
ওরা
আজ
খেতে
পেল
কিনা।”
আবার
সেই
বাড়িতে
ফিরে
এল
ওরা। সাকি আগে
কখনও
মাটির
উনুনে
কাঠের
জ্বালে
রান্না
হতে
দেখেনি। সে অবাক
হয়ে
দেখল
হাঁড়িতে
ভাত
ফুটছে
আর
মায়ের
আঁচল
ধরে
দু’পাশে
বসে
আছে
ছেলে
দুটি।
“মীরা,
মীরা,”
চাপা
গলায়
কেউ
ডাকল। ছেলে দুটিকে
নিয়ে
মা
উঠে
গেলেন।
ধুতি-ফতুয়া
পরা
একটি
লোক
দাঁড়িয়ে
আছে। মুখে দাড়ি-গোঁফ
ভর্তি।
“বাবা,” ছেলে
দুটি
ছুটে
গেল।
“ঘরে
এস,”
ভদ্রমহিলাও
চাপা
গলায়
বললেন।
“না,
গো। পুলিশ আমাকে
খুঁজছে। সুন্দর পুলিশের
হাতে
ধরা
পড়ে
গেছে। শুধু তোমাদের
একবার
দেখব
বলে
অনেক
ঝুঁকি
নিয়ে
এসেছি।”
“সুন্দরকে
ওরা
মেরে
ফেলবে নি
তো?”
ভদ্রমহিলা
মুখে
আঁচল
চাপা
দিয়ে
কেঁদে
উঠলেন।
“জানি
না। মা কোথায়?”
“একটু
শুয়েছেন।”
“ঠিক
আছে। মাকে আর
ডাকতে
হবে
না। আমি এক্ষুনি
চলে
যাব।”
“বাবা,
জানো
আজ
আমরা
ভাত
খাব,”
ছোটো
ছেলেটি
বলে
উঠল।
ছেলেদের
মাথায়
হাত
বুলিয়ে
বাবা
বললেন,
“জানি
বাবা,
তোদের
খুব
কষ্ট
হচ্ছে। চিন্তা করিস
না,
আমাদের
দেশ
স্বাধীন
হবেই,
তখন
আর
কোনও
কষ্ট
থাকবে
না
কারুর। আমি আসছি। বন্দেমাতরম।”
লোকটি
অন্ধকারে
মিলিয়ে
গেল। ছেলেদের নিয়ে
মা
ঘরে
ঢুকে
গেলেন। ভিভান সাকিকে
নিয়ে
বারান্দার
এক পাশে
বসে
পড়ল। ভাতের হাঁড়িটা
উনুন
থেকে
নামছে,
এমন
সময়
হঠাৎ
অনেকগুলো
ভারী
বুটের
আওয়াজ
এগিয়ে
এল। একদল পুলিশ
এসে
ঝড়ের
গতিতে
ঘরে
ঢুকে
পড়ল।
“সুকুমার
কোথায়?
বল
কোথায়
সুকুমার?”
একজন
পুলিশ
লাঠি
উঁচিয়ে
গর্জে
উঠল। সম্ভবত
দারোগা
হবে।
“জানি
নি,”
ঘোমটার
আড়াল
থেকে
বললেন
ভদ্রমহিলা। ছোটো ছেলেটি
মায়ের
আঁচল
ধরে
ভয়ে
কাঁপছে। বড়োটি
আছে
ঠাকুমার
পাশে।
“মিথ্যে
কথা। সত্যি কথা
বল,
না হলে
কেউ
বাঁচবে
না।”
ভদ্রমহিলা
চুপ
করে
রইলেন।
“দাঁড়াও
দেখাচ্ছি
মজা।”
পুলিশরা
ঘরে
ঢুকে
জিনিসপত্র
ভাঙাভাঙি
করতে
লাগল। একজন পুলিশ
রান্নাঘরে
ঢুকতেই
ছেলে
দুটির
ঠাকুমা
আর্তনাদ
করে
উঠলেন,
“ও
বাবা,
তোমরা
ভাতের
হাঁড়িতে
কিছু
কোরো
নি
গো। ছ্যানা দুটার
মুখের
গ্রাস
কেড়ে
লিও
নি
গো
তোমরা।”
“তাহলে বল সুকুমার কোথায়?”
“জানি
নি
বাবা।”
“তবে রে!”
বুটের
এক
লাথিতে
ভাতের
হাঁড়ি
উলটে
দিল
পুলিশটা।
“তোমরা
হাঁড়ি
কেন
উলটালে?”
বড়ো
ছেলেটি
ফুঁসে
উঠল।
“বল
তোর
বাবা
কোথায়?
এখানে
এসেছিল
নাকি?”
লাঠি
উঁচিয়ে
বলল
পুলিশটি।
“জানি
নি।”
হঠাৎ
করেই
পুলিশটি
ছেলেটির
গালে
এক
চড়
বসিয়ে
দিল।
“বন্দেমাতরম।” ছেলেটি হঠাৎ করেই চিৎকার করে বলে উঠল।
“তবে
রে
শয়তান!”
পুলিশটির
হাতের
লাঠি
সজোরে
আছড়ে
পড়ল
ছেলেটির
মাথায়।
“মা
আ
আ।” যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠল ছেলেটি।
“ওরে
ভাই
রে।” ঠাকুমা জড়িয়ে ধরলেন ছেলেটিকে।
তাঁর
পিঠেও
আছড়ে
পড়ল
লাঠি।
“খোকা
আ
আ।” ছেলেটির মা ছুটে এলেন।
রক্তাক্ত
দাদাকে
দেখে
“দাদা,
দাদা”
করে
কেঁদে
উঠল
ছোটো
ছেলেটি।
পুলিশটি
আবার
লাঠি
তুলতেই
ছেলেটির
মা
উনুনের
গনগনে
জ্বলন্ত
কাঠ
তুলে
নিয়ে
রুখে
দাঁড়ালেন, “খবরদার।”
পুলিশটি
একটু
থমকে
গেল। এমন সময়
বাইরে
থেকে
একটা
গোলযোগ
শোনা
গেল।
“তাড়াতাড়ি
এখান
থেকে
চল। খবর এসেছে
ওরা
থানা
আক্রমণ
করেছে।”
পুলিশরা
ঝড়ের
গতিতে
বেরিয়ে
গেল।
“খোকা,
আমার
খোকা।” রক্তাক্ত ছেলেটিকে কোলে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন মা।
একটা
ফোঁপানির
আওয়াজ
শুনে
ঘুরে
তাকাল
ভিভান। সাকি কাঁদছে। ভিভানের নিজের
চোখেও
জল।
“এবার
চল। চোখ বন্ধ
কর।”
সাকিকে
ওদের
ছাদে
পৌঁছে
দিয়ে
ভিভান
বলল,
“বোস
এখানে।” সাকি অবাক হল।
অন্য দিন
তাকে
পৌঁছে
দিয়েই
ভিভান
চলে
যায়। অবশ্য তার
মনটা
ভারাক্রান্ত
হয়ে
আছে। ভিভান কিছুক্ষণ
থাকলে
ভালোই
লাগবে। ছাদের পাঁচিলে
ঠেস
দিয়ে
বসল
তারা।
“অন্যদিন
আমি
তোমাকে
চিরকুট
দিয়ে
ইঙ্গিত
দিয়ে
যাই,
আজ
আমি
নিজেই
তোমাকে
বলব
আমরা
কোথায়
গিয়েছিলাম,”
সাকির
দিকে
তাকিয়ে
বলল
ভিভান। সাকি জিজ্ঞাসু
দৃষ্টিতে
তাকিয়ে
রইল।
“আমরা
গিয়েছিলাম
অবিভক্ত
মেদিনীপুর
জেলার
নন্দনপুর
গ্রামে। যে লোকটিকে
তুমি
দেখলে
তাঁর
নাম
সুকুমার
চৌধুরী। সুকুমার আর
ওঁর
ভাই
সুন্দর
চৌধুরী
দু’জনেই
দেশের
স্বাধীনতার
জন্য
লড়াই
করেছেন। যে ভদ্রমহিলাকে
দেখলে
ওঁর
নাম
মীরা
আর
ওই
ছেলে
দুটির
মধ্যে
বড়ো
যে
তার
নাম
ছিল
স্বদেশ
আর
ছোটোটির
নাম
স্বাধীন।” ভিভানকে বাধা দিয়ে সাকি উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল, “স্বাধীন! স্বাধীন চৌধুরী! মানে তো দাদু! তার মানে ওই মহিলা তো বড়োমা, তাই তো আমার মুখটা দেখে একটু একটু চেনা মনে হচ্ছিল!”
“হ্যাঁ,
তুমি
ঠিকই
ধরেছ,
ওই
ছোট্ট
ছেলেটি
যে
খিদের
জ্বালায়
কষ্ট
পাচ্ছিল
সে
আর
কেউ
না,
তোমারই
দাদু
আর
ওই
মহিলা
তোমার
বড়োমা। তোমাদের আদি
বাড়ি
ওই
নন্দনপুর
গ্রামে। তোমার দাদু
কলকাতায়
চাকরি
করতে
এসে
এই
বাড়িটা
কিনেছিলেন। ওই দিনের
ঘটনায়
তোমার
বড়োমা
তাঁর
বড়ো
ছেলে
স্বদেশকে
হারিয়েছিলেন। অত জোর
লাঠির
আঘাত
ওইটুকু
ছেলে
সহ্য
করতে
পারেনি। তোমার দাদুর
বাবা
সুকুমার
চৌধুরী
এর
কিছু
দিন
পর
পুলিশের
হাতে
ধরা
পড়ে
যান। সুকুমার আর
সুন্দর
দুই
ভাইয়ের
ওপর
অকথ্য
অত্যাচার
হয়। হয়তো মারাই
যেতেন
ওঁরা,
কিন্তু
ভাগ্য
ভালো
ওঁরা
ধরা
পড়ার
পর পরই
দেশ
স্বাধীন
হয়,
কিন্তু
ততদিনে
সুন্দর
তাঁর
এক
চোখের
দৃষ্টি
শক্তি
হারিয়েছিলেন
আর
সুকুমারের
বাম
পায়ে
এমন
আঘাত
লাগে
যে
সারা
জীবন
আর
স্বাভাবিক
ভাবে
হাঁটাচলা
করতে
পারেননি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে
হাঁটতেন। তোমার বড়োমা
মীরা
দেবী
সন্তান
শোক
বুকে
চেপে
আবার
তাঁর
সংসারটা
সুন্দর
করে
গুছিয়ে
তোলার
চেষ্টা
করেন। তোমার দাদুকে
ভালোভাবে
মানুষ
করার
চেষ্টা
করেন। পড়াশোনা শেখানোর
চেষ্টা
করেন। তোমার পিসি
ঠাম্মার
জন্ম
হয়। তাঁকেও
খুব
ভালো
করে
মানুষ
করেন
তোমার
বড়োমা,
আর
তোমার
দাদুর
বাবা
আর
কাকা
তাঁরা
নিজেদের
চেষ্টায়
গ্রামে
স্কুল
তৈরি
করেছিলেন
যাতে
গ্রামের
সকলে
শিক্ষার
আলো
পায়।”
একটু
থামল
ভিভান। সাকি স্তব্ধ
হয়ে
তার
কথা
শুনছে। আবার শুরু
করল
ভিভান, “সাকি,
তোমার
পূর্ব
পুরুষরা
এই
দেশটার
জন্য
নিজেদের
প্রাণের
মায়া
ত্যাগ
করেছিলেন। নিজের সন্তান
পর্যন্ত
হারিয়েছেন,
আর
আজ
তাদের
বংশধর
হয়ে
তুমি
বলছ
এই
দেশটা
খুব
খারাপ। এখানে নাকি
থাকা
যায়
না। দুঃখের কথা
কী
জানো,
তোমার
আজ
মনে
হচ্ছে
তোমার
বড়োমা
তোমাদের
বিদেশ
যাওয়ার
পক্ষে
বড়ো
বাধা,
অথচ
ওই
মানুষটা
যদি
শক্ত
হাতে
সংসারের
হাল
ধরে
সমস্ত
কষ্ট
সহ্য
করে
লড়াই
না
করতেন
তাহলে
তোমার
দাদুর
কিন্তু
কলেজের
অধ্যাপক
হওয়া
হত
না। হয়তো তোমার
বাবাও
এত
পড়াশোনা
করার
সুযোগ
পেতেন
কিনা
সন্দেহ,
আর
তোমার
দাদুও
কম
কষ্ট
করেননি। ছোট্ট একটা
নমুনা
তো
তুমি
দেখলেই। সেই সময়
যাতায়াত
ব্যবস্থা
এত
উন্নত
ছিল
না। তোমার দাদু
খুব
কষ্ট
করেই
লেখাপড়া
শিখেছেন। তোমার বড়োমা আজও
কাঁদেন
তাঁর
মৃত
সন্তানের
জন্য। মৃত্যুর আগে
তাঁর
সন্তান
পেট
ভরে
খাবারটুকুও
পায়নি
বলে
প্রতি
বছর
ঐদিনটা
সারাদিন
তিনি
নিজে
উপোসি
থাকেন। কিচ্ছু মুখে
দেন না,
কিন্তু
দরিদ্র
মানুষদের
পেট
পুরে
খাওয়ান। সাকি, তুমি
মানো
আর
নাই
মানো
আজ
তুমি
যেখানে
দাঁড়িয়ে
আছ
সবটাই
ওঁদের
জন্য।”
সাকির
দু’চোখ
বেয়ে
ক্রমাগত
জলের
ধারা
বয়ে
চলেছে। অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে
বলল,
“আমি
তো
এসব
কিছুই
জানতাম
না।”
“এখন
তো
জানলে।”
“আচ্ছা, ভিভ, তুমি আমাদের ফ্যামিলির এত কথা জানলে কী করে?”
“তোমার
দাদুর
লাইব্রেরিতে
খুঁজে
দেখো,
না হলে
দাদুর কাছে
চাইতেও
পারো। তোমার দাদুর
লেখা
একটা
বই, ‘আমাদের
কথা’
যেখানে
এই
সমস্ত
ঘটনার
কথার,
লড়াইয়ের
কথার
উল্লেখ
আছে। ইচ্ছে হলে
পড়ে
দেখার
চেষ্টা
কোরো।”
সাকি
চুপ
করে
আছে। তার মনের
মধ্যে
একটা
তীব্র
কষ্ট
চেপে
বসছে। সাকির কাঁধে
হাত
রাখল
ভিভান, “এবার
আমি
আসি। গুড বাই। আর আসব
না। চলে যাচ্ছি
আমি।”
চমকে উঠল সাকি, “চলে যাচ্ছ মানে?”
“আমার
এখানের
কাজ
শেষ। এখান থেকে
চলে
যাচ্ছি
আমি।”
“ভিভ,
প্লিজ
যেও
না। আমি আবার
একলা
হয়ে
যাব,”
ভিভানকে
জড়িয়ে
ধরল
সাকি। ভিভানও সাকিকে
জড়িয়ে
ধরল,
“তুমি
মোটেই
একলা
নও। তুমি নিজেই
নিজেকে
একলা
করেছ।”
“তুমি
কোথায়
যাচ্ছ
ভিভ?
আমাদের
কি
আর
দেখা
হবে
না?”
সাকি
কাঁদছে।
“আমি
কোথায়
যাচ্ছি
জেনে
কোনও
লাভ
নেই
সাকি।” তারপর হঠাৎ কিছু মনে পড়ে গেছে এমন ভাবে হেসে উঠে ভিভান বলে উঠল, “তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে না এটা তো হতেই পারে না।
আমাদের
আবার
দেখা
হবেই,
প্রমিস।”
মুখের
হাসি
চওড়া
করে
ভিভান
আবার
বলল,
“আমি
আশা
করব
আবার
যখন
দেখা
হবে
আমি
অন্য
সাকির
দেখা
পাব। আসি তাহলে। হ্যাভ আ
ওয়ান্ডারফুল
লাইফ।” ভিভান চলে গেল, কিন্তু তার মুখের হাসিটা সাকির চেহারাতেও ছড়িয়ে গেল।
গত কিছু
দিনে
সাকির
পরিবর্তন
দেখে
সকলে
অবাক। সাকি এখন
সময়
পেলেই
তার
বড়োমার
সঙ্গে
খুনসুটি
করে। মীরা দেবীও
ফোকলা
দাঁতে
হেসে
ওঠেন। বড়োমার একশোতম
জন্মদিন
খুব
ধূমধাম
করে
পালন
করতে
হবে
বলেই
দিয়েছে
সে। দাদুর লাইব্রেরি
থেকে
দাদুর
লেখা
বই
বের
করে
দাদুকে
দিয়ে
পড়িয়েছে। দাদুকে তাঁর
জীবনের
গল্প
শোনানোর
জন্য
অস্থির
করে
দিচ্ছে। ঠাকুমার সঙ্গেও
দুষ্টুমি
চলছে। তার সর্বশেষ
আবদার
ছিল
তাকে
নন্দনপুর
দেখাতে
হবে। দাদু তো
তার
আবদার
শুনে
আনন্দে
আত্মহারা
হয়ে
গেলেন।
তমলুকে
সাকির
পিসি
ঠাম্মার
বাড়ি
ঘুরে
তাঁরা
নন্দনপুরে
এসেছেন। সাকির খুশি
যেন
উপচে
পড়ছে। নন্দনপুরে এখনও
তার
দাদুর
কাকা
সুন্দর
চৌধুরীর
পরিবার
বাস
করে। তারা সপরিবারে
তাঁদের
কাছেই
এসেছে। সকলেই ভীষণ
খুশি। সারা বাড়িতে
যেন
উৎসব
লেগে
গেছে। সাকি দেখল
সেই
মাটির
বাড়ির
জায়গায়
এখন
মস্ত
পাকা
বাড়ি। তবে বাড়ির
উঠানে
তুলসী
মঞ্চ
ঠিকই
আছে। সাকি এক ছুটে
পুকুরের
ধারে
চলে
এল। পুকুরটা এখনও
আছে। এখানেই সে
ভিভানের
সঙ্গে
বসেছিল। পুকুরে মাছ
ধরা
হচ্ছে
দেখে
সে
আনন্দে
হাততালি
দিয়ে
উঠল। সাকির বাবা-মা
কিছুতেই
ভেবে
পাচ্ছেন
না
যে
সাকির
হঠাৎ
করে
এই
পরিবর্তন
হল
কী
করে?
যে
ছেলে
ক’দিন
আগেও
রাগে,
অভিমানে
সবার
থেকে
দূরে
সরে
গিয়েছিল
সে
হঠাৎ
করে
ঘোষণা
করল
সে
এ
দেশেই
থাকবে,
শুধু
তাই
নয়
তার
আচার
আচরণও
আমূল
বদলে
গেছে। এমনকি সে
নিজেদের
আদি
পৈতৃক
ভূমি
দেখার
জন্য
অস্থির
হয়ে
উঠেছে।
এদিকে পুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে সাকি ভেবে চলেছে, ভিভান এখন কোথায় আছে? কী করছে? কোনও দিন কি আবার দেখা হবে তাদের?
সাল
2065
“হেয় ভিভ, বললে না তো আমার নতুন ইনভেনশন কেমন লাগল?”
“ইটস
অ্যামেজিং!
থ্যাংক
ইউ
স্যার। ট্রায়ালের জন্য
আমাকে
বেছে
নেওয়ার
জন্য। টাইম ট্রাভেল
বিশাল
একটা
ব্যাপার। আমি তার
অংশ
হতে
পেরেছি
এটা
ভাবলেই
খুব
ভালো
লাগছে।”
“নো,
নো। নো থ্যাংকস। তুমি যে
আমাকে
ভরসা
করে
ট্রায়াল
দিতে
রাজি
হয়েছিলে
এটাই
অনেক। তাছাড়া তুমি
আমার
আবিষ্কারকে
এত
সুন্দরভাবে
বুদ্ধি
খাটিয়ে
ব্যবহার
করেছ
যে
বলার
নয়,”
ডক্টর
হার্ভি
বললেন।
“আপনি
এটা
জনসমক্ষে
আনতে
চাইছেন
না
কেন?”
ভিভান
প্রশ্ন
করে।
“মানুষ
বড়ো
লোভী
ভিভান। আমার এই
আবিষ্কার
অনেকে
খারাপ
কাজে
লাগাতে
পারে। বলতে পারো
আমি আমার শখে এই
গবেষণায়
মেতে
ছিলাম। তুমি তো
জানোই
আমার
অর্থের
কোনও
অভাব
নেই,
তাই
নিজের
শখ
পূরণ
করেছি
মাত্র। এর কথা
জানতে
পারলে
অনেকে
হয়তো
ইতিহাস
বদলানোর
চেষ্টা
করবে। যা ঘটে
গেছে
তাকে
বদলানো
সম্ভব
নয়। তাতে প্রকৃতিবিরুদ্ধ
কাজ
করা
হয়।”
“তাহলে
আমাকে
আপনার
এই
আবিষ্কারের
কথা
বললেন
কেন?
আর
আমি
যা
করতে
চেয়েছিলাম
করতে
দিলেন
কেন?”
ভিভান
অবাক
হয়ে
প্রশ্ন
করে।
“প্রথমত
তোমাকে
আমি
ভরসা
করি,
বিশ্বাস
করি
আর
দ্বিতীয়ত
তুমি
কোনও
ঘটনা
বদলাতে
যাওনি। তুমি তো
বাচ্চা
ছেলেটিকে
বাঁচিয়ে
ইতিহাসে
হস্তক্ষেপ
করনি। তুমি গিয়েছিলে
একজনের
মন
বদলাতে,
তাতে
হয়তো
ভবিষ্যৎ
একটুখানি
বদলাতে
পারে। দেখ কী
হয়।”
“হুম,
এখন
আসি।” রাস্তায় পা রাখল ভিভান।
ঝিরিঝিরি
করে
তুষারপাত
হচ্ছে। ঠান্ডাটাও জাঁকিয়ে
পড়েছে। স্যাঁতস্যাঁতে মন
খারাপ
করা
আবহাওয়া। ভিভানের মনটা
খুব
খারাপ
হয়ে
গেল। সুদূর ইন্ডিয়ায়
আছে
তার
গ্র্যান্ড
পা
আর
গ্র্যানি। গ্র্যানি খুব
অসুস্থ
হয়ে
পড়েছে। গ্র্যানি ডক্টর
ছিল
কিন্তু
এখন
নিজেই
প্রায়
শয্যাশায়ী। হয়তো শুধু
শরীর
নয়,
মনও
খারাপ। গ্র্যান্ড পার
পক্ষে
শুধু
কাজের
লোক
নিয়ে
সব কিছু
ম্যানেজ
করা
খুব
চাপের
হয়ে
যাচ্ছে। ড্যাড তো
কাজের
জন্য
একটা
রোবট
কিনে
দিয়েই
দায়িত্ব
সেরেছে। এখন পৃথিবী
অনেক
উন্নত,
কিন্তু
তাও
নিজের
কাছের
মানুষদের
সান্নিধ্যের
দাম
আলাদা। ভিভানের ইচ্ছে
করছে
একছুট্টে
ইন্ডিয়ায়
চলে
যেতে। ডক্টর হার্ভির
বাড়ি
থেকে
তাদের
বাড়ি
বেশি
দূর
নয়। ভিভান বাড়িতে
ঢুকে
দেখল
তার
মা
চোখ
গোল
গোল
করে
বসে
আছেন।
“হোয়াট হ্যাপেন্ড মম?”
“আই
থিঙ্ক
ইওর
ফাদার
ইজ
গেটিং
ম্যাড।”
“হোয়াট!”
ঘরে
এসে
ঢুকলেন
ভিভানের
বাবা।
“ভিভান,
তুমি
আজকাল
থাক
কোথায়?
সারাদিন
ডক্টর
হার্ভির
বাড়িতে
করটা
কী?
হার্ভিকে
তো
আমার
পাগল
ছাড়া
কিছু
মনে
হয়
না। তুমি ছুটি
নিয়েছ
শুনলাম। ভালো কথা। তুমিও কিছুদিনের
জন্য
তাহলে
আমাদের
সঙ্গে
যেতে
পার
যদি
তোমার
ইচ্ছে
হয়। অবশ্য ইচ্ছে
হওয়াই
উচিত।” বাবার মেজাজ দেখে আর কথার তোড় দেখে চুপ করে রইল ভিভান।
“চুপ করে আছ কেন? কিছু বল?”
“ও
কী
বলবে?
তুমি
কী
বলছ
ও
তো
বুঝতেই
পারছে
না,”
ভিভানের
মা
বললেন।
“ও
তাই?
সারাদিন
হার্ভির
সঙ্গে
থাকলে
আর
বুঝবেটা
কী?
যাই হোক
শোন,
আমি
সিদ্ধান্ত
নিয়েছি
যে
আমার
বাকি
জীবনটা
আমি
নিজের
দেশে
কাটাব। আমার বাবা-মা
সারা
জীবন
যে
দেশের
সেবা
করেছেন
সেখানে
কাটাব। আমার বাবা-মায়ের
কাছে
থাকব। সেই স্কুল
পাশ
করে
থেকে
বিদেশে
চলে
এসেছি। ওখানে আশা
করি
ভালো
কোনও
চাকরির
অফার
অবশ্যই
পাব। না পেলেও
ক্ষতি
নেই। যা টাকা
পয়সা
আছে
তাতেই
চলে
যাবে। তোমার মাও
এখানের
কাজ
ছেড়ে
আমার
সঙ্গে
যেতে
রাজি। তাহলে বুঝতেই
পারছ
আমি
আর
তোমার
মা
বিদেশের
পাট
গোটালাম। আশা করি
মাঝে
মাঝে
ছুটি
নিয়ে
তুমি
আমাদের
সঙ্গে
দেখা
করতে
আসবে,” ভিভানের
বাবা
কথা
শেষ
করলেন।
ভিভানের
মা
এখনও
হতভম্ব
হয়ে
বসে
আছেন। ভিভানের বাবার
এত
স্বদেশপ্রীতি
কবে
হল
সেটাই
তিনি
বুঝতে
পারছেন
না। চিরকাল নিজের
বাবা-মাকে
দেশে
ফিরে
যাওয়ার
জন্য
দোষারোপ
করে
এসেছেন। মাঝে মাঝে
তো
তিনি
আবাক
হয়ে
ভাবতেন
ভিভানের
বাবা
কী
করে
তাঁর
মতো
বাঙালী
মেয়েকে
বিয়ে
করলেন! ছেলেকে বাংলা
ভাষা,
সংস্কৃতি
এসব
শিখিয়েছেন
বলে
কম
কথা
শুনতে
হয়েছে!
ভিভান
অবশ্য
বিদেশে
মানুষ
হলেও
ওর
বাবার
ঠিক
উলটো। ভিভান ওর
দাদু-ঠাকুমার
মতো
পুরো। বাইরে থাকলেও
নিজের
দেশকে
ভালোবাসে। ও ইন্ডিয়ায় কাজ
করতে
চেয়েছিল,
কিন্তু
ওর
বাবা
প্রাণপণে
ওকে
আটকেছেন। ভিভানের দিকে
তাকালেন
ওর
মা। সে মুচকি
মুচকি
হাসছে।
“ড্যাড,
তোমাকে
একটা
কথা
বলার
আছে।”
“কী?”
“আমি
এখানের
জবটা
ছেড়ে
দেব। আমি ইন্ডিয়ায়
গিয়ে
খড়গপুর
আই
আই
টিতে
জয়েন
করছি। ওখানে আমার
সাবজেক্টের
খুব
ভালো
প্রসপেক্ট। খুব ভালো
রিসার্চ
হচ্ছে।” ভিভান তার বাবার প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রইল।
মাকে
সে
আগেই
সব
জানিয়েছিল।
“ওহ!
ইটস
রিয়েলি
ফ্যান্টাস্টিক। পুরো ফ্যামিলি
একসঙ্গে। ভেরি গুড। ভেরি গুড।” ভিভানকে জড়িয়ে ধরলেন বাবা।
তারপর
গম্ভীর
হয়ে
বললেন,
“খড়গপুর
আই
আই
টি-র
সঙ্গে
ইন্ডিয়ার
ফ্রিডম
স্ট্রাগলের
একটা
রিলেশন
আছে। ওখানে...”
“হুঁহ,
মায়ের
কাছে
মাসির
গল্প
করছ
সংকল্প
চৌধুরী!
তুমি
এসব
কিছু
জানতে?
তোমাকে
এসব
জানাল
কে? এই ভিভান
চৌধুরী। নিজের দাদুর
লেখা
বইয়ের
কথাই
তুমি
জানতে
না। আমার গ্র্যান্ড
পা
বইটার
ডিজিটাল
ভার্সন
আমাকে
পাঠিয়েছিলেন। আমি তোমার
আগে
গ্রেট
গ্র্যান্ড
পা-র
বই
পড়েছি। নিজের বাবাকে
মানুষ
করতে
কম
পথ
যেতে
হল!”
মনে
মনে
কথাগুলো
বলে
ফিক
ফিক
করে
হাসতে
লাগল
ভিভান।
ছবিঃ রাজা আক্তার
খুব ভালো লাগলো
ReplyDelete