টেস্ট
রাইড
প্রতীক কুমার
মুখার্জী
বিজ্ঞাপনটা টিভির পর্দায় আমার চোখের সামনে প্রথমবার ভেসে উঠতেই, ঢিমেতালে
এগিয়ে চলা ইংরিজি ছবির চটকা ভেঙে তড়াক করে ছিটকে উঠে বসলাম! চোখের পলক পড়ল না
পুরোটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত - আরে এতো মহার্ঘ্য জিনিস ... এর স্বাদ না পেলে তো জীবনের
প্রায় পুরোটাই বৃথা! আমাদের দেশের অগ্রগণ্য মোটরবাইক প্রস্তুতকারক বাজারে এনেছে
একটি, যাকে বলে ‘ওয়ান টাইম অফার’, একটি ‘লিমিটেড এডিশন’ বাইক - নাম ‘দ্য প্যাট্রিওট সিরিজ’। আর তার সাথে আছে চোখ ধাঁধানো প্যাকেজ, একটি অভিনব টেস্ট রাইড - সে অভিজ্ঞতা নাকি এতই রোমহর্ষক, যে বাইক
ছেড়ে কেউ ফিরে আসতে পারবে না - কোম্পানির দাবী! আপনারা ভাববেন, এ আবার নতুন কী? মোটর কোম্পানিগুলো তো প্রায় রোজই নতুন নতুন মডেল ছাড়ছে, আর সেগুলো প্রায়
সেদিন থেকেই দিব্যি রাস্তায় চলে ফিরে
বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটি যে একেবারেই একমেদ্বিতীয়ম - এর লেভেলই অন্য স্তরের!
তাহলে একটু খুলেই বলি - আসলে ছাপোষা বাঙালি তো, রহস্য বিলাস খুঁজে বেড়াই
রোজকার একঘেয়ে দশটা পাঁচটার জীবনে। আই এন এস বজরং, রাশিয়া থেকে আমদানি করা সেই সময়ের অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ, যা ভারতীয়
নৌবাহিনীতে যোগ দেয় ১৯৫১-তে।
তারপর থেকে সুদীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে তার নিরলস টহলদারি চলেছে আরব সাগর ও ভারত মহাসাগর
জুড়ে। কালো ঘোড়া হিসেবে সে প্রতি
যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, রক্ষা করেছে যেমন দেশকে,
সেরকম নিখুঁত আক্রমণ শানিয়েছে আগুয়ান শত্রুর মোকাবিলায়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে
স্বভাবতই তার শক্তি, বিক্রম ও তেজ কমে এসেছে, আঘাতপ্রাপ্তও হয়েছে সে। অবশেষে ১৯৮৬-তে, ভারত সরকার তাকে সসন্মানে অবসরে পাঠিয়েছে। কী, ভাবছেন যে গপ্পের গরু গাছে শুধু ওঠেইনি, রীতিমত গাছ থেকে গাছে লাফালাফি
করছে? কোথায় মোটরবাইক দিয়ে শুরু হল, আর কোথায় আই এন এস
বজরং-এর পচা কাসুন্দি ঘাঁটা শুরু করলাম? আজ্ঞে না, ঘটনা হল,
এই অবহেলায় ‘অবসরে’ পড়ে
থাকা ‘জাঙ্ক’ কিনে নিয়ে মোটরবাইক
নির্মাতা সেই ধাতু গলিয়ে তৈরি করেছেন তাঁদের ‘দ্য
প্যাট্রিওট সিরিজ’-এর
কাঠামো। তক্ষুনি সিদ্ধান্তে এলাম - এ বাইক আমার চাই-ই চাই।
দেশাত্মবোধের একটু বেশিরকম বাড়াবাড়ি আছে আমার, আর সেটা আমি নিজেও বুঝি। সেই
ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি বাবা, মা, আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছে। বছরের বিশেষ দিনগুলোতে আমার মধ্যে খাঁটি এবং দুর্বার স্বাধীনতা সংগ্রামীর উদ্ভব হয়। রাস্তাঘাটে
বিদেশ থেকে পড়তে বা ঘুরতে আসা বিদেশীদের ভীষণ বিরক্তি ও ঘৃণার চোখেই দেখি। ‘বেয়াল্লিশ’ ছবিটি বন্ধুদের সাথে দেখতে গিয়ে
হলের পর্দায় আগুন দিতে উদ্যত হই যুবক বয়সে। এরকম অনেক অদ্ভুত ও একবগগা কাজকর্মের মধ্যে দিয়েই ভারতীয়
সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করার স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে গেছি কখন! বয়স বাড়ার
সাথে সাথে সমস্ত এডভেঞ্চার যেন হ্যালুসিনেশনে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। কিন্তু দেশাত্মবোধের ভূতটা রয়েই গেছে। বয়সের সাথে সংযম এসেছে ঠিকই,
কিন্তু সেই আগ্রাসী ভালবাসার ভিতটা যেন আরও মজবুত হয়েছে। এখনও নিয়ম করে - পৃথিবী
উলটে গেলেও - কোনওবার প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে
আমার কামাই নেই।
থাকি উত্তর ধুপঝোরার একটি ছোট্ট গ্রামে,
চিরসবুজ ডুয়ারসে। বাইকটা টিভির পর্দায় দেখে এত
উত্তেজিত হয়ে উঠলাম, পারলে এখনই কিনতে
ছুটি শো-রুমে। কিন্তু সন্ধে হয়ে গেছে
এখনই, আর রাতে তো আর বেরনো যাবে না। কারণ, জঙ্গলের এলাকা, তারপর দোকান বন্ধ
হয় তাড়াতাড়ি। এখানে হাতি আর বাইসনের উপদ্রব লেগেই থাকে। মাঝে মাঝে আশপাশের চা বাগান থেকে রাস্তা গুলিয়ে ছোট চিতাবাঘও চলে আসে
লোকালয়ে। যদিও আমার এসবে একেবারেই ভয় নেই, কোনও অসুবিধাও নেই। কারণ, আমি এখানকার মানুষ, আমি এসব ভয়ডরের ধার ধারি না। যাক, রাতটা কিছুটা আনন্দে, কিছুটা রোমাঞ্চে, কিছুটা স্বপ্নে, কিছুটা
বাস্তবের উত্তেজনায় কাটিয়ে দিলাম। ভাবা যায় – আই এন এস
বজরং-এর কিছু অংশের অংশীদার হতে পারব আমি? পরদিন সকালে উঠে
কাজকর্ম সেরে বেরিয়ে পড়লাম বাইকের শো-রুমের
দিকে। গন্তব্য মালবাজার - আমার থাকার জায়গা থেকে ঠিক ১৩ কিলোমিটার দূরে। অল্পক্ষণের ভেতর পৌঁছে গেলাম। উত্তেজনায় যাত্রাপথের কিছুই অনুভব
করলাম না - যেন উড়েই গেলাম।
কী সৌভাগ্য আমার! ক্যারিয়ারগুলো একটু আগেই এসে পৌঁছেছে! আস্তে
আস্তে বাইকগুলো সর্বাঙ্গ প্যাক করা অবস্থায়
নামাবার তোড়জোড় চলছে। স্বাভাবিক কৌতূহলে বেশ কিছু লোক
জমেছে। তার মধ্যে মিলিটারি ব্যারাকের
লোকজনও দেখা যাচ্ছে। প্রমাদ গুনলাম,
লিমিটেড এডিশন, প্রি বুকিংয়ের ব্যাপার-স্যাপার আছে - পাব তো আদৌ? স্যাট করে কাউন্টারে পৌঁছে নাম লিখিয়ে ফেললাম। তিন নম্বরেই নাম - টেস্ট রাইডের ক্রমিক সংখ্যার।
কাউন্টারের ভদ্রলোক সপ্রতিভভাবেই বললেন,
“আপনারা যারা নাম লেখালেন তারা এই বাইক ছাড়বেন না আমরা জানি,
তাও আমরা বিশেষ টেস্ট রাইডের ব্যবস্থা করেছি আই এন এস
বজরং-এর ‘ফিলিং’ আপনাদের দেওয়ার জন্যে। এটা
আমাদের কোম্পানির তরফ থেকে বিশেষ উপহার।”
হয়ত বিশ্বাস করবেন না আপনারা, এক মিনিটের ভেতর প্রায় ৬০ জন নাম লিখিয়ে ফেলল। এদের ভেতর কতজন কিনবে আর কতজন শুধু টেস্ট রাইডের উপহার পাওয়ার জন্যে লাইন দিল জানা
নেই। আমি কাউন্টারের ভদ্রলোককে ডেকে
নিয়ে পেমেন্ট, ট্যাক্স, বাইকের রঙ, অন্যান্য স্পেসিফিকাশন আর ডেলিভারি নিয়ে কথা
বলতে শুরু করে দিলাম। ভদ্রলোকও আমার ইচ্ছে টের পেয়ে আমায় উদারভাবে সমস্ত কিছু
সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে লাগলেন। তখনও আনলোডিং চলছে। ভিড়ও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
আনলোডিং শেষ হলে আনপ্যাকিং - মোড়ক খুলতেই রাজহংসের মতো
তুষারশুভ্র, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে
তৈরি বাইকগুলো একে একে রোদে ঝকঝক করে উঠে সবার চোখ ধাঁধিয়ে দিল। কোথাও বাহুল্য নেই, সাদা চেহারার উপর এককোণে হাল্কা তেরঙ্গার আভা
আর ছোট্ট করে লেখা - ‘INS Bajrang, Living the Legacy’।
চোখ জুড়িয়ে গেল। সবার চোখ এড়িয়ে একবার হাত বুলিয়ে এলাম একটা বাইকে, পরম
স্নেহে। সেই আই এন এস
বজরং - চোখে জল এল বহুদিন পরে, অকারণেই, অজান্তে! সেই
দেশাত্মবোধের ভূত!
বলিহারি মার্কেটিংয়ের যুগ!
বলিহারি বিজ্ঞাপনের গিমিক! পুরোদস্তুর ভারতীয় নৌবাহিনীর সাজে শো-রুমে এসে দাঁড়াল তিন যুবক। অবশ্য
তাদের বুকপকেটে ছোট মনোগ্রাম করে লেখা বাইক কোম্পানির নাম। আর লেখা, ‘বিজ্ঞাপন বিষয়ক’। জানলাম, এরাই এক একজন আমাদের সাথে সওয়ার হয়ে যাবে টেস্ট রাইডে।
প্রত্যেকে দশমিনিট অন্তর অন্তর বেরোবে। নার্ভাস
হয়ে গেলাম কয়েক লহমার জন্যে। যদিও
সামান্য বিজ্ঞাপনের চমক। তাও পিঠ চাপড়ে দিতে হয়
সংগঠকদের। কী অসাধারণ চিন্তাধারা, কী সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন গ্রাহকদের জন্যে! প্রথম দু’টি বাইক স্বপ্নের মতো উড়ান দিল ঠিক দশমিনিট
অন্তরে। প্রথমটা অবশ্য কোম্পানির লোকেরাই
চালিয়ে নিয়ে যাবে। ফাঁকা রাস্তায় গিয়ে শুরু হবে
টেস্ট রাইড - যা নাকি কক্ষনও ভোলা
সম্ভব নয়!
এরপর আমার পালা...
তৃতীয় বাইকটি চালু করে আমার দিকে যেন হাওয়ায় ভেসে এগিয়ে এল লম্বা চওড়া
চেহারার ছেলেটি।
“স্যার, কম্যান্ডার তন্ময় রয় রিপোর্টিং, সেক্টর থ্রি-তে অ্যামবুশ, আমাদের পৌঁছতে হবে তাড়াতাড়ি।”
কষ্টসাধ্য ট্রেনিং বটে। আর এরা
করছেও অনবদ্য। মুখে মুচকি হাসি এনে উঠে বসলাম আই
এন এস বজরং-এ। থুড়ি, ‘দ্য প্যাট্রিওট সিরিজ’-এর
স্বপ্নের বাইকে।
এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা - যেমন
তার গতি, তেমন পালকের মতো মসৃণ তার যাত্রা। কীরকম যে লাগছে বলে বোঝানো সম্ভব
নয়। ঠিক যেন জাহাজে চেপে চলেছি। জাহাজই তো, আমার ‘দ্য প্যাট্রিওট সিরিজ’! তদুপরি ডুয়ারসের ছবির মতো রাস্তা, চারদিকে
সবুজে সবুজ, দু’দিকে হাল্কা জঙ্গল পিছলে পিছিয়ে
যাচ্ছে গতির সাথে তাল না রাখতে পেরে।
চালসা পেরিয়ে গেলাম। জিগ্যেস
করতে ছেলেটি গম্ভীরভাবে বলল, “স্যার, আমরা গ্রাউন্ড জিরোতে
পৌঁছে গেলেই আপনাকে চার্জ বুঝিয়ে দিয়ে আমি ফায়ার করতে থাকব, আপনি তখন চালাবেন।”
বুঝলাম, এই টেস্ট রাইডটিকে বিশ্বাসযোগ্য
করে তোলার প্রতিটি অংশ একেবারে ফুলপ্রুফ। হঠাৎ দেখি,
জামাকাপড়ে রক্তের ছিটে আর সর্বাঙ্গে ধুলোমাখা অবস্থায় প্রথম বাইকটি ফিরে আসছে।
যিনি টেস্ট রাইড নিচ্ছেন তিনি রীতিমত আতঙ্কিত মুখে পিছনে বসে। আমাদের হুশ করে পেরিয়ে গেলেন। চালকদ্বয় শুধুমাত্র স্যালুট বিনিময় করল
নিজেদের ভিতর। মূর্তি নদীর রাস্তা ধরেছি আমরা, নদী পেরোলেই খুনিয়ার জঙ্গল। জঙ্গল
শুরু হবার আগেই চেকপোস্ট। সেখানে বাইক থামিয়েই ছেলেটি বলল,
“স্যার, এবার আপনি চালান।” বলেই পেছনের সিটে উঠে বসল। কোথা থেকে তার হাতে একটি চকচকে
লাইট মেশিনগান উঠে এসেছে। আর ঠিক তক্ষুনি দ্বিতীয় বাইকটিকে ফিরতে দেখা গেল।
এদেরও চেহারা আগের বাইক আরোহীদেরই মতো। কিন্তু যিনি টেস্ট রাইড নিচ্ছেন তার সাথে চালকের কী নিয়ে একটা প্রবল বাকবিতণ্ডা চলছে। সম্ভবত উনি নেমে পড়তে চাইছিলেন। ওরাও
কিন্তু ওই অবস্থাতেও না থেমে আমাদের পেরিয়ে চলে গেল। আমি বাইক স্টার্ট করলাম।
বাইক চালানোর অসাধারণ অভিজ্ঞতা সবে দশমিনিট
পেরিয়েছে। বিনা নোটিশে কম্যান্ডার রয়
পিছনের সিট থেকে পাশের জঙ্গলে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে আরম্ভ করলেন এবং আমায় হতবাক
করে উল্টোদিকের জঙ্গলের ভিতর টিলার পেছন থেকে
অনেকগুলো বন্দুক থেকে গুলি ছুটে এল আমাদের
লক্ষ্য করে। নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠেই চমৎকৃত হলাম, এই তাহলে এদের সাজানো অ্যামবুশ!
যেখানে নকল রক্ত, রবার বুলেট, নকল বন্দুক, আর কিছু
সাজানো ইউনিফর্মের খেলা চলছে? ভাবতে ভাবতেই মাইন ফেটে ধুলোয় ভরে গেল চারদিক। ভাল
প্রয়াস, কিন্তু আসল যুদ্ধ কি এরকম
ছিল?
তারপরই ভয়ংকর বিস্ফোরণ! কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। বাইক চলছিল প্রায় ৬৫ কিমি/ঘন্টা গতিতে। চোয়ালে চোয়াল চেপে সামনের ব্রেক
চেপে ধরলাম। ফলে স্পিডে থাকা বাইক স্কিড করে আমাদের দু’জনকে নিয়ে রাস্তায় ছ্যাঁচড়াতে আরম্ভ করল। আর কোথা থেকে একটা সলিড রবার
বুলেট আমার বুকে, যেখানে হৃৎপিণ্ড থাকে, ঠিক সেখানে সেঁধিয়ে গেল! এর মধ্যেও খেয়াল করলাম, হঠাৎ করে যেন গোলাবারুদের হুঙ্কার থেমে গেছে। প্রায় দশজন সামরিক পোশাক পরা লোক এসে আমাদের থেকে একটু দূরে ছিটকে পড়া বাইকটা তুলে
দাঁড় করিয়ে উত্তেজিতভাবে সেটির অবস্থা নিরীক্ষণ করতে লাগল। তারপর তারা আমাদের দিকে
এগিয়ে আসতে লাগল উৎকণ্ঠা নিয়ে। হয়তো এটা নকল যুদ্ধের সিলেবাসে ছিল না।
বিচ্ছিরি অবস্থা! কম্যান্ডার ব্যথায় কাতরাচ্ছে, উঠতে পারছে না বেচারা। নকল
যুদ্ধের ডেমো দিতে গিয়ে বেচারার হাঁটু থেকে অনেকটা ছড়ে গিয়ে রক্ত পড়ছে। আমি ওই
অবস্থায় উঠে বসলাম। উদ্দেশ্য ছিল ছেলেটিকে সাহায্য
করার। কিন্তু আমায় দেখে সে অলৌকিক এবং
অবিশ্বাস্য আতঙ্কে সাথে সাথে জ্ঞান হারাল। আর একই সাথে এগিয়ে আসা অত বড়ো দলটা স্রেফ ভোজবাজির মতো অসীম আতঙ্কে পিছিয়ে গিয়ে, যে যেদিকে পারল
ছত্রখান হয়ে গেল। হবে নাই বা কেন? ওরা অনেক মহড়া নিয়েছিল এই
প্রোগ্রামের। কিন্তু কোথাও বলা ছিল না যে ক্লায়েন্টের চেহারাও বদলে যেতে পারে এক লহমায়!
আমার শরীরে এখন নকল নয় সম্পূর্ণ নৌবাহিনীর আসল পোশাক। তাতে সাজানো আছে মেডেল, স্টার, নৌবাহিনীর পদাধিকারের নেমপ্লেট। সারা শরীরে
একটাও আঁচড় নেই। নেই বুকে বুলেট লাগার কোন গর্ত। সেখান থেকে বেরিয়ে আসা নকল রক্তের ছিটেফোঁটাও নেই তুষারশুভ্র নিষ্কলঙ্ক ইউনিফর্মে! শুধু আমার চেহারাটা মিনিটে মিনিটে অস্পষ্ট থেকে ধীরে ধীরে
অদৃশ্য হয়ে আসছে! মায়া লাগল - ওদের
অবস্থা দেখে আমি আস্তে আস্তে নিজেই সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেলাম স্পট থেকে। বেচারারা
তো শুধু নিজের চাকরির জন্যে এতসব করতে বাধ্য হয়েছিল।
----------------
[১৯৭১-এ ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের ছোঁড়া ডেপথ
চার্জে আই এন এস বজরং অল্পের জন্যে রক্ষা পায়। রবার
ডিঙি থেকে সেই বিমানকে অ্যান্টি
এয়ারক্রাফট গান ছুঁড়ে ধ্বংস করার তিন কারিগর
ছিলেন লেফটেন্যান্ট সর্দার
বুধওয়ার, লেফটেন্যান্ট ত্যাগরাজন
স্বামী ও লেফটেন্যান্ট পলাশ দে।
তৃতীয় ব্যাক্তিটি আমি। পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানটি ধ্বংস হয়ে আমাদের ডিঙির উপরই ভেঙ্গে পড়ে।
আই এন এস
বজরংকে একবার দেখতে আর ছুঁয়ে অনুভব করতে ফিরে এসেছিলাম আমি।
জড়ভরত অবস্থায় তাকে দেখতে চাইনি কখনও। তাই এই
টেস্ট রাইড!
এই গল্পের বিষয়বস্তুর মূল ভিত্তি ভারতীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত যুদ্ধজাহাজ INS
Vikraant এর থেকে বাজাজ কোম্পানির তৈরি নতুন বাইক ‘Invincible’। বাকি গল্পের চিন্তাধারা সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত। কোনও জীবিত অথবা মৃত
ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনওরূপ কর্মকাণ্ডের সাথে যদি এই গল্পের কোন ঘটনার মিল
থেকে থাকে, তা সম্পূর্ণ কাকতালীয় ও অনিচ্ছাকৃত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর সম্পূর্ণ
শ্রদ্ধা ও সন্মান সহকারে এই গল্প ভাবা হয়েছে।]
________
ছবি - পুস্পেন মণ্ডল
লেখক পরিচিতি - জন্ম ও বেড়ে ওঠা শিল্প নগরী দুর্গাপুরে। বর্তমানে কলকাতা ও
ডুয়ার্সে কর্মসূত্রে যাতায়াত। রিসর্ট ও আনুষঙ্গিক ব্যাবসার অবসরে আঁকা, বই, গান,
ফটোগ্রাফি আর সিনেমায় ডুবে থাকেন। লেখালেখির জগতে নতুন।
দারুন লাগল... প্রচ্ছদটাও খুব সুন্দর... শুধু গল্পের সাথে মিলিয়ে বাইকটা সাদা হলে আর নৌবাহিনীর সাদা পোশাকটা থাকলে নিখুঁত হয়ে যেত...
ReplyDelete