অশ্বখুরাকৃতি
মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য
রূপনারায়ণ চৌধুরী বললেন, “এককথায়
আমার প্রাইভেট সেক্রেটারির কাজ করতে হবে তোমাকে। সপ্তাহে ছয়দিন কাজ, রোববার বিশ্রাম। দু’মাসে একবার ছুটি পাবে। পারিশ্রমিক যা
পাবে সেটা আজকের বাজারে কম নয়। ভালো কথা, আমার প্রাইভেট সেক্রেটারি বরুণের সঙ্গে
তোমার পরিচয় হয়েছে?”
মৈনাক বলল, “হ্যাঁ,
আলাপ হয়েছে।”
রূপনারায়ণ বললেন, “তাহলে
অনুমান করছি আমার সম্পর্কে কিছুটা জেনেছ। বাকিটা আমি নিজেই বলছি। আমার বাবা
জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ ছিলেন ছোটোখাট একজন জমিদার। একটা দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।
চৌধুরীবংশের সেই জৌলুস এখন আর নেই। এখন সামান্য কিছু জমিজমা আর দু’তিনটে বাড়ি পড়ে
আছে অসমে। সেসবের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যপার আছে, সরকারি অফিসে গিয়ে খাজনা জমা দেওয়া
আছে, চিঠিচাপাটি
করার ব্যাপার আছে। ওদিকটা সামলাবার ভার বরুণের ওপর। তুমি হবে আমার লিটারেরি সেক্রেটারি।”
কাঁচাপাকা চুল, লম্বা
একহারা চেহারা, চশমার
আড়ালে বুদ্ধিদীপ্ত দু’টো চোখ, পাতলা ঠোঁট, তীক্ষ্ণ নাক। রূপনারায়ণের চেহারায়
আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। দেখলেই সম্ভ্রম হয়। ভদ্রলোক কথা বলেন ধীরে ধীরে, স্পষ্ট
উচ্চারণে। মৈনাক সসঙ্কোচে বলল, “লিটারেরি সেক্রেটারির কাজটা কী হবে স্যার?”
রূপনারায়ণ বললেন, “আমার একটা
লাইব্রেরি আছে। তোমাকে তার দেখাশোনার ভার নিতে হবে। আমার বাবার
লেখালিখির শখ ছিল। প্রবন্ধ লিখেছিলেন নানা বিষয়ের ওপর। চৌধুরীবংশের ইতিহাস নিয়ে
একটা লেখা লিখেছিলেন সাধু ক্রিয়াপদে। ভেবেছিলাম সেগুলো ছাপতে দেব। কিন্তু পাবলিশার
বলছে আজকাল ওরকম বাংলা চলে না। তোমাকে ওগুলোর প্রুফ দেখে চলিত ভাষায় বদলে দিতে
হবে। কী পারবে তো?”
মৈনাক বলল, “নিশ্চয়ই
পারব।”
রূপনারায়ণ বললেন, “আর একটা
কাজ করতে হবে তোমাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সভাপতি হবার ডাক আসে আমার। তাই যখন যেমন
প্রয়োজন বাংলা বা ইংরেজিতে খসড়া তৈরি করে দেবে। আমি সভায় গিয়ে সেটা পাঠ করব।”
মৈনাক বলল, “ঠিক আছে।”
রূপনারায়ণ বললেন, “মুন্সিগঞ্জে অ্যাদ্দিন বিদ্যুৎ ছিল না, সম্প্রতি এসেছে। শহুরে সুযোগসুবিধে এখানে পাবে না। এদিকে খুব গরম পড়ে বটে, তবে প্রচুর গাছপালা, জঙ্গল। ফলে
ক’দিন গরম পড়লেই নিয়ম করে বৃষ্টি হয়। খুব
একটা কষ্ট হবে বলে মনে হয় না।”
বরুণ রাহার সঙ্গে মৈনাকের
আলাপ হল। ভদ্রলোকের পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স। তামাটে গায়ের রং, ছোটো করে
ছাঁটা চুল, মজবুত
গড়ন। ঝাড়গ্রামে বাড়ি। নেভিতে ছিলেন আগে, রিটায়ার করার পর এখানে ঢুকেছেন
কয়েকমাস হল।
রূপনারায়ণ বিদায় নিয়ে দোতলায়
চলে গেলেন। মৈনাক বরুণের সঙ্গে গল্প করছিল। এদিক ওদিক চোখ বোলাতে বোলাতে বলল, “কী বিশাল
বাড়ি! এত বড়ো বাড়িতে কে কে থাকে?”
বরুণ বললেন, “আমি থাকি
একতলায় এদিকটায়। একতলাতেই দু’জন পরিচারক
থাকে। একজন রান্নার কাজ
করে, অন্যজন
গৃহভৃত্য। দোতলায় স্যার একাই থাকেন। উনি কনফার্মড ব্যাচেলর। ওঁর কোনও উত্তরপুরুষ
নেই। ওঁর মৃত্যু হলে এই সম্পত্তি বারো ভূতে খাবে নাকি সরকার অধিগ্রহণ করে নেবে কে
জানে।”
মৈনাক জানতে চাইল, “রূপনারায়ণ
মানুষ হিসেবে কেমন?”
বরুণ বললেন, “আমার সঙ্গে
কখনও খারাপ ব্যবহার করেননি। ওঁর কোনওরকম নেশাতেও আসক্তি নেই। কালো রংয়ের একটা ঘোড়া
আছে। এই বাড়ির পেছনদিকে একটা কাঠের ঘরে থাকে সেটা। উনি বিকেলবেলা করে ঘোড়ায় চেপে
একটু বেড়াতে বেরোন। ওই একটাই নেশা স্যারের।”
মৈনাক বলল, “মুন্সিগঞ্জ
জায়গাটা কেমন?”
বরুণ বললেন, “মুন্সিগঞ্জে
যেদিকে তাকাও সবুজে সবুজ। চোখের আরামের জন্য ভালো। তাছাড়া
ফ্রেশ শাকসবজি আর নদীর টাটকা মাছ পাবে মুন্সিগঞ্জে। এদিকের জলও খুব ভালো। তবে
জায়গাটা একটু রিমোট। শহর থেকে সারাদিনে একটাই ধ্যাড়ধেড়ে বাস আসা যাওয়া করে। সরকারি
অফিস, হেলথ
সেন্টার বা থানা বেশ কিছুটা দূরে। কাছেই সাহেবকাটার গভীর জঙ্গল। লোকে বলে সন্ধে
নামলে সেখানে একটু সমস্যা আছে।”
মৈনাক ভুরু টান করে বলল, “সমস্যা আছে
মানে?”
বরুণ গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “অন্ধকার
গাঢ় হলে অশরীরী ঘুরে বেড়ায় সাহেবকাটার জঙ্গলে। অনেকে নাকি সেসব দেখেছে। তবে ওসবে
আমার বিশ্বাস নেই। আমি কোনওদিন কিছু দেখিনি। তুমি ওসব নিয়ে ভয় পেও না।”
মৈনাক বলল, “ভয় পেলে
আমার চলবে না। এটা সত্যি যে বাড়ি থেকে এত দূরে থাকতে আমার ভাল লাগবে না। কিন্তু
চাকরির বাজার যে কতটা কঠিন সেটা হাড়ে হাড়ে জানি। এই চাকরি প্রত্যাখ্যান করার মতো
বুকের পাটা নেই আমার।”
জৈষ্ঠ্য মাসের শুরু। গাছের
পাতারা নড়ছে না একটুও। তার মধ্যেই মৈনাক নিজের লাগেজ নিয়ে সকাল সকাল বাড়ি থেকে
বেরিয়ে দু’টো বাস চেঞ্জ করে ঘেমে নেয়ে মুন্সিগঞ্জে যখন এসে পৌঁছল তখন সন্ধে হয়ে
গেছে। বরুণ যেন মৈনাকেরই অপেক্ষায় ছিলেন। এগিয়ে এসে বললেন, “কোনও অসুবিধে
হয়নি তো?”
মৈনাক বলল, “তেমন কিছু
না। স্যার কোথায়? ওঁকে
আমার আসার খবরটা দিতাম।”
বরুণ থমকে গেলেন। এদিক ওদিক
তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললেন,
“কাল থেকে স্যারের কোনও খোঁজ নেই। বিকেলে রোজের মতো ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে
বেড়িয়েছিলেন সাহেবকাটার জঙ্গলের দিকে। আজ সকালে শুধু ঘোড়াটা ফিরে এসেছে, ওঁর কোনও
খোঁজ নেই।”
মৈনাক ভুরু কুঁচকে বলল, “সে কি!”
বরুণ চিন্তিত গলায় বললেন, “ভাবছি
কালকের দিনটা দেখব। তারপরও যদি স্যারের খোঁজ না পাওয়া যায় তাহলে
পরশু থানায় যাব। বাড়ির পরিচারকদের কাছে স্যারের
অন্তর্ধানের কথাটা পাঁচকান করতে বারণ করেছি।”
মৈনাক বলল, “সাহেবকাটার
জঙ্গলে বন্যজন্তু আছে নানারকম। ওখানে মনে
হচ্ছে রূপনারায়ণ কোনও সমস্যায় পড়েছেন। আমাদের একবার জঙ্গলে গিয়ে ওঁকে খোঁজা উচিত।”
দোতলা ইংরেজি ‘সি’ শেপের
বাড়ি। অর্ধবৃত্তের সামনের জায়গাটায় সবুজ মাঠের মতো। আগে কোনওদিন এটা বাগান ছিল
হয়তো। বহুযুগ আগের শ্বেতপাথরে গড়া দু’টো অপ্সরা-মূর্তি আছে মূল গেটের দু’দিকে।
মাঝখানে আছে একটা নষ্ট হয়ে যাওয়া ফোয়ারা। নিচতলায় একদিকে মৈনাকের ঘর। ঘরে সেগুন
কাঠের বিশাল পালঙ্ক। সিলিংয়ে সম্প্রতি লাগানো পাখা। ঘরের সঙ্গে লাগোয়া স্নানঘর।
বাথরুমে গিয়ে মুখেচোখে জল
দিয়ে এল মৈনাক। ন’টা বাজতে না বাজতেই একজন ভৃত্য এসে
রাতের খাবার দিয়ে গেল। বিছানা করাই ছিল। ঘরে গিয়ে মশারি টাঙিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে
দিল মৈনাক। শুতে শুতেই ঘুম নেমে এল শ্রান্ত শরীরে।
ঘুমটা ভেঙে গেল একটা অস্পষ্ট
আওয়াজে। ঘরের মধ্যে কেমন একটা বিজাতীয় গন্ধ। রাতবাতি জ্বলছে ঘরে। তেমন স্পষ্ট কিছু
দেখা যাচ্ছে না। মৈনাকের সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। তালু শুকিয়ে গেছে। অন্ধকারের
মধ্যে মনে হল কেউ দাঁড়ানো ঘরের ভেতর। সাদা ধবধবে চুল, গালে সাদা
চাপদাড়ি, ছ’ফিটের ওপর লম্বা চেহারা। আতঙ্কে চিৎকার করতে গেল মৈনাক, মুখ দিয়ে
একটাও শব্দ বেরলো না।
রাতটুকু কোনওমতে গুজরান করে
সকালে উঠেই লাইব্রেরি রুমে চলে এসেছে মৈনাক। বড়ো ঘরটায় একটা কুশন দেওয়া চেয়ার আর
ছোটো কাঠের টেবিল আছে। আর রয়েছে অসংখ্য আলমারি। প্রত্যেক আলমারি জুড়ে অজস্র বই।
তবে বেশিরভাগ বইই বেশ পুরনো আর বাঁধানো। নতুন বই তেমন কেনা হয়নি।
দেওয়ালে টাঙানো আছে চৌধুরীবংশের
জমিদারদের অয়েল পেন্টিং। ছবিগুলো কার সেটা লেখা আছে নিচে। একটা তৈলচিত্রের সামনে
এসে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে গেল মৈনাক। শ্বেতশুভ্র চুল, সাদা চাপদাড়ি, পরনে
চোগা-চাপকান, চোখে
কৌতুকের হাসি। এঁকে কাল রাতেই দেখেছে মৈনাক তার শোবার ঘরে। তখনই একটু খটকা
লেগেছিল। আজ সকালে জগদ্দীপেন্দ্রর ছবি দেখে ভয়ে বিস্ময়ে
গায়ের সমস্ত রোম দাঁড়িয়ে
গিয়েছে মৈনাকের।
ঘোরটা কাটতে কিছুক্ষণ সময়
লাগল। খানিকটা ধাতস্থ হয়ে বইয়ের আলমারি ঘাঁটছিল মৈনাক। জগদ্দীপেন্দ্র প্রবন্ধ
লিখেছেন রাজনীতি, সমাজনীতি, বিজ্ঞান,
পুরাণ, ভ্রমণ
নিয়ে। সেসব রয়েছে মোটা মোটা পান্ডুলিপিতে। মৈনাক খুঁজছিল অন্য কিছু। অবশেষে
লাইব্রেরি রুমের দেরাজে পেয়েও গেল কাঙ্খিত সেই জিনিস। জগদ্দীপেন্দ্রর লেখা ডায়েরি।
সেটা পড়তে পড়তে মশগুল হয়ে গেল মৈনাক। কী করে যে বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল কে জানে।
বরুণ এসেছেন লাইব্রেরি রুমে।
কৌতূহলী হয়ে বললেন, “কী
পড়ছ?”
মৈনাক বলল, “জগদ্দীপেন্দ্রর
ডায়েরি। সাধু ক্রিয়াপদে লেখা হলেও বুঝতে অসুবিধে হয় না। সেই সকালে ধরেছি এতক্ষণে
শেষ করলাম।”
বরুণ বিস্মিত হয়ে বললেন, “কী লেখা আছে ডায়েরিতে?”
মৈনাক বলল, “ব্রিটিশ
আমলে জনাচারেক সাহেবকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিল বিপ্লবীরা। সেই থেকে নাম হয়েছে
সাহেবকাটার জঙ্গল। ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে লাশগুলো ভাসিয়ে দিয়েছিল যে নদীতে তার নাম হল
খুনিয়া। একটা বৈশিষ্ট্য আছে এই নদীর। খুনিয়া নদীর
চলন কিন্তু উল্টো।”
বরুণ বললেন, “উল্টো মানে?”
মৈনাক বলল, “দক্ষিণ
থেকে উত্তরদিকে প্রবাহিত হয় এর জল। জঙ্গলের মধ্যে নদীটা একটা জায়গায় ঘোড়ার খুরের
মতো বাঁক নিয়েছে। সেখানে জলের তলে নুড়িপাথরের সঙ্গে মিশে আছে বিশেষ একরকমের ঘাস।
সেই ঘাসের মধ্যে আছে অদ্ভুত এক রহস্য।”
বরুণ বললেন, “রহস্য?”
মৈনাক বলল, “মুন্সিগঞ্জ
একসময় ডাকাতের ভয়ে কাঁপত। এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিল ভৈরব ডাকাত। জঙ্গলের মধ্যে
কুবেরের দেউল প্রতিষ্ঠা করেছিল ভৈরব। কুবের হল সমৃদ্ধির দেবতা, সেটাই হয়তো
কারণ। প্রাচীন বৈদিক যুগে কুবেরকে বলা হত ভূতেশ্বর। শুধু যে লুঠতরাজ করত তা নয়।
কুবেরের মূর্তির সামনে প্রত্যেক অমাবস্যায় নরবলি দিত ভৈরব ডাকাতের দল।”
বরুণ অস্ফুটে বললেন, “নরবলি!”
মৈনাক বলল, “ডায়েরিতে
সেটাই লিখেছেন জগদ্দীপেন্দ্র। ওই ঘোড়ার খুরের মতো জায়গার একটা বৈশিষ্ট্য আছে।
ওখানে জলের নিচে একরকমের ঘাস আছে নুড়িপাথরের সঙ্গে জড়িয়ে। সেই ঘাস একবার ডিঙোলে
মানুষের সমস্ত স্মৃতি লোপ পেয়ে যায়।”
বরুণ হাসার চেষ্টা করলেন, “এমন কি হতে
পারে কখনও?”
মৈনাক বলল, “ডায়েরিতে
যেটা লেখা আছে সেটাই বলছি। ভৈরব ডাকাতের দল খুনিয়া নদীর অশ্বখুরাকৃতি বাঁকটার
রহস্য জানত। তারা গ্রাম থেকে নিরীহ লোক ধরে এনে নদীর ওপর দিয়ে হাঁটাত। স্মৃতিহীন লোকগুলোর
প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকত না। লোকগুলোকে ফেলে রেখে ডাকাতেরা নিশ্চিন্তে চলে গেলেও
লোকগুলো পালাতে পারত না। তারা পড়ে থাকত নির্জীবের মতো। প্রত্যেক অমাবস্যায় কুবেরের
বিগ্রহের সামনে ভৈরব ডাকাতের দল তাদের বলি দিত এক এক করে। ডাকাতেরা বিশ্বাস করত
নরবলি দিলে কুবের খুশি হবেন। খুশি হয়ে তাদের আরও ধনসম্পত্তির অধিকারী করবেন।”
বরুণ বললেন, “এমন অমানবিক
প্রথা বন্ধ করতে পারেনি কেউ?”
মৈনাক বলল, “রূপনারায়ণের
বাবা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ তখন মুন্সিগঞ্জের জমিদার। ভৈরব ডাকাতের অত্যাচারে অতিষ্ঠ
প্রজারা গিয়ে ধরেছিল তাঁকে। তিনি কয়েকজন লেঠেলকে পাঠিয়েছিলেন ভৈরবকে শায়েস্তা
করতে। কিন্তু ভৈরবের দল সেই লোকগুলোকে মেরে ফেলে। ক্রুদ্ধ জগদ্দীপেন্দ্র তাঁর দশজন
অনুচর নিয়ে বেরোন সাহেবকাটার জঙ্গলের দিকে। ডায়েরিতে সেটুকুই আছে, আর কিছু লেখা
নেই।”
বরুণ বললেন, “রূপনারায়ণ
বলেছিলেন, ওঁর যখন বালক বয়স তখন জগদ্দীপেন্দ্রর মৃত্যু হয় এক দুর্ঘটনায়। ভৈরব
ডাকাতের হাতেই বোধহয় প্রাণ গিয়েছিল ওঁর।”
মৈনাক বলল, “আমার সন্দেহ
হচ্ছে রূপনারায়ণের প্রাণ বিপন্ন। এখনও সময় আছে কি না জানি না, তবুও একটা শেষ
চেষ্টা করে দেখা দরকার। এখান থেকে ঘন্টাখানেক হাঁটলেই তো জঙ্গলের শুরু। মুন্সিগঞ্জের
লোক দিনের বেলাতেও এই জঙ্গলে যায় না। কিন্তু এমন হতেও পারে যে রূপনারায়ণ বেঁচে
আছেন। সাহেবকাটার জঙ্গলে আমাদের যাওয়াটা জরুরি।”
বরুণ বললেন, “আমি একসময়
আর্মিতে ছিলাম। বর্ডারে যখন পোস্টিং ছিল তখন প্রাণ হাতে করে কাটিয়েছি। আমার ভয়ডর
কম। একটা মানুষ শুধু শুধু উবে যাবে এটা হতে পারে না। আমি আছি তোমার সঙ্গে। চলো, আজ
দুপুরেই বেরিয়ে পড়ি। আলো থাকতে থাকতে জঙ্গলের দিকটা তল্লাসি করে আসি।”
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে
বেরিয়েছে দু’জনে। পথচলতি দু’একজনকে জিগ্যেস করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেছে
সাহেবকাটার জঙ্গলে। শাল,
সেগুন, হরতুকি, বহেরা, লালি গাছেরা
ভিড় করে আছে। মৈনাক আর বরুণ যত এগোচ্ছে তত ঘন হচ্ছে জঙ্গল। বেশ খানিকটা গভীরে
যাবার পর দেখা পাওয়া গেল খুনিয়া নদীর।
সরু একফালি নদী। অন্যসময় হয়তো
জল থাকে তবে জৈষ্ঠ্য মাস বলেই হয়তো নদীতে এখন একহাঁটু জল। দু’দিকের জঙ্গলের বড়ো বড়ো ডালপালা চলে এসেছে নদীর ওপর। পাখির
চোখে দেখলে মনে হবে সবুজ ক্যানভাসে নীলচে কালো একটা রিবন বুঝি পড়ে আছে।
বিকেল হয়ে এসেছে। নদীর পাড়
ধরে যেতে যেতে একটা জায়গায় এসে দাঁড়াল দু’জনে। নদীটা ঠিক এ জায়গাটাতে এসেই ঘোড়ার
খুরের মতো বাঁক নিয়েছে। মৈনাক চাপা গলায় বলল, “রূপনারায়ণের ডায়েরিতে এই অশ্বখুরাকৃতি
জায়গাটার কথাই বলা আছে।”
গাঢ় হচ্ছে অন্ধকার। জঙ্গলের
সবুজে ক্রমশ কালচে ছোপ ধরছে। ঝুঁঝকো আঁধার নামছে চরাচর জুড়ে। পাখির অদ্ভুত ডাক ভেসে
আসছে দূর থেকে। একসঙ্গে একশোজন মেয়ে উলুধ্বনি দিলে যেমন আওয়াজ হয় অবিকল তেমন শব্দ।
নীল কুন্ডলী পাকানো ধোঁয়া উড়ছে নদীর ওপারে। মৈনাক মৃদুস্বরে বলল, “এই জঙ্গলের
মধ্যে ধোঁয়া আসছে কোত্থেকে?”
একটা অশ্বত্থ গাছের সামনে এসে
দাঁড়াল দু’জনে। নদীর ওদিকে পুরনো একটা ভাঙা দেউল চোখে পড়ছে। এদিক ওদিক দেখে
প্যান্ট গুটিয়ে নদী পার হল দু’জনে। যত এগোচ্ছে সামনের দিকে তত ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে
চারদিক। তার মধ্যেও বোঝা গেল ভাঙা দেউলের একপাশে একটা বলিকাঠ। বরুণ আঙুল উঁচিয়ে
সভয়ে বললেন, “ওদিকে
দ্যাখো।”
লঙ্কা পোড়া দিলে যেমন গন্ধ হয়
তেমন ঝাঁঝালো একটা ঘ্রাণ ঝাপটা মারছে নাকে। হিমশীতল একটা হাওয়া আচমকা এসে যেন
ছুঁয়ে দিল মেরুদণ্ড। সামনের দিকে
তাকাল মৈনাক। অন্ধকার হয়ে এসেছে, তবুও ধোঁয়ার
আড়ালে বোঝা যাচ্ছে ঝোপের ওদিকটায় মানুষের অজস্র হাড়গোড় পড়ে রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। এক
পা দু’পা এগিয়ে এসেছে মৈনাক আর বরুণ। একসময়
হয়তো পরিষ্কার চাতাল ছিল। এখন ঝোপজঙ্গল গজিয়ে গেছে জায়গাটায়।
বরুণ ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললেন, “মানুষের এত
হাড়গোড় এখানে এল কী করে?
তাছাড়া লক্ষ করে দ্যাখো, প্রত্যেকটা কঙ্কালের গলা থেকে নিচের অংশটুকুই আছে।
মুন্ডু নেই একটারও।”
মৈনাক চাপাস্বরে বলল, “ওদিকে
দেখুন।”
ভাঙা দেউলের ভেতর একটা মাটির
মূর্তি। রং চটে গেছে,
ভেঙে গেছে কিছু কিছু জায়গায়। তবুও একটা
বিগ্রহের আদল বোঝা যায়। এটাই হয়তো সেই কুবেরের বিগ্রহ। দেউলের ঠিক সামনে একটা স্তূপের
মতো তৈরি করা হয়েছে। মানুষের মাথার খুলি দিয়ে বানানো সেই স্তূপ।
মৈনাক বলল, “ভৈরব ডাকাত
যাদের বলি দিয়েছিল সেসব মানুষের খুলি এগুলো।”
বরুণ মৈনাকের কাঁধ খিমচে ধরে
বললেন, “ওখানে
একজন বসে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না?”
একটা মাদারগাছের গোড়ায় হাঁটু
মুড়ে মাথা নিচু করে বসে আছে একজন। মুখটা ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না। এক পা দু’পা করে সামনে এগোল মৈনাক। পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই রূপনারায়ণ
মুখ ফেরালেন। রুক্ষ সাদা চুল এলোমেলো, গালে দু’দিনের
না-কাটা দাড়ি। পোশাক বিধ্বস্ত। বিহ্বল চোখমুখ। মৈনাকের দিকে শূন্য চোখে তাকালেন
রূপনারায়ণ। ঠোঁট কাঁপল একবার। মুখে কিছু বলতে পারলেন না।
হঠাৎ কানের কাছে হো হো করে
হেসে উঠল কেউ। মৈনাকের গায়ের সমস্ত রোম দাঁড়িয়ে গেল সেই আওয়াজে। নীল ধোঁয়ার
কুন্ডলী পাক খাচ্ছিল। ধোঁয়াটা পাক খেতে খেতে স্থির হয়ে গিয়ে বিশাল একটা অবয়ব ধারণ
করল। অন্ধকার ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে এক ছায়ামূর্তি। স্বাভাবিক মানুষের দ্বিগুণ
উচ্চতা হবে। মাথায় লাল ফেট্টি। চোখের
জায়গায় দু’টো বড়ো বড়ো খোঁদল। এক হাতে বিরাট একটা খাঁড়ার মতো কিছু।
মৈনাক আর বরুণের পা গেঁথে
গেছে মাটিতে। শরীরের সমস্ত রক্ত যেন শুষে নিয়েছে কেউ। এত ঠান্ডা লাগছে যে মনে হয়
দাঁতে দাঁত লেগে যাবে। এই জৈষ্ঠ্য মাসে কোত্থেকে যেন ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। হিমেল
হাওয়া যেমন হয়। সেই বাতাসে নীল ধোঁয়ায় তৈরি শরীরটা কাঁপছে তিরতির করে। তাদের দু’জনের
দিকেই তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে।
মৈনাক ফ্যাসফ্যাসে স্বরে বলল, “ভৈরব ডাকাত!”
আচমকা জঙ্গলের ওদিক থেকে ভেসে
আসছে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ। সেই শব্দ স্পষ্ট হল একটু একটু করে। চিঁহি হি ডাকে জঙ্গল
যেন ফেটে পড়ছে। সামনে এসে দাঁড়াল ঘোড়ার পিঠে আসীন একজন। সাদা চাপদাড়ি, সাদা চুল, সুঠাম
চেহারা। মৈনাকের চিনতে অসুবিধে হল না অশ্বারোহীকে। কাল রাতে শোবার ঘরে দেখেছিল, আজ সকালেও তৈলচিত্র
দেখেছে ওঁর। প্রবল হুঙ্কার দিয়ে ঘোড়া থেকে লাফ দিয়ে নামলেন জগদ্দীপেন্দ্র।
জগদ্দীপেন্দ্র আর ভৈরব খরদৃষ্টিতে
পরস্পরের দিকে তাকানো। প্রবল হুঙ্কারে কেঁপে উঠছে জঙ্গল। শুরু হয়ে গেল ভয়ানক লড়াই।
যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ লড়ছে সমান তালে। আচমকা জগদ্দীপেন্দ্রর পা হড়কে গেল একটা
পাথরে লেগে। টাল সামলাতে না পেরে টলে গেলেন তিনি। সেই অসতর্ক মুহূর্তে তাঁর ওপর
ঝাঁপিয়ে পড়ল ভৈরব। হাতে ধরা সেই অস্ত্র দিয়ে আঘাত করল তাঁর ওপর। আর্তনাদ করে
মাটিতে পড়ে গেলেন জগদ্দীপেন্দ্র।
সামনে দাঁড়িয়ে হো হো করে
হাসছে ভৈরব। জগদ্দীপেন্দ্র আধশোয়া হয়ে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। তার মধ্যেই
কোমরে গোঁজা কিছু বার করলেন। চকমকি পাথরের আলো যেমন বেরোয় তেমনি একটা স্ফুলিঙ্গ
জ্বলল। আগ্নেয়াস্ত্রের প্রচন্ড আওয়াজে কেঁপে উঠল জঙ্গল। ভৈরব ডাকাত কাটা কলাগাছের
মতো ধপ করে পড়ে গেল মাটিতে। তার শরীর এফোঁড় ওফোঁড় করে চলে গেছে জগদ্দীপেন্দ্রর
বন্দুকের গুলি।
চোখ বুজে বসে ঠকঠক করে
কাঁপছিল মৈনাক। বরুণ ইষ্টদেবতার নাম জপ করছেন বিড়বিড় করে। অন্ধকার জঙ্গলে কিছুই
দৃশ্যমান নয়। চোখ রগড়ে তাকাল এদিক ওদিক। কেউ নেই কোথাও। জঙ্গলে জোনাকি জ্বলছে
বিন্দু বিন্দু হয়ে। ঝিঁঝি ডাকছে থেকে থেকে। পকেট থেকে টর্চ বার করে আলো ফেলল চারদিকে।
অদূরে কুবেরের মন্দিরের সামনে রূপনারায়ণ হাঁটু মুড়ে বসে আছেন চুপটি করে।
বরুণ গিয়ে হাত ধরলেন
রূপনারায়ণের। বললেন,
“অনেক রাত হয়েছে। আমরা এবার ফিরে যাবো মুন্সিগঞ্জে।”
রূপনারায়ণ ফ্যালফ্যাল করে
তাকিয়ে আছেন বরুণের দিকে। অস্ফুটে বললেন, “মুন্সিগঞ্জ?”
মৈনাক তাঁর অন্যহাতটা নিজের
হাতে নিয়ে নরম গলায় বলল,
“আপনি আমার সঙ্গে আসুন স্যার।”
নদীর সেই অশ্বখুরাকৃতি
জায়গাটা দিয়ে রূপনারায়ণকে হাত ধরে নিয়ে চলেছে মৈনাক। জলের স্রোত যেদিকে যায় তার
উলটোদিকে হাঁটছে। পাড়ে আসতেই নিজের মধ্যে ফিরে এলেন রূপনারায়ণ। যেন কিছুই হয়নি এমন
করে একদম স্বাভাবিক গলায় বললেন, “আমি এই জঙ্গলে এলাম কী করে? তোমরাই বা কী করছ এখানে?”
বরুণ বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে। রূপনারায়ণের দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্তির শ্বাস
ফেলল মৈনাক। একগাল হেসে
বলল, “বাড়ি
গিয়ে সব বলব স্যার। এখন চলুন। ঘন্টাখানেক পথ হাঁটতে হবে আমাদের।”
জঙ্গলের পথ শেষ। বিরাট একটা
ফাঁকা মাঠ দিয়ে হাঁটছে তিনজন। রূপনারায়ণ বললেন, “এখন মাথাটা পরিষ্কার হয়েছে। মনে
পড়ছে সব একটু একটু করে। সেদিন ঘোড়ায় চড়ে এসে জঙ্গলের দিকটায় ঢুকে পথ হারিয়ে
ফেলেছিলাম। তখন আলো মরে আসছিল, কিছুই দেখা যাচ্ছিল না ভাল করে।”
মৈনাক বলল, “তারপর?”
রূপনারায়ণ বললেন, “আচমকা অনেক
দূর থেকে নীল রংয়ের এক ছায়ামূর্তি দেখতে পাই। আমি কৌতূহলী হয়ে তার পেছন পেছন
সন্তর্পণে যেতে থাকি। এটুকু মনে আছে খুনিয়া নদীর ওই অশ্বখুরাকৃতি জায়গাটা পার হলাম
সেই ছায়ামূর্তিকে অনুসরণ করে। তারপর আর কিছু জানি না।”
মৈনাক বলল, “আপনি চৌধুরীবংশের
একমাত্র উত্তরপুরুষ। আপনাকে মেরে ভৈরব হয়তো প্রতিশোধ নিতে চাইছিল। তাছাড়া আপনাকে
তো জঙ্গলের একেবারে ভেতরে নিজের ডেরায় এনেই ফেলেছিল ভৈরব ডাকাত। সে জীবিত
অবস্থাতেও বিকৃতমনস্ক ছিল। নইলে কি কেউ
অত নিরীহ মানুষকে বলি দিতে পারে! পরের অমাবস্যায় কুবেরের বিগ্রহের সামনে আপনাকে
বলি দেবার পরিকল্পনা তার ছিল কি না কে বলতে পারে!”
রূপনারায়ণ দুর্বল গলায় বললেন, “বলি না
দিলেও বাঁচতাম না। স্মৃতিহীন অভুক্ত অবস্থায় কতদিনই বা
ওই ভয়ংকর জঙ্গলের মধ্যে হিংস্র জন্তুর
কবল থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম?”
বরুণ বললেন, “নদীর অশ্বখুরাকৃতি
জায়গাটা দিয়ে স্রোতের সোজাদিকে গেলে যে স্মৃতি
লোপ পায় সেটা তো জগদ্দীপেন্দ্রর ডায়েরিতে লেখা ছিল।
কিন্তু উলটোদিকে হাঁটলে যে স্মৃতি ফিরে আসে
সেটা কী করে জানলে?”
মৈনাক হাসল, “ওঁর
একমাত্র পুত্র রূপনারায়ণ অসহায় অবস্থায় জঙ্গলে পড়ে রয়েছেন বলেই হয়তো কাল রাতে
আমাকে দেখা দিয়েছিলেন জগদ্দীপেন্দ্র। ডায়েরিটা যে লাইব্রেরি রুমের দেরাজে আছে সেটা
ইশারায় জানিয়ে দিয়েছিলেন। খুনিয়া নদীর সেই অশ্বখুরাকৃতি জায়গাটার রহস্যও
জগদ্দীপেন্দ্রই ফাঁস করে দিয়েছেন আমার কাছে।”
বরুণ বললেন, “বুঝেছি। স্যারকে
যে আমরা ওই ঘন জঙ্গলের মধ্যে থেকে ভৈরব ডাকাতের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে
পারব সে বিশ্বাস তাঁর ছিল।”
মৈনাক স্মিতমুখে বলল, “হয়তো তাই।”
রূপনারায়ণ হেসে বললেন, “উদ্ধার
করাই শুধু নয়, আমার স্মৃতি ফিরিয়ে আনার কাজটাও সমান
জরুরি ছিল। বাবা ঠিকই অনুমান করেছিলেন যে
পারলে এই দুরূহ কাজটা তোমরাই করতে পারবে। তোমাদের কাছে আমি আজীবন ঋণী থেকে গেলাম।”
_______
ছবি - সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়
লেখক পরিচিতি - প্রথিতযশা
লেখকদের পাশাপাশি তুলনায় নবীন যাঁরা সাম্প্রতিক সময়কালে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ
করে আসছেন মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য তাঁদের অন্যতম। তাঁর গল্প প্রকাশিত হয়েছে দেশ, আনন্দবাজার পত্রিকা, সংবাদ প্রতিদিন, সানন্দা, সাপ্তাহিক বর্তমান
ইত্যাদি পত্র পত্রিকায়। ছোটদের জন্যও লেখেন তিনি। তাঁর
বহু গল্প প্রকাশিত হয়েছে আনন্দমেলা, কিশোর ভারতীর মতো পত্রিকায়। জয়ঢাক ও ইচ্ছামতী
ওয়েবজিনে বেরিয়েছে অনেক কিশোরপাঠ্য গল্প। প্রকাশিত বই - চংক্রমণ এবং টই টই।
ওরে বাবা...ভীষণ ভূতুড়ে ব্যাপার......
ReplyDeleteStrokes show professional touch and depiction translates absolute brilliance! It shows that the creator is very comfortable with the used medium. Also it reflects his imagination to render the subject very elegantly. Superb!
ReplyDeleteশুরুটা একটু ঢিলেঢালা হলেও মাঝখান থেকে জম্পেস লাগল
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল। টানটান, রুদ্ধশ্বাস।
ReplyDeleteplot bhalo holeo ektu tarahuro moton laglo.
ReplyDeleteরোমাঞ্চ কর .........
ReplyDelete