বিজ্ঞান:: ভূত-বিজ্ঞান - অমিতাভ প্রামাণিক


ভূত-বিজ্ঞান
অমিতাভ প্রামাণিক

ভূত নিয়ে বিজ্ঞান-প্রবন্ধ লেখা বোধহয় সহজ নয়। যদিও বিজ্ঞানের একটা মোটাসোটা শাখাকে ভৌতবিজ্ঞান আখ্যা দেওয়া হয়েছে, আর আমি সেই শাস্ত্রেরই কিঞ্চিৎ পুস্তকাদির পাতা উল্টেছি কখনও কখনও, তাতে ভূত সংক্রান্ত কোনও লেখা দেখিনি আজ অবধি। অথচ ভূত থেকেই যে ভৌত শব্দটা এসেছে, তাতে বিশেষ সন্দেহ নেই। তাই ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে। অবশ্য গোলমেলে জেনেও ধুৎ বলে হাত ধৌত করে ফেললে তো চলবে না। তাই এ নিয়ে নানা জনে কে কী বলেছে, তা জানতে বসে গেলাম। তারই দু’কথা তোমাদের শুনাই।
ভূত নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল কিন্তু কম ছিল না। ভূত মানে আত্মা মানে ইংরাজিতে স্পিরিট। আলাদিনের যে প্রদীপটা ঘষলে জিন বা ভূত এসে হাজির হ’ত, সে রকম দেখতে না হলেও স্পিরিট ল্যাম্প বলে এক ধরণের পিদিম ব্যবহার করা হচ্ছে আবহমানকাল ধরে ভৌতবিজ্ঞানের চর্চায়। সেখানে অবশ্য স্পিরিট মানে অ্যালকোহল, আত্মা নয়। আর সেই স্পিরিট ল্যাম্পের শিখায়, বা তার চাইতেও অধিকতর তাপে বিভিন্ন বস্তুকে গলিয়ে মানুষ বহুকাল ধরে খুঁজেছে অন্য বস্তুসমূহকে সোনায় পরিণত করা যায় কিনা। চকচক করলেই সব সোনা হয় না বটে, কিন্তু সোনা তো চকচকে, তা দিয়ে সৌন্দর্যবৃদ্ধির উপকরণ তৈরি শেখা হয়ে গেছে সভ্যতার আদিযুগে, তাই সোনা বানানোর চেষ্টা স্বাভাবিক। ভেবেছিল এমন একটা কিছু আবিষ্কার হবে, যা দিয়ে অন্য কিছুকে ছুঁয়ে দিলেই তা সোনা হয়ে যাবে। সেই পরশপাথর বা ফিলোজফার্স স্টোনের খোঁজে মানুষ মরিয়া ছিল। কিন্তু তা যে হবার নয়, সেটা জানা গেল আধুনিক বিজ্ঞান সাবালক হওয়ার পর।
আর খোঁজ ছিল এমন এক ম্যাজিকাল ওষধির, যা খেলে রোগবালাই দূর হয়ে যাবে, মানুষ বেঁচে থাকবে যতদিন খুশি। তাকে বলা হ’ত এলিগ্‌জির অফ লাইফ। বলাই বাহুল্য, তার খোঁজও মেলেনি।
এই দুই মিলেই ছিল অ্যালকেমি, যা রসায়নশাস্ত্রের গোড়ার কথা। আর রসায়নশাস্ত্র তো ভৌতবিজ্ঞানেরই অঙ্গ।
তবে এ ভূত সে ভূত না। এই সংখ্যার ভূত মানে বিদেহী আত্মা। আত্মারাম খাঁচাছাড়া হ’লে যে ভূতের জন্ম হয়। তাদের অনেক রকম নাম, যেমন ব্রাহ্মণ ভূত ব্রহ্মদৈত্য, মহামেডান ভূত মামদো, একানড়ে, শাকচুন্নি, এইসব। এসব হ’তে গেলে কাউকে মরে যেতে হয়। তখন নাকি তার শরীর থেকে সূক্ষ্ম আত্মা বেরিয়ে বাতাসে ঘুরতে থাকে। সেটাই ভূত। তাকে কখনও বাঁশবাগানে সাদা থান পরে বসে থাকতে দেখা যায়, কখনও কলাবাগানে হাওয়া দিলে সে দোলে। এই সব ভূত নিয়ে বিজ্ঞানীদের কী ধারণা?
আধুনিক বিজ্ঞান ভূত সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপারটাকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, এ হচ্ছে ফিগমেন্ট অফ ইমাজিনেশন মানে আষাঢ়ে গল্প। আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের আর মনের ভারসাম্যহীনতা থেকেই ভূত দেখার বা তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করার মত বস্তু সৃষ্টি হয়। পরিবারে কোনও প্রিয়জনের মৃত্যুর পর তাকে হারানোর বেদনা থেকে অনেক সময় প্রচন্ড ব্যথার অনুভূতি হতে পারে, যাতে কেউ ভাবতে পারে প্রিয়জনের শরীর-নিঃসৃত আত্মা তার শরীরে বাসা বেঁধেছে।
বিদেশে খ্যাপা পন্ডিতেরা এই আত্মা নিয়ে যেসব কান্ডকারখানা করেছে, শুনলে হাসি পাবে। মানুষ মরার সময় তার চারিপাশে বেশ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিডিও ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে, যাতে যতই সূক্ষ্মদেহী হোক সে আত্মা, ক্যামেরার নজর এড়িয়ে যেন আকাশে উঠে যেতে না পারে। পরে সেই ভিডিও তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে, হাল্কা সাদামতো কিছু কি ওপরে উঠে যাচ্ছে?
কিছু মেলেনি।
তবে যারা ভূত দেখে, তারা তাহলে কী দেখে? যারা শোনে নিশুত রাতে বাচ্চার কান্না, তারা শোনে কী? যাদের মনে হয় একলা ঘরে ভর দুপুরবেলা কে বুঝি পিঠে টোকা দিল, পিছন ফিরে দেখে কেউ তো নেই, তাদের ঐ রকম মনে হয় কেন?
সুইজারল্যান্ডের ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল ডি লোজান-এর প্রফেসর ওলাফ ব্ল্যাঙ্ক কিছুকাল আগে এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালিয়ে এই রকম ভূত দেখার ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করেছেন।
তার পরীক্ষাটা কিছু বিচিত্র। আমাদের শরীরে যে দুই ধরণের স্নায়ু দেখা যায়, যাদের বলা হয় ইড়া আর পিঙ্গলা, ইংরাজিতে সেন্সরি আর মোটর নার্ভ, তাদের ব্যবহারে বৈষম্য ঘটলে তার ফল কী হতে পারে, তাই নিয়েই এই পরীক্ষা। এর জন্য উনি কিছু ভলান্টিয়ার নিয়োগ করলেন। এক এক করে তাদের দাঁড়াতে বলা হ’ল একটা ফাঁকা ঘরে একটা যান্ত্রিক রোবটের সামনে। রোবটের একটা হাত তাদের তর্জনী দিয়ে স্পর্শ করতে হবে, এই হচ্ছে কাজ। রোবটটা এমন যে তার কোথাও কেউ স্পর্শ করলে সেই সিগন্যাল প্রসেস হয়ে সে আর একটা যান্ত্রিক হাতকে নির্দেশ দেয় ঠিক সমান পরিমাপের বল সামনের দিকে প্রয়োগ করতে। এক্ষেত্রে সেই যান্ত্রিক হাতটা রাখা আছে ভলেন্টিয়ারটার পিঠের দিকে। অর্থাৎ একজন ভলেন্টিয়ার যখন একটা ফাঁকা ঘরের মধ্যেখানে দাঁড়িয়ে তার সামনে রাখা একটা রোবটের ধরা যাক কাঁধে তর্জনী দিয়ে টোকা মারছে, তখন সেই একই বল প্রয়োগ করে একটা যান্ত্রিক হাত তার পিছন থেকে তার কাঁধে টোকা মারবেসহজ সরল ব্যাপার, এর মধ্যে কোনও জটিলতা নেই।
কিন্তু না, এই পরীক্ষার ফলে ভলেন্টিয়াররা ভূত দেখতে শুরু করল। এক আধটা না, কেউ কেউ বলল, চারখানা ভূত, তারা নাকি তার প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজর রাখছিল আর অদৃশ্য হাত দিয়ে তার পিঠে টোকা দিচ্ছিল।
না, পুরো গল্পটা এটা নয়। যখন ভলেন্টিয়ারটা সামনের রোবটের পিঠ স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই তার পিঠে পেছনের যান্ত্রিক হাতটা স্পর্শ করছিল, তখন তার মনে হচ্ছিল সে যেন নিজের পিঠ নিজেই স্পর্শ করছে। যেমন লোকে নিজের পিঠ নিজে চুলকায়। এরপর তাদের অন্য এক দলের চোখ বেঁধে দেওয়া হ’ল আর একই কাজ করতে বলা হ’ল। চোখ বেঁধে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অনুভূতি – যে তারা তাদের নিজের পিঠ নিজেই চুলকোচ্ছে – বেশ জোরদার হ’ল। তাদের সজ্ঞান ইন্দ্রিয়ে তারা জানে যে তারা সামনের কিছু স্পর্শ করছে, অথচ চোখ বাঁধা অবস্থায় পরিষ্কার ভাবছে তারা নিজেদের পিঠ চুলকাচ্ছে।
এবার যা করা হ’ল, তাতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে গেল। সামনের রোবটটাকে স্পর্শ করার আধ সেকেন্ড পরে পেছনের যান্ত্রিক হাত একই বলে চোখ-বাঁধা ভলেন্টিয়ারকে স্পর্শ করবে এমন প্রোগ্রামিং করে দেওয়া হ’ল। আগেরটার চেয়ে এর পার্থক্য শুধু ওটুকুই, সে যা করছে চোখ বাঁধা অবস্থায় সামনের রোবটটার ওপরে, তার পেছনের যান্ত্রিক হাতটা সেটাই করবে তার ওপরে, কিন্তু সে করার আধ সেকেন্ড পরে।
আর এতেই লোকজন ভূত দেখতে শুরু করল।
কেউ বলল, তার ওপর লক্ষ রাখছে বিদেহী আত্মা, তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ভাবে। কেউ বলল সে ভাবছে সে পেছন দিকে হেলে পড়ছে আর একটা অদৃশ্য হাত এসে তাকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। অশরীরী মানুষ যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে তার চারিদিকে। একটা নয় দুটো, কারও কারও মতে চারখানা। তাদের ভয় ভয় লাগছে। বারোজনের মধ্যে দুজন তো এমনই ভয় পেয়ে গেল, যে বলে বসলো, বন্ধ করো, আমি সহ্য করতে পারছি না।
প্রফেসর ব্ল্যাঙ্কের সহকর্মী ডক্টর গিউলিও রোগনিনি বললেন, মস্তিষ্কের ব্যাপারটা জটিল। এর মধ্যে স্পেস অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক শূন্যস্থানে আমাদের শরীরের অবস্থান নিরূপণের ধ্যানধারণা লুকিয়ে আছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এই ধারণা দিয়েই আমরা আত্ম-উপলব্ধি করি। কিন্তু যে কোন কারণে যখন এই সিস্টেমের কাজকর্ম ব্যহত হয় – যেমন এক্ষেত্রে একটা রোবট দিয়ে করা হচ্ছে – তখন আমরা আমাদের নিজেদের শরীরকে আর আমি ভাবি না, ভাবি অন্য কেউ। সেটাই তখন অশরীরী বলে মনে হয়। মনে হয়, ‘কেউ’ আছে কাছে। এই ‘কেউ আছে’ অনুভূতিটাকেই আত্মা বা ভূত বলা যেতে পারে। শারীরিক বা আবেগজনিত যে কোন কারণে সাময়িক বা দীর্ঘসূত্রী এই সমস্যা হতে পারে। যারা পাহাড়ে চড়েন বা দেশবিদেশে নতুন জায়গা আবিষ্কার করতে যান, তাদের ক্ষেত্রে বা নিকটাত্মীয়ের প্রয়াণে দিশেহারা কারও ক্ষেত্রে এ রকম হওয়া অস্বাভাবিক নয়। পাহাড়চূড়ায় অক্সিজেন থাকে কম, তার প্রভাবে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়ে একজন পর্বতারোহী ভাবতেই পারেন তার পাশে পাশে কেউ একজন হেঁটে আসছে। আসলে কিন্তু কেউ নেই।
গোটা বারো মানসিক রোগী, যাদের এই রকম ভূত দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, তাদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে সবারই ঠিক তিন জায়গায় গড়বড় দেখা গেল, আর সেই তিনটে জায়গাই আত্ম-উপলব্ধি, চলাচল আর অবস্থান নিরূপণের অনুভূতি প্রদায়ক এলাকা।
ইলেকট্রিক শক দিয়ে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে উজ্জীবিত করলেও ভূত দেখা সম্ভব। মনে হতে পারে পাশেই কেউ রয়েছে। শুধু চলছেই না, হয়ত হাত থেকে কিছু কেড়ে নিতেও পারে!
অটোসাজেশন বা প্ল্যাঞ্চেটের কথা শুনেছ নিশ্চয়। ভোজবাজির মতই ব্যাপার, তাই না? ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্ল্যাঞ্চেট খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিক বার প্ল্যাঞ্চেটে অংশ নিয়েছিলেন তাঁর স্বর্গগত পুত্রকন্যা ও স্ত্রীর সঙ্গে ‘কথা বলার’ জন্যে। এর জন্যে প্রয়োজন একটা বোর্ড, একটা টেবিল যার চারিদিকে অংশগ্রহণকারীরা বসে পরস্পর হাতে হাত লাগিয়ে আর একজন মিডিয়াম, যে ওই বোর্ডে লিখবে অশরীরী আত্মার বক্তব্য, মূলতঃ খুব সংক্ষিপ্ত শব্দে, যেমন হ্যাঁ বা না। এক্ষেত্রে হয় কী, সমবেত সকলের ইচ্ছাকে মিডিয়াম তার নিজের ইচ্ছা বলে অজানিতেই ধরে নেয়, এবং তার ফলে সে ঐ বোর্ডে লিখে দেয় তার উত্তর। শুধু তাই নয়, সকলে একই রকম ভাবতে শুরু করলে তার ফলে তারা তাদের অজান্তে বলপ্রয়োগও শুরু করে দেয়। যদি কেউ অংশগ্রহণকারীদের কানে কানে বলে দেয় প্ল্যাঞ্চেট চলাকালীন টেবিলটা মাটি ছেড়ে ওপরে উঠে যাবে, তখন তারা নিজেদের অজান্তেই সমবেতভাবে টেবিলটা ওপরে তুলে ধরার চেষ্টা করে, যার ফলে অল্পায়াসেই টেবিল মাটি ছেড়ে ওপরে উঠে যায়। এর প্রমাণের জন্যে একবার একজন টেবিলের একই দিকে বসা সবাইকে বলে গেছিলেন, তাদের প্ল্যাঞ্চেটের জন্যে অশরীরী আত্মা এসে টেবিলটা ডান দিকে দু ফুট সরিয়ে দেবে। হলোও তাই। পরের দিন একই অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকজনকে বললেন টেবিলটা ডান দিকে দু’ফুট সরবে, আর বাকি অর্ধেককে বললেন টেবিলটা বাঁদিকে দু ফুট সরবে। সেদিন আর টেবিল নড়েনি জায়গা ছেড়ে।
ভূতের কান্না শোনার অজস্র গল্প নিশ্চয় তোমরা শুনেছ। তাতে গল্পের শেষে জানা গেছে কোথাও নারকেল গড়িয়ে গেছে ছাদে, কোথাও বাঁশগাছে বসে থাকা ভাম হঠাৎ বাঁশের মগডাল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় বাঁশগাছটা চোঁ করে সোজা হয়ে গেছে, কোথাও দূরে চলে যাওয়া ট্রেনের হুইশলকে ভূতের আওয়াজ বলে মনে করা হয়েছে। কিন্তু এ ছাড়াও আর একটা ব্যাপার আছে। তার নাম ইনফ্রা-সাউন্ড। তোমরা জান হয়ত যে মানুষ ২০ থেকে ২০০০০ হার্জ কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দই কানে শুনতে পায়। ২০০০০ হার্জের বেশি ফ্রিকুয়েন্সির শব্দকে বলা হয় আল্ট্রাসাউন্ড, যা দিয়ে কাটাকুটি ছাড়াই শরীরের মধ্যের অনেক শারীরবৃত্তীয় সমস্যা নিরূপণ করেন ডাক্তাররা। তেমনি ২০ হার্জের কম ফ্রিকুয়েন্সির শব্দ হচ্ছে ইনফ্রাসাউন্ড। তা শোনা যায় না, কিন্তু তার একটা এফেক্ট আছে। আমাদের চোখের মণি তো একটা গোলকের মতই, তার রেজোনেন্স ফ্রিকুয়েন্সি ১৮-১৯ হার্জ। যদি কোনোভাবে আমাদের চারিদিকের কিছু জিনিস থেকে এই ফ্রিকুয়েন্সির কম্পন বাতাসে ছাড়ে, তবে তার প্রভাবে আমাদের চোখের মণির গোলক সজোরে কাঁপতে থাকবে, যার ফলে স্থির জিনিসকে অস্থির দেখা খুবই সম্ভব। এও এক রকমের ভূত দেখা হতেই পারে।
দৃষ্টিভ্রমের কারণেই আমরা গরমের দিনে পিচ-গলা রাস্তায় জলাশয় দেখি। এই মরীচিকা-দর্শনের কারণ তো তোমরা ভৌতবিজ্ঞানের পদার্থবিদ্যার বইতে পড়েছ নিশ্চয়। এর কারণ গরমের কারণে বাতাসের তাপমাত্রা বেড়ে হালকা হয়ে ওপরে উঠে যাওয়া, ভারী বাতাস নীচে নেমে আসা আর এসব কারণে বাতাসের প্রতিসরাঙ্কের তারতম্য, যার ফলে আলো এই বাতাসের মধ্যে দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে সোজা চলাচল করতে পারে না। আলেয়া দর্শনের পেছনে কারণ বদ্ধ জলা জায়গায় জীবাণুর প্রভাবে পচনশীল বস্তু থেকে উদ্গত মিথেন গ্যাসের প্রাদুর্ভাব। তেমনি বদ্ধ কুয়োর মধ্যে জমে থাকা কার্বন মনোক্সাইডের প্রকোপে, যার বর্ণ বা গন্ধ নেই, মানুষের মৃত্যু হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কার্বন মনোক্সাইড হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তার অক্সিজেন বহনক্ষমতার বারোটা বাজিয়ে দেয় বলেই এই মৃত্যু। বলা নেই কওয়া নেই, একটা জলজ্যান্ত লোক কুয়োয় নামল আর মরে গেল, এ তো ভূতেরই কান্ডকারখানা, তাই না?
কিন্তু এই সব ভূত আমরা চিনি। তাই না?
_________
ছবিঃ আন্তর্জাল

2 comments:

  1. দারুণ উপযোগী লেখা হয়েছে অমিতাভদা। খুব ভালো লাগল প্রফেসর ওলাফ ব্ল্যাঙ্কের পরীক্ষার বিষয়টি।

    ReplyDelete
  2. জ্ঞানচক্ষু উন্মীলন করে দেওয়ার মত একটা লেখা হয়েছে, ভাবি বাংলার বিজ্ঞানমনস্কতা মঞ্চ কতদিন ধরে এসব বলে আসছে। তবু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। আমার মতে আরো বেশী সংখ্যক লোককে এ ব্যাপারে প্রচারে নামতে হবে। হ্যাঁ, আর একটা কথা। আমাদের ফীল্ড অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বন্ধ কুয়োর তলে কার্বন মনোক্সাইড কম, কার্বন ডায়োক্সাইড আর হাইড্রোজেন সালফাইড জমে বেশী, কারন তাদের বাষ্পীয় ঘনত্ব হাওয়া থেকে বেশী। H2S বিষাক্ত গ্যাস আর CO2 বাড়লে অক্সিজেন কমে যায়। সেটাই মূলতঃ মৃত্যুর কারণ।

    ReplyDelete